আজকের প্রতিবেদনে আমরা ভারতের জনসংখ্যা কত 2023 (What is the population of India) সম্পর্কে জানব এবং তার সঙ্গে আরো জানবো যে ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনসংখ্যা বন্টনের অবস্থাটি কেমন, ১৯০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ভারতবর্ষের জনসংখ্যা কেমন ছিল, জনসংখ্যা নীতি 2000, জনঘনত্ব, স্ত্রী পুরুষের অনুপাতের হার, জন্মহার ও মৃত্যুহার, ভারতবর্ষের পুরুষ নারীর গড় আয়ু, শিশু মৃত্যুর হার সহ আরো বহু তথ্য।
এই তথ্যগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক এবং চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছেন যে সমস্ত পরীক্ষার্থী তাদের জন্য। চলুন শুরু করা যাক।
What is the Population of India 2023
ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনসংখ্যার বন্টনের অবস্থাটি কেমন?
২০১১ সালের মার্চ মাসে ভারতের জনসংখ্যা ১২১ কোটি ০২ লক্ষ জন। জনসংখ্যার বিশালত্বে ভারত পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ।
২০১১ সালে দেশের সর্বশেষ আদমসুমারির হিসাব অনুসারে পুরুষের সংখ্যা ৬২-৩৭ কোটি এবং মহিলা ৫৮-৬৫ কোটি। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৭.০৪ শতাংশ ভারতে বসবাস করে। যদিও পৃথিবীর মোট স্থলভাগের মাত্র ২.৪২ শতাংশ এই দেশের অন্তর্গত।
শিশুর বিকাশে বংশগতির প্রভাব: Impact of Heredity in child development
১৯০১ সালের আদমসুমারি থেকে ২০১১ সালের মধ্যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু ১৯১১ থেকে ১৯২১ সালে এই ধারার ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। ২০০১–২০১১ সালের মধ্যে ভারতে জনসংখ্যার মোট বৃদ্ধির পরিমাণ ১৮.২৭ কোটি। প্রসঙ্গত, ভারতের এই বিশাল জনসংখ্যা অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যার দশগুণের বেশি। দেশে দশকওয়ারি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.৩০ শতাংশ কমেছে। কেরলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সবচেয়ে কম।
ভারতের জনসংখ্যা (কোটি): ১৯০১–২০১১ (What is the Population of India)
সাল | জনসংখ্যা (কোটি) | সাল | জনসংখ্যা (কোটি) |
---|---|---|---|
১৯০১ | ২৩.৮৪ | ১৯৬১ | ৪৩.৯২ |
১৯১১ | ২৫.২১ | ১৯৭১ | ৫৪.৮২ |
১৯২১ | ২৫.১৩ | ১৯৮১ | ৬৮.৩৩ |
১৯৩১ | ২৭.৯০ | ১৯৯১ | ৮৪.৬৩ |
১৯৪১ | ৩১.৮৭ | ২০০১ | ১০২.৭৫ |
১৯৫১ | ৩৬.১১ | ২০১১ | ১২১.০২ |
ভারতের জনসংখ্যা নীতি-২০০০-এ কি বলা হয়েছে?
