2022 WB Primary TET: Kothari commission 1964-66 NPE 1986 Women Education

2022 WB Primary TET, Kothari commission
2022 WB Primary TET, Kothari commission

2022 WB Primary TET, Kothari commission : প্রাক্ স্বাধীনতা যুগে উপনিবেশিত শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষা ছিল অভিজাত সম্প্রদায়ের। স্বাধীনতা অর্জনের রাজনৈতিক নেতা এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিগত সম্যকভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন শিক্ষা ব্যতীত জাতির কোনো উন্নয়নই সম্ভব নয়। সেই কারণেই শিক্ষার সম অধিকার ভারতীয় সংবিধানে গৃহীত হয়।

Whatsapp গ্রুপে যুক্ত হন
Telegram গ্রুপে যুক্ত হন

প্রশ্ন হল যুগ যুগ ব্যাপী শিক্ষা সহ অন্যান্য সুযোগসুবিধা থেকে নিম্ন শ্রেণিভুক্ত নারী-পুরুষদের কীভাবে সম অধিকারের ব্যবস্থা করা হবে। নিম্নশ্রেণিভুক্ত জনগণ বলতে এখানে তপশিলিজাতি, তপশিলি উপজাতি এবং অন্যান্য পশ্চাৎপদ ব্যক্তিগণকেই বোঝায়। যদিও মহিলারাও এই শিক্ষার (Women Education)সুযোগ থেকে বরাবরই বঞ্চিত। এদের সমসুযোগের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা-পরিকল্পনায় নানা রকম কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। যার সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল।

2022 WB Primary TET

তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের শিক্ষার জন্য কোঠারি কমিশনের (Kothari commission) সুপারিশ :

ভারতের তপশিলি সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যর 15% এবং উপজাতির সংখ্যা সমগ্র জনসংখ্যার ৪%। এই বিরাট অংশের জনগণের জন্য শিক্ষার সুযোগ আছে খুব কম। এই সম্প্রদায়ের মানুষ তাই শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। কোঠারি কমিশন এই সম্প্রদায় দুটির শিক্ষার প্রসারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তপশিলি জাতি এবং তপশিলি উপজাতির শিক্ষার উন্নতিকল্পে কমিশন যেসব সুপারিশ করেছেন সেগুলি হল—

  1. বর্তমানে তপশিলি সম্প্রদায়গুলি শিক্ষার ব্যাপারে যেসব সুযোগসুবিধা পাচ্ছে সেগুলি বহাল থাকবে এবং এইসব সুবিধা আরও বাড়াতে হবে।
  2. যাযাবর ও অর্ধ-যাযাবর (Nomadic & semi-nomadic) শ্রেণির জন্য শিক্ষার সুযোগ আরও বৃদ্ধি করা দরকার।
  3. প্রাথমিক স্তরে অনুন্নত শ্রেণির জন্য সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। জনবিরল অঞ্চলগুলিতে বহুসংখ্যক আশ্রম-বিদ্যালয় স্থাপন করা দরকার।
  4. উপজাতিদের মধ্যে যাতে উচ্চ-প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসার ঘটে তার জন্য সচেষ্ট হতে হবে।
  5. অনুন্নত শ্রেণির ছেলেমেয়েদের জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা করতে হবে ও Day School Centre-এর ব্যবস্থা করতে হবে।
  6. বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষা দেওয়ার জন্যে উপজাতি ছাত্রদের আরও বেশি বৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
  7. উপজাতিদের উন্নত করার জন্য একটি সংগঠন তৈরি করতে হবে যেখানে প্রথম দিকে উপজাতি নয় এমন অভিজ্ঞ ও শিক্ষিত ব্যক্তি থাকবেন। ধীরে ধীরে শিক্ষিত উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষই সংগঠনটি পরিচালনা করবেন। উচ্চ মেধাসম্পন্ন উপজাতির যুবকদের বিভিন্ন অনুন্নত এলাকায় কাজের জন্য পাঠাতে হবে।
  8. শিক্ষার দ্রুত প্রসারের জন্যে শিক্ষা সহায়ক উপকরণগুলি উপজাতিদের ভাষায় তৈরি করতে হবে।

