জীব বৈচিত্র্য ও সংরক্ষণ: Conservation of Biodiversity ppt, WB TET 2023

Conservation of Biodiversity
Conservation of Biodiversity

Conservation of Biodiversity: সংরক্ষণ কথাটির অর্থ হল যা অপ্রতুল, অর্থাৎ প্রয়োজনের তুলনায় যে জিনিসের যোগান অল্প, ভবিষ্যতের জন্য তার কিছুটা সঞ্চয় করে রাখা। পরিবেশের উপাদানগুলিকে দূষিত না করে, তাদের ভারসাম্য নষ্ট না করে, সামগ্রিকভাবে পরিবেশের সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখার উপায় কে পরিবেশ সংরক্ষণ বলে।

Whatsapp গ্রুপে যুক্ত হন
Telegram গ্রুপে যুক্ত হন

আজকের এই প্রতিবেদনে জীব-বৈচিত্র্য এবং সংরক্ষণ (Conservation of Biodiversity) সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হলো:

জীব বৈচিত্র্য ও সংরক্ষণ (Conservation of Biodiversity)

→ প্রজাতিগত জীববেচিত্র্য বা স্পিসিজ ডাইভার্সিটি বলতে কি বোঝায়?

উঃ কোন নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বিভিন্ন প্রজাতির সমাহারকে প্রজাতিগত জীববৈচিত্র্য বা স্পিসিজ ডাইভার্সিটি (species diversity) বলে।

→ প্রজাতি প্রাচুর্য বা স্পিসিজ রিচনেস কাকে বলে?

উঃ কোন নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর অন্তর্গত প্রজাতির মোট সংখ্যাকে প্রজাতি প্রাচুর্য বা স্পিসিজ রিচনেস (species richness) বলে।

→ গার্হস্থ্য জীববৈচিত্র্য কাকে বলে?

উঃ গবেষণা ও প্রযুক্তির মাধ্যমে অথবা বিভিন্ন ভৌত পরিবেশে অভিযোজনের মাধ্যমে উদ্ভূত বিভিন্ন জাতের উদ্ভিদ, শস্য গৃহপালিত প্রাণীর সমাহারকে গার্হস্থ্য জীববৈচিত্র্য বলে। যেমন— কীট প্রতিরোধক জাতের ধান, উচ্চ উৎপাদনশীল জাতের গম ইত্যাদি।

→ বাস্তুতান্ত্রিক জীববৈচিত্র্য বা ইকোসিস্টেম ডাইভার্সিটি কাকে বলে?

উঃ বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রে বিভিন্ন জৈব এবং অজৈব উপাদানের হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন জীবপ্রজাতির সমাহারকে বাস্তুতান্ত্রিক জীববৈচিত্র্য বা ইকোসিস্টেম ডাইভার্সিটি বলে।

→ বাস্তুতান্ত্রিক জীববৈচিত্র্য নির্ধারণের সূচকগুলি কি কি?

উঃ হুইটেকার (Whittaker) [১৯৭২]-এর মত অনুসারে বাস্তুতান্ত্রিক জীববৈচিত্র্য নির্ধারণের তিনটি সূচক আছে। যেমন— (১) আলফা বৈচিত্র্য, (২) বিটা বৈচিত্র্য, (৩) গামা বৈচিত্র্য।

→ আলফা বৈচিত্র্য কাকে বলে?

উঃ একটি নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক বাসভূমি (habitat) অথবা একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী (community)-র মধ্যে প্রাপ্ত জীববৈচিত্র্যকে আলফা বৈচিত্র্য বলা হয়।

→ বিটা বৈচিত্র্য কাকে বলে?

