প্রাথমিক শিক্ষক যোগ্যতা পরীক্ষা (TET)-এর গণিত পেডাগোজি বিভাগে ‘নির্ণায়ক ও সংশোধনমূলক শিক্ষণ’ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই পোস্টে আমরা এই শিক্ষণ পদ্ধতির সম্পূর্ণ ধারণা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছি। কিভাবে নির্ণায়ক অভীক্ষার (Diagnostic Test) মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শিখন দুর্বলতা ও ত্রুটিগুলি সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যায়? পারদর্শিতা অভীক্ষার (Achievement Test) সাথে এর পার্থক্য কী? পূর্বাভাষসূচক অভীক্ষার (Prognostic Test) মাধ্যমে কীভাবে দুর্বলতার সম্ভাবনা আগে থেকে জানা যায়? এই কৌশলগুলো আয়ত্ত করে আপনি সহজেই আপনার পেডাগোজি প্রস্তুতিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন এবং শিক্ষার্থীদের কার্যকরভাবে সাহায্য করতে সক্ষম হবেন।

নির্ণায়ক এবং সংশোধনমূলক শিক্ষণ (Diagnostic and Remedial Teaching)
নির্ণায়ক শিক্ষণ (Diagnostic Teaching)
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট কোনো ধারণা বুঝতে বা শিখতে সমস্যা হচ্ছে। এই অসুবিধা ব্যক্তি, বিষয় এবং শ্রেণিভেদে ভিন্ন হতে পারে। শিক্ষা-শিখন প্রক্রিয়াকে ফলপ্রসূ করার জন্য শিক্ষার্থীদের এই দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা অত্যন্ত জরুরি।
এটি নির্ণায়ক অভীক্ষা (Diagnostic Test)-এর মাধ্যমে সম্ভব। যে কোনো কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষ দক্ষতাগুলোকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে এবং শিক্ষার্থীরা সাধারণত যে ধরনের ভুল করে, তার ভিত্তিতে যে অভীক্ষা তৈরি করা হয়, তাকে নির্ণায়ক অভীক্ষা বলে। নির্ণায়ক অভীক্ষার প্রশ্নপদগুলির কাঠিন্য মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। একটি কার্যকর নির্ণায়ক অভীক্ষা, শিক্ষার্থীর পরিমাপ করা দক্ষতাটির সমস্ত দিক তুলে ধরার সুযোগ তৈরি করার পাশাপাশি তার ত্রুটি বা ভ্রান্তির জায়গাগুলোকেও সুনির্দিষ্ট করে।
নির্ণায়ক অভীক্ষা এক ধরনের পারদর্শিতা অভীক্ষা। তবে বিষয়গত পারদর্শিতা অভীক্ষা (Achievement Test) এবং বিষয়গত নির্ণায়ক অভীক্ষার মধ্যে কিছু সাদৃশ্য এবং পার্থক্য বিদ্যমান। কাঠামোগত দিক থেকে উভয় অভীক্ষা এক হলেও, তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। বিষয়গত পারদর্শিতা অভীক্ষা শিক্ষার্থীদের শিক্ষণ অগ্রগতি পরিমাপ করে, আর বিষয়গত নির্ণায়ক অভীক্ষা কেবল শিক্ষার্থীদের দুর্বলতার স্থানগুলি চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয়।
নির্ণায়ক অভীক্ষায় সামগ্রিক স্কোরের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয় না। পক্ষান্তরে, পারদর্শিতা অভীক্ষায় মোট স্কোরের ওপর জোর দেওয়া হয়। শিক্ষার্থী কতটা শিখেছে, তা জানার জন্য পারদর্শিতা অভীক্ষা ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে, শিক্ষার্থীর কোথায় এবং কী ধরনের অসুবিধা হচ্ছে, তা জানতে নির্ণায়ক অভীক্ষা কাজে লাগে।
নির্ণায়ক অভীক্ষা মূলত বিশ্লেষণধর্মী, কিন্তু পারদর্শিতা অভীক্ষা মূল্যায়নধর্মী। নির্ণায়ক অভীক্ষায় নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা থাকে না; শিক্ষার্থী সমস্যার সমাধানের জন্য যত সময় চাইবে, তাকে তা দেওয়া হবে। পরিধি এবং টার্গেট দলের ক্ষেত্রেও এই দুই ধরনের অভীক্ষার মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়।
