Role of parents in child development-আজকের প্রতিবেদনটি আপনার সন্তানের পড়াশোনার উন্নতিতে বাবা-মায়ের ভূমিকা কি সেই বিষয়ে, বাবা মায়েরা অনেক সময় সন্তানের সুখ স্বাচ্ছন্দ শখ ইত্যাদি নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন ?
আপনি কখন সন্তানের সঙ্গে কঠোর আচরণ করবেন, আবার কখন আপনি নরম আচরণ করবেন, অর্থাৎ আপনি সমস্ত কিছু ব্যালেন্স করে আপনার সন্তানকে কিভাবে পড়াশোনায় আগ্রহী করে তুলতে পারবেন সেই সমস্ত বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
আদরে বাঁদর! কিছু শখ অপূর্ণ থাক:
আপনার সন্তান আপনার কাছে প্রাণের চেয়েও প্রিয়। তাকে খুব ভালোবাসুন। কিন্তু এত বেশি আদর দেবেন না যাতে সে বাঁদর হয়ে যায়। ছেটোবেলা থেকে এই অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আর এই অভ্যাস গড়ে তোলার পিছনে আপনাদের দুজনের ভূমিকা সবচেয়ে জরুরী। একেবারে ছোটবেলা থেকে বাচ্চা যা চাইছে তাই ওদের হাতে তুলে দেওয়ার অভ্যাসটা করবেন না। ওদের জেদের কাছে আপনারা যতবার হেরে যাবেন ওরা তত বেশি জেদি হয়ে উঠবে। পরবর্তীকালে যখন পড়াশোনা শুরু হবে তখন এই সমস্যাগুলো এত বড় আকারে দেখা দেবে যে তার সমাধান করা বেশ কষ্টকর হবে।
একটু উদাহরণ দেওয়া যাক ট্রেনে বাসে এই দৃশ্য আপনার প্রায়ই চোখে পড়বে একটি পরিবার বাবা মা আর একটি ছোট্ট বাচ্চা চলেছে, কোন হকার উঠল। বাচ্চাটি যথারীতি কোন একটি জিনিস নেবে বলে বাবা মার কাছে আর্জি জানাল। প্রথমে মা পরে বাবা বললেন না না এসব কিনতে হবে না এগুলো বাজে জিনিস। বাচ্চা কিন্তু ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকল। এবার মায়ের গলা চড়ল। বাবা মারের ভয় দেখালেন। বাচ্চা দমবার পাত্র নয় সে তারস্বরে চিৎকার শুরু করল। মা হাত চালালেন বাবাও কান মুলে দিলেন – বাচ্চা ট্রেনের নোংরা মেঝেতে গড়াগড়ি দিয়ে একেবারে লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে ফেলল। কামরা সুদ্ধু সবাই হতচকিত। এইসব ঘটনার মধ্যেও কিন্তু সেই হকার কামরা ছেড়ে যায়নি। বাচ্চার এই গড়াগড়ি আর কান্নার দাপটে হাল ছেড়ে দিয়ে বাবা শেষ অবধি যে খেলনাটির জন্য এত কাণ্ড সেটা কিনে দিলেন বাচ্চাটিকে। বাচ্চা খুশি, কামরাও ঠাণ্ডা।
এই ঘটনা থেকে ঐ শিশুটি একটা বিষয় খুব ভালে করে বুঝে গেল সেটা হল যদি সে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদে তাহলে কোনো জিনিস পাবে। ব্যাপারটা ছোট বেলায় যতটা অকিঞ্চিৎকর মনে হচ্ছে বড় হয়ে কিন্তু তত সামান্য মনে হবে। এই যে দম্পতি একটি ছোট খেলনা দেবেন না বলে এত কঠিন আচরণ এতক্ষণ করছিলেন সেই আচরণ অর্থহীন হয়ে গেল যে মুহূর্তে জিনিসটা তারা কিনে দিলেন বাচ্চার জেদের কাছে হার মেনে। বাচ্চা বুঝে গেল বাবা মায়ের ‘না’ কে ‘হ্যাঁ’ করা যাবে। ছোটবেলায় ছোট্ট একটি খেলনার জন্য এই কাজ করছে বড় হয়ে অন্য কোন বড় জিনিসের জন্য করতে পারে। ছাত্রজীবন শুরু হলে কথায় কথায় নিজের জেদ বজায় রাখা, যা চাইছি তাই হাতের কাছে পেয়ে যাওয়াটা বৃহত্তর সমস্যার জন্ম দেবে।