উঃ আন্তঃ প্রাকৃতিক বাসভূমি (habitat) অথবা আন্তঃগোষ্ঠী (inter-community) জীববৈচিত্র্যকে বিটা বৈচিত্র্য বলা হয়। এক্ষেত্রে বাসভূমি বা গোষ্ঠীগত বিভিন্নতার ভিত্তিতে সৃষ্ট পরিবেশের পার্থক্য অনুসারে জীববৈচিত্র্য ঘটে।

WB Primary TET Mock Test 1

→ গামা বৈচিত্র্য কাকে বলে?

উঃ যে কোন বৃহদায়তন ভৌগোলিক অঞ্চল (যেমন— হিমালয় অঞ্চল, মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চল, ল্যাটেরাইট অঞ্চল ইত্যাদি)-র মধ্যে পরিবেশ, প্রাকৃতিক বাসভূমি এবং গোষ্ঠীগত বিভিন্নতার জন্য উদ্ভূত জীববৈচিত্র্যকে গামা বৈচিত্র্য বলা হয়।

→ জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হয় কেন?

উঃ জীববৈচিত্র্য নানা কারণে বিনষ্ট হয়, যেমন

(১) পরিবেশ দূষণের জন্য।

(২) জীবগোষ্ঠীর প্রাকৃতিক বাসভূমি বা স্বাভাবিক বাসস্থান (habitat) বিনষ্ট হওয়ার জন্য। (৩) বিদেশ অর্থাৎ অন্য কোন জায়গা থেকে আসা জীবপ্রজাতির আগ্রাসনের কারণে। উল্লেখ্য যে কুচুরিপানা (water hyacinth), ল্যানটানা (lantana), ইউক্যালিপটাস (eucalyptus) প্রভৃতি বিদেশী উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে আগ্রাসী বৈশিষ্ট্য আছে।

→ বিপন্ন বা লুপ্ত প্রায় জীব প্রজাতি সম্পর্কে তথ্য কোথা থেকে পাওয়া যেতে পারে? রেড ডাটা বুক কাকে বলে?

উঃ আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা (International Union for Conservation of Nature and Natural Resources IUCN) বিপন্ন বা লুপ্তপ্রায় জীব প্রজাতি সমূহের একটি বিশদ তালিকা প্রকাশ করেন। এটি রেড ডাটা বুক (Red Data Book) নামে পরিচিত।

→ গ্রীন ডাটা বুক কাকে বলে?

উঃ যে তালিকায় অবলুপ্তির বিপদ থেকে মুক্ত জীবপ্রজাতিসমূহের উল্লেখ থাকে, তাকে গ্রীন ডাটা বুক (Green Data Book) বলে।

→ ব্ল্যাক ডাটা বুক কাকে বলে?

উঃ যে তালিকায় ধ্বংসসাধক বা হানিকর জীবপ্রজাতিসমূহের উল্লেখ থাকে, তাকে ব্ল্যাক ডাটা বুক (Black Data Book) বলে।

→ বিলুপ্তির আপেক্ষিক প্রবণতা বা আশঙ্কার ভিত্তিতে বিপন্ন প্রজাতিকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কি কি?

( ‘রেড ডাটা বুক” অনুসারে বিপন্ন প্রজাতিকে অবলুপ্তির প্রবণতা ও গুরুত্বের সাপেক্ষে আট ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—

(১) লুপ্ত (Extinct) [Ex]: যে প্রজাতির জীবকে বিগত ৫০ বছরে দেখা যায়নি বা খোঁজ পাওয়া যায়নি, যেমন— মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার হারলিক্যুইন ব্যাঙ।

(২) বিপন্ন (Endangered) [E]: যে প্রজাতির জীবের বিলুপ্তির আশঙ্কা আছে এবং বিলুপ্তির কারণগুলি বর্তমান থাকলে যাদের পুনরুদ্ধার করার সম্ভাবনা কম। যেমন— উদ্ভিদের মধ্যে সর্পগন্ধা, কলসপত্রী, গরাণ, সুন্দরী ইত্যাদি। প্রাণীদের মধ্যে কস্তুরী মৃগ, ভারতীয় একশৃঙ্গ গন্ডার, নীল তিমি, এশিয়াটিক সিংহ ইত্যাদি।

