সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ে TET কে শিক্ষক নিয়োগ এবং প্রমোশনের জন্য অপরিহার্য করে তোলা হয়েছে, কিন্তু Supreme court tet exemption for teachers with less than 5 years service left এর মতো বাস্তবসম্মত ছাড় দেওয়া হয়েছে। RTE Act এর প্রয়োগ এবং মাইনরিটি প্রতিষ্ঠানগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। শিক্ষকদের জন্য এই রায়ের প্রভাব এবং প্রস্তুতির টিপস।

সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী রায়ের সারাংশ
আজকের দিনে, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে যা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নতুন করে সাজাতে চলেছে। এই রায়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ বা প্রমোশনের জন্য টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট (TET) পাস করা বাধ্যতামূলক। এটি শুধু নতুন শিক্ষকদের জন্য নয়, বরং চাকরিরত শিক্ষকদের জন্যও প্রযোজ্য। তবে, কোর্ট বাস্তবতাকে মাথায় রেখে কিছু ছাড় দিয়েছে, বিশেষ করে যাদের অবসরের সময় কাছে এসে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, supreme court tet exemption for teachers with less than 5 years service left এর নিয়ম অনুসারে, যাদের সার্ভিসের মাত্র পাঁচ বছরের কম বাকি, তাদের TET পাস করতে হবে না যদি না তারা প্রমোশন চান। এছাড়া, RTE Act মাইনরিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রয়োগ হবে কি না, এই বিষয়ে কোর্ট ২০১৪ সালের প্রমাতি জাজমেন্ট নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে এবং এটিকে লার্জার বেঞ্চে পাঠিয়েছে। এই রায়টি বিভিন্ন রাজ্যের হাইকোর্টের পরস্পরবিরোধী রায়গুলির একটি ব্যাচ অ্যাপিল থেকে উদ্ভূত।
RTE Act এবং TET এর পটভূমি
২০০৯ সালে রাইট অফ চিলড্রেন টু ফ্রি অ্যান্ড কম্পালসরি এডুকেশন অ্যাক্ট (RTE Act) চালু হয়েছে, যা ৬ থেকে ১৪ বছরের শিশুদের বিনামূল্যে এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রদান করে। এই অ্যাক্টের অধীনে, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (NCTE) ২৯ জুলাই ২০১১-এ একটি নোটিফিকেশন জারি করে TET কে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বাধ্যতামূলক করে। এটি শিক্ষকদের ন্যূনতম যোগ্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে করা হয়েছে, যাতে শিশুরা উন্নতমানের শিক্ষা পায়। কিন্তু RTE Act চালু হওয়ার আগে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের উপর এই নিয়ম প্রয়োগ করা যাবে কি না, এবং মাইনরিটি প্রতিষ্ঠানগুলিতে এটি কতটা প্রযোজ্য, এই নিয়ে লম্বা বিতর্ক চলেছে। মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে উঠে আসা অ্যাপিলগুলিতে এই প্রশ্নগুলি তোলা হয়েছে।
TET সংক্রান্ত আরো খবর জানতে নিচের ক্লিক করুন।
👇👇👇👇👇
সুপ্রিম কোর্টের Mandatory TET for In-Service Teachers 2025 রায়: শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে রাজ্যগুলোর দ্বিধা, ওডিশায় পরীক্ষা বাতিলের ঝড়
TET কে বাধ্যতামূলক করার কারণ
