প্রাথমিক টেট পরীক্ষার জন্য গণিত পেডাগোজি-র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণ পদ্ধতিগুলি এখানে বিশদে আলোচনা করা হয়েছে। কীভাবে পাঠ্যক্রমকে ছোটো এককে ভাগ করে সংশোধনমূলক শিক্ষণ (Corrective Teaching) দিতে হয় এবং গঠনমূলক ও কর্মসমাপ্তিমূলক মূল্যায়ন ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ভুল শুধরে দেওয়া যায়, তা জানুন। বিশেষ করে, শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতা অনুযায়ী শ্রেণিতে দল নির্মাণের (Within Class Grouping) বিভিন্ন কৌশল, যেমন – Thematic Grouping, Number Group এবং Spontaneous Group – নিয়ে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হয়েছে। গণিতে অক্ষমতা (Arithmetic Disability) শনাক্তকরণের লক্ষণ এবং কার্যকর primary tet math pedagogy remedial teaching grouping কৌশলগুলির মাধ্যমে দুর্বলতা দূর করে উৎকর্ষমূলক কার্যক্রম (Enrichment Programme) দ্বারা শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ ঘটানোর সম্পূর্ণ নির্দেশিকা এই পোস্টে পাবেন। এটি আপনার TET প্রস্তুতির জন্য অপরিহার্য।

এখানে “সংশোধনমূলক শিক্ষণ (Remedial Teaching)” সম্পর্কিত আলোচনাটি সুসংগঠিতভাবে তুলে ধরা হলো:
এই পোস্টে যা কিছু আছে এক নজরেঃ
সংশোধনমূলক শিক্ষণ (Remedial Teaching)
প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজনীয়তা
শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অকৃতকার্যতার একটি বড় কারণ হতে পারে শিক্ষণ পদ্ধতির ব্যর্থতা। অনেক শিক্ষক শ্রেণিকক্ষের নির্দেশ অনুসরণ করতে না পারা শিক্ষার্থীদের প্রতি মনোযোগ দেন না, ফলে তারা আশানুরূপ ফল লাভে সক্ষম হয় না।
বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থা সমস্ত শিক্ষার্থীর কৃতকার্যতার উপর গুরুত্ব দেয়। যেসব শিক্ষার্থী স্বাভাবিক পঠনপাঠন অনুসরণ করতে পারে না বা কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করতে ব্যর্থ হয়, তাদের জন্য সংশোধনমূলক শিক্ষণের (Remedial Teaching) ধারণাটি গুরুত্ব পেয়েছে। এই শিক্ষণকে ক্ষতিপূরক বা পরিপূরণমূলক শিক্ষণও বলা হয়ে থাকে।
এই পদ্ধতিতে শিক্ষকরা সেই সমস্ত পাঠগুলি ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের পুনরায় দান করেন, যা তারা মূল পঠনপাঠনের সময় গ্রহণ করতে পারেনি।
সংশোধনমূলক শিক্ষণের বৈশিষ্ট্য
সংশোধনমূলক শিক্ষণের ক্ষেত্রে শিক্ষক যা করেন:
- বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক সময়ের বাইরে অতিরিক্ত সময় দেন (যেমন: সপ্তাহান্তে বা ছুটির দিনে)।
- তিনি বিভিন্ন ধরনের সম্পদ (resource) এবং শিক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন।
- শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বিষয়গুলিতে পান্ডিত্য অর্জন করতে এবং তা স্মরণ রাখতে সহায়তা করেন।
কোন্ ধরনের শিক্ষার্থীর সংশোধনমূলক শিক্ষণ প্রয়োজন?
