WB TET 2023 : সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এই বছরেই অর্থাৎ ২০২৩ সালেই নেওয়া হতে পারে নতুন করে প্রাথমিক টেট পরীক্ষা। এখন যে খবর সামনে আসছে, সেখানে জানা যাচ্ছে যে এই নতুন পরীক্ষার ক্ষেত্রে একাধিক পরিবর্তন থাকতে পারে। জানা যাচ্ছে একাডেমিক স্কোরের গুরুত্ব কিছুটা কমিয়ে দেওয়া হবে এবং তার সঙ্গে বাড়ানো হতে পারে টেট পরীক্ষার গুরুত্ব।
ইতিমধ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশন নতুন নিয়োগের জন্য নতুন নীতি আনতে চলেছে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের এই নতুন নীতির আয়োজন এর কাজ প্রায় শেষ। যেকোনো মুহূর্তে এই নয়া বিধি সামনে আসতে পারে। নতুন করে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এবার বড়োসড়ো পরিবর্তন আনার চিন্তাভাবনা শিক্ষা দপ্তর শুরু করেছে বলে একাধিক খবর সামনে এসেছে। যেখানে শিক্ষাগত যোগ্যতার অর্থাৎ একাডেমিক স্কোর এর গুরুত্ব কমতে চলেছে আর সেই সঙ্গে বাড়তে চলেছে টেট পরীক্ষার গুরুত্ব।
সুপার টেটের (Super TET)ধারণা
সাধারণত টেট উত্তীর্ণ হলেই এতদিন মিলতো ইন্টারভিউ এর সুযোগ। কিন্তু প্রায় 2 লক্ষ টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীর ইন্টারভিউ নেওয়া খুবই জটিল বিষয়। প্রচুর সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। ফলে শিক্ষক নিয়োগের কাজে অনেক দেরি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই এবার টেটের পরীক্ষার পর অর্থাৎ যারা টেট পরীক্ষায় পাস করবেন এবং শিক্ষকতার জন্য দরখাস্ত করবেন, তাদেরকে অপর একটি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী তালিকা সংক্ষিপ্ত করার ভাবনা চিন্তা শুরু হয়েছে শিক্ষা দপ্তরের অন্দরে। এমনই একটি খবর সামনে এসেছে। যদিও এই বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
সুপার টেট নেওয়ার আনুমানিক কারণ :
এখন যদি একটি পরিসংখ্যান দেওয়া যায় যে ২০১৪ এবং ২০১৭ সালের টেট-উর্তীর্ণ বাকি প্রার্থীরা আবার ২০২২ এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পুনরায় ইন্টারভিউতে অংশগ্রহণ করবে। আবার ২০২২ এর প্রাথমিক টেটে মোট প্রায় ১.৫ লক্ষ চাকরি প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাহলে পরবর্তী ক্ষেত্রে মোট প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে মনে করা হচ্ছে। (যদিও সংখ্যাটি একটি আনুমানিক সংখ্যা মাত্র)।
সুপার টেট নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের উৎকণ্ঠা :
এখন ভাবনার চিন্তার বিষয় হচ্ছে যদি ৪০ হাজার চাকরি প্রার্থীর ইন্টারভিউ নিতে ১৫ টি ফেজ লাগে তাহলে এই ১.৮০ লক্ষ চাকরি প্রার্থীর ইন্টারভিউ নিতে বহু সময় লেগে যাবে। আর এখানেই শিক্ষা দপ্তরের চিন্তা। কারণ এই সংখ্যাটা প্রতিবছরই আরো বাড়তে থাকবে। তাই শিক্ষা দপ্তরের এখন প্রয়োজন হচ্ছে নতুন শিক্ষক নিয়োগ বিধির। ঠিক কিভাবে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থীর তালিকা আরও সংক্ষিপ্ত করে ইন্টারভিউ নেওয়া এবং দ্রুত নিয়োগ দেওয়া সম্ভব তা নিয়ে শিক্ষা দপ্তরের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এখন একটি টেট পরীক্ষার পর আবার একটি পরীক্ষাকে অনেকে সুপারটেট পরীক্ষা বলেও অভিহিত করছেন। বিশেষ করে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে এই সুপারটেট নিয়ে একটি নতুন উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের অনেকের মতে তারা একবার টেট পরীক্ষা দিয়েছেন আবার কেন টেট পরীক্ষা দেবেন! এ নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠছে, ঠিক তেমনই কেউ কেউ বলছেন দ্বিতীয়বার যদি টেট পরীক্ষা দিতেই হয় তাহলে আবার ইন্টারভিউ তারা কেন দেবেন! এখন এই সুপারটেট পরীক্ষা যদি হয় তার কিছু ভালো দিকও আছে আবার কিছু খারাপ দিকও আছে।
ভালো দিক :