বিষয়গত পারদর্শিতা যাদের গড় মানের চেয়ে কম, প্রধানত তাদের ওপর নির্ণায়ক অভীক্ষা প্রয়োগ করা হয়। অন্যদিকে, তাত্ত্বিকভাবে সকল শিক্ষার্থীর ওপর পারদর্শিতা অভীক্ষা প্রয়োগ করা যায়। নির্ণায়ক অভীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর দুর্বলতা ও অসুবিধার স্থানটি সঠিকভাবে জেনে সংশোধনীমূলক (Remedial) পদক্ষেপ নেওয়া। পক্ষান্তরে, পারদর্শিতা অভীক্ষার উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর দক্ষতা পরিমাপ করে গ্রেড দেওয়া এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার তুলনা করা। শিক্ষণ-শিখন চলাকালীন শিক্ষার্থীর দুর্বলতার স্থানটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করাই নির্ণায়ক অভীক্ষার লক্ষ্য। পারদর্শিতা অভীক্ষায় সমগ্র শিখন এককটিকে বিবেচনা করা হয়।
বিষয়গত পারদর্শিতা অভীক্ষার চেয়ে বিষয়গত নির্ণায়ক অভীক্ষার প্রশ্ন সংখ্যা বেশি থাকে। কারণ, দুর্বলতার স্থানগুলি নির্ভুলভাবে নির্ণয় করতে গেলে শিক্ষার্থীকে আরও নিখুঁতভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। এই নিখুঁত বিশ্লেষণের জন্যই প্রশ্ন সংখ্যা বেশি হয়।
বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ণায়ক অভীক্ষা পাওয়া যায়। নির্ণায়ক অভীক্ষা নির্বাচন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির ওপর নজর দিতে হবে:
- শিক্ষার্থীর শিখন দুর্বলতা সম্পর্কিত যে নির্দিষ্ট তথ্য জানতে চাওয়া হচ্ছে, তার ভিত্তিতে নির্ণায়ক পদ্ধতি (Diagnostic Procedure) নির্দিষ্ট করা হবে। নির্ণায়ক অভীক্ষা নির্বাচনের সময় এই দিকটিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
- নির্ণায়ক অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শিখন দুর্বলতার স্থানটি নির্দিষ্ট করা হয়, তার উৎকর্ষতা পরিমাপের জন্য নয়। তাই কোনো শিক্ষার্থী যদি কোনো উপ-অভীক্ষায় ভালো নম্বর পায়, তবে বুঝতে হবে সেই অংশে তার কোনো দুর্বলতা নেই।
- নির্ণায়ক অভীক্ষা শিক্ষার্থীর দুর্বলতা বা ভুল চিহ্নিত করে, কিন্তু ভুলের কারণ সম্পর্কে কিছু বলে না। কারণগুলি ভুল বিশ্লেষণ করে বোঝা যেতে পারে বা শিক্ষার্থী কীভাবে উত্তরে পৌঁছাল, তার ব্যাখ্যার মাধ্যমে জানা যেতে পারে।
- নির্ণায়ক অভীক্ষার সাহায্যে শিক্ষার্থীর দুর্বলতা সম্পর্কে কেবল আংশিকভাবে অবগত হওয়া যায়। এর পাশাপাশি পর্যবেক্ষণ, অভিভাবকের মতামত ইত্যাদির মতো অন্যান্য পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন।
- নির্ণায়ক অভীক্ষা প্রয়োগের মাধ্যমে শিখন দুর্বলতা সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া যায়, তার নির্ভরযোগ্যতা কম হতে পারে। কারণ, প্রতিটি ভুল পরিমাপকারী পদের সংখ্যা সাধারণত কম থাকে। এজন্য শিখন দুর্বলতা সম্পর্কিত তথ্য অন্যান্য উপায়, যেমন শ্রেণিকক্ষ পর্যবেক্ষণ ইত্যাদির মাধ্যমে যাচাই করে নেওয়া দরকার।
গণিত পেডাগোজি থেকে আরেকটি পোস্টের জন্য নিচে ক্লিক করুন
👇👇👇👇👇
গণিতের ভাষা: Language of Mathematics, WB TET 2023, Math Pedagogy in Bengali
নির্ণায়ক অভীক্ষার উদাহরণ
বর্তমানে বহু আদর্শায়িত নির্ণায়ক অভীক্ষা তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে পঠন এবং গণিতের অভীক্ষাই বেশি প্রচলিত।
