এই আর্টিকেলে শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে যেখানে বিশেষভাবে child growth and development principles for exam preparation অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আলোচনায় রয়েছে বৃদ্ধির বৈশিষ্ট্য, বিভিন্ন বয়সে বৃদ্ধির হার ও পার্থক্য, বিকাশের নীতি, বৃদ্ধির শর্ত, পিতা-মাতার ভূমিকা, অতি শৈশব ও প্রথম বাল্যকালের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ, সঞ্চালন অঙ্গের উন্নয়ন এবং সামাজিক বৈশিষ্ট্য। মোট ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের মাধ্যমে বিষয়টি সাজানো হয়েছে যা পশ্চিমবঙ্গের TET, কেন্দ্রের CTET এবং D.El.Ed প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে সহায়ক হবে।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর (child growth and development)
1. বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্যে পার্থক্য লিখুন। (Write down the difference between Growth and Development.)
বৃদ্ধি (Growth)
বৃদ্ধি বলতে শরীরের আকার ও আয়তনের পরিবর্তন বোঝায়। এটি প্রধানত শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
- শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও গ্রন্থির আকার ও আয়তন বৃদ্ধি পায়।
- এটি ধনাত্মক পরিবর্তনের কারণ।
- শুধুমাত্র শারীরিক পরিবর্তন বৃদ্ধির অংশ।
- বৃদ্ধি একটি স্বাভাবিক ও স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া, যেখানে অনুশীলনের প্রভাব থাকে।
- এটি নির্দিষ্ট অঙ্গ বা অংশে সীমাবদ্ধ।
- বৃদ্ধি দুটি পর্যায়ে ঘটে: ২২-২৩ বছরে মুখ্য বৃদ্ধিকাল এবং ২৭-২৮ বছরে গৌণ বৃদ্ধিকাল।
- বৃদ্ধি পরিমাণগত এবং পরিমাপযোগ্য।
- অনুশীলনের মাধ্যমে বৃদ্ধি শিক্ষার দ্বারা পরিচালিত হতে পারে।
- বংশগতি এর প্রধান প্রভাবক।
বিকাশ (Development)
বিকাশ বলতে শরীর ও মনের কার্যক্ষমতার উন্নতি বোঝায়। এটি সামগ্রিক পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
- শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও গ্রন্থির কার্যক্ষমতা এবং দক্ষতার উন্নতি ঘটে।
- ধনাত্মক পরিবর্তনের ফলাফল হল বিকাশ।
- শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, প্রাক্ষোভিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক পরিবর্তন এর অংশ।
- পরিবেশ এবং মিথস্ক্রিয়া এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ; ব্যক্তির সক্রিয়তা ও অনুশীলন আবশ্যক।
- বিকাশ জীবনের সব দিকের সঙ্গে সম্পর্কিত।
- এটি জন্ম থেকে সারাজীবন ধরে চলে এবং পর্যায়ক্রমে ঘটে।
- বিকাশ পরিমাণগত ও গুণগত উভয়ই।
- এটি পর্যবেক্ষণ ও বোধগম্যতার মাধ্যমে বোঝা যায়।
- বিকাশ সবসময় শিক্ষার দ্বারা পরিচালিত হয়।
- পরিবেশ এর প্রধান প্রভাবক।
ভারতীয়দের গণিতে অবদান, Contribution of Indians in Mathematics--এইখানে ক্লিক করুন।
2. বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্যে সম্পর্কটিকে আলোচনা করুন। (Discuss the relation between Growth and Development.)