এই যে বাচ্চাটির কথা আলোচনা করছিলাম তার বাবা মায়ের আচরণের যে ত্রুটিগুলি ছিল সেগুলি একটু বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। যদি বাবা মা মনে করেন কোন জিনিস তাঁদের বাচ্চার জন্য প্রয়োজন নেই তাহলে সেটা স্পষ্টভাবে প্রথমেই বলে দিতে হবে। একটু চাপ দিলে যদি তাদের মতকে পাল্টে ফেলা যায় – এই তথ্যটা যদি ছেলেমেয়ে ছোটবেলাতে বুঝে যায় তাহলে বাবা মায়ের কপালে অশেষ দুঃখ আছে। ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। কিন্তু যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে অনড় থাকুন। এই যে বাচ্চাটি ট্রেনের কামরায় গড়াগড়ি দিচ্ছিল সে যদি গড়াগড়ি দেওয়ার পরও জিনিসটা না পেত তাহলে সে বুঝতে পারতো এসব করে লাভ নেই। বাবা মা না বলছেন মানে না। এই ধরনের পরিস্থিতিতে একদুবার কঠিন মনোভাব আপনাকে দেখাতেই হবে। তা নাহলে বড় হয়ে কোন একটি জিনিসের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে সন্তান এমন এমন কাজ করবে যা আপনার সামাজিক সম্মান বা মানসিক স্থিরতাকে পুরোপুরি নষ্ট করে দেবে।
ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে একটু কড়া হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা অনেকের ক্ষেত্রেই একটু অসুবিধাজনক। আজকাল প্রায় সব বাড়িতেই একটি / দুটি সন্তান। তারা স্বাভাবিক ভাবেই নয়নের মনি । তাদেরকে কড়া ভাবে শাসন করতে বাবা মা দুজনেরই অনেকবার ভাবতে হয়৷ কড়া ভাবে শাসন করা মানে কথায় কথায় মারধোর করা নয় এ কথাটা খেয়াল রাখা দরকার। প্রথম থেকে একটু সচেতন থাকলে হাত তোলার বদলে একটু চোখ রাঙানীতেই কাজ হয়ে যায়। আরেকটা ব্যাপারে বাবা মা দুজনেই যদি খুব কড়া মনোভাব দেখান তাহলে কিন্তু বাচ্চার মনে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এতে করে ভালো করতে গিয়ে খারাপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
একটু নরমে গরমে রাখতে পারলে ভালো হয়। অনেক সময় দেখা যায় ছেলেটির যত আবদার মায়ের কাছে আর মেয়ের বায়না বাবার কাছে। ব্যাপারটির মধ্যে স্বাভাবিকত্ব আছে ঠিকই কিন্তু এখানে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে বাবা কোন একটি বিশেষ জিনিস কিনতে বারণ করছেন ছেলেকে আর মা সেটাই ভালোবেসে কিনে দিচ্ছেন এর ফল কিন্তু মারাত্মক হতে পারে। ছেলেমেয়ে এই দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
যে জিনিসটি আপনার প্রয়োজন বলে মনে করছেন সেটা কিনে দিন কিন্তু ছোটবেলা থেকেই বুঝিয়ে দিন যা চাইবো তাই পাওয়া যাবে না। পড়াশোনা শুরুর সময় থেকে বই, খাতা, গেন, পেন্সিল থেকে শুরু করে নানা জিনিস প্রয়োজন হবে ওদের। প্রয়োজন অনুসারে ওদের সেগুলি কিনে দিন। যদি যথেচ্ছভাবে কিনে দিতে থাকেন তাহলে কিন্তু জিনিসপত্র নষ্ট করার দিকে একটা প্রবণতা তৈরি হয়ে যাবে। আপনার হয়তো সামর্থ্য আছে একটার বদলে দশটা কিনে দেওয়ার কিন্তু প্রয়োজন না থাকলে অহেতুক