“ভারতের “জাতীয় জনসংখ্যা নীতি – ২০০০” কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় ফেব্রুয়ারী-২০০০-এ অনুমোদিত হয়েছে। এই নীতি অনুসারে ভারত সরকার জনগণের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং জনসংখ্যার স্থিতাবস্থার উপর জোর দিয়েছেন। তা ছাড়া, এই জনসংখ্যা নীতিতে কায়রো সনদের দ্রুত বাস্তবায়নের উপরও সরকার গুরুত্ব দিয়েছেন।
২০১১ সালে ভারতের লোকসংখ্যা ১২১ কোটি ০২ লক্ষ জন। বর্তমানে দেশে প্রতিবছর ১.৮১ কোটি লোক বাড়ছে। যেখানে চীনে লোকসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রতিবছরে ১.২০ কোটি। সুতরাং দেশের মধ্যে জনসংখ্যা এই অস্বাভাবিক দ্রুত হারে বেড়ে চলার ফলে ভবিষ্যতে ভারত লোকসংখ্যায় চীনকে অতিক্রম করবে এবং ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশে পরিণত হবে।
আলোচ্য জনসংখ্যা নীতি অনুসারে ২০২৬ সাল নাগাদ দেশের জনসংখ্যা স্থিতাবস্থায় পৌঁছবে বলে আশা করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, মোট প্রজনন হার ১.৬ হলে লোকসংখ্যা স্থির বা স্থিতাবস্থায় পৌঁছয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশের মোট প্রজনন হার যথাক্রমে ৩.৫, ২.৮ এবং ২.০। সুতরাং ভারতের এই তিনটি জনবহুল রাজ্যে সরকারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জনসংখ্যার স্থিতাবস্থায় পৌঁছন সম্ভব নয় বলে আশঙ্কা করা যায়।
তবে ২০২১ থেকে ২০৫১-র মধ্যে তামিলনাড়ু, কেরল ও পাঞ্জাবের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শূন্য শতাংশে পৌঁছে যাবে বলে সরকারী মহল আশা করছেন। এ ছাড়া, ২০৩১ সাল থেকে তামিলনাড়ুর জনসংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে জনসংখ্যার এই অসম বৃদ্ধি হারের ফলে ২০৫১ সালে ভারতের জনসংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ১৬৪ কোটি।
ভারতের জনঘনত্ব কত (What is the Population of India)?
ভারতের গড় জনঘনত্ব ২০০১-এ প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৩১২ জন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১১-এ ৩৮২ জনে দাঁড়িয়েছে, যেখানে পৃথিবীর গড় জনঘনত্ব বর্গ কিলোমিটার প্রতি ৩৯.৬৬ জন। প্রসঙ্গতঃ, ১৯০১ সালে ভারতের জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল প্রতি বর্গকিলোমিটারে মাত্র ৭৭ জন।
ভারতে জনসংখ্যার বন্টন কি ধরনের?
ভারতে জনসংখ্যার বন্টন অসমান। জনঘনত্বের পরিমাণ অনুসারে ভারতকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
(১) অতি উচ্চ জনঘনত্ব অঞ্চল (জনঘনত্ব ১,০০০ জনের বেশি প্রতি বর্গ কিমি) ঃ দিল্লি, চন্ডীগড়, পন্ডিচেরি, দমন ও দিউ এবং লাক্ষাদ্বীপ।
(২) উচ্চ জনঘনত্ব অঞ্চল (জনঘনত্ব ৫০১–১,০০০ জন প্রতি বর্গকিমি) : উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, কেরল।
(৩) মধ্যম জনঘনত্ব অঞল (জনঘনত্ব ২৫১–৫০০ জন প্রতি বর্গকিমি) ঃ অসম, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, গুজরাট, ঝাড়খন্ড, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, ত্রিপুরা, গোয়া, দাদরা ও নগর হাভেলি। (৪) নিম্ন জনঘনত্ব অঞ্চল (জনঘনত্ব ১০১–২৫০ জন প্রতি বর্গকিমি) ঃ মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্রিশগড়, উত্তরাঞ্চল, মণিপুর, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড।
(৫) অতি নিম্ন জনঘনত্ব অঞ্চল (জনঘনত্ব ১০০ জনের কম প্রতি বর্গকিমি) : হিমাচল প্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, সিকিম, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।
ভারতে জনসংখ্যার বন্টন সমান নয় কেন?
ভারতে জনসংখ্যার বন্টন সর্বত্র সমান নয়। কারণ—
(১) দেশে জমির বৈশিষ্ট্য কোথাও এক রকম নয়। কোথাও পাহাড়, কোথাও মরুভূমি, কোথাও সমভূমি, কোথাও জলের যোগান বেশি আবার কোথাও কম।
(২) দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সর্বত্র সমান নয়। উষ্ণতাও আলাদা।
(৩) চাষের জন্য একান্ত দরকার যে মাটি, তাও নানা জায়গায় নানা রকমের। কোথাও পলিমাটি, কোথাও রুক্ষ মাটি, কোথাও নোনা মাটি।
(৪) দেশের সব জায়গায় সব ধরণের খনিজ দ্রব্য পাওয়া যায় না।
(৫) শিল্প গড়ার জন্য সুযোগ সুবিধা, ব্যবসা করার পরিবেশ ইত্যাদিও দেশের মধ্যে এক এক জায়গায় এক এক রকমের।
(৬) ভারতের সব রাজ্যে পরিবহনের সুযোগও এক রকম নয়।
(৭) এ ছাড়া রয়েছে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ভাষা ও সংস্কৃতির তারতম্য।
ভারতে স্ত্রী-পুরুষের অনুপাতের হার কেমন?
