অর্ণব চক্রবর্তী, (ইণ্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইন্সটিটিউট, কলকাতা)
সিদ্ধার্থশংকর চট্টোপাধ্যায়, (অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, বিধাননগর গভঃ হাই স্কুল) :
স্কুলশিক্ষার জগতে প্রায়শই কোনো কিছু মুখস্থ রাখার জন্য চট্ জলদি বটিকার দেখা পাওয়া যায়৷ মোগল বাদশাহরা পর্যবসিত হন বাবার জ্বর সারানোর কাহিনীতে (”বাবার হইল আবার জ্বর সারিল ঔষধে”), কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো চপলা সেজে দিদিমার দোরে ধাক্কা দেয় (”অ দিদা গো আমি চপলা”, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর নামাবলী মুখস্থ রাখার এই টোটকাটি অবশ্য আধুনিক ভারতবর্ষে আর কাজ করে না)। তা, বুদ্ধি না খাটিয়ে শর্টকাটে মেরে দেবার এইসব কায়দাতে নানা বিপত্তি ঘটে। সেই যেমন একটি ছাত্রের গল্প শুনেছিলাম, যে খামোখা ভৌতবিজ্ঞানের P = I 2R ফর্মুলাটা গুলিয়ে ফেলে P = R2 I করে ফেলতো। তাকে কে একজন মনে রাখার অমোঘ নিদান দিল-
Twinkle twinkle little star,
‘P’ is equal to I 2R
শুনে সে ভারী খুশি। পরীক্ষার হলে যেই ফের তার মাথা গুলিয়েছে, অমনি সে মনে মনে আবৃত্তি শুরু করল–
Twinkle twinkle little star
How I wonder what you are
Up above the world so high
P is equal to R2 I
তা, এটা নিছক বানানো একটা হাসির গল্প হল। এবার একটা সত্যিকারের গল্প বলব, যেটা ”শুনলে পরে হাসির চেয়ে কান্না আসে বেশী!”এই গল্পের নায়ক হল BODMAS. এর সঙ্গে পরিচয় নেই, বঙ্গদেশে এমন স্কুলপড়ুয়া মেলা ভার। তাও একটু গোড়া থেকেই শুরু করি। আমরা যেসব সংখ্যা নিয়ে কাজ করি, তাদের জন্য চারটে operation আছে, যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ এরা সকলেই binary operation, অর্থাৎ দুটো সংখ্যাকে মিলিয়ে একটা সংখ্যাতে পরিণত করে (যদিও ভাগের বেলায় একটু বাড়তি সমস্যা আছে, শূন্য দিয়ে ভাগ করা যায় না)৷
Binary operation-দের ব্যবহার করতে হলে বলে দিতে হয় কোন্ দুটো সংখ্যাকে মেলানো হবে। সেইটা বোঝানোর জন্য আমরা ব্র্যাকেট ব্যবহার করি। যেমন (2+3)−5 এর মধ্যে দুটো binary operation রয়েছে ‘+’ আর ‘−’ প্রতিটার ভোগের জন্য এক জোড়া করে সংখ্যাও নৈবেদ্য দেওয়া আছে, ‘+’ এর জন্য 2 আর 3, এবং ‘−’ টার জন্য (2+3) এবং 5. কিন্তু এভাবে প্রতিটা binary operation এর নৈবেদ্যকে আলাদা করে পাঁচিল তুলে ভাগ করতে হলে অনেক অনেক ব্র্যাকেট এসে কাঁটাফোলানো শজারুর মত দেখাবে, যেমন,
এ জিনিস লিখতেও কষ্ট, পড়তেও কষ্ট। সেই কারণে লোকে একটা প্রথা সৃষ্টি করেছে, যাতে কিছু কিছু ব্র্যাকেট আর আলাদা করে না লিখলেও আমরা ওদের উপস্থিতি বুঝে নিতে পারি। ঠিক যেমন মাষ্টারমশাই নাম ডাকার সময়ে যেই বলেন ”চোদ্দো”, অমনি ছাত্ররা বুঝে নেয় ”রোল নম্বর চোদ্দো ক্লাসে হাজির থাকলে সাড়া দাও,” সেরকম আর কি ! সেই প্রথাটা এই:
প্রথমে দেখতে হবে সবচেয়ে গভীরে কী কী ব্র্যাকেট আছে (মানে যাদের ভিতরে আর কোনো ব্র্যাকেট নেই)৷ তার ভিতরে operation-গুলোকে বাঁদিক থেকে ডানদিকে পড়তে থাকো, যদি কোনো গুণ বা ভাগ পাও, তৎক্ষণাৎ সেটা করে নাও। এইভাবে চলতে চলতে এক সময়ে সব গুণভাগ করা হয়ে যাবে। এবার ফের বাঁদিক থেকে শুরু করো, এবার একই কাজ করবে যোগ বিয়োগ নিয়ে। যেই পুরোটা করা হয়ে গেল তখন আর এই ব্র্যাকেটটা রাখার দরকার রইল না। এবার আবার বাঁদিক থেকে শুরু করো।
এই হল নিয়ম। এর মধ্যে মহান কোনো গাণিতিক তত্ত্ব নেই, স্রেফ লেখার সময়ে পরিশ্রম বাঁচানোর জন্য একটা প্রথা মাত্র। যেমন, এই নিয়ম মানলে একটু আগের সজারুটা তার চারজোড়া ব্র্যাকেটের তিন জোড়াই মোচন করে এই ভদ্রসভ্য রূপ লাভ করবে-
বাকি ব্র্যাকেটগুলোর অস্তিত্ব এখনো আছে, কিন্তু লিখে বোঝাতে হচ্ছে না। আরেকটা উদাহরণ দেখি-
এখানে খালি গুণ আর ভাগ ছিল, তাই বাঁদিক থেকে ডানদিকে করে গেলেই হল। আরেকটু জটিল উদাহরণ হবে-
কায়দাটা খুবই কঠিন লাগল কি? যাই হোক, স্কুলশিক্ষার ঐতিহ্য মেনে এর জন্যও লোকে শর্টকাট বের করেছে। এরকমই একটা শর্টকাটের নাম হল BODMAS.
BODMAS কী?
BODMAS হল একটা সংক্ষিপ্ত রূপ, এখানে B মানে ব্র্যাকেট, O মানে of, D মানে division, M মানে multiplication, A হল addition আর S হল গিয়ে subtraction. এই শর্টকাটের বক্তব্য হল- প্রথমে ব্র্যাকেটের ভিতরের কাজ করো, তারপর of, তারপর ভাগ, তারপর গুণ, তারপর যোগ এবং অবশেষে বিয়োগ। দেখতে চমৎকার, খালি তিনটে সমস্যা। একে একে বলি।
প্রথম সমস্যা
এক্ষুণি যে অমুক চন্দ্র তমুকের বই থেকে ”বাঁদিক হইতে ডানদিকে যাইবে” বললাম, সেই কথাটা কিন্তু অত্যন্ত দরকারী। যেমন যদি 3−1−1 লিখি, তবে কোন্ বিয়োগটা আগে করছি, তার উপর নির্ভর করে উত্তরটা বদলে যাবে। তাই সে বিষয়ে একটা নিয়ম থাকতে হবে। এবং ”বাঁদিক হইতে ডানদিকে যাইবে”-টাই হল সেই নিয়ম। BODMAS সেই বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব।
দ্বিতীয় সমস্যা
এক্ষুণি যে অমুক চন্দ্র তমুকের বই থেকে ”বাঁদিক হইতে ডানদিকে যাইবে” বললাম, সেই কথাটা কিন্তু অত্যন্ত দরকারী। যেমন যদি 3−1−1 লিখি, তবে কোন্ বিয়োগটা আগে করছি, তার উপর নির্ভর করে উত্তরটা বদলে যাবে৷ তাই সে বিষয়ে একটা নিয়ম থাকতে হবে। এবং ”বাঁদিক হইতে ডানদিকে যাইবে”-টাই হল সেই নিয়ম। BODMAS সেই বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব।
তৃতীয় সমস্যা
BODMAS-এর মধ্যে of বলে একটি operation-এর উল্লেখ আছে। দুঃখের কথা, এই নামে কোনো operation অংকের দুনিয়ায় নেই। কথাটা শুনে অনেকেই চমকে উঠবেন, কারণ ছেলেবেলা থেকে আমরা সকলেই এই ”of”-এর গল্প শুনে আসছি৷ এমন কি 1903 সালের একটা প্রশ্নপত্রেও এই উল্লেখ পাওয়া যায়-