(৩) বিপদাপন্ন (Vulnerable) [V] : যে প্রজাতির জীব বিপন্নতার কারণগুলি বজায় থাকলে, ভবিষ্যতে বিপদাপন্ন হতে পারে, যেমন— শকুন, চড়াই।

(8) বিরল (Rare) [R] : যে প্রজাতির জীবের সংখ্যা অল্প। এদের বর্তমানে বিপদাপন্ন বলা না হলেও ভবিষ্যতে এদের অস্তিত্ব বিপদের সম্মুখীন হতে পারে।

(৫) অনির্দিষ্ট (Indeterminate) [I]: যে প্রজাতির জীব বিপন্ন বা বিপদাপন্ন বা বিরল শ্রেণীর সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়।

(৬) স্বল্প জ্ঞাত (Insufficiently known) [K] : যে প্রজাতির জীবকে তথ্যের অভাবের জন্য কোন নির্দিষ্ট শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি।

(৭) বিপদের লক্ষণযুক্ত (Threatened) [T]: বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন, সামাজিক উৎসব (যেমন— আদিবাসীদের শিকার) বা অন্য কোন সামাজিক কারণে যে জীবপ্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে বিপদের আশঙ্কা আছে।

(৮) বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিপদের লক্ষণযুক্ত (Commercially Threatened) [CT] : যে সমস্ত জীবপ্রজাতির বাণিজ্যিক ব্যবহার আছে যেমন যে জীব প্রজাতি ওষুধ তৈরি করতে দরকার হয় বা যে সব জীবজন্তুর লোম, চামড়া ইত্যাদি শিল্পের কাঁচামাল বা যে সমস্ত গাছপালার বাণিজ্যিক গুরুত্ব রয়েছে, অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে তাদের অস্বিত্ব যদি বিপন্ন হয়।

→ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও প্রয়োজনীয়তা কি?

উঃ (১) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে প্রাকৃতিক পরিবেশে খাদ্য-শৃঙ্খল অটুট রাখা যায়। যেমন— সবুজ উদ্ভিদকে খায় ঘাসফড়িং। ঘাস ফড়িংকে খায় ব্যাঙ। ব্যাঙকে খায় সাপ। সুতরাং সাপ সংরক্ষণ করলে প্রকৃতিতে ব্যাঙের সংখ্যা বাড়বে না। ব্যাঙের সংখ্যা না বাড়লে ঘাসফড়িঙের সংখ্যা বাড়বে না। ঘাসফড়িঙের সংখ্যা না বাড়লে ঘাসপাতা আগাছার পরিমাণও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে না।
(২) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে প্রাকৃতিক পরিবেশে অক্সিজেনের যোগান অক্ষুণ্ন রাখা যায়। (৩) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে বাস্তুতন্ত্রকে অটুট রাখা যায়। ফলে প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকে। (৪) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে প্রাকৃতিক পরিবেশে জীবজন্তুর বাসভূমি বা হ্যাবিট্যাট্ (Habitat) অটুট রাখা যায়।

(৫) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে লুপ্তপ্রায় জীবজন্তুকে রক্ষা করা যায়। যেমন— কৃষ্ণসার হরিণ (Black buck deer), লজ্জাবতী বাঁদর (Loris), তুষার চিতা (Snow leopard), ধনেশ পাখি (Great Indian Horn bill) ইত্যাদি।

(৬) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা যায়। যেমন— জলদাপাড়া অভয়ারণ্য (গন্ডার, বন্যশূকর সংরক্ষণের জন্য); সিমলিপাল অভয়ারণ্য (বাঘ সংরক্ষণ); বেথুয়াডহরি মৃগ উদ্যান (হরিণ সংরক্ষণ) ইত্যাদি।

(৭) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে জীবজন্তু সম্বন্ধে গবেষণা করা যায়। জ্ঞান লাভ করা যায়। (৮) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে জীবজন্তুর নিজস্ব পরিবেশে তাদের বিকাশ ও বিবর্তনের ধারা অব্যাহত রাখা যায়।

→ পৃথিবী থেকে বর্তমানে প্রাকৃতিক কারণে নিশ্চিহ্ন বা অবলুপ্ত হওয়া কয়েকটি প্রধান প্রাণী কি কি?