ভারতে স্ত্রী ও পুরুষের অনুপাত সমান নয়। ২০১১ সালের আদমসুমারি অনুসারে, প্রতি ১০০০ পুরুষে স্ত্রীলোকের সংখ্যা হল ৯৪০ জন।
স্ত্রী-পুরুষের অনুপাতগত অসমতার কারণ কি?
স্ত্রী-পুরুষের অনুপাতে এই অসমতা নানা ধরনের আর্থ-সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করে। যে সমস্ত কারণে স্ত্রী-পুরুষের অনুপাতে সামঞ্জস্যের অভাব লক্ষ্য করা যায়, সেগুলি হল—
(১) পুরুষ সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ।
(২) মায়েদের প্রসবকালীন সময়ে মৃত্যু বা তারপরে অবহেলা, অযত্ন বা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু।
(৩) পুরুষ ও মহিলার মধ্যে শক্তি-সামর্থ্যের তফাত।
(৪) স্ত্রী-শিশুর জন্মের পর অবহেলা ও রোগের প্রকোপে মৃত্যু।
(৫) বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক নিপীড়নের কারণে মহিলাদের মৃত্যু, যেমন— ডাইনি হত্যা, বধু হত্যা/আত্মহত্যা, কন্যা ভ্রুণ হত্যা, গর্ভপাতজনিত মৃত্যু ইত্যাদি।
ভারতে সাক্ষরতার হার কেমন?
২০১১ সালে জনগণনার ভিত্তিতে দেশের মোট পুরুষের ৮২.১৪% ও নারীদের মধ্যে ৬৫.৪৬%-এর বেশি সাক্ষর। গড়ে প্রতি ১০০ জনে ভারতে ৭৪ জন স্বাক্ষর। ১৯৫১ সালে এই হার ছিল পুরুষ ২৭-১৬% ও স্ত্রীলোক ৮.৮৬%। মহিলাদের মধ্যে সাক্ষরতার প্রসার যত বেশি হবে স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে অর্থনৈতিক ব্যবধান তত কমবে; শিশু ও বালক-বালিকাদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার তত দ্রুত হবে; বালক-বালিকাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে; জন্মহার কমার সম্ভাবনা আরো বৃদ্ধি পাবে।
ভারতে জন্মহার ও মৃত্যুহার কত?
২০১১ সালের হিসাব অনুসারে-
(১) ভারতে জন্মহার হল প্রতি হাজারে ২২.২২ জন।
(২) ভারতে মৃত্যুহার হল প্রতি হাজারে ১.৪ জন।
ভারতে পুরুষ ও নারীর সম্ভাব্য আয়ু ও গড় আয়ু কত?
সম্ভাব্য-২০১১ সালের হিসাব অনুসারে
(১) ভারতে পুরুষের সম্ভাব্য আয়ু হল ৬৭.৪৬ বছর।
(২) ভারতে নারীর সম্ভাব্য আয়ু হল ৭২.৬১ বছর।
(৩) ভারতে নারী-পুরুষের গড় সম্ভাব্য আয়ু হল ৬৯.৮৯ বছর।
ভারতে প্রজনন হার কত?
২০১১ সালের হিসাব অনুসারে, ভারতে প্রজনন হার হল এক জন মহিলা পিছু গড়ে ২-৫টি সন্তান।
ভারতে মোট জনসংখ্যার কত শতাংশ শিশু ও কিশোর?
২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, শিশু ও কিশোর অর্থাৎ ০–১৪ বছর বয়সী জনসংখ্যা হল ৩১.১%।
ভারতে মোট জনসংখ্যার কত শতাংশ যুবক ও প্রৌঢ়?