পঠনের নির্ণায়ক অভীক্ষার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
- Gates Reading Diagnostic Test (গ্রেড I থেকে VIII): এর উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে: (ক) পঠনঘটিত ভুল, (খ) শব্দমালা, (গ) বাক্যাংশের অর্থ বোঝা, (ঘ) দর্শনমূলক প্রত্যক্ষণ (যেমন: শব্দের বিভিন্ন অংশ পড়া, শব্দের পার্থক্য বোঝা, শব্দের উচ্চারণ বোঝা ইত্যাদি), (ঙ) শ্রবণমূলক প্রত্যক্ষণ এবং বানান।
- Durell Analysis to Reading Ability (গ্রেড I থেকে VI): এই অভীক্ষার অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলি হলো: (ক) মৌখিক পঠন সংবোধন, (খ) মৌখিক পঠনমূলক স্মৃতি, (গ) নীরব পঠন, (ঘ) শব্দ ও অক্ষর চেনা, (ঙ) শব্দের উচ্চারণ, (চ) বানান, (ছ) হাতের লেখা।
- Rosswell-Chall Diagnostic Reading Tests (গ্রেড II থেকে VI): এই অভীক্ষাটির প্রধান বিষয় হলো শব্দ চেনা ও শব্দ বিশ্লেষণ। এর মধ্যে ব্যঞ্জনবর্ণের একক ও যুক্ত ব্যবহার, স্বরবর্ণের উচ্চারণ, স্বরবর্ণের একত্রে ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ের সমস্যা অন্তর্ভুক্ত।
গণিতের নির্ণায়ক অভীক্ষার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
(ক) Schelon’s Diagnostic Test in Arithmetic.
(খ) Diagnostic Test for Fundamental Process-Arith (Basewell and John).
গণিতের নির্ণায়ক অভীক্ষায় সাধারণত গণিতের পারদর্শিতার বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে মৌলিক প্রক্রিয়াগুলোর ওপর প্রশ্ন দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, পাটিগণিতের নির্ণায়ক অভীক্ষায় ৪টি প্রাথমিক প্রক্রিয়াকে পৃথক করে প্রত্যেক প্রক্রিয়ার বিভিন্ন দিক আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। যেমন: যোগ অঙ্ক সঠিকভাবে করার জন্য নামতা জানা প্রয়োজন, শূন্যের সঙ্গে অন্য সংখ্যা যোগ করার প্রক্রিয়া জানা দরকার। এভাবে বিশ্লেষণ করে প্রত্যেকটি বৈশিষ্ট্য পরিমাপের জন্য সমস্যা নির্বাচন করতে হয়।
নির্ণায়ক অভীক্ষা প্রয়োগ (Application of Diagnostic Test)
নির্ণায়ক অভীক্ষা প্রয়োগ করার পর বিভিন্ন অভীক্ষাংশের স্কোর মান আলাদাভাবে নির্ণয় করা হয়। এরপর ওই স্কোরমানগুলির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীর উত্তরদানের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করা হয়। এই বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায়: (ক) কোনো শিক্ষার্থীর শিখনে সমস্যা আছে কিনা, (খ) অসুবিধাগুলির প্রকৃতি কী, (গ) সমস্যার কারণগুলি কী এবং (ঘ) কী ধরনের সংশোধনমূলক কৌশল প্রয়োজন।
নির্ণায়ক অভীক্ষার সুবিধা (Advantages of Diagnostic Test)
শিক্ষাক্ষেত্রে নির্ণায়ক অভীক্ষার ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি উল্লেখ করা যায়:
- এই অভীক্ষা প্রয়োগে শিক্ষার্থীর ত্রুটিগুলি সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়। ফলে প্রয়োজনমতো সংশোধনমূলক শিক্ষা প্রদান করা যায়।
- শিক্ষকগণ নির্ণায়ক অভীক্ষা ব্যবহার করে পারদর্শিতার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তথ্যাদি সংগ্রহ করতে পারেন, যা সামগ্রিকভাবে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতিতে সহায়ক হতে পারে।