উঃ (১) সামুদ্রিক কাঁকড়া বিছে। নাম — ইউরেপটেরিড। প্যালিওজোয়িক যুগে অর্থাৎ ২৮–৫৭ কোটি – বছর আগে অবলুপ্ত।

(২)আদিম সরীসৃপ। নাম কটাইলোসরাস্। মেসোজোয়িক যুগে অর্থাৎ ১৩-৫–২২.৫ কোটি বছর আগে নিশ্চিহ্ন।

(৩) পৃথিবীর সর্বকালের বৃহত্তম স্থলচর প্রাণীগোষ্ঠী। নাম—ডাইনোসর। মেসোজোয়িক যুগের শেষে প্রায় ১৯ কোটি বছর আগে নিশ্চিহ্ন।

(৪) বড় বড় লোমওয়ালা বিরাট দাঁতাল হাতি। নাম ম্যামথ। কেনোজোয়িক যুগে অর্থাৎ প্রায় ৬.৫ কোটি বছর আগে অবলুপ্ত।

(৫) সরীসৃপ ও পাখির মাঝামাঝি প্রাণী। নাম আরকেয়প্‌টেরিক্স। মেসোজোয়িক যুগ অর্থাৎ ১৩.৫–২২-৫ কোটি বছর আগে নিশ্চিহ্ন।

→ মানুষের হাতে পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হওয়া কয়েকটি প্রধান প্রাণী কি কি?

উঃ মানুষের লোভ, চাহিদা, আর আমোদ-প্রমোদের তাগিদ মেটাতে গিয়ে কয়েকলক্ষ প্রজাতির প্রাণী পৃথিবী থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এদের নাম, পূর্বতন বাসস্থান, বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে অনেক মূল্যবান বই লেখা হয়েছে। এ বিষয়ে কয়েকজন প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক হলেন জি. এম. অ্যালেন (১৯৪২), পি. এইচ. হারপার (১৯৪৫), জেঁ. সি. গ্রিনওয়ে (১৯৫৮), ভি. জিসওয়ালার (১৯৬৭) ইত্যাদি। মানুষের লোভ ও অবিবেচনার শিকার হয়ে অবলুপ্ত হওয়া এমন কয়েকটি প্রাণী হল–

  • (১) মরিসাস দ্বীপের ডোডো পাখি;
  • (২) নিউজিল্যান্ডের মোয়া পাখি, হুইয়া পাখি;
  • (৩) উত্তর আমেরিকার ল্যাব্রাডর হাঁস;
  • (৪) ভারতের চিতা;
  • (৫) মেরু অঞ্চলের পেঙ্গুইন জাতীয় পাখি, নাম গ্রেট অক্ ইত্যাদি।

→ লুপ্তপ্রায় কয়েকটি প্রধান প্রাণী কি কি?

উঃ (১) স্তন্যপায়ী : (ক) কৃষ্ণসার হরিণ, (খ) ভারতীয় বন্য গাধা, (গ) কস্তুরী মৃগ, (ঘ) তুষার চিতা, (ঙ) বাঘ ইত্যাদি।

(২) সরীসৃপ : (ক) কুমীর, (খ) মেছোকুমীর প্রভৃতি।

(৩) পাখি : (ক) ময়ূর, (খ) রাজধনেশ, (গ) সাদা কানওয়ালা ফেজেন্ট, (ঘ) সাদা ঠোঁটওয়ালা সিন্ধু ঈগল, (ঙ) বড় বাজ ইত্যাদি।