২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, ভারতে যুবক ও প্রৌঢ় অর্থাৎ ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী জনসংখ্যা হল ৬৩.৬%।
ভারতে মোট জনসংখ্যার কত শতাংশ বৃদ্ধ?
২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, বৃদ্ধ মানুষ অর্থাৎ ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী জনসংখ্যা হল ৫.৩%।
ভারতে শিশুমৃত্যুর হার কত?
২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, প্রতি ১০০ জন জীবিত শিশুর জন্মের সাপেক্ষে ৩০-১৫টি শিশুর মৃত্যু হয়।
২০২০ ও ২০৩০ সালে ভারতের সম্ভাব্য জনসংখ্যা কত?
(১) ২০২০ সালে ভারতের সম্ভাব্য জনসংখ্যা হল ১৩২ কোটি ৬১ লক্ষ।
(২) ২০৩০ সালে ভারতের সম্ভাব্য জনসংখ্যা হল ১৪৬ কোটি ০৭ লক্ষ।
মানব উন্নয়ন কাকে বলে?
মানুষের ক্ষমতা ও কাজের প্রসার ঘটিয়ে মানুষকে দীর্ঘ, সুস্থ ও সৃষ্টিশীল জীবন গড়ে তোলার জন্য আরও বেশি সুযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়াকে মানব উন্নয়ন বা হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (Human Development) বলে।
মানব উন্নয়নের সূচক বলতে কি বুঝি?
১৯৯০ সালে রাষ্ট্রসংঘ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের আয়ু, জ্ঞান বা শিক্ষা ও জীবনধারণের মান— এই তিনটি মূল বিষয়কে ভিত্তি করে মানুষের কতটা উন্নতি হয়েছে, সে সম্পর্কে রিপোর্ট প্রকাশ করেন। তারপর থেকে প্রতি বছরই এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়ে চলেছে।
মানব উন্নয়ন পরিমাপ করার জন্য চারটি সূচক (Index) ব্যবহার করা হয়। যেমন—
(১) মানবিক উন্নয়ন সূচক (Human Development Index),
(২) মানবিক দারিদ্র্য সূচক (Human Poverty Index),
(৩) নারী উন্নয়ন সূচক (Gender Related Development Index GDI) এবং
(৪) নারীদের ক্ষমতার পরিমাপ (Gender Empowerment Measure)।
বস্তুতপক্ষে, মানুষের সবচেয়ে ভাল অবস্থার মান মানবিক উন্নয়নের সূচক অনুসারে ১ (এক) এবং সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হল ০ (শূন্য)। ২০১২ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী নরওয়ের জনগণের অবস্থা ছিল সবচেয়ে ভাল (HDI Value ০.৯৫৫) এবং গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর মানুষের অবস্থা ছিল সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত (HDI Value 0.308)। HDI মানের ক্রম অনুসারে, ভারত ১৩৬তম স্থান অধিকার করে (HDI Value ০.৫৫৪)।
মানুষের দারিদ্র্য সূচক কি?
মানুষের উন্নতির জন্য সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সুযোগ-সুবিধা কিভাবে বন্টিত হয়েছে এবং কোন গোষ্ঠী কতটা বঞ্চিত হয়েছে, তার পরিমাপ যে সূচকের মাধ্যমে করা হয়, তাকে মানুষের দারিদ্র্য সূচক (Human Poverty Index — HPI) বলে।
নারী-পুরুষের উন্নয়ন সূচক কি?
সমাজের নারী-পুরুষের মধ্যে কোন আর্থ-সামাজিক বৈষম্য আছে কিনা সে সম্বন্ধে বিচার-বিশ্লেষণের জন্য নারী-পুরুষের উন্নয়ন সূচক (Gender Development Index) [GDI] ব্যবহার করা হয়।
আলোচ্য সূচকের উপাদান হল—
(১) জন্মের সময়ে পুরুষ ও নারী শিশুর বাঁচার সম্ভাবনা কতটা।
(২) বয়স্ক নারী ও পুরুষের মধ্যে সাক্ষরতার হার কত।
(৩) নারী ও পুরুষের মধ্যে উচ্চশিক্ষার হার কত।
(৪) আয়ের কতটা অংশ নারীর ও কতটা পুরুষের সেই সম্পর্কিত তথ্য। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, সর্বনিম্ন GDI হল ০ (শূন্য) এবং সর্বোচ্চ ১ (এক)।
নারীদের ক্ষমতার পরিমাপ (GEM) বলতে কি বুঝি?
