বিকাশের ধারণা এবং পড়াশোনার সঙ্গে তার সম্পর্ক: Concept of Development, WB TET 2022

Concept of Development, WB TET 2022
Concept of Development, WB TET 2022

Concept of Development, WB TET 2022-শিক্ষার উদ্দেশ্য হল ব্যক্তিজীবনের পরিপূর্ণ ও সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন করা। যে কোন শিক্ষা-প্রচেষ্টাই ব্যক্তিজীবনের বিকাশের উদ্দেশ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই শিক্ষা-প্রচেষ্টাকে ব্যক্তিজীবনের কল্যাণে লাগাতে হলে শিক্ষকের এই বিকাশের ধারা সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান থাকার দরকার। তবে ‘বিকাশ’ বলতে আমরা শুধুমাত্র মানসিক বিকাশকে (Mental Development) বুঝি না। অনেকের ধারণা আছে, শিক্ষা কেবলমাত্র মানসিক বিকাশের সহায়তা করবে, অন্য কোন বিকাশে নয়। কিন্তু শিক্ষার উদ্দেশ্য (Aim of education) বা বিকাশের নিয়ম ( Law of development) সে কথা বলে না।

Whatsapp গ্রুপে যুক্ত হন
Telegram গ্রুপে যুক্ত হন

শিক্ষার উদ্দেশ্য ব্যক্তিত্বের সর্বাঙ্গীন বিকাশ। শুধুমাত্র মানসিক বিকাশকে সর্বাঙ্গীন বিকাশ বলা যায় না। আবার ব্যক্তি জীবনের বিকাশের বৈশিষ্ট্য হল যে, তার বিভিন্ন দিকের বিকাশ ঐক্যবদ্ধভাবে হয়। তাই দৈহিক বিকাশ বা সামাজিক বিকাশকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র মানসিক বিকাশ করা সম্ভব নয়। তাই বিকাশের ধারা সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে দৈহিক বিকাশ (Physical Development), মানসিক বিকাশ (Mental Development), বৌদ্ধিক বিকাশ (Intellectual Development), সামাজিক বিকাশ (Social Development), এবং প্রক্ষোভিক বিকাশ (Emotional Development) সম্পর্কে উল্লেখ করার দরকার। কারণ বিকাশের এই বিভিন্ন দিকগুলো পরস্পর পরস্পরের উপর নির্ভরশীল।

শিশু বিকাশের মূলনীতি (Concept of Development, WB TET 2022 )

বিকাশের প্রধান নীতি গুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল (PRINCIPLES OF THE DEVELOPMENT OF CHILDREN):

(ক) বিকাশ হল মিথস্ক্রিয়ার ফল।

(খ) বংশগতি ও পরিবেশের মিথস্ক্রিয়ার ফলেই বিকাশ ঘটে।

(গ) বিকাশ ধারাবাহিকতা মেনে চলে।

(ঘ) বিকাশ উপর দিকে (মস্তিষ্ক) শুরু হয়ে নীচের দিকে ঘটে।

(ঙ) বিকাশ কেন্দ্র থেকে পরিধির দিকে অগ্রসর হয়।

(চ) বিকাশের ফলে যে চলন ঘটে তার ধারাবাহিকতা বিশ্বের সব শিশুর ক্ষেত্রেই দেখা যায়। যেমন— হামাগুড়ি, দাঁড়ানো, হাঁটা।

(ছ) বিকাশ পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত।

(জ) ভবিষ্যৎবাণীর নীতি।

(ঝ) সরল রৈখিক বনাম স্পাইরাল নীতি।

বৃদ্ধি ও বিকাশের নীতিগুলির শিক্ষাগত তাৎপর্য (Educational implication of Growth & Development):

বৃদ্ধি ও বিকাশের উপরোক্ত নীতিসমূহ আমাদের নানা উপকারে আসে যা নিম্নে উল্লেখ করা হল—