শতাধিক বছর যাবৎ যে জিনিস চলে আসছে, তাকে হঠাৎ এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিলে আপত্তি উঠতেই পারে। অবশ্য বহুদিন ধরে চলে এলেই যে কোনো ধারণা সঠিক হতেই হবে, এমন কোনো কথা নেই। সতীদাহ প্রথার ঐতিহ্য এর চাইতেও গভীরতর ছিল। কিন্তু যাই হোক, এই ”of”-এর ব্যাপারটা একটু খুলে বলা দরকার। মাধ্যমিক স্কুলশিক্ষার গণ্ডীর মধ্যে আমরা যেসব সংখ্যা নিয়ে কাজ করি, তারা হল real number বা বাস্তব সংখ্যা। অংকের দুনিয়ার সব জিনিসের মতই এদেরও যাবতীয় ধর্ম, আচার, আচরণ সুস্পষ্ট নিয়মে বাঁধা। সেই নিয়মগুলিকে বলে একেকটা axiom. এদের সম্পূর্ণ তালিকা যেকোনো real analysis এর বইতেই পাওয়া যায়। এদের উপর একবার চোখ বোলালেই দেখা যাবে যে এখানে যোগ এবং গুণের কথা আছে, যোগের উল্টো হিসেবে বিয়োগের কথা আছে, এবং গুণের উল্টো হিসেবে ভাগের কথাও আছে । কিন্তু ”of” নামে কোনো কিছুর কথাই নেই। তাহলে ”of”-টা এলো কোথা থেকে? তার স্পষ্ট কারণ জানি না, তাই অনুমানের উপর নির্ভর করে বলছি।
অংক জিনিসটা abstract, কিছু symbol নাড়াচাড়ার নিয়মকানুন মাত্র। বাস্তব জগতের বিভিন্ন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জিনিসকে আমরা সেই ভাষায় প্রকাশ করতে পারি। যেমন-
বাবা দুটো আপেল দিল, মা আরো তিনটে দিল, মোট আপেল কটা হল?
এই প্রশ্নটা অংকের ভাষায় হয়ে যায় –
2+3=5.
আবার যদি বলি, দুই মাইল উত্তরে যাবার পর আরও তিন মাইল উত্তরে গেলাম, তবে সব মিলিয়ে কত দূরে গেলাম?
এরও গাণিতিক রূপ সেই 2+3=5. অর্থাৎ ”একসঙ্গে মিলিয়ে গোণা” এবং ”একই দিকে আরো দূরত্ব যাওয়া” এই দুইই অংকের ভাষায় হল যোগ। কোনো বাস্তব সমস্যায় অংক প্রয়োগ করার আগে সর্বদাই সমস্যাটকে প্রথমে অংকের ভাষায় অনুবাদ করে নিতে হয়। সেটা সহজ এমন দাবী করছি না, এবং যেকোনো শিক্ষকেরই একটা গুরু দায়িত্ব হল এই অনুবাদ প্রক্রিয়াটি শেখানো। এবং সেখানেও শর্টকাটে মারতে গিয়ে সমস্যা বাঁধে। কীভাবে বলি।
”He became nervous.” বাক্যের বঙ্গানুবাদ হিসেবে যদি কেউ লেখে ”সে নার্ভাস হয়ে পড়ল”, তবে সেটাকে সম্পূর্ণ অনুবাদ বলা যায় না, কারণ ”nervous” বা ”নার্ভাস” যাই লিখি না কেন, ওটা বাংলা শব্দ নয়। অনুবাদকারী এখানে কাজে ফাঁকি দিয়েছে। ইংরাজির বেলায় যেরকম অংকে বেলাতেও তাই। অনুবাদটা সম্পূর্ণ করা চাই। অর্ধেকটা করে বাকিটুকু ”বোঝাই যাচ্ছে” বলে চালিয়ে দেওয়াটা ঠিক নয়। ঠিক সেই সমস্যা থেকেই of এর জন্ম। যদি বলতে চাই-
ঘরে তিনটে মেয়ে আর পাঁচটি ছেলে আছে, তাদের অর্ধেকের মধ্যে চব্বিশটি লজেন্স সমান ভাগ করে দিতে হলে প্রত্যেকে কটা করে পাবে?