শিক্ষক হিসাবে নিম্নলিখিত শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করা প্রয়োজন:
- যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা ধীর প্রকৃতি বা কোনো সংকটে আছে।
- যারা সাধারণ পারদর্শিতা সীমার নীচে অবস্থান করে।
- পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী (Underachievers)।
- বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু (Special needs children), যেমন— মূক-বধির, ক্ষীণদৃষ্টি, পঙ্গু, অস্থিগত সমস্যাযুক্ত বা ক্ষীণ বুদ্ধি ইত্যাদি।
- সমধর্মী গোষ্ঠী বা সহযোগিতামূলক শিখনের মাধ্যমে যারা পরোক্ষ শিক্ষা গ্রহণ করেছে।
নিম্ন পারদর্শিতার কারণসমূহ
শিক্ষার্থীর নিম্ন পারদর্শিতার কারণগুলি জানা শিক্ষকের জন্য জরুরি:
- দীর্ঘ সময় ধরে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়া, যা শ্রেণিকক্ষের পঠনপাঠনকে ব্যাহত করেছে।
- নিম্ন প্রেষণাযুক্ত (Low Motivation) শিশু।
- অবিরাম অকৃতকার্যতার দরুন যাদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে গেছে।
- যারা বিদ্যালয়ের পরিবেশের প্রতি আস্থা হারিয়েছে।
- যারা বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত থাকে না।
- যারা কোনো নেশার ওষুধ বা মাদক দ্রব্য ব্যবহার করে।
- যারা ঠিকমতো পাঠে মনোনিবেশ করতে পারে না।
- শিক্ষকের শিক্ষণ পদ্ধতিগত সমস্যার দরুন যারা যথার্থ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না।
- যাদের মূল চাহিদাগুলি (Basic Needs) পূরণ হয়নি।
সংশোধনমূলক শিক্ষণ হলো এমন একটি শিক্ষণ প্রক্রিয়া, যেখানে প্রয়োজনে পুনর্বার পাঠদান করা হয় এবং শিক্ষাব্যবস্থার ব্যয় সংকোচ (খরচ কমাতে সাহায্য) দ্বারাও শিক্ষার্থীর প্রতি উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
এখানে শিক্ষণের বিভিন্ন পদ্ধতিসমূহ (Procedures for Teaching) সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনাটি সুসংগঠিতভাবে তুলে ধরা হলো:
গণিত পেডাগাজির আরেকটি পোস্টের জন্য নিচে ক্লিক করুন
👇👇👇👇👇
গণিতভীতি দূর করার উপায়: Reasons and Remedies for Maths Phobia নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ TET পরীক্ষার গাইড
শিক্ষণের বিভিন্ন পদ্ধতিসমূহ (Procedures for Teaching)
১. সংশোধনমূলক শিক্ষণ (Corrective Teaching)
সংশোধনমূলক শিক্ষণে পাঠ্য বিষয়বস্তুকে ছোটো ছোটো এককে ভাগ করে পাঠদান করা হয়। এই পদ্ধতিতে পাঠের সময় প্রয়োজনীয় তত্ত্বাবধান এবং শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনমতো ব্যক্তিগত নির্দেশনাদান করা হয়। প্রয়োজনে পাঠ্যবিষয়ের পুনঃপাঠ দান করা হয়।
(i) গঠনমূলক মূল্যায়ন (Formative Evaluation)
ছোটো ছোটো এককে পাঠদান করার পর গঠনমূলক মূল্যায়ন-এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভুলগুলি তৎক্ষণাৎ শুধরে দেওয়া হয়, যা তাদের সহজে পাঠ আয়ত্ত করতে সহায়তা করে।
(ii) কর্মসমাপ্তিমূলক মূল্যায়ন (Summative Evaluation)
বিদ্যালয়ে পাঠের শেষে একটি ইউনিট পরীক্ষা নেওয়া হয়।
- যারা 80% নম্বর পায়, তাদের পৃথক দল করে উন্নতমানের কাজ দেওয়া হয়, যাতে তাদের জ্ঞান বৃদ্ধি পায়।
- যারা 40%-এর নীচে নম্বর পায়, তাদের অতিরিক্ত সময় নিয়ে সংশোধনমূলক শিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর শিক্ষক আবার একটি পরীক্ষা নেন।
- যারা এবার 80% নম্বর পায়, তাদের উন্নত দলে যোগদানের জন্য পাঠানো হয়।
- বাকিদের ততক্ষণ পর্যন্ত সংশোধনমূলক শিক্ষণ দান করা হয় যতক্ষণ না তারা পান্ডিত্য অর্জন করতে পারছে।
