Wisdom is greater than strength: বলের চাইতে বুদ্ধি বড় – শিক্ষনীয় ছোট গল্প: অনেক কাল আগে দেউলাখ্য নামে এক নগরে রাজসিংহ নামে এক রাজপুত্র বাস করতো। তার স্ত্রীর নাম ছিল প্রভাবতী। সে এমন ঝগডুটে ছিল যে রাজপুত্রের সঙ্গে ঝগড়া-ঝাঁটি না করলে তার দিন কাটতো না। রোজই কিছু না কিছু নিয়ে তাদের ঝগড়া করতে হতো। ফলে তার আশে-পাশের পাড়া-পড়শীরা তাকে ‘ঝগডুটে’ বলে ডাকতো।
একদিন রাজসিংহের সঙ্গে প্রভাবতী অনেক ঝগড়া করে বাড়ি থেকে তার দু’ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে গেল বাপের বাড়ি যাবে বলে। বাপের বাড়ি অনেক দূরে প্রায় সাত যোজন পথ। যেতে তিনদিন তিনরাত্রী সময় লাগে।
বলের চাইতে বুদ্ধি বড় (Wisdom is Greater than Strength)
প্রভাবতী ছেলেদের নিয়ে টানতে টানতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। সারাদিন চলতে চলতে তারা ক্লান্ত হয়ে এসে পড়লো এক বিশাল বনের কাছে। গহন গভীর বন, দিনের বেলা সূর্যের আলো প্রবেশ করে না সেই বনে, সর্বত্র হিংস্র বাঘ, শেয়ালের আনাগোনা আর তাদের হুঙ্কার। প্রভাবতী ছেলেদের নিয়ে একটা গাছতলায় বিশ্রাম করতে বসলো। হঠাৎ শুনলো কে যেন বলছে, ‘যা করবে ভেবে চিন্তে করবে, বুদ্ধিনাশ যেন না হয়-‘
প্রভাবতী অবাক হয়ে তাকাল সেই গাছের মাথায়। দেখলো একটা শুকপাখি। পাখিটা আবার একই ভাবে বললো, ‘কাজের সময় কাজ কর, বসে থেকো না।’ কথা শুনে প্রভাবতী উঠে দাঁড়াল আর বিশ্রাম করলো না। ভাবলো পাকির কথাই ঠিক, দিন থাকতে থাকতেই এই বড় পেরিয়ে যেতে হবে তাকে।
বনে প্রবেশ করেই সে দেখলো সামনে এক বাঘ। বিশাল চেহারা নিয়ে ওৎ পেতে তাকিয়ে আছে। সাথে সাথে শুকপাখির কথা মতো মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল প্রভাবতীর। ছেলে দু’টোর গালে সজোরে দুই চাটী মেরে চিৎকার করে উঠলো, ‘ওই একটা বাঘই তোরা দু’জনে মিলে ভাগ করে খা। এই ভাগ নিয়ে চিৎকার কচ্ছিস কেন?’ বলেই প্রভাবতী কোমরে আঁচল গুঁজে ঠেলে দিল ছেলেদের বাঘের দিকে।
ছেলেরা বাঘ কোনদিন দেখে নি। এগিয়ে যেতেই বাঘের পিলে উঠলো চমকে। প্রভাবতীর চিৎকার ও ঝগডুটে চেহারা দেখে ঘাবড়ে গেল বাঘ। কাঁপতে কাঁপতে ভাবলো এ নিশ্চয় বাঘমারী। বাঘ মারার মন্ত্র এর জানা আছে। নইলে এ ভাবে ছেলেদের এগিয়ে দেয় আর নিজেও এগিয়ে আসে? ছেলে দু’টো হই হই করে এগিয়ে গেল বাঘের দিকে। ব্যাপার স্যাপার দেখে বাঘ হঠাৎ পেছন ফিরে লাগাল ছুট। ভাবল, কোন মতে এখন প্রাণ নিয়ে বাঁচি তো তারপর দেখা যাবে।