তবে তার গাণিতিক রূপ হবে,
সেটা না করে অনেকেই শর্টকাটে মেরে দেবার চেষ্টা করেন, এবং সম্ভবতঃ সেখান থেকেই ”of”-এর উৎপত্তি–
এটা দেখতে সহজতর, এবং মূল বর্ণনার সঙ্গে এর সাদৃশ্যও বেশী। এবং ফাঁকিটুকুর দোষ ঢাকতে বাধ্য হয়েই মিথ্যে বলতে হয় যে ”of”-ও আসলে অংকেরই একটা operation. ওটা যে আসলে গুণ এতে সন্দেহ নেই, কিন্তু ওই গুণটা ভাগের আগে না করলে হিসেব মিলবে না, অতএব ফের একটা গোঁজা চাপাতে হয় of টা গুণ হয়েও গুণাতীত, ভাগেরও আগে ওর স্থান। এইভাবে নতুন একটা operation বানিয়ে অংকের মধ্যে গুঁজে দেওয়া বিপজ্জনক। অংকের সূত্রগুলো খুব যত্ন করে তৈরী করা, যাতে ওদের মধ্যে কোথাও দুরকম মানে হয়ে যাবার সুযোগ না থাকে। তার জন্য বিস্তর লোকে মাথা খাটিয়েছে। আমরা যদি শর্টকাট করার জন্য নতুন নতুন নিয়ম ঢোকাতে থাকি, তবে তার মধ্যে ফাঁক থেকে যায় বিস্তর। যেমন একদল সৃজনশীল গুণী মানুষ এই of এর জনপ্রিয়তায় উৎসাহিত হয়ে আরেকটি গুণাতীত গুণের সৃষ্টি করে বসে আছেন।
1/2( 3 + 5 ) হল 1/2 x ( 3 + 5 ) এরই মত, কিন্তু এটিও of এর মত, ভাগের আগে করতে হবে।
এই জিনিস যে ছাত্রেরা শিখবে তাদের কি দুরবস্থা তার জাজ্বল্যমান একটি নিদর্শন সম্প্রতি নজরে এসেছে। সোশাল মিডিয়ায় কেউ একজন লিখেছিলেন, 64÷2(2+2) কত হবে?