1986 সালের জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশ (NPE 1986) :

শিক্ষাক্ষেত্রে দীর্ঘকাল ধরে যে বৈষম্য চলে আসছে, নতুন শিক্ষানীতিতে সেগুলি দূর করার কথা বলা হয়েছে এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে অনগ্রসর শ্রেণিগুলির জন্য শিক্ষার সমান সুযোগ দেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করার কথা বলা হয়েছে।

নারীশিক্ষা (Women Education) :

(1) মেয়েদের সাক্ষর করে তুলতে ও তাদের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

(2) বৃত্তিমূলক কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষায় মেয়েরা যাতে অংশ নিতে পারে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে এবং এ ব্যাপারে নারী-পুরুষ কোনো প্রভেদ রাখা চলবে না।

তপশিলি জাতির শিক্ষা :

নয়া শিক্ষানীতির মূল বক্তব্য হল, শিক্ষার সর্বস্তরে তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতির অন্তর্ভুক্ত শিশুদের বিশেষ সুবিধা দিতে হবে। এদের অগ্রগতির জন্য কয়েকটি কর্মসূচি নিতে বলা হয়েছে। যেমন—

(1) 14 বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের যাতে নিয়মিত বিদ্যালয়ে পাঠানো হয় তার জন্য পরিবারগুলিকে উৎসাহ দান।

(2) ঝাড়ুদার, শ্মশানকর্মী প্রভৃতি শ্রেণির পরিবারের শিশুদের প্রথম শ্রেণি থেকে উচ্চশ্রেণি পর্যন্ত সকলের জন্য বৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

(3) এইসব শিশুর শিক্ষার মান যাতে নেমে না যায় সে জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা এবং তাদের বিদ্যালয়ে ভরতিরও সুব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

(4) তপশিলি জাতি থেকেই এদের জন্য শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।

(5) এদের জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা করা দরকার।

(6) তপশিলি শ্রেণির জনগণের সুবিধামতো স্থানে বিদ্যালয়, শিশুদের অঙ্গন এবং বয়স্ক শিক্ষা সংস্থাগুলি প্রতিষ্ঠিত করা দরকার।

আদিবাসীদের শিক্ষা :

আদিবাসীদের শিক্ষার মান অন্যান্যদের সঙ্গে সমান করে তোলার জন্যে কয়েকটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে—

(1) আদিবাসীদের এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
(2) আদিবাসীদের ভাষা ও আঞ্চলিক ভাষাকে শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে। পাঠক্রম আদিবাসীদের ভাষায় রচনা করা প্রয়োজন।

(3) বহুসংখ্যক আবাসিক বিদ্যালয় ও আশ্রম-বিদ্যালয় এইসব এলাকায় তৈরি করতে হবে।

(4) আদিবাসীদের প্রয়োজন ও জীবনধারণের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে কারিগরি শিক্ষা দিতে হবে। কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষা দেওয়ার জন্য বিশেষ বৃত্তি দিতে হবে। এদের শিক্ষাক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে বিশেষত সামাজিক প্রতিবন্ধকতা দূর করে সমাজের মূল স্রোতে মিশবার সুযোগ করে দিতে হবে। এই দিকে লক্ষ রেখেই শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

(5) এইসব এলাকায় অঙ্গনওয়াড়ি কার্যক্রম, প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

(6) শিক্ষার সর্বস্তরে পাঠক্রম এমন হবে যাতে আদিবাসীদের কৃষ্টি সম্পর্কে চেতনা জাগ্রত হয় ও সম্ভাব্য প্রতিভার বিকাশ ঘটে।

(7) মেধাযুক্ত সম্ভাবনাপূর্ণ আদিবাসী যুবকদের নিজেদের এলাকায় শিক্ষকতা করার উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে।

অন্যান্য পশ্চাৎপদ গোষ্ঠী :

সমাজের অন্যান্য পশ্চাৎপদ গোষ্ঠী বিশেষত যারা গ্রামাঞ্চল, পার্বত্য ও শুষ্ক মরু অঞ্চল, দুর্গম বদ্বীপ অঞ্চল ও দ্বীপ অঞ্চলে থাকে, তাদেরও শিক্ষার সুযোগসুবিধা করে দিতে হবে। এইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি বজায় থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