যে সূচকের সাহায্যে সমাজের সকল স্তরে নারীদের হাতে কতটুকু ক্ষমতা আছে, তা চিহ্নিত করা হয়, তাকে নারীদের ক্ষমতার পরিমাপ বা জেনডার এমপাওয়ারমেন্ট মেজার (Gender Empowerment Measure GEM) বলে। বস্তুতপক্ষে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনে নারীর সক্রিয় ভূমিকা পরিমাপের জন্য GEM ব্যবহার করা হয়।
GEM-এর সর্বনিম্ন মান (০) শূন্য ও সর্বোচ্চ মান (১) এক।
সামাজিক পরিবেশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর জনসংখ্যার প্রভাব কি?
জনসংখ্যার অনুকূল প্রভাব:
(১) জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে, শ্রমিক ও শ্রমের যোগান বৃদ্ধি পায়। ফলে সম্পদের আহরণ এবং উৎপাদন বাড়ে।
(২) উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে শ্রমিক ও শ্রমের চাহিদা বাড়ে। তবে বিভিন্ন পেশায় কত লোক নিযুক্ত হবে, তা নির্ধারিত হয়—
(ক) উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত প্রযুক্তির উপর। অর্থাৎ শ্রমনিবিড় (labour intensive) বা যন্ত্রনির্ভর (machine intensive) কি ধরনের উৎপাদন ব্যবস্থা দেশে চালু রয়েছে তার উপর;
(খ) মজুরির হার বা শ্রমিকের খাতে মোট খরচের উপর;
(গ) উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনার উপর;
(ঘ) শ্রম ও অন্যান্য উপাদানের ব্যবহার ও পরিবর্তনের উপর (elasticity of substitution of other factors for labour) ইত্যাদি।
(৩) জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বাজারের আয়তন (size of market) বাড়ে। অর্থাৎ খাদ্যদ্রব্য, ভোগ্যপণ্য ইত্যাদির চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
(৪) জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের মূলধনের ভান্ডার বৃদ্ধি পায়।
কারণ, জনসংখ্যা = বর্ধিত উৎপাদন = বর্ধিত বিনিয়োগ = বর্ধিত মূলধনের ভান্ডার।
(৫) জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে, অর্থনৈতিকভাবে উৎপাদনশীল ও সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল জনসংখ্যার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
জনসংখ্যার প্রতিকূল প্রভাব :
(১) জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যের যোগান দেওয়া অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। কারণ খাদ্যের উৎপাদন বর্ধিত হয় সমান্তর হারে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় গুণোত্তর হারে। সেক্ষেত্রে অপুষ্টি, অনাহার প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়।
(২) জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি হ্রাস পায়। কারণ মোট উৎপাদনের হার যেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের চেয়ে কম, সেখানে মাথা পিছু উৎপাদন ক্রমশঃ কমতে থাকে।
(৩) ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা মোট উৎপাদন ব্যবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করলে, মাথা পিছু আয় কমে যায়। ফলে গণ-দারিদ্রের (mass poverty) সৃষ্টি হয়।
(৪) দারিদ্র্য এবং অপুষ্টির জন্য শিশুমৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়।
(৫) অনিয়ন্ত্রিতভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে অনুৎপাদক, অপ্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার চাপে, অর্থনৈতিকভাবে উৎপাদক লোকজন যতই উৎপাদন ও আয় বাড়াক, সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার মান বিশেষ বৃদ্ধি পায় না।
(৬) জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বিনিয়োগ এবং মূলধন গঠনের হার কমে। সুতরাং যে দেশে খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষা ইত্যাদি খাতে ব্যয় কম, সেখানে জাতীয় সঞ্চয়ের পরিমাণ বেশি এবং তার ফলে বিনিয়োগ এবং মূলধন গঠনের সম্ভাবনাও বেশি।
(৭) জনসংখ্যা বাড়লে মানুষ-জমির আনুপাতিক হার (man-land ratio) প্রতিকূল হয়। ফলে ক্রমহ্রাসমান উৎপাদন বিধি (law of diminishing return) কাজ করতে শুরু করে।
(৮) জনসংখ্যা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়লে এবং উৎপাদন কমলে বেকারত্ব বাড়ে। কৃষিক্ষেত্রে ছদ্ম বেকারত্ব (disguised unemployment) দেখা যায়।
(৯) ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট করে। জমির অবক্ষয় বাড়ে, অরণ্যের বিনাশ হয়, এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক ও সামাজিক সমস্যাগুলি বাড়ে। যেমন— পুনর্বাসনের সমস্যা, বাসস্থানের সমস্যা, বন্যার সমস্যা, আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা ইত্যাদি।
(১০) বিদেশী সাহায্য, অনুদান, ঋণ প্রভৃতির মাত্রা বাড়ে। ফলে জনগণ সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ে।
জনসংখ্যার উপর সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রভাব কি?