কোন জিনিস কিনে দেবেন না। ছাত্রজীবনে একটু শৃঙ্খলা থাকা প্রয়োজন। অনিয়ন্ত্রিত ভাবে যা চাইছি তাই পেয়ে যাচ্ছি এই বোধটা ওদের ভবিষ্যত জীবনে চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। ছোট ছোট উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারগুলো ওদের বোঝানোর চেষ্টা করুন। যেমন ধরুন ছেলে বলল বাবা খাতা শেষ কালকে খাতা নিয়ে আসবে। আপনি দেখলেন খাতাটি খুব বাজেভাবে ব্যবহার করেছে ও। কোন পাতায় দু লাইন লিখে আর লেখেনি কোন পাতায় আবার এমনি হিজিবিজি কেটেছে কয়েকটা পাতা আবার অন্য কাজে ছিঁড়ে নিয়েছে। ওকে বোঝান এভাবে পৃষ্ঠা নষ্ট করাটা খারাপ। বলুন অনেক ছেলেমেয়ে এখনও আছে যাদের শুধুমাত্র বইপত্রের অভাবে পড়াশোনা হয়না। নতুন খাতা এনে দিয়ে বলে দিন এবারও যদি ওরকমভাবে খাতা ব্যবহার করে তাহলে কঠোর শাস্তি গরে। পুরোনো খাতার না লেখা পৃষ্ঠাগুলোতে হাতের লেখা বা অঙ্ক করান। আছে বলেই জিনিস নষ্ট করতে হবে এই ধারনাটা কোন মতেই গড়ে উঠতে দেওয়া চলবে না ওদের মনে।
গুছিয়ে পরিমিতভাবে প্রয়োজন অনুসারে জিনিসপত্র ব্যবহার করার গুণটা ভবিষ্যতে উন্নতি করার ক্ষেত্রে ভীষণ কার্যকরী ভূমিকা নেয়। এই প্রসঙ্গে একটি কথা বলা যায় অনেক বাবা মায়ের ক্ষেত্রেই দেখা যায় তাঁদের ছাত্র জীবনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে। যেভাবে তাঁদের ছেলেমেয়েরা মানুষ হচ্ছে তার থেকে কষ্ট করে অধিকাংশ সময় বাবা মা পড়াশোনা করে থাকেন। কথায় কথায় সেসব প্রসঙ্গ টেনে আনেন বাবা মা। ‘আমরা কী কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি।’ ‘তোরা তো রাজার হালে মানুষ হচ্ছিস, আমরা কত কষ্ট করেছি’ এই ধরনের কথা বারবার বললে ছেলেমেয়ের মনে একটা বিতৃষ্ণা এসে যায়। ওরা সচ্ছলতার মধ্যে জন্মেছে, আপনারা ওদের তুলনায় কষ্ট করেছেন এই বিষয়ে তো ওদের কিছু করার নেই। তাই এরকম কথা বারবার বলে কিন্তু ওদের কিছু শেখাতে পারবেন না বরং বারবার বললে ওদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। তারচেয়ে ছোট ছোটো উদাহরণ দিয়ে হাতে কলমে বিষয়টা বোঝান।
Role of parents in child development:
যা করবেন :
- যা প্রয়োজন তাই দিন ছেলেমেয়েকে।
- দুজনে একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নিন – কি দেবেন, কি দেবেন না সে বিষয়ে।
- খাতা, পেন, পেন্সিল ব্যবহার না করে নষ্ট করছে কিনা নজর রাখুন।
- বোঝান অহেতুক কোন জিনিস নষ্ট করলে নিজেকেই তার ফল ভোগ করতে হয়। আছে বলেই নষ্ট করতে হবে এই ধারণা ঠিক নয় – বোঝান।
- যাঁরা কষ্ট করে পড়াশোনা করে বড় হয়েছেন তাঁদের কথা বলে উৎসাহ যোগান।
যা করবেন না :
- আদরের সন্তান বলে চাইলেই তা কিনে দেবেন না।
- বাবা একরকম কথা বলবেন মা আরেকরকম কথা বলবেন এরকম করবেন না।
- অহেতুক ছদ্ম অভাব সৃষ্টি করে ছেলেমেয়েকে কষ্ট করাবেন না।
- নিজেরা কত কষ্ট করেছেন সে কথা বারবার বলে ওদের হতাশ করে দেবেন না। অহেতুক বেশি আদর দেবেন না।
- যা চাইছে তাতেই না বলবেন না।