Geometry Concepts : জ্যামিতির মৌলিক ধারণা

Geometry Concepts

Geometry concepts : জ্যামিতি গণিতের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা, যা স্থান, আকৃতি, আকার এবং তাদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করে। জ্যামিতির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Geometry, যেখানে “Geo” অর্থ পৃথিবী এবং “metry” অর্থ পরিমাপ। জ্যামিতির মূল উদ্দেশ্য হলো স্থান ও আকৃতির পরিমাপ এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা। এই লেখায় জ্যামিতির মৌলিক ধারণাগুলো সহজ ও স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা হলো।

Whatsapp গ্রুপে যুক্ত হন
Telegram গ্রুপে যুক্ত হন

জ্যামিতির মৌলিক ধারণা – Geometry Concepts

তল (Surface)

তল হলো দ্বি-মাত্রিক (2D) একটি সমতল বা বক্র পৃষ্ঠ, যার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ আছে কিন্তু উচ্চতা নেই। তল দুই প্রকার:

১. সমতল (Plane Surface)

সমতল হলো একটি সম্পূর্ণ সমান ও মসৃণ পৃষ্ঠ। সমতলের উপর যেকোনো দুটি বিন্দু নিলে, তাদের সংযোগকারী সরলরেখাটি সম্পূর্ণরূপে সমতলের মধ্যে অবস্থিত থাকে।
উদাহরণ: বইয়ের পাতা, টেবিলের উপরিতল, দেয়াল ইত্যাদি।

২. বক্রতল (Curved Surface)

বক্রতল হলো একটি অসম বা বাঁকা পৃষ্ঠ। বক্রতলের উপর যেকোনো দুটি বিন্দু নিলে, তাদের সংযোগকারী সরলরেখাটি সম্পূর্ণরূপে তলের মধ্যে থাকে না।
উদাহরণ: গোলক (বল), সিলিন্ডার, শঙ্কু ইত্যাদি।


ঘনবস্তু (Solid)

ঘনবস্তু হলো ত্রি-মাত্রিক (3D) বস্তু, যার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা আছে। ঘনবস্তুর উদাহরণগুলোর মধ্যে রয়েছে কিউব, গোলক, পিরামিড ইত্যাদি।


বিন্দু (Point)

বিন্দু হলো জ্যামিতির সবচেয়ে মৌলিক ধারণা। এটি হলো স্থানের একটি নির্দিষ্ট অবস্থান, যার কোনো দৈর্ঘ্য, প্রস্থ বা উচ্চতা নেই। বিন্দুকে সাধারণত একটি ছোট বৃত্ত বা ডট (•) দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।

বিন্দুর বৈশিষ্ট্য:

  • বিন্দুর কোনো মাত্রা নেই (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ বা উচ্চতা শূন্য)।
  • বিন্দুকে শুধুমাত্র তার অবস্থান দ্বারা চিহ্নিত করা যায়।

বিন্দুর প্রকারভেদ:

১. সমরেখ বিন্দু (Collinear Points): একই সরলরেখার উপর অবস্থিত বিন্দুগুলোকে সমরেখ বিন্দু বলে।
২. সমবিন্দু রেখা (Concurrent Lines): একই বিন্দুতে মিলিত রেখাগুলোকে সমবিন্দু রেখা বলে।
৩. শীর্ষবিন্দু (Vertex): কোণের শীর্ষে অবস্থিত বিন্দুকে শীর্ষবিন্দু বলে।


রেখা (Line)

রেখা হলো অসীম সংখ্যক বিন্দুর সমষ্টি, যা উভয় দিকে অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত। রেখার কোনো প্রান্তবিন্দু বা শেষ নেই।

রেখার প্রকারভেদ:

১. সরলরেখা (Straight Line): একটি বিন্দু থেকে অন্য একটি বিন্দুতে পৌঁছাতে যদি দিকের পরিবর্তন না হয়, তাকে সরলরেখা বলে।
২. বক্ররেখা (Curved Line): একটি বিন্দু থেকে অন্য একটি বিন্দুতে পৌঁছাতে যদি দিকের পরিবর্তন হয়, তাকে বক্ররেখা বলে।

