Teach your child to read: আপনার সন্তানকে বই পড়তে শেখান

Teach your child to read: আপনার সন্তানকে ছোটবেলা থেকে বইয়ের সাহচর্যে বড় হতে শেখান। যে বাচ্চা যে বয়েসে আছে তাকে সেই বয়সের উপযোগী বই এনে দিন। আমাদের অনেকেই বইয়ের দাম অনেক বেশি এই অজুহাতে বই কিনতে চাই না। সেই কতকাল আগে মুজতবা আলী লিখেছিলেন – ‘বই কিনব, অত কাঁচা পয়সা কোতায় বাবা??”

Whatsapp গ্রুপে যুক্ত হন
Telegram গ্রুপে যুক্ত হন

সেই কথা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক, আমরা খুব সহজেই তিরিশ টাকা জোড়া ফুলকপি, ছত্রিশ টাকা ডজন কলা কিংবা চারশো টাকা কেজি ইলিশ মাছ কেনার কথা ভাবতে পারি কিন্তু বাড়ি ফেরার সময় ছেলেমেয়ের জন্য একটি পঞ্চাশ টাকা দামের বই কিনে আনার কথা ভাবতে পারি না। এই প্রসঙ্গে বিভিন্ন আনন্দ উৎসবে উপহার দেওয়ার কথা বলা যেতে পারে। আজকাল কারণে অকারণে নানা অনুষ্ঠান উপলক্ষে আমরা ছেলেমেয়েদের নানান উপহার দিয়ে থাকি – জন্মদিন, পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা, কোন অনুষ্ঠানে ভালো নাচ / গান করা, নতুন বছর শুরুর দিন, বড়দিন, পয়লা বৈশাখ, পূজো, ঈদ এমন কত উপলক্ষে অথবা অকারণেও উপহার দিয়ে থাকি আমরা।

Teach your child to read
Teach your child to read

বইয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ উপহার আর কিছু নেই

একটা সময় পর্যন্ত বই ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ উপহার। কিন্তু এখন যদি আপনি কোন অনুষ্ঠানে বই উপহার দেন তাহলে আপনাকে ‘ব্যাক ডেটেড’ বিবেচনা করেন অনেকে। যাঁরা এরকম ভাবেন তাঁরাই আসলে ভীষণ ‘ব্যাক ডেটেডে’। একমাত্র বই-ই মানুষের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও চিরজীবনের সবচেয়ে ভালো বন্ধু হতে পারে। অনেকের আবার ধারণা ইন্টারনেট, ইমেল –এর যুগে বই আর থাকবে না এ ধারনা সম্পূর্ণ ভুল । যদি যোগযোগের এই উন্নত মাধ্যমগুলি বইয়ের বিকল্প হতো তাহলে উন্নত দেশগুলিতে (আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানী, যুক্তরাজ্য) যেখানে অনেক আগে থেকে এইসব আধুনিক যোগাযোগ ও জ্ঞানার্জনের মাধ্যম চালু হয়েছে সেখান থেকে বই কি এতদিনে ধ্বংস হয়ে যেতো না? কিন্তু বই আজও স্বমহিমাতে বিশ্বজুড়ে তার রাজত্ব বজায় রেখেছে এবং তার সীমা দেশ থেকে দেশান্তরে বাড়িয়ে চলেছে।

[Also read আপনার সন্তানকে আদরে বাঁদর করবেন না: Role of parents in child development]

ছোট বাচ্চাকে দামী খেলনা, কেক, গহনা কিনে দিচ্ছেন দিন কিন্তু তার সাথে অবশ্যই নিয়ম করে ওদের হাতে তুলে দিন বয়সোপযোগী বই। অনেকে ভাবেন ছোটদের বই কিনে দিলে ওরা ছিঁড়ে ফেলবে, নষ্ট করবে। বড় হোক বই কিনে দেবো, এখন থাক। অথচ ভেবে দেখুন আপনার কিনে দেওয়া খেলনা রেলগাড়ি ভাঙতে আপনার আদরের ছোট্ট সোনামণি কতক্ষণ সময় নিয়েছিল? বইকে খেলনা ভাবতে শেখান। ছোট্ট ছেলে মেয়েকে সুন্দর ছবি ও লেখা সহ বইপত্র দিন। দুয়েকটা পাতা যদি ছেঁড়ে তো ছিঁডুক না। ধীরে ধীরে দেখবেন বইয়ের প্রতি একটা টান তৈরি হবে। ভালোবাসতে শিখবে নিজের খেলনার মত নিজের প্রিয় বইগুলিকেও। আপনার সন্তানের জন্মদিনে অন্য যে যাই দিক আপনারাও যাই দিন তার সাথে ভালো কয়েকটি বই কিনে দিন।