(১) উন্নয়নের প্রাথমিক পর্বে জন্মহার ও মৃত্যুহার, দুই-ই অত্যন্ত বেশি হয়। ফলে, জনসংখ্যার মোট পরিমাণ অল্প হয়। তাই অর্থনীতি আদিম ও উন্নয়নবিমুখ হয়ে ওঠে।
(২) দ্বিতীয় পর্বে যখন অর্থনীতি বিকাশশীল এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের হার মন্থর থাকে, সেই অবস্থায় দরিদ্র জনসাধারণের মধ্যে “সন্তান লাভের প্রবণতা” (marginal propensity to have children) বেশি হয়। অর্থাৎ আয় বৃদ্ধির আশায় দরিদ্র পিতামাতা সন্তানসংখ্যা অনিয়ন্ত্রিত রাখা অধিকতর লাভজনক বলে মনে করেন। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্বিতীয় পর্বে সাধারণত কৃষিভিত্তিক অর্থব্যবস্থা দেখা যায়। এই পর্বে চিকিৎসা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে প্রসারলাভ করার জন্য মৃত্যুহার কমতে থাকে। ফলে মোট জনসংখ্যা বাড়তেই থাকে।
(৩) উন্নয়নের তৃতীয় পর্বে যখন নতুন নতুন শিল্প ক্রমশঃ বাড়তে থাকে, সেই অবস্থায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে কমে। কারণ, পিতামাতা তখন সন্তানকে তাদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার উৎস বা আয়বৃদ্ধির উপায় বলে মনে করে না।
(৪) সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সর্বোচ্চ পর্যায়ে জন্মহার ও মৃত্যুহার, দুই-ই কমে। ফলে মোট জনসংখ্যার পরিমান অত্যন্ত কমে যায়।
FAQs:
ভারতে পুরুষ ও নারীর সম্ভাব্য আয়ু ও গড় আয়ু কত?
সম্ভাব্য-২০১১ সালের হিসাব অনুসারে (১) ভারতে পুরুষের সম্ভাব্য আয়ু হল ৬৭.৪৬ বছর। (২) ভারতে নারীর সম্ভাব্য আয়ু হল ৭২.৬১ বছর। (৩) ভারতে নারী-পুরুষের গড় সম্ভাব্য আয়ু হল ৬৯.৮৯ বছর।
ভারতে শিশুমৃত্যুর হার কত?
২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, প্রতি ১০০ জন জীবিত শিশুর জন্মের সাপেক্ষে ৩০-১৫টি শিশুর মৃত্যু হয়।
ভারতের জনসংখ্যা কত 2022 ?
২০১১ সালের সেনসাসে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ভারতের মোট জনসংখ্যা ছিল ১২১ কোটি ৮ লক্ষ্য ৫৪ হাজার ৯৭৭ (১২১,০৮৫৪,৯৭৭)।
ভারতে মোট জনসংখ্যার কত শতাংশ শিশু ও কিশোর?
২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, শিশু ও কিশোর অর্থাৎ ০–১৪ বছর বয়সী জনসংখ্যা হল ৩১.১%।