রেখার বৈশিষ্ট্য:

  • রেখার কোনো নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য নেই।
  • রেখার প্রস্থ বা বেধ নেই।
  • রেখার প্রান্তবিন্দু নেই।
  • রেখা যেকোনো দিকে অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত।

রেখাংশ (Line Segment)

রেখাংশ হলো রেখার একটি সসীম অংশ, যার দুইটি প্রান্তবিন্দু থাকে। রেখাংশের নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য আছে।

রেখাংশের বৈশিষ্ট্য:

  • রেখাংশের নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য আছে।
  • রেখাংশের দুইটি প্রান্তবিন্দু আছে।
  • রেখাংশ সসীম পর্যন্ত বিস্তৃত।

তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর জন্য আকর্ষণীয় গাণিতিক কুইজ -এর জন্য এখানে ক্লিক করুন 


কোণ (Angle)

দুইটি রশ্মি একই বিন্দুতে মিলিত হলে যে চিত্র তৈরি হয়, তাকে কোণ বলে। রশ্মি দুটিকে কোণের বাহু এবং সাধারণ বিন্দুটিকে কোণের শীর্ষবিন্দু বলে।

কোণের বৈশিষ্ট্য:

  • একটি কোণের জন্য দুটি রশ্মি প্রয়োজন।
  • প্রতিটি কোণের একটি শীর্ষবিন্দু থাকে।
  • একটি কোণের পরিমাপ সর্বোচ্চ ৩৬০° হতে পারে।

কোণের প্রকারভেদ:

১. শূন্য কোণ (Zero Angle): পরিমাপ ০°।
২. সূক্ষ্মকোণ (Acute Angle): পরিমাপ ০° থেকে ৯০° এর মধ্যে।
৩. সমকোণ (Right Angle): পরিমাপ ৯০°।
৪. স্থূলকোণ (Obtuse Angle): পরিমাপ ৯০° থেকে ১৮০° এর মধ্যে।
৫. সরলকোণ (Straight Angle): পরিমাপ ১৮০°।
৬. প্রবৃদ্ধ কোণ (Reflex Angle): পরিমাপ ১৮০° থেকে ৩৬০° এর মধ্যে।
৭. পূর্ণ কোণ (Complete Angle): পরিমাপ ৩৬০°।


বিশেষ কোণ

১. বিপ্রতীপ কোণ (Vertically Opposite Angles)

দুইটি সরলরেখা পরস্পরকে ছেদ করলে যে কোণগুলো তৈরি হয়, তাদের বিপ্রতীপ কোণ বলে। বিপ্রতীপ কোণগুলো পরস্পর সমান হয়।

২. সন্নিহিত কোণ (Adjacent Angles)

একই শীর্ষবিন্দু এবং একটি সাধারণ বাহু বিশিষ্ট দুইটি কোণকে সন্নিহিত কোণ বলে।

৩. পূরক কোণ (Complementary Angles)

দুইটি কোণের সমষ্টি ৯০° হলে, তাদের পূরক কোণ বলে।

৪. সম্পূরক কোণ (Supplementary Angles)

দুইটি কোণের সমষ্টি ১৮০° হলে, তাদের সম্পূরক কোণ বলে।

৫. পরিপূরক কোণ (Conjugate Angles)