- এটি পাঠ্যপুস্তক রচনায় কাজে আসে। সাধারণভাবে ভুলের জায়গাগুলো চিহ্নিত হওয়ায় পুস্তক রচয়িতা সেই দিকগুলোতে শিক্ষার্থীদের সতর্কতার সঙ্গে অধ্যয়নের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে পারেন।
নির্ণায়ক অভীক্ষার অসুবিধা (Disadvantages of Diagnostic Test)
- নির্ণায়ক অভীক্ষার দ্বারা সবসময় শিক্ষার্থীদের ব্যর্থতার কারণ বিশ্লেষণ করা যায় না। অনেক সময় নানারকম মানসিক জটিলতাও ব্যর্থতার কারণ হতে পারে।
- নির্ণায়ক অভীক্ষায় ব্যক্তিগত প্রভাব বেশি দেখা যায়।
- নির্ণায়ক অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা তুলনামূলকভাবে কম। তাই কেবল নির্ণায়ক অভীক্ষায় প্রাপ্ত স্কোরের ওপর নির্ভর করা বিজ্ঞানসম্মত নয়। নির্ণায়ক অভীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে ব্যক্তিগত বিচার-বিবেচনার সমন্বয়ই সবচেয়ে ভালো ফল দেয়।
পূর্বাভাসসূচক অভীক্ষা (Prognostic Test)
শিখনে দুর্বলতা নির্ণায়ক অভীক্ষার (Diagnostic Test) মতোই ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষার্থীর শিখন দুর্বলতার সম্ভাবনা আছে কিনা, সেই সম্পর্কে বর্তমানে যে অভীক্ষা প্রস্তুত করা হয়েছে, তাকেই পূর্বাভাষ-সূচক অভীক্ষা (শিক্ষণের ক্ষেত্রে) বলা হয়। মূলত, নির্ণায়ক অভীক্ষার মতো পূর্বাভাষসূচক অভীক্ষার উৎসও হলো চিকিৎসাবিদ্যা (Medical Science)।
শিখনে পূর্বাভাষসূচক অভীক্ষার অর্থ (Meaning of Prognostic Test in Learning)
শিখনে পূর্বাভাষমূলক অভীক্ষা হলো এমন এক অভীক্ষা, যার মাধ্যমে পরিমাপ করা যায় যে, ভবিষ্যতে শিক্ষার্থী শিখনে অসুবিধা বা দুর্বলতার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা। পূর্বাভাষসূচক অভীক্ষার মাধ্যমে এরকম সম্ভাবনা দেখা গেলে পূর্ব থেকেই বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় এবং মাঝে মাঝে এই অভীক্ষা প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীর বর্তমান অবস্থা যাচাই করা সম্ভব হয়। নির্ণায়ক অভীক্ষার (Diagnostic Test) মতো পূর্বাভাষসূচক অভীক্ষার সঠিকতা যাচাই করা যায় এবং আরও ভালোভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়, কারণ পূর্বাভাষ (Prognostic) এবং বর্তমান অবস্থার (Present Situation) তুলনার বাস্তব চিত্র বা তথ্য পাওয়া যায়।
পূর্বাভাষসূচক অভীক্ষার সুবিধা (Advantages of Prognostic Test)
- পূর্বাভাষসূচক অভীক্ষার সাহায্যে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা (Preventative Measures) গ্রহণ করা যায়।
- এই অভীক্ষার অন্যতম সুবিধা হলো, প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক শিখন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়।
- মাঝে মাঝে পূর্বাভাষসূচক অভীক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীর অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। এর ফলে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়ই উপকৃত হন।
- শিখনে দুর্বল শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি হয়।
পূর্বাভাষসূচক অভীক্ষার অসুবিধা (Disadvantages of Prognostic Test)
- এই ধরনের অভীক্ষা প্রস্তুত করা তুলনামূলকভাবে জটিল এবং অনুমানসাপেক্ষ।
- শিখন পরিস্থিতি সর্বদা পরিবর্তনশীল, যা পূর্বাভাষসূচক অভীক্ষাকে প্রভাবিত করে এবং এর যথার্থতা হ্রাস পায়।
FAQs
নির্ণায়ক অভীক্ষার (Diagnostic Test) প্রধান উদ্দেশ্য কী?
