বন্ধু বিচার: How Will You Judge a Friend!

How will you judge a friend! –  শিক্ষনীয় ছোট গল্প: সে একটা সময় ছিল যখন নদী কথা বলতে পারতো। গাছ তার সাথে গল্প করতো। পশু-পাখী-মানুষ প্রত্যেকে প্রত্যেকের ভাষা বুঝতে পারতো – সবাই সবার সঙ্গে তাদের সুখ-দুঃখ নিয়ে কথাবার্তা বলতো, এ ওকে সাহায্য করতো। সেটা ছিল সত্যযুগ। কিন্তু সত্যযুগ হলেও সবাই যে সত্যবাদী ছিল তা নয়। ধূর্ত, বাজে প্রাণীও তখন যথেষ্ট ছিল।

Whatsapp গ্রুপে যুক্ত হন
Telegram গ্রুপে যুক্ত হন
How will you judge a friend
How will you judge a friend

এমন কালে সেই সমযে একটা বনে একটা কাক আর হরিণ বাস করতো। তাদের মধ্যে ছিল প্রচন্ড বন্ধুত্ব ও হৃদ্যতা। কেউ কাউকে না দেখে থাকতে পারতো না।

বন্ধু বিচার কিভাবে করবে (How will you judge a friend)

ভোর হলে কাক উড়ে যেত দূর দূর গাঁয়ে খাদ্যের সন্ধানে সেখানকার রাজ্যের খবরা-খবর সে আনত- কোথায় কি হোল না হোল। আর সেই সময় হরিণ বনে-বাদারে ঘুরে ঘুরে কচি ঘাস খেত আর স্থানীয় খবরা-খবর শুনতো। সন্ধ্যে হলে দু’জন বন্ধুই ঘরে ফিরে আসতো। কে কি জানলো বা শিখলো এই নিয়ে খানিকক্ষণ গল্প করতো তারপর যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়তো।

একদিন বনে হরিণ কচি কচি ঘাস খেয়ে বেড়াচ্ছে। ঘাস খেতে খেতে সে চলে গেছে প্রায় পাহাড়ের কোলে। পাহাড়ের নীচে চাষীর জমি, তাতে নানারকম ফসল ফলে চারদিক একেবারে ঘন সবুজ গালিচার মতো লাগছিল। আর এই ফসলের ওপর মিষ্টি ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যাওয়ায় মনে হচ্ছিল এক সবুজ রং-এর সমুদ্র। সে দিকে তাকিয়ে হরিণ প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছিল।

সেই পাহাড়ে বাস করতো একটা শিয়াল। হরিণকে দেখে তার লোভ হলে। সে ভাবলো, ‘এর সাথে প্রথমে বন্ধুত্ব করা দরকার, তারপর সুযোগ বুঝে এর নরম মাংস কিভাবে খাওয়া যায় তার উপায় বের করতে হবে’। যেই ভাবা সেই কাজ শিয়াল হরিণের পাশে এসে দাঁড়াল, বললো, ‘কি দেখছো হরিণ ভাই। এই জমির ফসল আর সৌন্দর্য? এ আর এমন কি! আরো কতো যে সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে এই পৃথিবীতে তা তো তুমি দেখনি। আমি দেখেচি।

শিক্ষনীয় ছোট গল্প, অন্যের কথায় কান দিও না – এইখানে ক্লিক করুন

তুমি যদি সে সব দেখতে চাও তোমায় আমি নিয়ে যেতে পারি।’ এই বলে শিয়াল হরিণের সাথে অনেক গল্প করলো, অনেক দেশ বিদেশের কথা বললো, ‘এখানকার মতো সে সব জায়গায় খাদ্যের জন্য ঘুরতে হয় না, কতো সুখাদ্য সেখানে আছে। কতো সুন্দর, সুন্দর কচি কচি ফসল আঃ দেখতে যেমন ভাল, খেতে আরো ভাল।’ কথা বলছে আর হরিণকে টেরিয়ে টেরিয়ে দেখছে শিয়াল।

হরিণের জীভ্ দিয়ে জল গড়িয়ে এলো, বড় লোভ হলো তার। তবুও সামনে গিয়ে বললো, ‘আজ থাক। সন্ধ্যে হয়ে এলো, বরং আর একদিন যাওয়া যাবে’। বুদ্ধি খেলিয়ে শেয়াল বললো, সেই ভাল, বরং চলো তোমায় আমি এগিয়ে দিয়ে, তোমার বাড়িও চিনে আসি।’ হরিণের ঘর চিনে ফিরে গেল শিয়াল।