দুইটি কোণের সমষ্টি ৩৬০° হলে, তাদের পরিপূরক কোণ বলে।


চতুর্ভুজ 🔲

  • চারটি বাহু দ্বারা আবদ্ধ ক্ষেত্রকে চতুভুজ বলে।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • বাহুর সংখ্যা ৪টি
    • শীর্ষবিন্দুর সংখ্যা ৪টি
    • কর্ণের সংখ্যা ২টি
    • সমস্ত অভ্যন্তরীণ কোণের সমষ্টি ৩৬০°
  1. আয়তক্ষেত্র 🟥
  • বিপরীত বাহুদ্বয় পরস্পর সমান ও সমান্তরাল এবং প্রত্যেকটি কোণ সমকোণ।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • কর্ণদ্বয় সমান
    • কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমকোণে সমদ্বিখন্ডিত করে
    • পরিসীমা = ২(দৈর্ঘ্য + প্রস্থ)
    • ক্ষেত্রফল = দৈর্ঘ্য × প্রস্থ
  1. সামান্তরিক 🔲
  • বিপরীত বাহুদ্বয় পরস্পর সমান ও সমান্তরাল এবং বিপরীত কোণদ্বয় সমান।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমানভাবে সমদ্বিখন্ডিত করে
    • পরিসীমা = ২(দৈর্ঘ্য + প্রস্থ)
    • ক্ষেত্রফল = ভূমি × উচ্চতা
  1. বর্গক্ষেত্র
  • প্রত্যেকটি বাহু সমান এবং প্রত্যেকটি কোণ সমকোণ।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • কর্ণদ্বয় সমান
    • কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমকোণে সমদ্বিখন্ডিত করে
    • ক্ষেত্রফল = বাহুর দৈর্ঘ্য × বাহুর দৈর্ঘ্য
  1. রম্বস 🔷
  • প্রত্যেকটি বাহু সমান এবং বিপরীত কোণদ্বয় সমান।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • কর্ণদ্বয় অসমান
    • কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমানভাবে সমদ্বিখন্ডিত করে
    • ক্ষেত্রফল = ½ × কর্ণদ্বয়ের গুণফল
    • পরিসীমা = ৪ × এক বাহুর দৈর্ঘ্য
  1. ট্রাপিজিয়াম
  • একজোড়া বিপরীত বাহু সমান্তরাল।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • ক্ষেত্রফল = ½ × (সমান্তরাল বাহুদ্বয়ের যোগফল) × সমান্তরাল বাহুদ্বয়ের দূরত্ব

বৃত্ত

  • একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে সমান দূরত্ব বজায় রেখে অন্য বিন্দু ঘুরে এলে তৈরি হয়।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • পরিধি = ২πr
    • ক্ষেত্রফল = πr²

ত্রিভুজ 🔺

  • তিনটি রেখাংশ দ্বারা আবদ্ধ আকৃতি।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • তিনটি বাহু ও তিনটি কোণ
    • তিন কোণের সমষ্টি ১৮০°
  1. সমবাহু ত্রিভুজ 🔼
  • তিনটি বাহুর দৈর্ঘ্য সমান।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • তিনটি কোণ সমান
  1. সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ 🔺
    • দুইটি বাহুর দৈর্ঘ্য সমান।
    • বৈশিষ্ট্য:
    • দুইটি কোণ সমান
  2. বিষমবাহু ত্রিভুজ 🔺
    • তিনটি বাহুই অসমান।
    • বৈশিষ্ট্য:
    • তিনটি কোণ অসমান
  3. সমকোণী ত্রিভুজ 📐
    • একটি কোণ সমকোণ (৯০°)।
    • বৈশিষ্ট্য:
    • সমকোণের বিপরীত বাহুকে অতিভুজ বলে
  4. সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজ 🔺
    • তিনটি কোণই সূক্ষ্মকোণ।
  5. স্থূলকোণী ত্রিভুজ 🔺
    • একটি কোণ স্থূলকোণ।
    • বৈশিষ্ট্য:
    • স্থূলকোণের বিপরীত দুইটি কোণ সূক্ষ্মকোণ

জ্যামিতির এই মৌলিক ধারণাগুলো গণিতের অন্যান্য শাখায় এবং বাস্তব জীবনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এই ধারণাগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারলে জ্যামিতির জটিল সমস্যাগুলো সমাধান করা সহজ হয়ে যায়।

Leave a Comment