মাস্টারমশাইরা এই নিয়ে দুই দলে ভাগ হয়ে গিয়েছেন কেউ বলেন 128, আবার কেউ বলছেন 8 মাষ্টারমশায়দেরই যদি এই দুর্গতি, তবে তাঁদের ছাত্রদের না জানি কি অবস্থা। এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের গোরা উপন্যাসের একটা জায়গা মনে পড়ল। গোরার দাদা মহিম ছাপোষা মানুষ, মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য হন্যে হয়ে পাত্র খুঁজছিলেন। এমন সময়ে গোরার বন্ধু বিনয়কে দেখে তাকে জামাই করার বাসনায় তাড়া করেছেন। বেগতিক দেখে বিনয় বলেছে ইয়ে দেখুন, আমার পরিবারের একটা নিয়ম আছে, আমরা অঘ্রাণ মাসে বিয়ে করি না। এই কথায় হতাশ মহিমের সখেদ উক্তি–”একে তো পোড়া দেশে শুভদিন খুঁজেই পাওয়া যায় না, তার উপর আবার ঘরে ঘরে প্রাইভেট পাঁজি খুলে বসলে কাজকর্ম চলবে কী করে?” আজকের যুগ কম্পিউটারের যুগ। এইরকম প্রাইভেট পাঁজি নিয়ে চলতে গেলে সেখানেও হোঁচট খেতে হবে। আমরা বীজগণিত শেখার সময়ে শিখেছি 2x আসলে 2 × x. অতএব x=2 হলে,64÷2x=64÷2×x. এবার আমরা কম্পিউটারে বা ক্যালকুলটরে যখন লিখব 64/2*x
তখন উত্তরটা মোটেই মিলবে না। তখন আমরা কোন্টা রাখব, প্রাইভেট পাঁজি নাকি কম্পিউটার? নাকি বলব, 2x মানে সব সময়ে 2 × x নয়?
কোনটা ঠিক ?
এ লেখাটি এতক্ষণ যাঁরা ধৈর্য্য করে পড়েছেন, তাঁদের অনেকেই হয়তো বলবেন, সে তো না হয় বুঝলাম, কিন্তু সরকারী বইতেও তো এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ নেই। চিন্তার বিষয় বৈ কি! আন্তর্জাতিক আধুনিক গণিতশাস্ত্র কী বলেছে তার হাওয়া তো স্কুলের পাল অব্ধি বড় একটা পৌঁছোয় না। সেখানে সিলেবাসপ্রণেতারাই বেশী গুরুত্বের অধিকারী৷ শুনেছি আমাদের দেশের অনুন্নত কিছু গ্রামে স্থানীয় দারোগার এতই দাপট যে, সেখানকার লোকেদের কাছে দারোগার কথাই দেশের আইন, তার বিরুদ্ধে আপীলও চলে না। তবু বলতেই হয় যে দেশে আইন বলে সত্যিই আলাদা কিছু একটা আছে, এবং যদি এই স্বেচ্ছাচারী দারোগাকে শায়েস্তা করতেই হয়, তবে সেই আসল আইনের দ্বারস্থ হওয়াই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা।
আমাদের বেলায় সেই আসল আইন হল অংকের সর্বজনস্বীকৃত নিয়ম৷ কথা হল সেগুলো কোথায় পাওয়া যায়? স্কুলপাঠ্য বিষয় নিয়ে সাধারণতঃ rigourous-ভাবে কিছু লেখা পাওয়া যায় না। সৌভাগ্যক্রমে, আমাদের আলোচনায় যে নিয়মগুলো লাগবে সেগুলোর rigourous সংস্করণ আছে। তার কারণ হল ক্যালকুলেটর এবং কম্পিউটার। বিশ্বের তাবৎ ক্যালকুলেটর আর কম্পিউটারের মধ্যে প্রোগ্রাম করে ঢোকানো আছে যোগবিয়োগ গুণভাগের সূত্রগুলো। যেহেতু যন্ত্রগুলোর কোনো বুদ্ধি নেই, এবং (তাদের সৃজনশীলতাও বিপদসীমার অনেক নীচে), তাই ওদেরকে বোঝানোর জন্য যে প্রোগ্রাম করা হয়, সেখানে বাধ্য হয়েই সব কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বলা থাকে, পাঠ্য বইয়ের মত গোটা কয়েক উদাহরণ দেখিয়েই দায় সারা হয় না। সেখানে যে কায়দা আছে, সেটাই হল বর্তমানে অংকের দুনিয়ার স্বীকৃত