নির্ণায়ক অভীক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর শিখন দুর্বলতা বা ভ্রান্তির স্থানগুলি সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা এবং সেই দুর্বলতাগুলির কারণ অবগত হয়ে উপযুক্ত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা (Remedial Teaching) গ্রহণ করা। এটি শিক্ষার্থীর সামগ্রিক পারদর্শিতা পরিমাপের জন্য নয়।
পারদর্শিতা অভীক্ষা (Achievement Test) ও নির্ণায়ক অভীক্ষার মূল পার্থক্য কী?
পারদর্শিতা অভীক্ষা মূল্যায়নধর্মী (Summative) এবং শিক্ষার্থীর মোট শিখন অগ্রগতি বা স্কোর পরিমাপ করে। অন্যদিকে, নির্ণায়ক অভীক্ষা বিশ্লেষণধর্মী (Analytical) এবং শিক্ষার্থীর কোথায় ও কী ধরনের অসুবিধা আছে, তা নিখুঁতভাবে চিহ্নিত করে।
নির্ণায়ক অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা কম হওয়ার কারণ কী?
নির্ণায়ক অভীক্ষায় প্রতিটি নির্দিষ্ট ভ্রান্তি বা দুর্বলতা পরিমাপকারী পদের সংখ্যা সাধারণত অল্পই থাকে। এই অল্প সংখ্যক পদের ওপর নির্ভর করার কারণে প্রাপ্ত তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা কিছুটা কম হতে পারে। তাই শ্রেণিকক্ষ পর্যবেক্ষণ বা অন্যান্য উপায় দ্বারা তথ্যটি মিলিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
পূর্বাভাষসূচক অভীক্ষা (Prognostic Test) কেন ব্যবহার করা হয়?
পূর্বাভাষসূচক অভীক্ষা ব্যবহার করা হয় এই কারণে যে এটি পরিমাপ করতে পারে ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষার্থীর শিখনে দুর্বলতার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা। এই সম্ভাবনা জানা গেলে আগে থেকেই প্রতিরোধমূলক (Preventative) ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়, যা দুর্বল শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস করতে সাহায্য করে।
কেবল নির্ণায়ক অভীক্ষার ফলের ওপর নির্ভর করা কেন বিজ্ঞানসম্মত নয়?
এটি বিজ্ঞানসম্মত নয়, কারণ নির্ণায়ক অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা অপেক্ষাকৃত কম এবং এটি কেবল ত্রুটি বা দুর্বলতা নির্দিষ্ট করে, ভ্রান্তির কারণ সম্পর্কে কিছু বলে না। তাছাড়া, শিক্ষার্থীদের অকৃতকার্যতার পেছনে মানসিক জটের মতো অন্যান্য কারণও থাকতে পারে। তাই ফলের সঙ্গে শিক্ষক বা অভিভাবকের ব্যক্তিগত বিচার-বিবেচনা ও বিশ্লেষণ যুক্ত করা দরকার।