Instructive short story: শিক্ষনীয় ছোট গল্প, অন্যের কথায় কান দিও না

Instructive short story: আজকের নীতি শিক্ষার গল্পের আসরে, একটি ছোট্ট গল্পের মাধ্যমে আমরা জানবো, জেদ আর নির্বুদ্ধিতার জন্য কিভাবে ক্ষতি হতে পারে এবং অন্যের কথায় সবসময় চলতে গেলে মানুষের কি ক্ষতি হয়। তাহলে শুরু করা যাক শিক্ষনীয় ছোট গল্প, “অন্যের কথায় কান দিও না।”

Whatsapp গ্রুপে যুক্ত হন
Telegram গ্রুপে যুক্ত হন

Instructive short story:

বিরিঞ্চিপুর গ্রামে এক ধনী কৃষকের একটা গাধা ছিল। সে সময়ে ধনী লোকেদের গাধা বা ঘোড়া পোষার এক রীতি ছিল। মোট বওয়া বা নিজেদের চলাফেরার জন্য তারা এসবকে কাজে লাগাত। কৃষকের ছেলের নাম ছিল গোবর্ধন। গোবর্ধনের আর গুরুগৃহে থাকা সম্ভব হলো না। সে ছিল এতোই মূর্খ এবং অলস যে, তার শিক্ষা সম্পূর্ণ হবার আগেই গুরু তাকে বাসায় পাঠিয়ে দেন। ফলে গোবর্ধনের কাজ হলো জমির ফসল হাটে নিয়ে যাওয়া এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করে অর্থ রোজগার করা। কিন্তু তাতেও তেমন করে না উঠতে পারায় কৃষক বাপ্ একদিন ছেলেকে নিয়ে চললো দূর গ্রামের এক হাটে। সেখান থেকে যদি এমন কিছু করা সম্ভব হবে। সাথে রইলো তাদের গাধা। গাধার দড়ি টেনে চললো ছেলে আর বাবা।

গ্রাম ছাড়িয়ে দূর দেশের এক গ্রামে গিয়ে তারা পৌঁছলো। হাঁটতে হাঁটতে একটা নদী পেরোল। এই গ্রাম পেরিয়ে নতুন গ্রাম, সেখানেই সেই হাট।

নতুন গ্রাম জমজমাট, সমৃদ্ধ। সেই গ্রামে ঢোকা সাথে সাতে পথে একদল ছেলের সঙ্গে তাদের দেখা হলো। ছেলেরা তাদের দেখে বলাবলি করতে লাগলো, লোকটা ভীষণ বোকা, নিজেও হাঁটছে আর ছোট ছেলেটাকেও হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অনায়াসেই একজন গাধার পিঠে চড়ে যেতে পারে।’

Instructive short story
Instructive short story

কথাটা বাপের কানে গেল। কিছু দূরে গিয়ে পিছনে ফিরে ছেলের দলকে না দেখতে পেয়ে বাপ্ তাড়াতাড়ি গোবর্ধনকে বসিয়ে দিল গাধার পিঠে এবং নিজে হেঁটে চললো।

এমন সময় একদল বৃদ্ধ লোক আসছিল কথা বলতে বলতে। তাদের দেখে এক বৃদ্ধ বললো, ‘এই ছেলেটার বুদ্ধি দেখেছো। বুড়ো বাপ যাচ্ছে হেঁটে আর নিজে যাচ্ছে গাধার ওপর বসে। বাপের যে কষ্ট হচ্ছে -সেটা বাপই বোঝে –” বুড়োর কথা শুনে ছেলে লজ্জা পেয়ে গেল। সাথে সাথে গাধার পিঠ থেকে নেমে পড়লো সে।

বৃদ্ধদের উদ্দেশ্য করে বললো, ‘আপনারা ঠিকই বলেছেন আমার বড় অন্যায় হয়েছে।’ বলে বাপ্‌কে সে তুলে বসাল গাধার পিঠে এবং নিজে চললো হেঁটে গাধার দড়ি ধরে। এমন ভাবে কিছুদূর যাবার পর তাদের সাথে দেখা হলো একদল স্ত্রী লোকের। তারা গোবর্ধনের বাবাকে দেখে বলে উঠলো, ‘দেখলে আক্কেল বুড়োটার ওইটুকু ছেলেকে হাঁটিয়ে নিয়ে আর নিজে গাধার পিঠে আরাম করে বসে চলেছে হাটের দিকে –’।

কথাটা কানে যেতে বাবা গাধার পিঠে ছেলেকে চড়িয়ে নিল। তারপর বাপ ছেলে দুজ’নেই বলাবলি করলো যাক্ এবার আর কেউই কিছু বলবে না। কারণ আমরা দু’জনেই গাধার পিঠে চড়ে যাচ্ছি –। ইস্, এই বুদ্ধিটা যদি আগে আমাদের – মাথায় আসতো।

Also read: আপনার সন্তানকে আদরে বাঁদর করবেন না: Role of parents in child development

এমন সময়ে তাদের দেখা হলো এক পথিকের সঙ্গে। গাধার পিঠে তাদের দেখে পথিক অবাক হলো। এদিকে এতো দীর্ঘপথ হেঁটে আসার জন্য গাধাটাও হাঁপিয়ে গেছে। তার দম নেয়া ও ছাড়ার সময় মুখ দিয়ে গ্যাজলা বেরোচ্ছে।
পথিক বললো, ‘এ গাধার মালিক কে?’

বৃদ্ধ কৃষক বললো, ‘কেন আমার। আমি এর মালিক।’

পথিক বললো, ‘মনে তো হয় না। তোমার যা আচরণ দেখছি, দু’জনে এক সাথেই বসেছো এই ছোট্ট জীবটার পিঠে। অনেক কষ্ট দিয়েছো বেচারা গাধাটাকে। এখন বরং একেই তোমার পিঠে বয়ে নিয়ে বাকী পথটা যাও। দেখছোতো মুখ দিয়ে গ্যাজলা বেরোচ্ছে? ভগবান তোমাদের ক্ষমা করবেন না। এইটুকু এক প্রাণী তার ওপর এতো অত্যাচার করছো তোমরা!” বলতে বলতে পথিক চলে গেল। পথিকের কথা শুনে দু’জনেই নেমে পড়লো গাধার পিঠ থেকে।

ছেলে বললো, ‘এখন কি করবো আমরা কার কথা শুনবো? এক একজন এক এক ধরনের কথা বলছে?’ তখন দু’জনে মিলে গাধাটাকে টেনে যাবার চেষ্টা করলো। কিন্তু গাধা আর নড়ে না, এক জায়গাতেই শক্ত ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। তাকে এক চুলও নড়ান যায় না। উল্টে চীৎকার করে ডাক ছাড়ে। গাধার চীৎকারে অনেক লোকের সমাগম হয়ে গেল। শেষে একটা বুদ্ধি খেলে গেল চাষীর মাথায়। একটা লম্বা বাঁশ নিয়ে এসে গাধার চারটে পা শক্ত করে বেঁধে নিল। তারপর দু’জনে কাঁধে তুলে নিল গাধাটাকে।

হাটের সামনে একটা কাঠের সাঁকো। তার তলায় একটা খরস্রোতা নদী। লোকগুলো তাদের পেছনে হই-হই করতে করতে আসছে এবং মজার দৃশ্য দেখছে। এ রকম ঘটনা কবে কোথাও দেখেছে কি না তাও বলাবলি করছে। চাষী আর তার ছেলে যখন সাঁকোর কচ্‌মচ্ শব্দে আর ‘মানুষের চিৎকারে গাধাটা ছটফট করতে লাগলো। একটা জীবন্ত গাধাকে এভাবে নিয়ে যেতে দেখে সবাই হাততালি দিতে লাগলো, হাসাহাসি করতে লাগলো। গাধাটা তখন ভয়ে ভীষণ ভাবে ছটফট করে পায়ের দড়ি ছিঁড়ে পড়ে গেল নদীতে।

গাধাটা নদীতে পড়ার সময় এই শিক্ষা পেল, যে ‘আমার জেদ আর নির্বুদ্ধিতার জন্যই এই ভাবে মরতে হলো।

আর চাষী ও তার ছেলে তাদের এই ক্ষতির জন্য এই শিক্ষা পেল যে ‘অন্যের কথায় কান না দিয়ে নিজের কাজ করে যাওয়া উচিত। তাতে ভুল হলে আফশোষ থাকে না, শুধরে নেয়া যায়।