শিক্ষাক্ষেত্রে S.C., S.T. এবং O.B.C.-দের পিছিয়ে পড়ার কারণ

এই ব্যপারে একাধিক সমীক্ষার ফল থেকে দেখা যায় শিক্ষাক্ষেত্রে এদের পশ্চাৎপদতার কারণগুলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।

(1) ব্যক্তিকেন্দ্রিক কারণসমূহ :

(a) যুগ যুগ সমাজ এদের শোষণ এবং অবহেলা করে এসেছে। যার ফলে এদের মধ্যে হীনম্মন্যতা দেখা দিয়েছে।

(b) এদের মধ্যে অনেকেরই শিক্ষা সম্পর্কে সুষ্ঠু ধারণা নেই। এদের জন্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা এবং শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে সচেতনতার অভাব।

(c) শিক্ষার অনুকূল পরিবেশের অভাবে, পাঠ্যাভ্যাস, পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ এবং ছাত্রসুলভ দায়বদ্ধতার অভাবে পরীক্ষায় ভালো করতে পারে না।

(2) কমিউনিটিকেন্দ্রিক কারণসমূহ :

কমিউনিটি সংক্রান্ত কারণসমূহকে আবার দু-ভাগে ভাগ করা যায়। (ক) পরিবার কেন্দ্রিক কারণ এবং (খ) বিদ্যালয়ের সামাজিক কারণ।

দারিদ্র্য—এদের মধ্যে একটা বড়ো অংশ চূড়ান্ত দারিদ্র্যের মধ্যে অবস্থান করে। বিদ্যালয়ে যাওয়ার পরিবর্তে অল্প বয়স থেকেই নানারকম কাজ-কর্ম করে অর্থ উপার্জনে সচেষ্ট হয়।

শিক্ষার প্রতি আগ্রহের অভাব—উচ্চ এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের জনগণের মতো এরা শিক্ষার বৃত্তিগত মূল্য ছাড়া অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন নয়।


(3) বিদ্যালয়ের সামাজিক কারণ :

প্রথমত, আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে (যেখানে অধিক সংখ্যক S.C., S.T.-রা প্রধানত অবস্থান করে) শিক্ষকের সংখ্যা যথেষ্ট কম। এছাড়া শিক্ষকদের অনুপস্থিতি অধিক পরিমাণে দেখা যায়। অর্থাৎ পিছিয়ে পড়া জনগণ অধ্যুষিত অঞ্চলে শিক্ষকগণ যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।

দ্বিতীয়ত, অধিকাংশ শিক্ষকই তাদের অল্পবুদ্ধি সম্পন্ন বলে মনে করেন। শুধু শিক্ষকগণই নয় শিক্ষা প্রশাসকগণও এদের সংস্কৃতি এবং মেধাকে নিম্ন চোখে দেখেন। মনে করেন সরকার তাদের জন্য অযথা অর্থ ব্যয় করছে। এই ধরনের সামাজিকতা পিছিয়ে পড়া জনগণের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হ্রাস করছে।

(4) সামাজিক অক্ষমতা :

সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির জনগণের মধ্যে শিক্ষার প্রসারের অসমতা আজও একটি ঘটনা। এর প্রধান কারণ হল সামাজিক অক্ষমতা। S.C., S.T. এবং O.B.C.-রা আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে আছে। জাতির বিকাশের নিম্ন স্তরে তাদের অবস্থান। সেই কারণে শিক্ষার ক্ষেত্রেও তারা পিছিয়ে আছে। তাই শিক্ষায় পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ হল সামাজিক অসমতা। একজন প্রখ্যাত সমাজতত্ত্ববিদ বলেন, সমাজে যতদিন পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে অসমতা থাকবে ততদিন শিক্ষায় সমসুযোগের অধিকার সম্ভব নয়। এমনকী শিক্ষা কখনই শিক্ষায় সমসূযোগের ব্যবস্থা বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হবে না।

S.C., S.T. এবং O.B.C.-দের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা :

শিক্ষার সমসুযোগ বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হল — Labour এবং Employment মন্ত্রকের উদ্যোগে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরির উদ্দেশ্যে-

(i) S.C. এবং S.T.-দের জন্য কোচিং কাম গাইডেন্স কেন্দ্র স্থাপন

(ii) U.G.C. উদ্যোগে বিশেষ কোচিং কর্মসূচি গ্রহণ।

(iii) ICT (ইনফরমেশন এবং কমিউনিকেশন প্রযুক্তি)।

(iv) শ্রমিক কল্যাণ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রথা-বহির্ভূত শিক্ষা, সমগ্র স্বাক্ষরতা কর্মসূচি ইত্যাদি।

(v) মুসলিমদের জন্য মাদ্রাসা ও মক্তবের প্রসার করা এবং তাদের পাঠক্রমের মধ্যে বিজ্ঞান ও আধুনিক বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করা। বর্তমানে মুসলিমদের জন্য কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে শিক্ষার ব্যাপক প্রসার।

(vi) NCERT S.C., S.T. এবং সংখ্যালঘুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ শিক্ষা শিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ। THE

নারীশিক্ষা (Women Education):

স্বাধীনতার পরবর্তীকালে আমাদের দেশের নেতৃবৃন্দ নারীশিক্ষা প্রসারের দিকে বিশেষ নজর দেন। ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অংশের 14, 15 ও 16 নং ধারায় সবার জন্য সমানাধিকারের কথা বলা হয়েছে। আইনের দৃষ্টিতে জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সব নাগরিকই সমান। সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রেও কোনো তারতম্য করা চলবে না। সরকারও নারী শিক্ষার অগ্রগতির দিকে মনোযোগ দেয়। তবে সংবিধানে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি যে, নারী ও পুরুষকে শিক্ষালাভের সমান সুযোগ দিতে হবে। আসলে আমাদের সমাজ পিতৃতান্ত্রিক সমাজ, যেখানে সবসময় নারীদের উপর পুরুষ কর্তৃত্ব করে থাকে। বর্তমানে গ্রামে ও শহরে নারীশিক্ষার চিত্রটি অনেক উজ্জ্বল। এর কারণ নারীশিক্ষার অগ্রগতিকে বিভিন্ন কমিটি ও কমিশনের সুপারিশ ও তা বাস্তবীকরণ।

বিভিন্ন কমিটি ও কমিশনের নারীশিক্ষার উন্নতিকল্পে সুপারিশ :

রাধাকৃষ্ণাণ কমিটির সুপারিশ—নারীশিক্ষা সম্পর্কে রাধাকৃষ্ণাণ কমিশনের বক্তব্য হল— (1) কো-এডুকেশন কলেজগুলিতে মেয়েদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে।

(2) মেয়েদের শিক্ষালাভের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে।

(3) নারী ও পুরুষদের শিক্ষার মধ্যে কতকগুলি বিষয়ে সাদৃশ্য থাকলেও মেয়েদের জন্য বিশেষ ধরনের শিক্ষারও ব্যবস্থা করতে হবে।

(4) সমাজে নাগরিক ও নারী হিসেবে মেয়েরা যাতে উপযুক্ত মর্যাদা পায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

(5) কো-এডুকেশনাল কলেজে ছাত্ররা যাতে সৌজন্যবোধ ও সামাজিক দায়িত্ব বোধের উপযুক্ত শিক্ষা লাভ করে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

(6) শিক্ষিকারা একই প্রকার কাজের জন্য শিক্ষকদের সমান হারে বেতন পাবেন।

মুদালিয়ার কমিশনের (1952–53) সুপারিশ :

(1) ছেলেমেয়েদের একই প্রকার শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। মেয়েদের স্কুল এবং যেখানে সহশিক্ষার (Co-education) ব্যবস্থা আছে সেখানে মেয়েদের জন্য গার্হস্থ্যবিজ্ঞান পাঠের ব্যবস্থা করতে হবে।

(2) প্রয়োজন অনুসারে রাজ্য সরকারকে মেয়েদের জন্য পৃথক স্কুল স্থাপনের চেষ্টা করতে হবে।

