আজকের প্রতিবেদনে NCERT এবং SCERT-এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ সহ বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো। কাজেই এই প্রতিবেদনটি প্রাইমারি, আপার প্রাইমারি সহ বিভিন্ন টিচার্স ট্রেনিং কোর্স সহ টেট পরীক্ষার্থীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
স্বাধীনতা অর্জনের পর প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়নের জন্য ভারত সরকার যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এই NCERT যার ফুল ফর্ম হল “National Council of Educational Research and Training.” অপরদিকে SCERT সংস্থাটি ডাইরেক্টর এডুকেশনেরই একটি অংশ যা রাজ্য শিক্ষা বিভাগের একটি একাডেমিক শাখা রূপে কাজ করে থাকে SCERT এর ফুল ফর্ম হলো “State Council of Educational Research and Training.”
NCERT-এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ (Short description about NCERT.)
স্বাধীনতা অর্জনের পর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়নের জন্য ভারত সরকার যেসব প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল শিক্ষা গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত জাতীয় পর্ষদ বা National Council of Educational Research and Training বা সংক্ষেপে NCERT।
স্বয়ংশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে 1961 খ্রিস্টাব্দে NCERT প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি মানবসম্পদ মন্ত্রকের পরামর্শদাতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং কেন্দ্রীয় সরকার এর আর্থিক দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করে। মানবসম্পদ বিভাগের মন্ত্রী এর সভাপতি এবং প্রতিটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের শিক্ষামন্ত্রীগণ এর সদস্য।
অন্য সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন— UGC-এর চেয়ারম্যান কেন্দ্রের মানবসম্পদ বিভাগের সম্পাদক এবং চারটি অঞ্চল থেকে একজন করে চারজন উপাচার্য।
NCERT-র মূল কেন্দ্রটি নিউ দিল্লিতে অবস্থিত।
ভারতীয়দের গণিতে অবদান, Contribution of Indians in Mathematics
NCERT-র অধীনে সংস্থাগুলি (Institution under NCERT) NCERT-এর অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলি হল—
- ন্যাশনাল ইন্সটিটিউশন অব্ এডুকেশন (National Institution of Education).
- সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউশন অব্ এডুকেশনাল টেকনোলজি (Central Institution of Educational Technology).
- আজমীর, ভূপাল, ভুবনেশ্বর এবং মাইশোরে একটি করে চারটি আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান।
- ভূপালে অবস্থিত সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউট অব্ ভোকেশনাল এডুকেশন।
NCERT-র বিভাগ (Department of NCERT)
NCERT-র বিভাগগুলি হল—
- নীতি পরিকল্পনা (Policy Planning)
- প্রাক্-বিদ্যালয় (Pre-School)
- প্রারম্ভিক শিক্ষা (Elementary Education)
- বিশেষ শিক্ষা (Special Education )
- শিক্ষা গবেষণা (Educational Research)
NCERT-এর প্রধান কার্যাবলি। (Discussion the main Functions of NCERT.)
NCERT-র কার্যাবলি (Functions of NCERT):
- বিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তরে পাঠচর্চা মূল্যায়ন, শিক্ষার মান নির্ধারণ, শিশু মনোবিজ্ঞান, শিক্ষাপ্রশাসন ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণার কাজ পরিচালনা করা।
- বিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার ক্ষেত্রে উন্নত ধরনের শিক্ষণ প্রণালী ও শ্রেণিশিক্ষায় মানোন্নয়নের দিকে নজর দেওয়া এবং এইসব বিষয়ে গবেষণায় উৎসাহ দান।
- NCERT কর্তৃক মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন বিষয়ের পুস্তক প্রকাশ করা হয়। এই পুস্তকগুলি CBSE (Central Board of Secondary Education)-এর শিক্ষার্থীদের পাঠ্য হিসেবে বিবেচিত।
শিশুর বিকাশে বংশগতির প্রভাব: Impact of Heredity in child development
- NCERT কর্তৃক বিভিন্ন Journal (শিক্ষাসংক্রান্ত) প্রকাশিত হয়।
- NCERT বিদ্যালয় শিক্ষার জন্য পাঠক্রম রচনা করেছে 1975, 1988 3 2000। এ ছাড়া শিক্ষক-শিক্ষণের জন্য পাঠক্রম রচনা করেছে 1978, 1988 ও 1998। এ ছাড়া National Curriculum Framework for School Education (NCFSE) 2000 NCERT দ্বারা রচনা করা হয়েছে।
- বিভিন্ন ধরনের সেমিনার, workshop NCERT দ্বারা পরিচালিত হয়।
- NCERT-এর 4 বছরের Secondary Integrated Teacher Education Programme রয়েছে। এই Programme-এ অংশগ্রহণ করবে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে (+2) বিজ্ঞান ও অঙ্ক নিয়ে পাস করা শিক্ষার্থীরা। প্রতিটি কলেজে রিজিওনাল এই ব্যবস্থা আছে।
- স্নাতক শিক্ষকদের জন্য 1 বছরের Secondary Teacher Education Programme পরিচালনা করে। |
- 4 বছরের Integrated Elementary Teacher Education Programme
- দূরায়ত শিক্ষার মাধ্যমে 18 মাসের Secondary Teacher Education Programme আছে।
- NCERT 4টি আঞ্চলিক শিক্ষক-শিক্ষণ কলেজ পরিচালনা করে (ভূপাল, আজমির , ভুবনেশ্বর এবং মহীশূর)।
- বিজ্ঞান মেধাপরীক্ষা পরিচালনা করে থাকে।
- 1986 খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরিতে এই পরিষদ বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।
- SCERT-গুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলে।
- প্রথামুক্ত শিক্ষার ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা যথেষ্ট।
- উচ্চস্তরের শিক্ষার ক্ষেত্রে বৃত্তিকালীন শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
- Extension Service-এর ব্যবস্থা করা।
- বিদ্যালয়ের শিক্ষা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ এবং তার বিস্তার করা।
- বিদ্যালয়ের শিক্ষার উপর গবেষণাতে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা।
- বিদ্যালয়ের শিক্ষা সংক্রান্ত নীতি ও কর্মসূচি নির্ধারণ করা।
সুতরাং NCERT বর্তমানে আমাদের দেশের বিদ্যালয়ের শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। যা শিক্ষা ও শিক্ষণ ক্ষেত্রে মূল্যবান গবেষণামূলক কাজ করে যাচ্ছে ও দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণার ব্যাপারে উৎসাহিত করছে এবং সেই অনুযায়ী অনুদানের ব্যবস্থা করছে। এ ছাড়া শিক্ষকশিক্ষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
SCERT-এর প্রধান কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা। (Discussion the main functions of SCERT.)
কোনো কোনো রাজ্যে SCERT, State Institution of Education (SIE) নামে পরিচিত। এই সংস্থাটি ডাইরেক্টর অব্ এডুকেশনেরই একটি অংশ এবং রাজ্য শিক্ষা বিভাগের অ্যাকাডেমিক শাখা। আঞ্চলিক আধিকারিক, জেলা শিক্ষা আধিকারিক, পঞ্চায়েত শিক্ষা আধিকারিক এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের শিক্ষা-সংক্রান্ত পরামর্শ দিয়ে থাকেন। SCERT-র নেতৃত্বে একজন ডিরেক্টর থাকেন। তার অধীনে বিভিন্ন বিভাগের, যেমন— শারীরশিক্ষা বিভাগ, অডিয়ো-ভিশুয়াল বিভাগ, ইন্সটিটিউট অব্ ইংলিশ, বৃত্তি নির্দেশনা, পরীক্ষা বিভাগ, বিজ্ঞান শিক্ষা, পাঠক্রম বিভাগ, শিক্ষক-শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক প্রকাশন এবং প্রথাবহির্ভূত বিভাগের প্রধানগণ জয়েন্ট ডাইরেক্টর হিসাবে থাকেন।
SCERT-র কার্যাবলি (Functions of SCERT)
- বিদ্যালয় শিক্ষা এবং সাধারণভাবে জীবনব্যাপী বিধিযুক্ত শিক্ষা ও বিশেষভাবে শিক্ষক-শিক্ষণের ক্ষেত্রে পরিবর্তন সাধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ হল SCERT-এর অন্যতম কাজ।
- রাজ্যের প্রাথমিক, এলিমেন্টারি, মাধ্যমিক ও উচ্চতর মাধ্যমিক শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত তত্ত্বাবধায়ক পরিদর্শকমণ্ডলীর কার্যকালীন শিক্ষণ ও পুনর্শিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
- প্রাথমিক থেকে উচ্চতর মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের শিক্ষকশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের কর্মকালীন শিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
- শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক, তত্ত্বাবধায়কদের পেশাগত উন্নয়নের জন্য পত্রাচার ও যোগাযোগকারী কর্মসূচি নির্ধারণ।
- রাজ্যের সকল স্তরের শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে সম্প্রসারণ সার্ভিস চালু করা।
- রাজ্যের সম্প্রসারণ সার্ভিস কেন্দ্রগুলির মধ্যে সমন্বয়সাধন।
- প্রাথমিক থেকে উচ্চতর মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবহারের উপযোগী পাঠক্রম, পাঠদানের উপকরণ, পাঠ্যপুস্তক প্রভৃতি প্রণয়ন।
- প্রাথমিক এবং এলিমেন্টারি স্তরের বিদ্যালয়, শিক্ষক-শিক্ষণ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক কোর্স প্রণয়ন।
- মাধ্যমিক ও উচ্চতর মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের উপযোগী উপকরণ প্রস্তুত।
- প্রাথমিক শিক্ষকদের শিক্ষণের দিকটা (Academic aspect) নিয়ন্ত্রণ করা।
- প্রাথমিক থেকে উচ্চতর মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক-শিক্ষা ও পাঠক্রম বিষয়ক নানা ধরনের সমস্যার খোঁজখবর নেওয়া ও পর্যালোচনা করা।
- রাজ্যের বিভিন্ন বিষয় শিক্ষকদের সমিতিগুলির মধ্যে সমন্বয়সাধন।
- শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ ও সরকার কর্তৃক অনুমোদিত বিশেষ পরিকল্পনা রচনা করা।
- SCERT, State Board of School Education, State Level Universities, College of Education, State Department of Education যৌথভাবে Pre-service ও In service Training Programme-গুলির ব্যবস্থা করছে।
- SC, OBC এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি, স্কলারশিপ এবং অন্যান্য উৎসাহ সঞ্চারকারী ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
- NCERT, NCT এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির যোগাযোগ রক্ষা করে।
SCERT-এর বিভিন্ন কার্যাবলির কথা উল্লেখ করা হলেও এখনও পর্যন্ত এই পরিষদের কাজ মূলত প্রাথমিক স্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধ। SCERT মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় না। যেহেতু SCERT একটি রাজ্য সংস্থা এবং NCERT-এর মডেলে তৈরি সেজন্য—
(a) NCERT মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের গুণগত মানোন্নয়নের জন্য যে ধরনের কাজ করে SCERT-এরও তেমনি বিভিন্ন রাজ্যের ওই স্তরসমূহের গুণগত মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়া উচিত।
(b) SCERT-এর মাধ্যমিক শিক্ষকদের জন্য যে শিক্ষণ কলেজগুলি রয়েছে তার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার দায়িত্ব নেওয়া উচিত।
(c) রাজ্যের শিক্ষক-শিক্ষণ গবেষণার ক্ষেত্রে SCERT-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা অবশ্যই প্রয়োজন।
(d) বিভিন্ন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার ব্যাপারে বিভিন্ন সেমিনার, ওয়ার্কশপ SCERT দ্বারা পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন।
(e) NCERT-এর মতোই SCERT দ্বারা মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা-সংক্রান্ত Text বই রচনার দায়িত্ব নেওয়া দরকার।
(f) SCERT-এর শিক্ষা-সংক্রান্ত ম্যাগাজিন প্রকাশ (বিশেষত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা) করা দরকার।
(g) রাজ্যের মাধ্যমিক শিক্ষার মূল্যায়ন, শিক্ষার মান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে SCERT-এর ভূমিকা থাকা দরকার।
(h) মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষক-শিক্ষণ কলেজগুলির শিক্ষকদের বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজে উৎসাহ দান করা SCERT-এর অন্যতম কাজ হওয়া উচিত।
(i) রাজ্যের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষণ প্রণালী ও শ্রেণি-শিক্ষার মানোন্নয়নের দিকে নজর দেওয়াও এর গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হওয়া উচিত।
(j) মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বিভিন্ন ধরনের মেধা পরীক্ষা পরিচালনাও করা উচিত।
(k) বিভিন্ন মাধ্যমিক শিক্ষক-শিক্ষণ কলেজগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করাও এই সংস্থাটির দায়িত্ব হওয়া উচিত।
সুতরাং NCERT-এর আদলে গঠিত SCERT-এর কর্মপরিধি আরও বিস্তৃত হওয়া দরকার। বর্তমানে এটি প্রাথমিক শিক্ষার ও সর্বশিক্ষার মানোন্নয়নে, DIET-এর পরিচালনার ক্ষেত্রে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে ঠিক তেমনি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও এটি করা প্রয়োজন।
FAQs,
NCERT এর ফুল ফর্ম কি ?
NCERT এর ফর্ম হল “National Council of Educational Research and Training.”
SCERT-এর ফুল ফর্ম কি ?
SCERT-এর ফুল ফর্ম হল “State Council of Educational Research and Training.”
NCERT-র মূল কেন্দ্রটি কোথায় অবস্থিত
NCERT-র মূল কেন্দ্রটি নিউ দিল্লিতে অবস্থিত।