সন্ধ্যের সময় কাক এলে হরিণ তাকে বললো, ‘ভাই কাকা আমাদের এক নতুন বন্ধু এসেছে। সে কতো না দেশের গল্প জানে তার খবরা-খবর। সে হলো এক শিয়াল।’সব কথা শুনে কাক বললো, ‘তাই বলে তার সাথে বেশী দূরে বেড়াতে যেও না। হাজার হোক নতুন বন্ধু আমরা তাকে চিনি না, জানি না। অবশ্য ভালই হলো, তুমি সারাদিন একা একা থাক। একজন পাওয়া গেল গল্প করার। দিনটা তোমার ভালভাবেই কাটবে। তবে সাবধানে থেকো।’

কাকের কথা ও পরামর্শ হরিণের তেমন ভাল লাগল না। তবুও মুখে কিছু না বলে সে চুপ করে রইলো।

পরের দিন কাক চলে গেলে শিয়াল এসে ডাকলো হরিণকে। দু’জনে মিলে দূরে, আরো দূরে অনেকদূরে বেড়াতে চলে গেল।

বিকেল বেলা কাক ফিরে এসে দেখতে পেল না হরিণকে। তার চিন্তা হলো। সে মনে মনে ভাবলো, ‘যাই একবার খুঁজে দেখি হরিণ এখনো ফিরছে না কেন’।

এদিকে ঘটে গেল আর একটা ঘটনা। হরিণকে সাথে নিয়ে শিয়াল এসেছিলো পাহাড়ের ধারে। সেখানে এক কৃষকের একটা সুন্দর ফসলের জমি। কচি কচি সব গাছ-সবে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। দেখে লোভ হলো হরিণের। শেয়াল বললো, ‘এই জমির কৃষক খুব ভাল মানুষ। আমাদের মতো সাধারণ প্রাণীর জন্য সে এসব ব্যবস্থা করে রেখেছে। তুমি স্বছন্দে এ সব খেতে পার, কৃষক কিছু মনে করবে না।’

হরিণ শেয়ালের কথা বিশ্বাস করে ফসল খেতে নামলো জমিতে আর সঙ্গে সঙ্গে জড়িয়ে গেল তার পা দু’টো ফাঁদের জালে। যতোই সে ছটফট করতে লাগলো ততোই জড়িয়ে গেল তার পা। কিছুতেই কোন ভাবে মুক্ত করতে পরলো না সে নিজেকে। নিরুপায় হয়ে সে চিৎকার করে ডাকলো শিয়ালকে। কিন্তু কোথায় শিয়াল! সে ততক্ষণে এক ঝোপের আড়ালে বসে ভাবছে, কখন ক্লান্ত হয়ে নির্জীব হয়ে যায় হরিণ। তারপর তার নরম সুস্বাদু মাংস আঃ ভাবতে ভাবতেই তার মুখের জিভ্ বেয়ে টপ্ টপ্ করে লালা ঝরতে শুরু করে দিল।

এদিকে কাক উড়তে উড়তে এসে হাজির হলো সেখানে। হরিণ তাকে সব কথা খুলে বললো। কাক হরিণের কথা শুনে বললো, ‘ভাই তুমি কোন চিন্তা করো না। আমি ওই গাছে বসে থাকবো চাষি আসছে। তুমি মরার মতো পড়ে থাকবে। চাষি যেই ফাঁদ খুলবে অমনি লাফ দিয়ে উঠে পালাবে। ঐ চাষি এসে গেল-তুমি একটুও নড়ো না-আমি চল্লাম।’

চাষি এসে হরিণকে জমিতে অমন ভাবে পড়ে থাকতে দেখে ভাবলো, ‘নির্ঘাৎ মরে পড়ে আছে। ভালই হলো। আমাকে এর পেছনে আর ছুটতে হবে না। আমার এতে কষ্টের ফসল চুরি করে খাওয়া, এর বের হয়েছে-‘এই কথা ভাবতে ভাবতে ফাঁদের জাল খুললো চাষি। সাথে সাথে কাক ডেকে উঠলো তীব্র স্বরে। বুঝতে পেরেই তড়াক্ করে লাফিয়ে উঠলো হরিণ- উর্দ্ধশ্বাসে ছুটে পালাল জমি ছেড়ে। পেছনে পেছনে উড়ে চললো কাক।

পালাতে পালাতে ভাবলো হরিণ তার অনেক শিক্ষা হয়েছে কাকের কথা না শুনে আজ তার প্রাণনাশ হয়েছিল প্রায়।

নীতি শিক্ষা (How will you judge a friend):

এখন বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়ে হরিণ-এর এক শিক্ষা লাভ ঘটল এই যে- ‘অল্প মুহূর্তের বন্ধুত্বকে বিশ্বাস করতে নেই, সামান্য যা জোটে তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়, অতিলোভ করতে নেই, নিজের দীর্ঘদিনের চেনা বন্ধুত্বর পরামর্শ যে কোন ব্যাপারে নেওয়া দরকার।’

Leave a Comment