শিশুর বিকাশে বংশগতির প্রভাব: Impact of Heredity in child development

Impact of Heredity in child development
Impact of Heredity in child development

Impact of Heredity in child development : যে নির্দিষ্ট রীতি বা পদ্ধতির মাধ্যমে জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি পরবর্তী বংশগুলিতে সঞ্চারিত হয় ও প্রকাশ পায় তাকে বংশগতি বলে। বংশগতি হল শিশুর সহজাত বৈশিষ্ট্য যা নিয়ে শিশু জন্মায়। Store-এর মতে, “জন্মসূত্রে পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে প্রাপ্ত জৈবিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়কে বংশগতি বলে।”

Whatsapp গ্রুপে যুক্ত হন
Telegram গ্রুপে যুক্ত হন

অর্থাৎ সহজ কথায় বাবা-মায়ের বৈশিষ্ট্যগুলি তাদের সন্তানদের মধ্যে সঞ্চারিত হওয়াকে বংশগতি বলে। শুধু মানুষ নয়, পশু-পাখি, গাছ-পালা, ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে বংশগতির প্রভাব লক্ষণীয়।

শিশুর বিকাশে বংশগতির প্রভাব (Impact of Heredity in child development )

জিনের প্রভাব:

ক্রোমোজোমে উপস্থিত জিন আমাদের উচ্চতা, চুলের রং, ত্বকের বর্ণ এমনকি বুদ্ধিকেও প্রভাবিত করে। রক্তের চারটি গ্রুপ (A, B, AB এবং O) নির্ধারণ করে। এছাড়া লোহিত কণিকার Rh ফ্যাক্টর নির্ধারণ করে জিন।

দৈহিক বিকাশ:

দৈহিক বিকাশ বলতে ব্যক্তির দৈহিক আকৃতি গঠন, গায়ের রং, চুলের রং প্রভৃতিকে বোঝায়। গ্রন্থির কার্যপ্রণালীর উপর শিশুর দেহের বৃদ্ধি ও মনের গঠন অনেকটা নির্ভরশীল।

মানসিক বিকাশ:

মানসিক বিকাশ বলতে ব্যক্তির মানসিক বৈশিষ্ট্যকে বোঝায়। এগুলির মধ্যে ব্যক্তির প্রাক্ষোভিক সংগঠনগুলি প্রধান। এছাড়া ব্যক্তির কাল্পনিক ক্ষমতা, বুদ্ধি, চিন্তা প্রভৃতি এই শ্রেণির অন্তর্গত।

মনোপ্রকৃতিগত বিকাশ:

মনোপ্রকৃতিগত বিকাশ বলতে ব্যক্তির মনের প্রকৃতিগত যে বৈশিষ্ট্য থাকে তাকে বোঝায়। যাকে আমরা চলতি কথায় মেজাজ বা Mood বলি। বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে মনোপ্রকৃতিগত বৈষম্য বেশি করে দেখা যায়।

লিঙ্গ নির্ধারণ:

নারীর ডিম্বাণুর ক্রোমোজোমগুলি সব XX এবং পুরুষের শুক্রাণুর ক্রোমোজোমগুলি XY |

বংশগত বিশৃঙ্খলা:

অনেকরকম রোগ জন্মসূত্রে বাবা-মা-এর কাছ থেকে সন্তানের মধ্যে সঞ্চালিত হয়।

হাইপারটেনশন:

উচ্চরক্ত চাপ একটি বংশগত ব্যাধি।

মায়োপিয়া:

এর ফলে দূরের জিনিস ভালো দেখা যায় না। বাবা-মায়ের ব্যাধিটি সন্তানের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে।

হিমোফিলিয়া:

স্বাভাবিকভাবে রক্ত জমাট বাঁধে না। ফলে আঘাত পেলে অস্ত্রোপচারের সময় রক্ত বন্ধ হতে চায় না।

Muscular Dystrophy:

এটি বংশগত রোগ যাতে দেহের পেশিগুলি ক্রমশ দুর্বল হয় ও শুকিয়ে যায়।

পরিবেশ:

‘পরিবেশ’ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘Environment’ যার অর্থ হল ‘পরিবেষ্টিত করে থাকা।

ইংরেজি ‘Nature’ ও ‘Nurture’ শব্দের সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। শিশুর Nature/বংশধারা থেকে প্রাপ্ত তার প্রকৃতি এবং তাকে সযত্নে পালন করা (Nurture) দুটি সমান গুরুত্বপূর্ণ।

সুতরাং পরিবার বলতে বোঝায় চারপাশে যেসব জিনিস তাকে বেষ্টন করে রাখে তাই। মনোবিদ উডওয়ার্থ-এর মতে, “যেসব বাহ্যিক উপাদান শিশুর জন্মের পর থেকে তার উপর ক্রিয়াশীল হয় তাদের সমষ্টিকে পরিবেশ বলে।”

[ আরো পড়ুন : ভারতীয়দের গণিতে অবদান, Contribution of Indians in Mathematics ]

শিশুর বিকাশে পরিবেশের প্রভাব লিখুন (Write the impact of Environment in child development.)

Ans, শিশুর বিকাশে পরিবেশের প্রভাবগুলি হল-

  • প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব: যেসব শক্তি মানুষকে প্রভাবিত করে তাই হল প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রাকৃতিক পরিবেশের পার্থক্যের জন্য মানুষের দেহের আকৃতি, বর্ণের পার্থক্য হয়। যেমন—আফ্রিকার লোক কৃষ্ণবর্ণের ও ইংল্যান্ডের লোক গৌরবর্ণের হয়।
  • সামাজিক পরিবেশের প্রভাব: মানুষের অতীত ঐতিহ্য ও বর্তমান রীতি-নীতিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে তার সামাজিক পরিবেশ। যেমন—মেদিনীপুরের সংস্কৃতি ও কলকাতার সংস্কৃতি অনেকটাই পৃথক।
  • পারিবারিক পরিবেশের প্রভাব: পরিবার থেকেই শিশু তার শিক্ষার প্রথম পাঠ গ্রহণ করে ও তার নৈতিক বিকাশ ঘটে। এখান থেকে শিশু রীতি-নীতি, লোকাচারের শিক্ষাগ্রহণ করে।
  • বিদ্যালয়ের পরিবেশের প্রভাব: পরিবারের গণ্ডি পেরিয়ে শিশু বিদ্যালয়ে যায়। এখানে শিশু নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের শিক্ষা লাভ করে।
  • কর্ম পরিবেশের প্রভাব: বিদ্যালয় জীবন শেষ করে ব্যক্তি কর্মজীবনে প্রবেশ করে। একসঙ্গে মিশে কাজ করার মানসিকতা তৈরি হয়। ফলে ব্যক্তির মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে।

ব্যক্তি জীবনে বিকাশ বংশগতি ও পরিবেশ—এই দুই উপাদানের পারস্পরিক ক্রিয়ার ফল দ্বারা নির্ধারিত হয়। মনোবিদগণ আজ একমত যে, ‘Heridity and environment are co-relative factors’ তবে FL Ruch মনে করেন, ব্যক্তির বিকাশ যেহেতু সময়সাপেক্ষ সেহেতু সময় ও জীবন বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাঁর মতে, শিশুর বিকাশের উপাদান হল-

বিকাশের উপাদান = বংশগতি × পরিবেশ x সময়।


বিকাশে বংশগতি ও পরিবেশের আপেক্ষিক গুরুত্ব আলোচনা করুন। (Discuss the relative importance of Heredity and Environment in Development.)