ছুটতে ছুটতে হাঁপিয়ে পড়লো সে। পথে দেখা হলো এক শিয়ালের সঙ্গে। বাঘকে অমন ভাবে দৌড়তে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো শিয়াল, ‘কি ব্যাপার মামা, অমন ছুটছো কেন?’ বাঘ বললো, ‘শিঙ্গির চলো কোথাও লুকিয়ে পড়ি আমরা, পেছনে আসছে এক বাঘমারী আর দেরী করো না।’
ব্যাপারটা শেয়াল ভাল ভাবে শুনে নিয়ে বললো হাসতে হাসতে, ‘আরে মামা, আমি সব বুঝতে পেরেছি চলো তো দেখি গিয়ে’ বাঘ বললো, ‘না ভাগ্নে আমি আর যাচ্ছি নে। তাদের দরকার দু’টো বাঘ, তা না পেয়ে আমার জন্য ঝগড়া-ঝাটি শুরু করে দিলে? আমি যাই, আমায় ধরে খেয়ে নিক্, আর তুমি সুযোগ বুঝে পালাবে? সেটি হবে না।’ শিয়াল তখন ভেবে নিয়ে বললো, ‘তাহলে একটা কাজ করো না কেন, তোমার গলার সঙ্গে আমার গলা বেঁধে নাও, তাহলে তো আমি আর পালাতে পারব না।’
বুদ্ধিটা বাঘের মাথায় গেল। বললো, হ্যাঁ তা হতে পারে।’ শেয়াল তার গলাটা বাঘের সঙ্গে বেঁধে নিয়ে ফিরে চললো সেদিকে।
দূর থেকে তাদের দেখে হেসে উঠলো শিয়াল খ্যাঁক খ্যাঁক করে। শেয়ালের হাসি শুনেই চিৎকার করে উঠলো প্রভাবতী, ‘আরে হতভাগা শিয়াল, তোকে বল্লাম তিনটে বাঘ ধরে আনতে আর এতো খুঁজে পেতে তুই আনলি কিনা একটা মাত্র বাঘ?’ বলেই রেগে মেগে চুল এলিয়ে এগিয়ে গেল প্রভাবতী কিছুটা।
তার কথা শুনে বাঘের আত্মারাম খাঁচা, ‘আরে এ বলে কি!’ এই ধরলো বলে- ‘কেন যে ভুল করে শিয়ালের কথা শুনে এলাম’ আর দেরি না চোঁ চোঁ দৌড় মারলো বাঘ। বন-বাদাড় ভেঙ্গে ছুটছে তো ছুটছেই।
শিক্ষনীয় ছোট গল্প, অন্যের কথায় কান দিও না – এইখানে ক্লিক করুন
এদিকে শিয়ালের অবস্থা আতো শোচনীয়। মাটিতে গাছে বাড়ি খেতে খেতে শরীরের হাড়-গোড় ভাঙে আর কি। কেটে ছিড়ে রক্ত ঝরতে লাগলো শিয়ালের এমন কি তার বাঁচা দায় হলো। তবুও তার মধ্যে অনেক কষ্টে হেসে বলে উঠলো শিয়াল, ‘মামা, আমার দেহে তো কেটে-কুটে রক্ত ঝরছে এই রক্ত চিনে বাঘমারী নির্ঘাৎ আমাদের ধরে ফেলবে। তাঁর চাইতে এক কাজ করলে হয় না, আমার বাঁধান বরং তুমি খলে দাও, তাহলে তোমায় রাতো আর বাঘমারী চিনতে পারবে না। ধরতেও পারবে না।’
ফন্দিটা বাঘের মন্দ লাগল না। সে দেরি না করে খুলে দিল শিয়ালের বাঁধন আর ছুট লাগল বনের ভেতরের দিকে।
খোলা পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল শিয়াল, যন্ত্রণায় কাতড়াতে কাতড়াতে ভাবল চাচা আপন প্রাণ বাঁচা শেষ পর্যন্ত একটা মেয়ে মানুষের বুদ্ধির কাছে হেরে গেল বাঘ।
নীতি শিক্ষা:
অনেক যন্ত্রণাতেও হা-হা করে হেসে উঠলো শিয়াল, বললো, নাঃ অনেক বিপদের সময় উপযুক্ত বুদ্ধি প্রয়োগ করলে বাঁচা যায়। বাঘের সঙ্গে থাকলে এতক্ষণে তার হাড়-মাস সব আলাদা হয়ে যেত। বলের চাইতে বুদ্ধিই শ্রেষ্ঠ বলে আবার হা-হা করে হেসে উঠলো শিয়াল।