(3) সহশিক্ষা হয় এমন বিদ্যালয়ে বা মিশ্র বিদ্যালয়ে মেয়েদের ও শিক্ষিকাদের অসুবিধাগুলি দূর করার চেষ্টা করতে হবে।

(4) মেয়েদের জন্য পাঠ্যসূচিতে সংগীত, কলা ইত্যাদি বিষয় অনুমোদন করার সুপারিশ করা হয়। এইসব সুপারিশের ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও নারীশিক্ষার সমস্যার সমাধান সেভাবে হয়নি। তাই 1958 সালে ভারত সরকার নারীশিক্ষার জন্য জাতীয় কমিটি (National Committee for Women Education) নিয়োগ করলেন। 1959 সালে এই কমিটি সুপারিশ করেন—

(1) কেন্দ্রে National Council for the Education of Girls and Women গঠন করতে হবে।

(2) নারীশিক্ষার দায়িত্ব একজন কেন্দ্রীয় যুগ্ম পরামর্শ দানকারী (Joint education advisor) নারীর হাতে দেওয়া উচিত।
(3) প্রত্যেক রাজ্যে Joint Director (যুগ্ম আধিকারিক) পদে একজন মহিলা নিযুক্ত হবেন। তাঁর হাতে থাকবে নারীশিক্ষার দায়িত্ব।

(4) মেয়েদের শিক্ষার জন্য আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।

(5) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেখানে শিক্ষিকা নেই সেখানে School mother নিয়োগ করতে হবে।

(6) প্রাথমিক স্তরে ছেলে ও মেয়েদের একই ধরনের পাঠক্রম থাকবে। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরে মেয়েদের পাঠক্রম ছেলেদের থেকে পৃথক হবে।

(7) আংশিক সময়ের জন্য শিক্ষিকা নিয়োগ করা যেতে পারে যাতে গৃহকাজ ও শিক্ষকতার মধ্যে সামঞ্জস্যবিধান করা সম্ভব হয়।

(৪) মেয়েদের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজন হলে বৃত্তিশিক্ষার পৃথক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে।

(9) ছাত্রীনিবাসের ব্যাপক ব্যবস্থা করতে হবে।

(10) স্কুলে যাওয়ার জন্য যাতায়াতের সুব্যবস্থা ও বিনামূল্যে টিফিন দেবার ব্যবস্থা করতে হবে।

(11) বয়স্ক মহিলাদের জন্য স্বল্প সময়ের কোর্স চালু করতে হবে।

জাতীয় নারীশিক্ষা পরিষদ :

কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী 1959 সালে নারীশিক্ষার জাতীয় পর্ষদ (National Council for Women Education) গঠন করা হয়। নারীশিক্ষার বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক একটি বিশেষ বিভাগ তৈরি করে। নারীশিক্ষার জাতীয় পর্ষদের সভানেত্রী হন শ্রীমতী দুর্গাবাই দেশমুখ।

হংস মেহেতা কমিটির সুপারিশ–1961 :

1961 সালে জাতীয় নারীশিক্ষা পর্ষদ, শ্রীমতী হংসরাজ মেহেতার নেতৃত্বে মেয়েদের পাঠক্রম সংক্রান্ত নানা সমস্যার সমাধান ও তাদের পাঠক্রম রচনার জন্য একটি কমিটি নিয়োগ করেন। এই কমিটি যেসব গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেন সেগুলি হল :

(1) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহশিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। ছেলেমেয়েদের সংখ্যাগত পার্থক্য দূর করতে হবে এবং এর জন্য মেয়েদের শিক্ষার সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে।

(2) প্রাথমিক স্তরে ছেলেমেয়েদের একইরকম পাঠক্রম থাকবে।

(3) মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরেও ছেলেমেয়েদের পাঠক্রম একইরকম থাকবে। তবে সামর্থ্য অনুসারে ছেলেমেয়েরা বহুমুখী পাঠক্রম থেকে তাদের পছন্দমতো পাঠক্রম বেছে নিতে পারবে।

(4) মেয়েদের জন্য কখনোই সেলাই, গার্হস্থ্যবিদ্যা বা রান্না সংক্রান্ত শিক্ষা আবশ্যিক হবে না। তাদেরও বিজ্ঞান ও গণিত শিক্ষার উৎসাহ দিতে হবে। 102

(5) মেয়েদের কারিগরি ও বৃত্তিশিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

(6) মাধ্যমিক ও কলেজ স্তরে মেয়েদের জন্য পৃথক বিদ্যালয় বা কলেজ হবে কিনা তা স্থানীয় বিদ্যালয় বা কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় অভিভাবকগণ সিদ্ধান্ত নেবেন।
(7) মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজে শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষিকাও নিয়োগ করতে হবে।

(৪) নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্তরে যৌনশিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন আছে।

ভক্তবৎসলম কমিটির রিপোর্ট—(1963 ) :

এইসব সুপারিশ সত্ত্বেও নারীশিক্ষার অবস্থার সন্তোষজনক উন্নতি ঘটেনি। গ্রাম, পার্বত্য এলাকা ও পশ্চাৎপদ অঞ্চলের মেয়েরা নানা কুসংস্কারের শিকার। গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের শিক্ষার দ্রুত প্রসারের উদ্দেশ্যে, নারীশিক্ষার প্রতি উদাসীনতার কারণ অনুসন্ধানের জন্য জাতীয় নারীশিক্ষা পর্ষদ 1963 সালে আরও একটি কমিটি গঠন করেন যার সভাপতি হন শ্রী ভক্তবৎসলম। এই কমিটি নারীশিক্ষা উন্নয়নকল্পে যেসব সুপারিশ করেন সেগুলি হল :

(1) নারীশিক্ষার জন্য জনগণের সাহায্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।

(2) গ্রামাঞ্চলে শিক্ষিকা ও ছাত্রীদের জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা করতে হবে।

(3) শিক্ষিকা হওয়ার জন্য মেয়েদের উৎসাহিত করতে হবে ও চাকুরির অবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে।

(4) সংসারী মহিলাদের জন্য গ্রামে আংশিক সময়ের জন্য শিক্ষকতা করার ব্যবস্থা করতে হবে।

(5) দরিদ্র ছাত্রীদের স্কুল থেকে বিনামূল্যে পোশাক ও বই দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। (6) প্রাথমিক স্তরে সহশিক্ষার প্রচলন করতে হবে।

(7) বেসরকারি উদ্যোগের সাহায্য নিয়ে স্কুলগৃহ নির্মাণ করতে হবে।

(৪) শিক্ষিকাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করতে হবে।

(9)নারীশিক্ষা বিষয়ে যাবতীয় কুসংস্কার ও রক্ষণশীলতা দূর করতে

হবে।

(10) বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্যে সম্মেলন, বেতার প্রচার, শিক্ষক সহায়ক উপকরণ সরবরাহ, ছাত্রী সংগ্রহ এসব কাজের জন্য জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সাহায্য গ্রহণ প্রয়োজন৷

(11) যেসব অঞ্চল দুর্গম পার্বত্য বা অনগ্রসর সেখানে অতিরিক্ত বেতন ও ভাতা দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।

(12) গ্রামাঞ্চলের শিক্ষিকাদের শিক্ষণ-কলেজে বা বিদ্যালয়ে ভরতির জন্য অগ্রাধিকার দিতে হবে।

(13) বিদ্যালয়ে মহিলা-পরিদর্শক নিয়োগ করতে হবে যাতে শিক্ষার মান উন্নত হয় এবং অপচয় ও অনুন্নয়ন হ্রাস পায়।

(14) নারীশিক্ষার যাবতীয় ব্যয়ভার কেন্দ্রীয় সরকারকে গ্রহণ করতে হবে।

(15) নারীশিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্য একে অবৈতনিক করতে হবে ও বাধ্যতামূলক করার জন্য রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রের সাহায্যে আইন গঠন করতে হবে।

(16) শিক্ষিকা যাতে বিদ্যালয়ের কাছাকাছি বিনা ভাড়ায় থাকতে পারেন তাঁর জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

(17) যেখানে 300 জনের মধ্যে জনসংখ্যা সেখানে 1 মাইলের মধ্যে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও 1500 জনবসতি অঞ্চলে 3 মাইলের মধ্যে একটি মিডল স্কুল ও 5 মাইলের মধ্যে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।