Ans. জন্মের সময় শিশু তার বংশগতিকে অবলম্বন করে এই পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশের মধ্যে জন্মগ্রহণ করে। উত্তরাধিকার সূত্রে শিশু জীবন-সম্ভাবনার যে বীজ সঙ্গে নিয়ে আসে, অনুকূল পরিবেশে তা অঙ্কুরিত হয়ে ধীরে ধীরে শাখাপ্রশাখা বিস্তার করে মহীরুহে পরিণত হয় অথবা পরিবেশের প্রতিকূলতায় অকালেই তা নষ্ট হয়ে যায়।

আবার শিশু যদি উত্তরাধিকার সূত্রে কোনো সম্ভাবনা সঙ্গে না নিয়ে আসে তাহলে পরিবেশ যতই অনুকূল হোক না কেন তার মধ্যে ওই সম্ভাবনার প্রকাশ কিছুতেই ঘটবে না। প্রতিটি ব্যক্তিই উত্তরাধিকার সূত্রে কিছু সহজাত প্রবণতা ও ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে প্রতিক্রিয়ার ফলে এই গুণগুলি বিকাশলাভ করে যা ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব গঠনে সহায়তা করে। অর্থাৎ বংশগতির ধারায় প্রাপ্ত যে শক্তি বা সম্ভাবনা শিশুর মধ্যে প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে উপযুক্ত পরিবেশে তাই প্রকাশিত হয়ে তার ব্যক্তিত্বকে একটি দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করে।

সুতরাং, বংশগতি বা পরিবেশ কোটি শিশুর বিকাশে বেশি কার্যকরী এর উত্তরে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি হল, বংশগতি ও পরিবেশ উভয়ের উপর সমান গুরুত্ব আরোপ করা। কারণ, বিকাশ হল বংশগতি ও পরিবেশের পারস্পরিক ক্রিয়ার ফল। তবে ব্যক্তিজীবনের বিকাশ যেহেতু সময়সাপেক্ষ, সেহেতু সময়ও (Time) একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অর্থাৎ জীবনের যে-কোনো মুহূর্তে শিশুর বিকাশের স্তর নির্ধারিত হয় তার বংশগতি, পরিবেশ এবং জীবনকালের পারস্পরিক ক্রিয়ার দ্বারা।

সুতরাং, শিশুর বিকাশস্তর = বংশগতি × পরিবেশ × সময় (Development Level = Heridity Environment x Time) |

বংশগতির বৈশিষ্ট্যগুলি লিখুন। (Write down the features of Heredity.)

Ans. শিশু তার জন্মলগ্নে পিতামাতার কাছ থেকে প্রত্যক্ষভাবে এবং অন্যান্য পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পরোক্ষভাবে যে বৈশিষ্ট্যগুলি নিয়ে তার জীবন পরিক্রমা শুরু করে, তার সমবায়ই হল বংশগতি। প্রাণীবিদ্যার দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী মানুষ যেভাবে বংশগতির বৈশিষ্ট্যাবলি প্রাপ্ত হয় তা নিম্নরূপ-

  • একটি পিতৃকোশ ও একটি মাতৃকোশের মিলনের ফলে মাতৃগর্ভে জীবনের প্রথম সূচনা ঘটে।
  • পিতৃকোশটি হল শুক্রাণু ও মাতৃকোশটি হল ডিম্বাণু।
  • প্রতিটি জননকোশে 23টি করে ক্রোমোজোম থাকে।
  • শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলনের ফলে মাতৃগর্ভে যে জাইগোটের সৃষ্টি হয় তার মধ্যে মোট 46টি ক্রোমোজোম (23 + 23 = 46) থাকে। এদের মধ্যে ধ্যে শেষ জোড়া ক্রোমোজোমটিকে যৌন নির্ধারক ক্রোমোজোম (Sex Chromosome) বলে।
  • পুরুষের ক্ষেত্রে যৌন নির্ধারক ক্রোমোজোম দুটির একটি হল X এবং অপরটি Y। নারীদেহের দুটি ক্রোমোজোমই হল X।
  • প্রতিটি ক্রোমোজোমের মধ্যে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানার মতো রাসায়নিক পদার্থ আছে যাকে বলা হয় জিন। এই জিনই হল বংশগতির ধারক ও বাহক।

বংশগতির ক্ষেত্রে জিনের ভূমিকা কী? (What is the role of gene for Heredity ?)

Ans. জিনের ভূমিকা

  • বংশগতির ক্ষেত্রে জিনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ—কারণ ব্যক্তির দৈহিক, মানসিক, চারিত্রিক সবরকম বৈশিষ্ট্যই জিনগুলির ক্রিয়ার উপর নির্ভর করে।
  • একটি পিতৃকোশের জিন এবং একটি মাতৃকোশের জিন জোড় বেঁধে কাজ করে। জিনগুলি কীভাবে জোড় বাঁধবে তার উপরই নির্ভর করে বংশগতি।
  • একই পিতামাতার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও প্রত্যেক সন্তানের দৈহিক, মানসিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ভিন্ন ভিন্ন হয় কারণ প্রত্যেক সন্তানের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন জিনের সমাবেশ ঘটে।
  • পিতামাতা ও সন্তানদের মধ্যে যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য দেখা যায় তা নির্ভর করে জিনের বিন্যাসকরণ ও ক্রিয়ার উপর।
  • জিনের যে সংগঠন নিয়ে একটি শিশু তার জীবন শুরু করে তার উপরই নির্ভর করে ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত কী ধরনের ব্যক্তিত্বের অধিকারী হবে।

বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ সম্পর্কে আলোচনা করুন। (Discuss in brief about লাচনা করুন। (Dis various types of Environment.)

Ans. প্রাকৃতিক পরিবেশ:

প্রাকৃতিক পরিবেশ শিশুর জীবন বিকাশের উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে। জলবায়ু, মৃত্তিকা, গাছপালা, জীবজন্তু এবং খাদ্য—এ সবকিছুর প্রভাবে শিশু পরবর্তীকালে হয় কর্মঠ বা আয়েশি, শক্তিমান বা দুর্বল, পরিশ্রমী বা কুঁড়ে। মানুষের বিভিন্ন ইন্দ্রিয়ের উপরও প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় যা তার শক্তি ও সামর্থ্যকেও প্রভাবিত করে। মানুষের আকার, বর্ণ ও স্বভাবের উপরও প্রাকৃতিক পরিবেশ গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে।

পারিবারিক পরিবেশ:

পরিবারের সুস্থ ও মনোরম পরিবেশ শিশুর বিকাশে বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। পরিবারের অন্তর্গত বিভিন্ন উদ্দীপকের সমবায়ই হল পারিবারিক পরিবেশ। পরিবারের মা, বাবা, ভাই, বোন ও অন্যান্য সদস্যদের আচরণ শিশুর বিকাশের উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে। এ ছাড়া পরিবারের আর্থিক এবং সামাজিক অবস্থার উপরও শিশুর বিকাশের অভিমুখ কেমন হবে, তা নির্ভর করে।

বিদ্যালয় পরিবেশ:

বিদ্যালয়ে শিশু যেসব উদ্দীপকের সম্মুখীন হয়, তার সমবায়কেই বলা হয় বিদ্যালয় পরিবেশ। বিদ্যালয়ের পরিবেশ, শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ, শ্রেণি শৃঙ্খলা, শিক্ষকের আচরণ, সহপাঠীদের আচরণ শিশুর বিকাশকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। শিক্ষকের সহৃদয় ব্যবহার, নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাপরায়ণতা, শিক্ষা দেওয়ার আগ্রহ, তাঁর আচার-ব্যবহার, কথাবার্তা, চালচলন, জীবনদর্শন সবকিছুর দ্বারাই শিশু ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়। আবার শিক্ষকের রূঢ় ব্যবহার শিশুকে অসহযোগী, বিদ্রোহী করে তোলে। সে অমনোযোগী, রূঢ় ও বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠে।

সামাজিক পরিবেশ:

শিশু পরিণত হয়ে যখন বৃহত্তর সমাজে মেলামেশা করে তখন বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সমাজের রীতিনীতি, আচার-আচরণ, ক্লাব-অফিস, রাষ্ট্রীয় সংস্থা প্রভৃতির প্রভাবে ব্যক্তি সমাজে বিশেষভাবে মিথস্ক্রিয়া করার সুযোগ পায়। এইসব সামাজিক অনুষ্ঠান ও সংস্থার প্রভাবের তারতম্য অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যক্তির বিকাশের অভিমুখ বিভিন্ন হয় এবং বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন রকম ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়।