যে সমস্ত চাকরিপ্রার্থীরা ইতিমধ্যেই প্রথম টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, সেই সমস্ত চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে যদি আরেকবার টেট পরীক্ষা বা সুপার টেট পরীক্ষা নেওয়া হয় তাহলে অনেক বেশি যোগ্য চাকরি প্রার্থীদের কে সনাক্ত করা যাবে।
খারাপ দিক :
এখানে যেহেতু সুপার টেট পরীক্ষাতে যারা উত্তীর্ণ হবেন তারাই একমাত্র ইন্টারভিউ দেওয়ার সুযোগ পাবেন, ফলে বেশিরভাগ টেট পাস করা প্রার্থী কিন্তু ইন্টারভিউ দেওয়ার সুযোগ পাবেন না। অর্থাৎ যদি দেখা যায় কারো একাডেমিক স্কোর হয়তো খুবই ভালো কিন্তু তিনি দ্বিতীয়বার সুপার টেট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলেন, ফলে তিনি ইন্টারভিউ থেকে বঞ্চিত হলেন। অর্থাৎ নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকেই বঞ্চিত হয়ে গেলেন। এখন দেখার বিষয় শিক্ষা দপ্তর ঠিক কি ভাবনা চিন্তা করেন।
[ আরো পড়ুন : ভারতীয়দের গণিতে অবদান, Contribution of Indians in Mathematics ]
কমানো হচ্ছে একাডেমিক স্কোর-এর গুরুত্ব(WB TET 2023)
এই একাডেমিক স্কোর নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে ইতিমধ্যেই মামলা হয়েছে। সেই মামলার এখনো বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। তাই এই সমস্ত মামলার ঝুঁকি এড়াতে এবং সকল প্রার্থীদের কে সমান সুযোগ কিভাবে করে দেয়া যায় তাই শিক্ষা দপ্তর একাডেমিক স্কোরের গুরুত্ব কমানো নিয়ে আলোচনা করছে বলে খবর। কারণ এখন মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকে ছাত্রছাত্রীরা যে হারে নম্বর পেয়ে থাকে তার সঙ্গে বিগত বছরগুলির ফলের বিস্তর ফারাক বর্তমান।
বিগত বছরগুলি থেকে এখনকার সময়ের দিকে তাকালে দেখা যায় যে বিগত বছর গুলির প্রশ্নের ধরন, তার উত্তরলেখা এবং মূল্যায়নের যে নিয়ম ছিল এখনকার দিনে তার বিস্তর পরিবর্তন ঘটেছে। আবার করোনা কালে এই একাডেমিক স্কোর-এর তফাৎ আরো বেড়ে গেছে। কারণ সেই সময় তো প্রথাগত কোনো পরীক্ষায় নেওয়া যায়নি। তাই বিগত বছরগুলির ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে এখনকার দিনের ছাত্রছাত্রীরা অর্থাৎ সকল চাকরি প্রার্থীরা তাদের মধ্যে কেউই যাতে বিশেষ কোনো সুবিধা না পান বা একের থেকে অন্যরা বঞ্চিত না হন সেটাই হয়তো সরকার দেখতে চাইছে। মূলত সেই কারণেই হয়তো একাডেমিক স্কোরের উপর গুরুত্ব কমিয়ে দিতে চাইছে শিক্ষা দপ্তর। একইভাবে জোর দিতে চাইছে টেট পরীক্ষাতে পাওয়া নম্বরের উপর।
আসন্ন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাতে (WB TET 2023) নম্বরের বিভাজনের যে নিয়মটি মানা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে (সম্পূর্ণ আনুমানিক।) সেটি নিম্নে বর্ণনা করা হলো:
মাধ্যমিক | উচ্চ মাধ্যমিক | ট্রেনিং | টেট | Extra Curricular Activities | ইন্টারভিউ | Aptitude test অথবা Teaching experience for para teachers | সর্বমোট |
5 | 5 | 10 | 15 | 5 | 5 | 5 | 50 |
এখন কথা হচ্ছে প্রাথমিক টেট একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। যে পরীক্ষার মাধ্যমে একজন প্রকৃত শিক্ষককে নির্বাচন করা হয়, সেখানে ৫০ নম্বরের মধ্যে মাত্র পাঁচ নম্বর বরাদ্দ থাকাটা সঙ্গত নয় বলেই অনেকে মনে করছেন। তাই সেই নম্বর বেড়ে ১৫ হতে পারে আবার অন্যদিকে একাডেমিক স্কোরের (মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের) ক্ষেত্রে বরাদ্দ হবে ৫ নম্বর করে। যদিও অফিসিয়াল ভাবে এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কোন খবর বা প্রতিক্রিয়া সামনে আসেনি, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফ থেকে।
FAQs:
প্রাথমিক টেট পরীক্ষা কখন হবে?
পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক টেট পরীক্ষা এ বছরেই অর্থাৎ ২০২৩ সালেই নেওয়া হতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গের প্রাইমারিতে কত নম্বরের মেরিট লিস্ট হয়?
মোট ৫০ নম্বরের মেরিট লিস্ট তৈরি করা হয়।
প্রাইমারি চাকরিতে কি অ্যাকাডেমিক স্কোরের গুরুত্ব তুলে দেয়া হবে?
না,একেবারে তুলে দেয়া হবেনা, হয়তো কিছুটা কমিয়ে দেওয়া হবে।