নতুন একক শুরুর পূর্বে আবার সমস্ত শ্রেণিকে একত্রিত করা হয়।
২. শ্রেণির মধ্যে দল নির্মাণ (Within Class Grouping)
শ্রেণির মধ্যে দল নির্মাণ এমন একটি পদ্ধতি যেখানে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতার স্তরের ভিত্তিতে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করেন। এই পদ্ধতিতে শ্রেণির প্রতিটি সদস্য একটি দলভুক্ত হয় এবং ওই নির্দিষ্ট দলভুক্ত হয়ে একটি বিষয়ের পাঠগ্রহণ করে। এই দল নির্মাণ উচ্চ পারদর্শিতার হারসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের আরও উচ্চমানের নির্দেশনার জন্য বা নিম্ন পারদর্শিতার অধিকারীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনার জন্য করা হতে পারে।
প্রাথমিক স্তরে এই পদ্ধতি বেশি দেখা যায়। দলগুলির নির্দিষ্ট নাম (যেমন: ‘A’ group, ‘B’ group) বা রং (যেমন: ‘Red’ group, ‘Blue’ group) দ্বারা পরিচয় দেওয়া হয়। শিক্ষক পরীক্ষা, পূর্বের পারদর্শিতা ও পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতি অনুসরণ করে নির্ধারণ করেন কোন্ শিক্ষার্থী কোন্ দলভুক্ত হবে।
সুবিধা:
- শিক্ষকরা সহজেই শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতার স্তর অর্জনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নির্দেশদান করতে পারেন।
- শিক্ষকদের বিভিন্ন ধরনের শিক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে উদ্দীপিত করে।
- নিম্ন পারদর্শিতার শিক্ষার্থীরা পুনরাবৃত্তি, ফ্ল্যাশ কার্ড, ড্রিল ইত্যাদির মাধ্যমে পাণ্ডিত্য অর্জন করে, যা উচ্চ পারদর্শিতার শিক্ষার্থীদের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য নয়।
- গণিত শিক্ষণের ক্ষেত্রে এই দল নির্মাণ খুবই সহায়ক।
শ্রেণির মধ্যস্থ দল-নির্মাণের প্রকারভেদ:
১. Thematic Grouping (বিষয়ভিত্তিক দল):
এই দল বিষয়গত এলাকা বা শিক্ষার্থীদের আগ্রহের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। যেমন— ফুল/পাতা/ফলের প্রকারভেদ, রং, আকার, বা প্রাপ্তির সময় নিয়ে দলে ভাগ করা যেতে পারে। খেলনা বা তার অংশ সমন্বয়সাধন, বা ছবি জুড়তে পারার ক্ষমতার ভিত্তিতেও দল গঠন করা যায়। এতে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিকতা ও বিশ্লেষণাত্মক ক্ষমতার বিকাশ ঘটে।
২. Class Roster Grouping (শ্রেণির তালিকাভিত্তিক দল):
এটি তিন ধরনের হতে পারে:
- Rotating Assignments: শিক্ষক কাজের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের সমান ভাগে A, B, C, D দলে ভাগ করে আবার প্রতি দল থেকে একজন করে নিয়ে নতুন দল বানাতে পারেন। শিক্ষক দেখেন এক-একটি দল কতগুলি করে কাজ করল।
- Random Assignments: শিক্ষক শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের নাম অনুসারে দল তৈরি করতে পারেন। কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী দলের আকার বিভিন্ন হতে পারে এবং দলের শিক্ষার্থীদের প্রকৃতি অনুযায়ী কাজ দেওয়া যেতে পারে।
- Alphabetical Group (ঐতিহ্যগত দলনির্মাণ): প্রতি শিক্ষার্থীর নামের শেষ অক্ষর দিয়ে দল তৈরি করা হয়।
৩. Number Group (সংখ্যাভিত্তিক দল):
শিক্ষক বিভিন্ন Number-এর ভিত্তিতে (যেমন: 1, 2, 3, 4) বা সংখ্যাশ্রেণির ভিত্তিতে (যেমন: 1-10, 11-20) দল তৈরি করে বিভিন্ন কাজ দিতে পারেন।
৪. Spontaneous Group (স্বতঃস্ফূর্ত দল):
পঠনপাঠনের বাইরে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত দলনির্মাণ করতে শিক্ষক উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। যেমন— Friendship group (বন্ধুগোষ্ঠী), Geographical group (ভৌগোলিক গোষ্ঠী/আবাসস্থল বা শ্রেণিকক্ষে বসার স্থানভিত্তিক), বা ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের (উচ্চতা, চোখের রং, জন্মমাস ইত্যাদি) ভিত্তিতে দল নির্মাণ করা যেতে পারে।