  1. মানুষের জীবন বিকাশের বিভিন্ন স্তরে বিকাশ বিরতিহীন এবং নিরবচ্ছিন্ন। তাই কোনো কারণেই যখন আবার ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন স্তরে বিকাশের প্রচেষ্টা থেকে বিরত না হই।
  2. ব্যক্তিগত পার্থক্যের নীতি আমাদের সর্বদা মনে করিয়ে দেয় যে শিশুর বিকাশের বিভিন্ন স্তরে বৃদ্ধি ও বিকাশের পার্থক্য আছে। একথা স্মরণ করে আমাদের মনে রাখতে হবে প্রতিটি শিশুকেই তার বিকাশের ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা দেখা দিলে প্রয়োজন মতো সহযোগিতা করতে হবে।
  3. বৃদ্ধি ও বিকাশের নীতি অনুযায়ী শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের একটি ধারা (Trend) আছে। এর থেকে আমরা শিশুর আগামী দিনের বৃদ্ধি ও বিকাশ সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করতে পারি।
  4. সাধারণ থেকে বিশেষ এবং সমস্যাকরণের নীতি শিশুর শিখন প্রক্রিয়া এবং শিখন অভিজ্ঞতা বিন্যাসে সাহায্য করে।
  5. মিথস্ক্রিয়া নীতি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে বংশধারা ও পরিবেশের যৌথ ভূমিকা বর্তমান। যেহেতু বংশধারা আমরা পরিবর্তন করতে পারি না সে জন্য পরিবেশকে আরও উন্নত করতে হবে। পাশাপাশি এমন পরিবেশ রচনা করতে হবে যা শিশুর সম্ভবনাগুলি বিকাশের পক্ষে অনুকূল হবে।

বৃদ্ধি ও বিকাশ (Growth and Development) :

একটি শিশুর জন্মের পর থেকেই প্রতিদিনই শারীরিক ও মানসিকভাবে পরিবর্তিত হতে থাকে। শিশুর ওজন, উচ্চতা, আয়তন যেমন বাড়তে থাকে তেমনিই তার আচার-ব্যবহার পরিবর্তিত হতে থাকে। ক্রমে ক্রমে একটি শিশু কাঁদে, হাসে, বড়দের কথাবার্তা বা আওয়াজ শুনে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, উপুর হতে শেখে, বসতে শেখে, হামাগুড়ি দিতে শেখে, দাঁড়াতে শেখে, হাঁটতে শেখে, কথা বলতে শেখে, দৌড়তে শেখে প্রভৃতি।

শিশুর এই সামগ্রিক পরিবর্তনে দুটি শব্দ ব্যবহৃত হয়—‘বৃদ্ধি’ বা Growth এবং ‘বিকাশ’ বা Development।

আরনল্ড জোনসের মতে, দেহের উচ্চতা ও ওজন বেড়ে যাওয়াকেই বৃদ্ধি বলে। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে মানবশিশুর দেহের আকার বা আয়তন, উচ্চতা ও ওজনের স্বাভাবিক এবং স্থায়ী পরিবর্তনই হল বৃদ্ধি।

অপরপক্ষে যে কোন বৃদ্ধির তাৎপর্যপূর্ণ দিক হল বিকাশ বা Development অর্থাৎ বিকাশ হল মানবজীবনে একটি নিরবিচ্ছিন্ন, ব্যক্তিতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বা মিথস্ক্রিয়ার ফল বা সামগ্রিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়া।

বিকাশ হল একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বা ব্যক্তির আভ্যন্তরীণ ক্ষমতার প্রকাশ ও বৃদ্ধি করে যার দ্বারা ব্যক্তি তার জীবনে উৎকর্ষতার সাথে কার্য সম্পাদন করে। অন্যভাবে বলা যায়—জন্মের পর থেকে মানবশিশুর জীবনব্যাপী, সামগ্রিক গুণগত পরিবর্তনের ধারাবাহিক পরিবর্তনের স্বাভাবিক সময়নির্ভর প্রক্রিয়া যা বৃদ্ধির সাথে সাথে অর্জিত হয়, তাকে বিকাশ বলে।

বৃদ্ধি ও বিকাশের পার্থক্য (Difference between growth and Development) :

মানবজীবনে বৃদ্ধি ও বিকাশ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং প্রায়ই পাশাপাশি ঘটলেও দুটি প্রক্রিয়ায় অনেক পার্থক্যও বর্তমান।

বৃদ্ধি বিকাশ
১) মানব শিশুর দৈহিক আকার, আয়তন, ওজোনের ধনাত্মক পরিবর্তনই হল বৃদ্ধি।১) মানব শিশুর দৈহিক, মানসিক সক্রিয়তা ও কার্য সম্পাদনের উৎকর্ষতা বৃদ্ধিই হলো বিকাশ।
২) বৃদ্ধিকে সহজে পরিমাপ করা যায়।২) বিকাশ-পর্যবেক্ষণযোগ্য কিন্তু পরিমাপযোগ্য নয়।
৩) বৃদ্ধি মানবজীবনের পরিমাণগত পরিবর্তন প্রক্রিয়া।৩) বিকাশ মানবজীবনের গুণগত পরিবর্তনের প্রক্রিয়া।
৪) বৃদ্ধি একটি সহজাত জৈবিক পরিবর্তন প্রক্রিয়া যেখানে বাহ্যিক শর্তাবলীর প্রভাব কম, অনুশীলনের প্রভাব দেখা যায়।৪) বিকাশ মানব পরিবেশের প্রভাব ও অভিজ্ঞতার ফল সহজাত গুণাবলী ও পরিবেশের পারস্পরিক ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে শিশুর বিকাশ ঘটে।
৫) বৃদ্ধি হল কারণ।৫) বিকাশ হল ফল।
৬) বৃদ্ধি মানবজীবনের একটা নির্দিষ্ট বয়স অবধি ঘটে।৬) বিকাশ মানব জীবনে আমৃত্য ঘটে।

বিকাশের প্রকারভেদ (Types of Development) :

i) সামাজিক বিকাশii) মানসিক বিকাশ,
iii) ভাষাগত বিকাশ,iv) বৌদ্ধিক বিকাশ,
v) দৈহিক বিকাশ,vi) সৃজনশীলতার বিকাশ,
vii) প্রাক্ষোভিক বিকাশ,viii) সঞ্চালনমূলক বিকাশ,
ix) অহংবোধের বিকাশ,x) সৌন্দর্য্যবোধের বিকাশ,
xi) নৈতিক বিকাশ,

বৃদ্ধি ও বিকাশের প্রভাবক উপাদানসমূহ (Factors influencing Growth & Development) :

A. আভ্যন্তরীণ উপাদান (Internal factors) :

i) জন্মগত সূত্রে প্রাপ্ত উপাদান (Heraditory Factors)

ii) জৈবিক ও গঠনগত উপাদান (Biological Factors)

iii) প্রাক্ষোভিক উপাদান (Emotional Factors)

iv) সামাজিক উপাদান (Social Factors)

v) বুদ্ধিগত উপাদান ( Intelligence Factors)

B. বাহ্যিক উপাদান (External factors) :

এগুলিকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়—

ক) মাতৃগর্ভে থাকাকালীন পরিবেশ –

i) মায়ের শারীরিক স্বাস্থ্য

ii) মায়ের পুষ্টি, খাদ্যগ্রহণ, আচার-ব্যবহার

iii) সন্তান প্রসবের ধরণ-স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক।

খ) জন্মগ্রহণের পরবর্তী পরিবেশ

i) জীবনে কোন ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটলে,

ii) পারিপার্শ্বিক প্রাকৃতিক পরিবেশ,

iii) চিকিৎসা সুযোগ সুবিধা,

iv) সামাজিক ও কৃষ্টিগত সুযোগ সুবিধা ও গুণগত মান,

v) ভাষা ।

বিকাশের বৈশিষ্ট্যাবলী ( Characteristics of Development):

i) বিকাশ একটি নিরবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া : যা মাতৃগর্ভ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে থাকে। এটি কোন আকস্মিক ঘটনা বা বিরামমুক্ত ঘটনা নয়।

ii) মিথস্ক্রিয়ার ফল : বিকাশ আসলে মানুষের সাথে তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বা মিথস্ক্রিয়ার ফল।

(iii) ধারাবাহিকতা : বিকাশের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ধারাবাহিকতা রয়েছে। যদিও প্রত্যেক ব্যক্তির সার্বিক বিকাশের হার সর্বদাই পৃথক হয় ৷ তবুও সব মানুষেরই বিকাশ একটি ধারাবাহিকতাকে মেনে চলে।

(iv) লিঙ্গগত পার্থক্য : লিঙ্গভেদে বিকাশের তারতম্য ঘটে থাকে। সাধারণত ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বিকাশ দ্রুত ঘটে। অর্থাৎ বালিকাদের বয়ঃসন্ধিক্ষণ বালকদের অনেক পূর্বেই আসে।

(v) ব্যক্তিতান্ত্রিক প্রক্রিয়া : সব মানুষরই সার্বিক বিকাশ ঘটলেও প্রত্যেক ব্যক্তি তাঁর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিকাশ লাভ করে। প্রতিটি শিশুর মানসিক, প্রাক্ষোভিক, দৈহিক, বৌদ্ধিক, সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। (vi) কেন্দ্র থেকে পরিধিমুখী : মানবদেহে বিকাশ সাধারণত কেন্দ্র থেকে পরিধিমুখী হয়। অর্থাৎ শিশু যখন কোন কিছু ধরার চেষ্টা করে তখন সে সম্পূর্ণ হাতকেই প্রথমে ব্যবহার করে। তারপর হাতের আঙুল ব্যবহার করেন এবং শেষে একটি বা দুটি আঙুল ব্যবহার করেই জিনিসটিকে ধরতে পারে।

(vii) বিভিন্ন স্তর অনুযায়ী বিকাশ : মানবদেহে সব ধরনের বিকাশ একসাথে ঘটে না। অর্থাৎ দৈহিক, বৌদ্ধিক, সামাজিক প্রভৃতি বিকাশ পর পর হয়।

(viii) বিকাশ পরিনমনের ফল : আরনল্ড জোনস এর মতে, বিকাশের ওপর দৈহিক পরিবর্তনের প্রভাব দেখা যায়। শৈশবকাল থেকে বয়ঃসন্ধিক্ষণ পর্যন্ত ব্যক্তির দৈহিক পরিবর্তন তার জিনের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। এই স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তন পরিনমন ঘটায় যা বিকাশ সম্ভব করে তোলে।

(ix) নিম্নাভিমুখী প্রক্রিয়া : বিকাশ সাধারণত মানবদেহের বা শিশুদেহের ওপর থেকে নিচের দিকে ঘটে থাকে অর্থাৎ প্রথমে মস্তিষ্কের তার পরে যথাক্রমে ঘাড় বা গলা, হাত-পা প্রভৃতির বিকাশ ঘটে থাকে।

বৃদ্ধির বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Growth) :

(i) বংশধারা ও পরিবেশের মিথষ্ক্রিয়ার ফল : বংশগতি ও পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজনের ফলেই শিশুদেহে বৃদ্ধি ঘটে। অর্থাৎ বংশধারা ও পরিবেশের মিথস্ক্রিয়ার ফলই হল বৃদ্ধি।

(ii) বৃদ্ধির হার বয়সকেন্দ্রিক : এইচ. ভি. মেরিডিথ-এর গবেষণায় দেখা গেছে বয়সের সাথে সাথে বৃদ্ধির হার পরিবর্তিত হয়। যেমন—(a) শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়া থেকে ২-২২ বছর পর্যন্ত তার বৃদ্ধির হার খুব বেশি থাকে। (b) ২ বছর থেকে শিশুর বয়ঃ সন্ধির ২ বছর পূর্ব পর্যন্ত বৃদ্ধিহার ক্রমে হ্রাস পায়। (c) বয়ঃসন্ধিক্ষণের কিছু সময় আগে থেকে বৃদ্ধির হার পুনরায় দ্রুত হয়। (d) বয়ঃসন্ধিক্ষণের পরে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধির হার ক্রমে হ্রাস পেতে থাকে। (iii) বৃদ্ধি ও অনুশীলন : বৃদ্ধির উপর অনুশীলনের প্রভাব যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিক্ষক ও অভিভাবকগণ শিশুর দ্রুত বৃদ্ধিরস্বার্থে পুষ্টিকর খাদ্য ও অনুশীলনের ব্যবস্থা করে থাকেন।

(iv) বৃদ্ধির হার বৈচিত্রপূর্ণ : শিশুভেদে বৃদ্ধির হারে পার্থক্য দেখা যায়। শিশুর বৃদ্ধির হারের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে শিক্ষা পরিকল্পনা রচনা করা উচিত।

(v) ব্যক্তি জীবনে একটা নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত বৃদ্ধি নিরবিচ্ছিন্ন এবং ধারাবাহিকভাবে ঘটে, এই বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

(vi) যে সকল শিশুর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অন্যান্যদের থেকে এগিয়ে থাকে সে সারা জীবনই এগিয়ে যায়, ফলে শিক্ষাসূচী একই হওয়ায় শিশুদের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হয়।
বিকাশের স্তর (Stage of Development) :

মনোবিদস্তরের নামবয়সকাল
রুশোর স্তরভাগশৈশবকাল
বাল্যকাল
প্রাক্ কৈশোর
কৈশোর
১ থেকে ৫ বছর
৫ থেকে ১২ বছর
১২ থেকে ১৫ বছর
১৫ থেকে ২০ বছর
জোন্‌সের স্তরভাগশৈশবকাল
বাল্যকাল
কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকাল,
পূর্ণ বয়স্ককাল
শিশুর জন্ম থেকে শুরু করে ৫ বছর
৫ বছর থেকে ১২ বছর
১২ বছর থেকে ১৮ বছর
১৮ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত
পিঁয়াজের স্তরভাগসংবেদন সঞ্চালন স্তর
প্রাক্ সক্রিয়তার স্তর
মূর্ত সক্রিয়তার স্তর
যৌক্তিক সক্রিয়তার স্তর
প্রাক্ জন্মান্তর
জন্মের সময় থেকে ২ বছর
২ বছর থেকে ৬ বছর
৬ বছর থেকে ১১ বা ১২ বছর
১১ বা ১২ বছর থেকে ১৪ বা ১৫ বছর
গর্ভসঞ্জার থেকে শুরু করে কার করে জন্মাবার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত
পিকুনাসের স্তরভাগসদ্যোজাত স্তর
প্রারম্ভিক শৈশব স্তর
প্রান্তীয় শৈশব স্তর
প্রারম্ভিক বাল্য
মধ্যবাল্য
প্রান্তীয় বাল্য
যৌবনাগম স্তর
প্রাপ্ত বয়স্ক স্তর
বার্ধক্য স্তর
জন্মের সময় থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত
১ মাস থেকে ১.৫ বছর পর্যন্ত
১.৫ বছর থেকে ২.৫ বছর পর্যন্ত
২.৫ বছর থেকে ৫ বছর পর্যন্ত
5 বছর থেকে ৯ বছর পর্যন্ত
৯ বছর থেকে ১২ বছর পর্যন্ত
১২ বছর থেকে ২১ বছর পর্যন্ত
২১ বছর থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত
৭০ বছর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত।

বিভিন্ন দার্শনিকদের শ্রেণিবিভাগগুলি আলোচনা করে মানবজীবনে বিকাশের পর্যায়গুলিকে সার্বিকভাবে নিম্নলিখিত আকারে

বিভিন্ন প্রকার বিকাশ (Concept of Development, WB TET 2022) :

দৈহিক বিকাশ : জন্মের পর থেকে সময়ের সাথে সাথে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হওয়ার পাশাপাশি অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমে সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন হওয়ার প্রয়োজনে দেহ কাঠামোর বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ পরিবর্তনকেই বলা হয় দৈহিক বিকাশ (Physical Development)। শিশুর বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিকাশকে জৈবিক বিকাশ ( Organic development) বলা হয়। দৈহিক বিকাশকে তিন-চারটি স্তরে ভাগ করে আলোচনা করা হল –

জন্মের পর থেকে ২ বছর পর্যন্ত শিশুদের দ্রুত শারীরিক বিকাশ ঘটলেও তারা এই সময় গৃহে অবস্থান করে, বিদ্যালয়ে যায় না। জন্মানোর সময় শিশুদের গড় দৈর্ঘ্য ১৮”-20” (ইঞ্জি) মধ্যে থাকে এবং শিশুর ওজন ৫ থেকে ৯ পাউন্ডের মধ্যে থাকে। ১২ মাস বয়সের পর থেকে শিশুরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে এবং ১৮ মাস বয়স থেকে দৌড়া-দৌড়ি করতে পারে।

(ক) প্রথম বাল্যকাল (২ বছর থেকে ৬ বছর) :

(i) শৈশব কালের মতো শারীরিক বিকাশ ঘটে না এই স্তরে।

(ii) দৈহিক বৃদ্ধির মধ্যে সমতা পরিলক্ষিত শুরু করে। পায়ের দিকের বৃদ্ধি দ্রুত ঘটে।

(iii) তিন বছরের শিশুর দৈহিক ওজন ৩৩ পাউন্ড এবং উচ্চতা হয় ৩৮ ইঞ্চি।

(iv) দৈর্ঘ্য ও উচ্চতা ছাড়াও এই বয়সের বালক-বালিকাদের মধ্যে পেশি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়, শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃদযন্ত্রের গতি হ্রাস, রক্তচাপ বৃদ্ধি, মস্তিষ্কের ৯০% গঠন হয়ে যায়।

(v) ৪ এবং ৫ বছরের শিশু স্বাধীন এবং সক্রিয়ভাবে চলাফেরা, সংগীতের তালে নাচতে বা বিভিন্ন রং-এর নাম বলতে পারে।

(খ) উত্তর বাল্যকাল (6 বছর থেকে 11 বছর) :

i) শিশুদের সব থেকে ভালো স্বাস্থ্য এই বয়সে দেখা যায়।

ii) এই বয়সে শিশুদের আকারে ও ওজনে মস্তিষ্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মতো হয়।

iii) শিশুদের সহ্যশক্তি ও সজীবতা বৃদ্ধি পায়। সহজেই ক্লান্ত হয় না।

iv) বালকদের তুলনায় বালিকাদের দৈহিক বিকাশ 2 বছর এগিয়ে থাকে

v) এই সময়ে শিশুদের দাঁত ভেঙে যায়, মুখ বিস্তৃত হয়, কপাল চাওড়া হয়, নাক তীক্ষ্ণ হয় এবং খেলাধূলোর মাধ্যমে চলন দক্ষতার বিকাশ ঘটে।

(গ) বয়ঃসন্ধিক্ষণ (11/12 বছর থেকে 20 বছর)

i) এই সময় ছেলে ও মেয়েদের ব্যাপকহারে দৈহিকপরিবর্তন ঘটে, যা তাদের আচরণকে প্রভাবিত করে তোলে

ii) এই সময়ে কিশোরদের উচ্চতা ও ওজন কিশোরিদের ছাপিয়ে যায়।

iii) কিশোরদের গলার স্বরের পরিবর্তন ঘটে। শুক্র উৎপাদন ক্ষমতা জন্মে।

iv) কিশোররা শারীরিক কাজের প্রতি আগ্রহ দেখায়, পেশী শক্তির উপযোগী ক্রিয়াকর্ম করে থাকে।

v) এই বয়সে কিশোরিদের গলার স্বর সরু এবং মধুর হয়।

vi) কিশোর ও কিশোরীদের যৌনগত ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায় এবং কিশোরিরা এই সময় রজঃস্বলা হয়।

সঞ্চালনমূলক বিকাশ (Motor Development)

মানুষের সক্রিয়তার মুলে আছে তার কর্মেন্দ্রিয়গুলির তৎপরতা এবং পেশী তন্ত্রের সামঞ্জস্যপূর্ণ সঞ্চালন। শিশুর জীবনে তার কর্মেন্দ্রিয়গুলির ও পেশী তন্ত্রের যে বিকাশ হয়, তাকেই বলা হয় সঞ্চালনমূলক বিকাশ।

অর্থাৎ সঞ্চালন মূলক বিকাশ বলতে বোঝায় শিশুর শক্তি ও গতির বিকাশ এবং কত নিখুঁতভাবে ও উৎকর্ষতার সঙ্গে সে তার হাত, পা ও শরীরের অন্যান্য পেশী ব্যবহার করতে পারছে।

সঞ্চালন মূলক বিকাশের গুরুত্ব হিসাবে বলা যায় যে শিশু তার বৌদ্ধিক কৌতুহল নিবারণের জন্য সঞ্চালনমূলক কার্যাবলির সাহায্যে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ এবং আবিষ্কার করার চেষ্টা করে। শিশুর ক্ষমতা, দক্ষতা প্রভৃতি প্রাক্ষোভিক আচরণও অনেকাংশে সঞ্চালন মূলক বিকাশের সাফল্য ও ব্যর্থতাকে নিয়ন্ত্রণ করে।

বৈশিষ্ট্য :

i) সামগ্রিক থেকে বিশেষ অর্থাৎ পুরো হাত থেকে নির্দিষ্ট কতগুলো আঙ্গুল।

ii) সঞ্চালনমূলক বিকাশ একইভাবে হয়, কখনো কম বা বেশী হয় না।

iii) ক্ষুদ্র পেশীর থেকে বৃহৎ পেশীর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে।

iv) এই বিকাশ সার্বজনীন অর্থাৎ সকলের ক্ষেত্রে ঘটে।

v) পেশী সঞ্চালন যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু হয়।

Leave a Comment