কায়দা। এই কায়দার দুটি স্তম্ভ–precedence এবং associativity. প্রথমটা বলছে বিভিন্ন ধরণের operation-এর মধ্যে কোনটা আগে কোনটা পরে করতে হবে। যোগ বিয়োগ গুণ ভাগের মধ্যে যোগ আর বিয়োগের সমান precedence, এবং গুণ আর ভাগেরও নিজেদের মধ্যে সমান precedence, এবং {×,÷} এর precedence হল {+,−}-এর চেয়ে বেশী। এবার associativity বলবে, একই precedence-এর কিছু operation পরপর থাকলে কোনটা আগে হবে৷ বাঁদিকেরটা আগে হলে left associative আর ডানদিকেরটা আগে হলে right associative. তা, আমাদের বেলায় সকলেই left associative (এই কারণেই সেই ”বাঁদিক হইতে ডানদিকে যাইবে” মন্ত্রটা কাজ করে)। যদি আমরা এমন কোনো কিছু লিখতে চাই যেটা এর বাইরে, তবে সেটা ব্র্যাকেট দিয়ে বোঝাতে হবে৷ বস্তুতঃ, যোগ করা একাধারে left associative এবং right associative. গুণও তাই। কিন্তু বিয়োগ আর ভাগ কেবলমাত্র left associative. সেই কারণে নেহাত যদি গুণ আর ভাগের মধ্যে precedence-এর তারতম্য আনতেই হয়, তবে ভাগটাই আগে করা উচিত (সেখানে BODMAS-এর সঙ্গে মিল)। কিন্তু একই যুক্তিতে যোগ বিয়োগের মধ্যে যদি precedence-এর তারতম্য চাই, তবে বিয়োগ আসবে আগে (সেখানে BODMAS হোঁচট খায়)।
Precedence আর associativity-র কায়দায় আরো অনেক কিছু সামলানো যায়। যেমন মাইনাস চিহ্নটা খালি যে বিয়োগ বোঝাতেই ব্যবহৃত হয় তাই নয়, negation বোঝাতেও কাজে লাগে, যেমন −(2+3). তাই সেটা আসলে একটা আলাদা operation, যাকে বলে unary minus. (এখানে unary মানে যেটা একটা মাত্র সংখ্যা নিয়ে কাজ করে)। এই operation-টার precedence সবার আগে। BODMAS-এর প্রবক্তারা সম্ভবতঃ এই কথাটা ভুলে গিয়েছিলেন। আরো একটা জিনিস হলো power। আমরা যখন 23 লিখি, তখন অনেক সময়েই খেয়াল করি না যে ওই “একটু উপরে উঠিয়ে লেখা” টাও আসলে একটা বাইনারি অপারেশন। ক্যালকুলেটর বা কম্পিউটারের বেলায় অবশ্য সেটা আর গোপন থাকে না, কারণ power টা বোঝানোর জন্য সেখানে কিছু একটা টিপতেই হয়। সেই অপারেশনটা কিন্তু right associative, যেমন 23³ মানে আগে 3³ করে তারপরে সেটাকে 2 এর ঘাড়ে চাপাতে হবে।
যাই হোক, এ নিয়ে আর কথা বাড়াব না। পরিশেষে আইনস্টাইনের একটা কথা উল্লেখ করি–
”যে কোনো বিষয়কেই বোঝানোর সময়ে যথাসম্ভব সহজ করে বোঝানো উচিত, কিন্তু তার চাইতেও সহজ করে ফেললেই বিভ্রাট। ”
BODMAS সূত্রটিও এইরকম একটি অতিসহজীকরণের দৃষ্টান্ত। যথাসাধ্য ভালোর চেয়ে আরো ভালো করে বোঝানোর হাতছানিতে শিক্ষকমশায়রা সাড়া না দিলেই ছাত্রদের ভবিষ্যতে মঙ্গল হবে।
অসংখ্য ধন্যবাদ: অর্ণব চক্রবর্তী, (ইণ্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইন্সটিটিউট, কলকাতা)
সিদ্ধার্থশংকর চট্টোপাধ্যায়, (অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, বিধাননগর গভঃ হাই স্কুল)
🤢 আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন: ভারতীয়দের গণিতে অবদান, Contribution of Indians in Mathematics