৩. উৎকর্ষতামূলক কার্যক্রম (Enrichment Programme)
এই কার্যক্রমগুলি পাঠক্রমিক কাজের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ ও উৎকর্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এগুলি শিক্ষামূলক বিনোদনের সুযোগ করে, পাঠের একঘেয়েমি দূর করে এবং শিক্ষার্থীদের গুণাবলির বিকাশ ঘটায়। এগুলি সাধারণত বিদ্যালয়ের ঐচ্ছিক কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত।
উপযোগিতা:
- শিক্ষার্থীর পূর্ণ গুণাবলির বিকাশ।
- সামাজিক সচেতনতা, দক্ষতা, দল দায়িত্ববোধ এবং সহানুভূতিকে জাগ্রত করা।
- ব্যক্তিগত গুণাবলি ও আগ্রহের বিকাশ।
- সাধারণ পাঠক্রমের বাইরে শিক্ষার্থীদের শক্তি ও দক্ষতা উদ্ভাবন।
- পাঠক্রম সংক্রান্ত বিষয়ে জ্ঞানের বিকাশে সহায়তা।
উৎকর্ষতামূলক কার্যক্রমগুলির ক্ষেত্র:
| ক্ষেত্র | সংক্ষেপে বিবরণ |
| ১. খেলাধুলা ও শরীরচর্চা | অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঞ্চালন, রক্তপ্রবাহ যথাযথ রাখা ও সুষম শারীরিক বিকাশ ঘটানো। দলগত মনোভাব, সহযোগিতা ও সহমর্মিতাবোধের বিকাশ। সুস্থ দেহ সুস্থ মনের পরিচায়ক। |
| ২. সৃজনাত্মক কলা বা হস্তশিল্প | অন্তর্নিহিত প্রবণতাগুলির বিকাশ। চিন্তাশক্তি, কল্পনাশক্তি ও নান্দনিক গুণাবলির বিকাশ। শিশুরা নিজস্ব চিন্তার স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ ঘটাতে পারে এবং সঞ্চালনগত দক্ষতার বিকাশ ঘটে। |
| ৩. নৃত্য, গীত, অভিনয়, অঙ্কন | সৃজনাত্মক ক্ষমতা ও দক্ষতার বিকাশ। সুপ্ত দক্ষতার (সংগীত, নৃত্য, অভিনয়) উন্মোচন। বাচন ক্ষমতা ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঞ্চালন বিকাশ। সুস্থ অবসর যাপন এবং পরবর্তী জীবনে বৃত্তি গ্রহণে সহায়তা। |
| ৪. বিদ্যালয়ের ভ্রমণ | পাঠক্রমিক ও সহপাঠক্রমিক গুরুত্ব। সহযোগিতা, সহমর্মিতা, দলগত মনোভাবের বিকাশ। পরিবেশ ও স্থানের গুরুত্ব সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ। শিক্ষা ও বিনোদনের ব্যবস্থা। |
| ৫. মজাদার কার্যক্রম | শিখন ও আনন্দের ভারসাম্য রক্ষা। বার্ষিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, শ্রেণি সম্মেলন, সাক্ষরতামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ। উদ্দীপনার সঞ্চার ঘটায়। |
| ৬. বিশেষ সম্মেলন | বিভিন্ন সংস্কৃতি ও জাতির সংমিশ্রণ উপলব্ধি করা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ঐক্যবোধ জাগরিত করা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ দিবস পালন। |
| ৭. সমাজ পরিবর্ধকমূলক ক্রিয়াক্রম | শিক্ষামূলক কাজের সঙ্গে সমাজকে সংযুক্ত করা। নাগরিকত্ববোধের সচেতনতা জাগানো। সাক্ষরতা মিশন, স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ, পরিবেশ দূষণ, বিজ্ঞান ক্লাব, স্কাউট ইত্যাদি। |
| ৮. আলোচনাসভা ও বিতর্কসভা | পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত বা গুরুত্বপূর্ণ বহির্ভূত বিষয়ে মতামত ও যুক্তির অনুসন্ধান। উচ্চপর্যায়ের চিন্তাশক্তি, যুক্তিশক্তি ও বিচারশক্তির বিকাশ। সুস্পষ্টভাবে বক্তব্য প্রকাশের ক্ষমতা বৃদ্ধি। |
গণিতে অক্ষমতার ক্ষেত্রে সংশোধনমূলক শিক্ষণ (Remedial Teaching for Arithmetic Disability)
গণিতে অক্ষমতার শনাক্তকরণ
নিম্নোক্ত লক্ষণগুলির ভিত্তিতে গণিতে অক্ষম শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করা হয়:
- সংখ্যাগত এবং গাণিতিক সংকেত বা চিহ্নগুলি সঠিকভাবে বুঝতে না পারা।
- সাধারণ সংকেত ও মৌলিক বিষয়গুলির অর্থ পুনরুদ্রেক করতে না পারা।
- সমস্যা সমাধানে যুক্তিসহ পর্যায়গুলি অনুসরণ করতে অসুবিধা বোধ করা।
- মৌলিক গাণিতিক সমস্যাগুলি (যেমন: মৌলিক/যৌগিক সংখ্যা, দশমিক, ভগ্নাংশ, পরিমাপের একক) বুঝতে অসুবিধা হওয়া।
গণিতে অক্ষমতা নির্ণায়ক অভীক্ষা ও অন্যান্য কৌশল
Otto (1973)-এর মতে, গণিত অক্ষমতা শনাক্তকরণে তিনটি স্তর বিবেচনা করা প্রয়োজন:
- সার্ভে স্তর (Survey Level): সাধারণ বুদ্ধি অভীক্ষা (যেমন: আইওয়া টেস্ট অফ বেসিক স্কিলস, স্ট্যানফোর্ড পারদর্শিতার অভীক্ষা) ব্যবহার করে সমস্যার ধরন বোঝার চেষ্টা করা হয়। দৈনন্দিন কাজ বিশ্লেষণ করেও সমস্যা শনাক্ত করা যায় (অপ্রমাণিত সার্ভে)।
- বিশেষ স্তর (Special Level): একাধিক অভীক্ষা ব্যবহার করা হয়। শিক্ষার্থী কর্তৃক প্রাপ্ত নম্বর বিশ্লেষণ করে তথ্য পাওয়া যায়। এই স্তরে সংশোধনমূলক পদ্ধতি, ওয়ার্ক বুকস ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়। অভীক্ষাগুলি বিদ্যালয়ের সমগ্র পাঠক্রমের ভিত্তিতে তৈরি, কঠিন নয় এবং শ্রেণি অনুযায়ী আদর্শজনিত হবে।
- তীব্র স্তর (Acute/Severe Level): পূর্ববর্তী স্তরগুলি ব্যর্থ হলে এই স্তরের কথা চিন্তা করা হয়। গণিত অক্ষমতার বহু দিক থাকলেই এই স্তরের শনাক্তকরণের প্রয়োজন হয়।
গণিতে অক্ষমতার সংশোধনমূলক শিক্ষণ
সংশোধনমূলক শিক্ষণ-প্রক্রিয়া প্রয়োগের পূর্বে ও চলাকালীন শিক্ষককে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব দিতে হবে:
শিক্ষণ-পূর্ববর্তী বিবেচনা:
- শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া (তাদের উপকারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এই মানসিকতা তৈরি করা)।
- কার্যকরী এবং উৎকর্ষতাভিত্তিক উদ্দেশ্যভিত্তিক ও নির্দিষ্ট সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
- প্রমাণিত এবং পরীক্ষিত পদ্ধতি ব্যবহার করা।
- আবেগ, শারীরিক এবং পরিবেশগত উপাদানের মতো অক্ষমতা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়গুলি অনুসন্ধান করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।
শিক্ষণকালীন বিবেচনা:
- শিক্ষার্থী যাতে নিজে সমস্যাসমাধান করতে পারে, সেইভাবে শেখানো, যাতে সে নিজেই ভ্রান্তি দূর করতে পারে।
- সমস্যাসমাধানে ত্রুটি কোথায় হয়েছে তা জানা।
- শিক্ষার্থীর পূর্বজ্ঞান এবং সমস্যাসমাধানে তার পদ্ধতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া।
- ভুল বিশ্লেষণ করে শিক্ষার্থীর গাণিতিক পদ্ধতিগত এবং নির্ণয় সংক্রান্ত সমস্যাগুলি নির্দিষ্ট করা।
- শিক্ষার্থীকে সমস্যার বিভিন্ন শ্রেণি বা প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে সাহায্য করা।
- শিক্ষার্থী যাতে প্রাসঙ্গিক তথ্যগুলিকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয় সেইভাবে তাকে শেখানো।
- শিক্ষার্থী মৌলিক গাণিতিক প্রক্রিয়াগুলি (যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ) সম্পর্কে অবহিত কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া।
- সমস্যা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে উদাহরণ দেওয়া।
- বিভিন্ন ধরনের শিক্ষণ কৌশল প্রয়োগে সমস্যাসমাধানে ও ক্যালকুলেশনে শিক্ষার্থীর আত্মবিকাশ গঠনে লক্ষ রাখা।
- বিভিন্ন ধরনের পরিমাপক কৌশলের সাহায্যে শিক্ষার্থীকে মাঝে মাঝেই পরীক্ষা করা।
- সু-পরিকল্পিত প্রোগ্রাম শিখন উপকরণ, সংশোধনমূলক প্রোগ্রাম এবং প্রয়োজনে কম্পিউটারের মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা।