Sant Surdas Story- “হাত ছাড়িয়ে যাচ্ছ প্রভু দুর্বল জেনে আমায়, বুঝিব তোমার শক্তি হৃদয় থেকে বেড়িয়ে গিয়ে দেখাও “ – এমন কথা যিনি বলেছিলেন- কে তিনি? স্বয়ং ভগবান এসে একাগ্রভাবে শুনতেন ওনার ভজন, অথচ তিনি জন্মান্ধ ( Surdas was blind from birth ) ছিলেন।
স্বামী যবন হরিদাস, মিরাবাই এর মতোই সঙ্গীতের মাধ্যমে ভগবানকে প্রাপ্ত করেছিলেন সন্ত সুরদাস জী।
তাঁর বিখ্যাত পদ –
“प्रभू मोरे अवगुण चित न धरो ।
समदरसी है नाम तिहारो, चाहे तो पार करो ” ॥
সুরদাস জির জন্মস্থান
মধ্যযুগের সময় ষোড়শ শতকে দিল্লির নিকটবর্তী সিরি নামক এক গ্রামে স্বারসত ব্রাহ্মণ পরিবারে সুরদাসজী জন্মগ্রহন (surdas born date) করেন, ১৪৭৮ সালে।
ভক্তমালা গ্রন্থে জানা যায়, সুরদাসজী জন্মাবধি অন্ধ ছিলেন।
সুরদাস জির সাধনা
একটি পিপুল গাছের নীচে বসে ভজন গাইতেন। তিনি নিয়মিত ভগবান শ্রী কৃষ্ণের ভজন গাইতেন।
এটা দেখে এক সাধু তাকে বললেন –
“ আপনি কোনো মন্দিরে যান, আর ওখানে গিয়ে বরং ভজন গান করুন “।
-তিনি তাই করলেন। চলে গেলেন অনেক দূরে মথুরার এক মন্দিরে, আর সেখানেই বসে বসে ভজন গান গাইতে শুরু করলেন। না কিছু দেখতে পেতেন, না ভগবানের বিগ্রহকে কোনো দিন দেখেছেন। তবু তিনি খুব সুন্দর শ্রীকৃষ্ণের ভজন গাইতেন।
জানা যায়, তিনি পুষ্টিমার্গীয় ধারায় দীক্ষিত হয়েছিলেন।
এবং আরো শোনা যায় তিনি মহাপ্রভু শ্রীবল্লভাচার্যদেবের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। এরপর ধীরে ধীরে তিনি ভজন সিদ্ধ হয়ে উঠলেন।
সূরদাস জির কৃষ্ণ দর্শন (Sant Surdas Story)
শোনা যায়, ইনি যখন কৃষ্ণ-মন্দিরে ভজন গাইতেন তখন সরাসরি ভগবান কৃষ্ণের দর্শন পেতেন মনের মনোমন্দিরে। ভগবান কৃষ্ণ তাকে কৃপা করে সত্যিই দর্শন দিতেন, স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ সুরদাসের ভজন শোনার জন্য আসতেন, বালক রূপে তাঁর নিকট বসে থাকিতেন।
জানা যায়, একদিন সুরদাসজী মন্দিরের পূজারীকে বলেছিলেন–“ভগবানকে (বিগ্রহকে) হলুদ বসনে খুব সুন্দর লাগছে”।
পূজারী তখন বললেন–“তুমি কি করে বুঝলে? তুমি তো দৃষ্টিশক্তিহীন।”
তখন সুরদাসজী বললেন- “আমি প্রতিদিন আমার ভগবানের দেখা পাই; তবে দৃষ্টি শক্তিতে নয়, আমার মনের দৃষ্টিতে দেখা পাই।”
এরপর পূজারী পরীক্ষা করার জন্য পরের দিন সুরদাসকে না জানিয়ে ভগবানের বিগ্রহকে নীল বসন পরালেন।
সুরদাসজী সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন–“বাহ! আজ ভগবানকে নীল বসনে আরো খুব সুন্দর লাগছে”।
পূজারী তো আরো অনেক বেশি অবাক হলেন।
পরের দিন পূজারী ভগবানের বিগ্রহে কোনো বসন দিলেন না। কেবলমাত্র পত্র দিয়ে ঢেকে দিলেন।
ঠিক সেই দিন সুরদাস তার ভজনে গেয়ে উঠলেন—–
–“ভগবান গরীব হুয়ে আজ, পত্তো মে বিরাজে”।
পূজারী সহ মন্দিরের সকলে সেই ভজন শুনে বিস্মিত হয়ে গেলেন।
প্রসিদ্ধ একটি ঘটনা (Sant Surdas Story)
আরো খুব প্রসিদ্ধ একটি ঘটনার কথা জানা যায়, একদিন বৃদ্ধাবস্থায় পথ চলতে চলতে সুরদাসজি এক কুপের মধ্যে পড়ে যান এবং সেখানে আকুলভাবে কৃষ্ণের দর্শন ও সাহায্য প্রার্থনা করেন। পরে ভগবানের সত্যি সত্যিই কৃপা হয়েছিল ; তিনি তাহার শ্ৰীহস্তে সুরদাস কে উঠালেন, শুধু উঠালেনি না, নিজ স্পর্শে সুরদাসকে দৃষ্টি দিলেন । জন্মান্ধ সুরদাস নবলব্ধ দৃষ্টির সম্মুখে সবার প্ৰথমে শ্ৰীভগবানের অপরূপ রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি তখন ভগবানের হাত ধরেছিলেন। যখন ভগবান সে হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে লাগলেন, তখন সুরদাসজী গেয়ে উঠেছিলেন সেই বিখ্যাত ভজন…..
“হাত ছাড়িয়ে যাচ্ছ প্রভু দুৰ্বল জেনে আমায়, বুঝিব তোমার শক্তি হৃদয় থেকে বেড়িয়ে গিয়ে দেখাও “।
( যদিও গানটির আসল ভাষাটি হিন্দিতে আছে)
আজও সন্ত সমাজে ভক্ত সুরদাসের জয়ধ্বনি দেওয়া হয়। ভক্ত চরিত শ্রবণে হৃদয় নির্মল হয়, ভগবৎ কৃপা লাভ হয়। এইরূপ শত শত সন্ত আছেন পবিত্র ভারত ভূমিতে – তাঁদের শ্রীচরণেকমলে শত কোটি দন্ডবৎ প্রণতি।