Teach your child to read

বই কেনার ব্যাপারটা অবশ্য আমাদের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যার। সমস্যাটা অঞ্চল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন। বিষয়টা নিয়ে একটু বিশদে আলোচনা করা যেতে পারে। প্রথমে নজর দেওয়া যাক গ্রামের দিকে। যাঁরা গ্রামে মানে সত্যিকারের গ্রামে থাকেন তাদের প্রধান সমস্যা হল দরকারের সময় সঠিক বইটি হাতে পাওয়া। বইয়ের দোকান বলে গ্রামে কিছু থাকে না আলাদা করে। একটি বা দুটি দোকানে ‘সীজনে’ বই (পাঠ্য বই) পাওয়া যায়। বাকি সময় খান চারেক শরৎ, বঙ্কিম কিংবা রবীন্দ্রনাথের মলাট সর্বস্ব বই ধূলোমাখা রঙ চটা হয়ে পড়ে থাকে।

এইখানে একটু দ্বিমত আছে, বই বিক্রেতারা বলেন বই বিক্রি হয় না বই এনে কি করব আর ক্রেতাদের মত, চাহিদা মত বই পাইনা কি করবো? প্রকৃত পক্ষে এই দুটি মতই ঠিক। অভিভাবকরা তেমন সচেতন নন যে ছেলেমেয়ের হাতে দুটি অতিরিক্ত বই তুলে দেবেন। বিষয়টি নিয়ে আরো বিস্তারিতভাবে আলোচনার আগে শহরের অভিভাবকদের কথায় আসা যাক। যাঁরা শহরে থাকেন তাঁদের কিন্তু বই পাওয়ার সমস্যা নেই একটু খোঁজ করলে এক কেন একাধিক বইয়ের দোকান ছোট বড় সব শহরেই পাওয়া যাবে। এইসব দোকানে চাহিদামত বই তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া না গেলেও দু-একদিনের মধ্যে আনিয়ে দেওয়ার কোন সমস্যা নেই। এইখানে গ্রাম ও শহরের সমস্যা এক জায়গাতে মিশে যায়। আসল সমস্যা হল ছেলেমেয়েদের জন্য অভিভাবকদের চাহিদা কেমন – তাঁরা কি সত্যিই ছেলেমেয়েদের পাঠ্য বহির্ভূত বই পড়াতে আগ্রহী ?

বইকে আপনার সন্তানের বন্ধু করে তুলুন-Teach your child to read

বিষয়টা সরাসরি এরকমই – বাবা মা দের অধিকাংশই পাঠ্য বই এর বাইরের বই ছেলেমেয়েরা পড়ুক এটা চান বলে মনে হয় না। মেধা অনুসন্ধান অভীক্ষাতে তাঁর ছেলে কেন এক নম্বর কম পেল তা নিয়ে বাবা মা যত চিত্তিত, তার এক শতাংশ সচেতন নন পাঠ্যবহির্ভূত বই পড়ার ব্যাপারে। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন সন্দেহ নেই -আজকের যুগে শুধুমাত্র পাঠ্য বইয়ের জ্ঞান নিয়ে কেউই জীবনে কিছু করতে পারবে না। বাইরের জগতের সাথে সন্তানের যোগসূত্র স্থাপনের সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী মাধ্যম হল বই। ছোটবেলা থেকে বইকে আপনার সন্তানের বন্ধু করে তুলুন, ভাবতে শেখান বই তার প্রতিদিনের বেঁচে থাকার এক অবশ্য প্রয়োজনীয় জিনিস।

বই কিনে দেওয়ার ব্যাপারে একটা বাস্তব সমস্যার কথা এখানে বলে নেওয়া যাক অনেক বাবা মা আছেন যাঁরা সত্যি কথা বলতে কি নিজেরাই তেমন বইপত্র পড়েন নি । এ ঘাটতি তাঁদের রয়ে গেছে ছোটবেলা থেকে। কিন্তু আপনি পড়েননি বলে, আপনি সেই সুযোগ পান নি বলে আপনার সন্তানকে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবেন না। দরকার হলে নিজেকে একটু প্রস্তুত করুন। গ্রামের আশপাশের আগ্রহী মানুষদের খুঁজে বের করুন। তাঁদের কাছে শুনে নিন কোন বয়সের বাচ্চাকে কোন ধরনের বই পড়ালে ভালো হয়। অবশ্য একটু চেষ্টা করলে বিষয়টা আপনার নিজের পক্ষে বোঝাও খুব দুঃসাধ্য নয় ৷

কতটা সময় কি ধরনের বই পড়ার জন্য ব্যয় করবে সে বিষয়ে আপনাদের নিয়মিত নজরদারী থাকা প্রয়োজন।