বৃদ্ধি ও বিকাশ জীবনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনে। যদিও অনেকে এই দুটি শব্দ একই অর্থে ব্যবহার করে, তবে এদের মধ্যে তাৎপর্যগত পার্থক্য রয়েছে। নিচে এদের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করা হল:
- বৃদ্ধি শারীরিক পরিবর্তনের উপর জোর দেয়: বৃদ্ধি বলতে শরীরের আকার, উচ্চতা বা ওজনের বৃদ্ধি বোঝায়। উদাহরণস্বরূপ, যখন বলা হয় শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি হচ্ছে, তখন তার হাত-পা বা শরীরের কাঠামোর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির কথা বোঝানো হয়।
- বিকাশ কার্যক্ষমতার উন্নতি নির্দেশ করে: বিকাশ বলতে শুধু আকার নয়, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাজের দক্ষতা ও মানসিক শক্তির উন্নতি বোঝায়। যেমন, শিশুর দৈহিক বিকাশ হলে তার শরীরের অঙ্গগুলির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- সময়ের পার্থক্য: বৃদ্ধি একটি সাময়িক প্রক্রিয়া, সাধারণত নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত (২২-২৮ বছর) চলে। কিন্তু বিকাশ জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া, যা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চলতে থাকে।
- অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক: বৃদ্ধি ও বিকাশ পৃথকভাবে বিবেচনা করা যায় না। বৃদ্ধি বিকাশের ভিত্তি তৈরি করে, এবং বিকাশ বৃদ্ধির ফলাফলকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে। উদাহরণস্বরূপ, শরীরের বৃদ্ধি ছাড়া কার্যক্ষমতার বিকাশ সম্ভব নয়।
3. বৃদ্ধির সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করুন। (Mention the general characteristics of Growth.)
বৃদ্ধির সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ:
- বংশধারা ও পরিবেশের মিথস্ক্রিয়া: বৃদ্ধি বংশগতি ও পরিবেশের সম্মিলিত প্রভাবে ঘটে। শিক্ষকদের উচিত এমন পরিবেশ তৈরি করা যা বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে।
- বিভিন্ন বয়সে ভিন্ন হার:
- জন্ম থেকে ২-২.৫ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধির হার খুব বেশি।
- ২.৫ বছর থেকে বয়ঃসন্ধির ২ বছর আগে বৃদ্ধির হার কমে।
- বয়ঃসন্ধির ঠিক আগে বৃদ্ধির হার আবার দ্রুত হয়।
- বয়ঃসন্ধির পর বৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে কমে।
- অনুশীলনের প্রভাব: গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত অনুশীলন বৃদ্ধিকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের জন্য অনুশীলনের ব্যবস্থা করা।
- ব্যক্তিভেদে পার্থক্য: কিছু শিশুর বৃদ্ধি দ্রুত হয়, আবার কারও ধীর। শিক্ষকদের এই পার্থক্য বিবেচনা করে শিক্ষা পরিকল্পনা করা উচিত।
- ধারাবাহিকতা: যে শিশু বৃদ্ধিতে এগিয়ে থাকে, সে সাধারণত সারাজীবন এগিয়ে থাকে। শিক্ষকদের এই বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে শিক্ষা পরিকল্পনা করতে হবে।
- নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া: বৃদ্ধি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যা কখনও থেমে যায় না। তবে বয়সভেদে এর হার পরিবর্তিত হয়। শিক্ষায় ধারাবাহিকতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
4. বিকাশের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করুন। (Mention the general characteristics of Development.)
বিকাশ হল একটি প্রক্রিয়া যা ব্যক্তির ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং তাকে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে সাহায্য করে। এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
- শিখনের ফল: বিকাশ শিখনের মাধ্যমে ঘটে। পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার ফলে শিশু নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে, যা বিকাশের ভিত্তি।
- সংশ্লেষণ: বিকাশ কেবল ছোট ছোট শিখনের সমষ্টি নয়, বরং একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া। পিয়াজের মতে, এটি চারটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটে:
- পরিণমন
- অভিজ্ঞতা
- মানসিক যোগাযোগ (যেমন ভাষা, শিক্ষা, পিতা-মাতার প্রশিক্ষণ)
- ভারসাম্যকরণ
- নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া: বিকাশ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চলে, তবে এর হার সবসময় এক থাকে না।
- পারস্পরিক সম্পর্ক: দৈহিক, মানসিক, সামাজিক ও প্রাক্ষোভিক বিকাশ একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত ও নির্ভরশীল।
- সামগ্রিক থেকে বিশেষ: বিকাশ প্রথমে সামগ্রিকভাবে শুরু হয়, তারপর বিশেষ দিকে অগ্রসর হয়। যেমন, শিশু প্রথমে পুরো হাত ব্যবহার করে, পরে নির্দিষ্ট আঙুল।
- লিঙ্গগত পার্থক্য: বালিকারা বালকদের তুলনায় আগে পরিণত হয় এবং তাদের বয়ঃসন্ধি আগে শুরু হয়।
- ব্যক্তিগত প্রক্রিয়া: প্রত্যেকের বিকাশের হার ও ধরন ভিন্ন।
বিকাশের নীতি
বিকাশের প্রধান নীতিগুলি হল:
- বিকাশ মিথস্ক্রিয়ার ফল।
- বংশগতি ও পরিবেশের সম্মিলিত প্রভাবে বিকাশ ঘটে।
- বিকাশ ধারাবাহিকভাবে এগোয়।
- বিকাশ মস্তিষ্ক থেকে শুরু হয়ে নিচের দিকে অগ্রসর হয় (সেফালো-কাউডাল নীতি)।
- বিকাশ কেন্দ্র থেকে পরিধির দিকে যায় (প্রক্সিমোডিসটাল নীতি)।
- বিকাশের ফলে চলনের ধারাবাহিকতা সব শিশুর ক্ষেত্রে একই (যেমন, হামাগুড়ি, দাঁড়ানো, হাঁটা)।
- বিভিন্ন বিকাশ পরস্পর সম্পর্কিত।
- ভবিষ্যদ্বাণীর নীতি।
- সরলরৈখিক বা স্পাইরাল নীতি।
5. বিকাশের নীতিগুলি আলোচনা করুন। (Discuss the principles of Development.)
বিকাশ প্রক্রিয়া কয়েকটি নীতির উপর নির্ভর করে। এগুলি হল:
- নিরবচ্ছিন্নতার নীতি: বিকাশ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অবিরাম চলে। এটি ধীরে ধীরে ঘটে, তাই পরিবর্তন সবসময় চোখে পড়ে না।
- ক্রমসংযোজনশীলতার নীতি: বিকাশের প্রতিটি পর্যায় পূর্ববর্তী পর্যায়ের অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে। বাল্যকালের অভিজ্ঞতা পরবর্তী জীবনকে প্রভাবিত করে।
- সামঞ্জস্যতার নীতি: বিকাশ একটি সুনির্দিষ্ট ও সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রক্রিয়া, যেখানে আচরণের ক্রম পূর্ব নির্ধারিত।
- সেফালো-কাউডাল নীতি: বিকাশ মাথা থেকে শুরু হয়ে পায়ের দিকে অগ্রসর হয়। যেমন, শিশু প্রথমে মাকে চিনতে শেখে, তারপর বসতে, হামাগুড়ি দিতে ও হাঁটতে শেখে।
- প্রক্সিমোডিসটাল নীতি: বিকাশ শরীরের কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে অগ্রসর হয়। যেমন, মস্তিষ্কের বিকাশের পর চোখের কার্যক্ষমতা বিকশিত হয়।
- ঐক্যের নীতি: এক ধরনের বিকাশ অন্য ধরনের বিকাশকে প্রভাবিত করে। যেমন, দৈহিক বিকাশ না হলে মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়।
6. বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার শর্তগুলি আলোচনা করুন। (Discuss the conditions of Growth Process.)
বৃদ্ধি বলতে শরীরের উচ্চতা, ওজন, পেশি, স্নায়ুতন্ত্র ও অস্থির ক্ষমতার বৃদ্ধি বোঝায়। এর শর্তগুলি হল:
- পারিবারিক প্রভাব: বংশগতি ও পরিবেশ মিলে বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে। জিনের কারণে কিছু শিশু দীর্ঘকায় বা মেদবহুল হয়।
- পুষ্টি: সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টির অভাবে বয়ঃসন্ধি বিলম্বিত হয়।
- প্রাক্ষোভিক সমস্যা: ঘন ঘন মানসিক অস্থিরতা শরীরে অ্যাড্রিনাল স্টেরয়েড উৎপন্ন করে, যা বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে।
- অনুশীলন: নিয়মিত ব্যায়াম বৃদ্ধিকে উন্নত করে এবং জিনগত সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করে।
- সাধারণ স্বাস্থ্য: যারা সুস্থ থাকে এবং কম অসুস্থ হয়, তাদের বৃদ্ধির হার ভালো হয়।
- এন্ডোক্রিন কার্যাবলি: স্বাভাবিক হরমোন কার্যক্রম বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এর ব্যাঘাত বৃদ্ধিকে বাধা দেয়।
- বুদ্ধি: বুদ্ধির সঙ্গে বৃদ্ধির সামান্য ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে। বুদ্ধিমান শিশুদের বৃদ্ধি দ্রুত হয়।
- আর্থ-সামাজিক অবস্থা: উন্নত আর্থ-সামাজিক পরিবারের শিশুদের বৃদ্ধি দ্রুত ও বেশি হয়।
- পিতা-মাতার প্রভাব: পিতা-মাতার পুষ্টির অভাব, মানসিক চাপ বা ধূমপান শিশুর বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে।
- অপরিণত অবস্থা: শিশুর অপরিপক্কতা বিকাশের পথ সুগম করে।
- নমনীয়তা: শিশুর নমনীয়তা বিকাশে সহায়ক।
7. বৃদ্ধি ও বিকাশে শিক্ষক ও পিতা-মাতার ভূমিকা আলোচনা করুন। (Discuss the role of teacher and parents in growth and development.)
প্রাথমিক স্তরের শিশুদের প্রাক্ষোভিক ও সামাজিক বিকাশে শিক্ষক ও পিতা-মাতার ভূমিকা নিম্নরূপ:
- বাড়ি ও স্কুলে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং শিশুদের আবেগ প্রকাশে উৎসাহ দিতে হবে।
- নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা প্রদান করতে হবে।
- খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে।
- শিশুদের মধ্যে তুলনা করা উচিত নয়।
- গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
- বয়স্কদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
- তীব্র আবেগ প্রকাশের সময় শান্তভাবে বোঝাতে হবে।
- শিশুদের স্বতন্ত্র মর্যাদা ও আস্থা প্রদান করতে হবে।
- ইতিবাচক আচরণকে উৎসাহিত করতে হবে।
- শিশুদের সমবয়সী দলের প্রভাব বিবেচনা করতে হবে।
- পরিবারের বাইরে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দিতে হবে।
- ত্রুটিপূর্ণ আচরণের জন্য তিরস্কার না করে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে হবে।
- ‘গ্যাং’ বা দলের প্রতি শিশুদের আগ্রহকে সমর্থন করতে হবে, তবে অসৎ সঙ্গ থেকে সাবধান থাকতে হবে।
- শখ (যেমন, ডাকটিকিট সংগ্রহ) পালনে উৎসাহ দিতে হবে।
- পড়ার জন্য উপযুক্ত সাহিত্য সরবরাহ করতে হবে।
- স্থানীয় পরিবেশ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।
- শারীরিক দক্ষতা ও খেলাধুলার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে।
- প্রাক্ষোভিক শক্তিকে সমাজসম্মতভাবে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
8. অতি শৈশবে শিশুর বিভিন্ন সঞ্চালনমূলক কার্যাবলির উল্লেখ করুন। (Mention the different motor activities in Infancy.)
অতি শৈশবকাল (প্রথম ২ বছর) হল টডলার পর্যায়, যখন শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি দ্রুত ঘটে। এ সময় শিশুর ওজন জন্মের সময়ের তুলনায় প্রায় ৫ গুণ বৃদ্ধি পায়। দুধের দাঁত ওঠা শুরু হয় এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তিত হয়। নিচে সঞ্চালনমূলক কার্যাবলির তালিকা দেওয়া হল:
বয়স | সঞ্চালনমূলক কার্যাবলি |
---|---|
জন্মের পর | চোখ বন্ধ করতে পারে, হাত-পা নাড়তে পারে। |
২ মাস | ঘাড় শক্ত হয়, শুয়ে থাকা অবস্থায় মাথা তুলতে পারে। |
৪ মাস | সাহায্যে বসতে পারে। |
৬ মাস | নিজে বসতে পারে, ঝোলানো বস্তু ধরতে পারে। |
৯ মাস | ধরে দাঁড়াতে পারে। |
১০-১১ মাস | হামাগুড়ি দেয়। |
১২ মাস | হাত ধরে দাঁড়াতে পারে, নিজে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। |
১৩ মাস | ধরে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পারে। |
১৪ মাস | নিজে দাঁড়াতে পারে এবং হাঁটার চেষ্টা করে। |
১৮ মাস | দৌড়ায়, বস্তু টানতে বা ধাক্কা দিতে পারে, সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করতে পারে। |
২ বছর | বেশি দৌড়াদৌড়ি করে (গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না), ছোট বস্তু সাজাতে পারে, উল্লম্ব রেখা আঁকতে পারে (অনুভূমিক রেখা আঁকতে পারে না)। |
9. প্রথম বাল্যকালে শিশুর সঞ্চালন বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করুন। (Discuss motor development in early childhood.)
শিশুর সঞ্চালন বিকাশ বলতে তার শক্তি, গতি এবং শরীরের পেশি ব্যবহারের দক্ষতার উন্নতি বোঝায়। এটি শিশুর সামগ্রিক বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং মানসিক, সামাজিক ও প্রাক্ষোভিক বিকাশের সঙ্গে সম্পর্কিত। সঞ্চালন বিকাশ শিশুকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, সামাজিক সম্পর্ক তৈরি এবং আবেগ প্রকাশে সহায়তা করে। শিক্ষার ক্ষেত্রেও এর গুরুত্ব রয়েছে, কারণ সঞ্চালন দক্ষতা শিশুর শিখন ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
সঞ্চালন বিকাশের বৈশিষ্ট্য
- সামগ্রিক থেকে বিশেষ: শিশু প্রথমে পুরো হাত ব্যবহার করে, পরে কবজি ও নির্দিষ্ট আঙুল ব্যবহারে দক্ষ হয়।
- বড় পেশি থেকে ছোট পেশি: বড় পেশির সঞ্চালন আগে বিকশিত হয়।
- যুগ্ম অঞ্চলের কার্যকারিতা: প্রথমে দুই হাত বা পা একসঙ্গে কাজ করে, পরে নির্দিষ্ট হাত বা পায়ের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
- ধারাবাহিক বিকাশ: সঞ্চালন বিকাশ সমানভাবে ঘটে, বেশি বা কম হয় না।
বয়সভিত্তিক সঞ্চালন বিকাশ
বয়স | সঞ্চালনমূলক কার্যাবলি |
---|---|
২ বছর | কী করা উচিত বা না উচিত তা বুঝতে পারে না, শারীরিক অস্থিরতা দেখা যায়। |
৩ বছর | জেদি মনোভাব, হাত দুলিয়ে হাঁটে, হাঁটার গতি নিয়ন্ত্রণে আসে, উল্লম্ব ও অনুভূমিক রেখা আঁকতে পারে। |
৪ বছর | ছোটাছুটি করে, লাফায়, স্কিপিং করে, পূর্বের সঞ্চালন দক্ষতা পরিণত হয়। |
৫ বছর | পেশি নিয়ন্ত্রণে আসে, বল ধরা-ছোড়া, বোতাম লাগানো, ছবিতে রং করা, ছোট যন্ত্র ব্যবহারে দক্ষ হয়। |
10. প্রথম বাল্যকালে শিশুর প্রাক্ষোভিক ও মানসিক বিকাশের বৈশিষ্ট্যগুলি লিখুন। (Write the characteristics of child’s Emotional and Mental developments at early childhood.)
প্রাক্ষোভিক বিকাশ (Emotional Development)
প্রথম বাল্যকালে (২-৬ বছর) শিশুদের আবেগ প্রকাশের বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
- ঘন ঘন আবেগ প্রকাশ করে, যা দ্রুত পরিবর্তিত হয়। যেমন, কান্নার পর চকোলেট পেলে হাসে।
- মূর্ত বস্তুকে কেন্দ্র করে আবেগ তৈরি হয়।
- আবেগের মাত্রা উদ্দীপকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, সবসময় তীব্র থাকে।
- আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কখনও কখনও ক্রন্দন, নখ খোঁটা, আঙুল চোষা বা তোতলামির মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
মানসিক বিকাশ (Mental Development)
এই পর্যায়ে শিশুর মানসিক বিকাশ দ্রুত ঘটে। এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
- প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা গড়ে ওঠে।
- স্মৃতিশক্তি দ্রুত বৃদ্ধি পায়, মুখস্থের মাধ্যমে শেখে।
- ৬ বছর পর্যন্ত বুদ্ধির দ্রুত বিকাশ ঘটে।
- বস্তুর আকার, রং, সময়, দূরত্ব ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয়।
- সৃজনশীলতা ও কল্পনাশক্তি বিকশিত হয়।
- মূর্ত বিষয়ভিত্তিক চিন্তা ও বিচারক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- মনোযোগের পরিসর বাড়ে, পরিবেশ সম্পর্কে কৌতূহল বৃদ্ধি পায়।
- ভাষার সংকেত ব্যবহার, খেলার বস্তু আঁকা ও ছোট সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা তৈরি হয়।
- পরিবেশ সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করে।