এখন গ্রামে গঞ্জেও নিয়মিত বইমেলা হয়। – এইসব বই মেলাতে যান সংগ্রহ করুন সব স্টলের বইয়ের তালিকা – তালিকাতে বইয়ের শিরোনাম, লেখকের নাম দেখে ঠিক করতে পারবেন কোন বই দরকার আপনার সন্তানের। বই কেনার টাকা জোগাড় করা সত্যিই অনেকের ক্ষেত্রে সমস্যা – এই সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে সহজ উপায় আপনার সন্তানকে কাছাকাছি পাঠকেন্দ্র / পাঠাগারের সদস্য করে দিন। লক্ষ্য রাখুন এইসব জায়গা থেকে কোন ধরনের বই পড়ছে ছেলেমেয়েরা। অনেক সময় গল্পের বইয়ের নেশা এমনভাকে পেয়ে বসে ছেলেমেয়েদের যে তারা স্কুলের পড়াশোনাকে অবহেলা করে। এটাও ঠিক নয়। কতটা সময় কি ধরনের বই পড়ার জন্য ব্যয় করবে সে বিষয়ে আপনাদের নিয়মিত নজরদারী থাকা প্রয়োজন।

অনেকসময় বয়স আন্দাজে উপযুক্ত বই না পড়ে বেশি বয়সের বই পড়াতে ছেলেমেয়েদের সমস্যা হয়। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধির সময় এই ধরনের সমস্যা বেশি করে হতে দেখা যায়। এইসময় একটু সচেতন হয়ে বই বেছে পড়তে দিতে হবে ছেলেমেয়েদের। বয়স উপযোগী ভালো গল্প উপন্যাস হয়তো সরাসরি পড়াশোনায় সাহায্য করবে না কিন্তু সন্তানের মধ্যে মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটাতে অত্যন্ত সাহায্য করবে। ভবিষ্যতে একজন সফল মানুষ হয়ে উঠতে এই মানবিক গুণাবলী অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ।

নিয়মিত পত্রপত্রিকা পড়ার অভ্যাস

এই প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিই শুধুমাত্র বই নয় নিয়মিত পত্রপত্রিকা পড়ার অভ্যাসও ছেলেমেয়েদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা নেয়। বংলায় ছোটদের জন্য কোন দৈনিক পত্রিকা নেই। কিন্তু অধিকাংশ বাংলা পত্রিকায় ছোটদের জন্য সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে একটি নির্দিষ্ট পৃষ্ঠা বরাদ্দ থাকে। ছেলেমেয়েকে ছোটবেলা থেকে এই পৃষ্ঠাগুলো পড়ানোর অভ্যাস করুন। একটু বড় হলে বয়স উপযোগী গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলির প্রতি সন্তানের দৃষ্টি আকর্ষণ করুন

ছোটবেলা থেকে গল্পের বই, পত্র-পত্রিকা পড়তে পড়তে অতিরিক্ত বই পড়া সম্পর্কে ভীতি আপনা থেকে কেটে যাবে।

যেমন ধরুন কোন মহাকাশযান পাড়ি দিয়েছে মহাকাশে, ভূমিকম্প, সুনামি, অগ্নুৎপাত বা দাবানলের মত প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়েছে পৃথিবীর কোন প্রান্তে এই ধরনের খবরের প্রতি মনোযোগী করুন। সবচেয়ে ভালো হয় ওদের যদি একটা ‘পেপার কাটিং’ এর খাতা করে দেন। ছোটবেলায় তাতে লাগাবে পছন্দের ছবি, একটু বড় হলে গুরুত্বপূর্ণ খবর। এইসব খবর / ছবির সাথে পড়ার বইতে পড়া তথ্যের যোগসূত্র তুলে ধরুন। কিছু দিন পরে দেখবেন নেশাটা ওদের পেয়ে বসেছে।

বই সংক্রান্ত আলোচনার আপাতত ইতি টানব পাঠ্যবই নিয়ে দু-একটি কথা বলে। স্কুলের পাঠ্য বইয়ের সাথে সাথে আপনার সন্তানের হাতে তুলে দিন অতিরিক্ত অন্য লেখকের লেখা বইও। একটি বই পড়ে ভালো ফল করা সম্ভব নয় একথা ছোটবেলা থেকে বুঝিয়ে দিন। ছোটবেলা থেকে গল্পের বই, পত্র-পত্রিকা পড়তে পড়তে অতিরিক্ত বই পড়া সম্পর্কে ভীতি আপনা থেকে কেটে যাবে।

যা করবেন:

ছোটবেলা থেকে ছেলেমেয়েদের হাতে বয়স উপযোগী বই পত্র-পত্রিকা দিন। ছেলেমেয়েদের নিয়ে বইমেলাতে যান।

ছেলেমেয়েদের বয়স উপযোগী খবর দৈনিক পত্র-পত্রিকা থেকে পড়ে শোনান। বইয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে সন্তানকে সচেতন করুন।

সন্তানকে পাঠাগারের সদস্য করে দিন।

পাঠ্য বই একটি পড়লে ভালো ফল করা যাবে না একথা সন্তানকে বোঝান।

যা করবেন না

নিজে এক লাইনও না পড়ে ছেলেমেয়েকে পড়তে বলবেন না।

কি বই পড়ছে সে বিষয়ে খবরাখবর রাখতে ভুলবেন না।

না বুঝে ছেলেমেয়েকে অতিরিক্ত বই পড়ার বিষয়ে নিরুৎসাহ করবেন না।

টাকার অভাবে বই কেনা যাচ্ছে না বলে অজুহাত দেবেন না।