জাস্টিস দীপঙ্কর দত্ত এবং জাস্টিস মনমোহনের বেঞ্চ স্পষ্ট করে বলেছে যে TET শিক্ষক নিয়োগ এবং প্রমোশনের জন্য একটি ম্যান্ডেটরি যোগ্যতা। “যারা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ চান এবং যারা চাকরিরত শিক্ষক হয়ে প্রমোশন চান, তাদের TET পাস করতে হবে, অন্যথায় তাদের প্রার্থিতা বিবেচনা করা যাবে না,” বলে কোর্ট উল্লেখ করেছে। এটি RTE Act এর সেকশন ২৩-এর ব্যাখ্যা থেকে আসে, যা শিক্ষকদের ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করে। কোর্ট আরও বলেছে যে ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ শব্দটি শুধু প্রাথমিক নিয়োগের জন্য নয়, প্রমোশনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ফলে, প্রমোশন চাইলে TET পাস করতে হবে। এই নিয়ম শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত জরুরি, কারণ কোর্টের মতে, শিক্ষকের যোগ্যতা কম্প্রোমাইজ করলে শিক্ষার মান কম্প্রোমাইজ হবে, যা আর্টিকল ২১এ-র অধীনে শিশুদের অধিকারের সঙ্গে যুক্ত।
Supreme Court TET Exemption for Teachers with Less Than 5 Years Service Left
কোর্ট আর্টিকল ১৪২-এর অধীনে বাস্তবতা বিবেচনা করে কিছু ছাড় দিয়েছে। RTE Act চালু হওয়ার আগে নিয়োগপ্রাপ্ত চাকরিরত শিক্ষকদের জন্য বিশেষ নির্দেশ রয়েছে। যাদের অবসরের জন্য পাঁচ বছরের কম সময় বাকি, তাদের TET পাস করতে হবে না; তারা অবসর পর্যন্ত চাকরি চালিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু প্রমোশন চাইলে TET পাস করতে হবে। অন্যদিকে, যাদের পাঁচ বছরের বেশি সময় বাকি, তাদের দু’বছরের মধ্যে TET পাস করতে হবে। না করলে চাকরি ছেড়ে দিতে হবে বা কম্পালসরি রিটায়ারমেন্ট নিতে হবে, এবং টার্মিনাল বেনিফিটস পাবেন। এই বেনিফিটস পাওয়ার জন্য নিয়ম অনুসারে কোয়ালিফাইং সার্ভিস পূর্ণ করতে হবে। যদি ঘাটতি থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিবেচনা করবে। এই ছাড়গুলি কোর্টের মতে, বাস্তব চ্যালেঞ্জ এবং শিক্ষকদের দুর্দশা বিবেচনা করে দেওয়া হয়েছে। এই supreme court tet exemption for teachers with less than 5 years service left নিয়মটি অনেক শিক্ষকের জন্য স্বস্তির কারণ হয়েছে।
মাইনরিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির উপর প্রভাব
মাইনরিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষেত্রে কোর্ট ২০১৪ সালের প্রমাতি এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল ট্রাস্ট জাজমেন্ট নিয়ে গুরুতর সন্দেহ প্রকাশ করেছে, যা RTE Act কে মাইনরিটি স্কুলগুলি থেকে সম্পূর্ণ ছাড় দিয়েছে। কোর্ট বলেছে যে এই জাজমেন্ট পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে, কারণ এটি শিক্ষার মান এবং শিশুদের অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কোর্টের মতে, RTE Act মাইনরিটি প্রতিষ্ঠানগুলিতেও প্রয়োগ হওয়া উচিত, কারণ এটি আর্টিকল ৩০(১)-এর অধীনে মাইনরিটি অধিকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না। বরং, এটি শিক্ষার মান উন্নয়ন করে। কোর্ট একটি NCPCR স্টাডি উল্লেখ করেছে, যা দেখিয়েছে যে ২০০৬ সালের পর মাইনরিটি স্ট্যাটাসের জন্য আবেদন বেড়েছে, প্রায়ই RTE Act এর দায়িত্ব এড়ানোর জন্য। কোর্ট বলেছে যে প্রমাতি জাজমেন্ট শিক্ষার মানের মূলে আঘাত করে। তাই, এই বিষয়টি লার্জার বেঞ্চে রেফার করা হয়েছে। ততক্ষণ পর্যন্ত, মাইনরিটি স্কুলগুলিতে TET প্রয়োগ হবে না। কোর্ট বলেছে, “RTE Act এর প্রভিশনস সব স্কুলে প্রয়োগ হবে, RTE Act এর সেকশন ২(এন)-এর অধীনে সংজ্ঞায়িত, কিন্তু মাইনরিটি প্রতিষ্ঠানগুলি ছাড়া – ধর্মীয় বা ভাষাগত – যতক্ষণ না রেফারেন্স সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”
রায়ের প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশ
এই রায় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিস্তৃত প্রভাব ফেলবে। প্রথমত, এটি শিক্ষকদের যোগ্যতা নিশ্চিত করবে, যা শিশুদের শিক্ষার মান উন্নয়ন করবে। লক্ষ লক্ষ চাকরিরত শিক্ষকদের এখন TET প্রস্তুতি নিতে হবে, যা তাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। কিন্তু কোর্টের ছাড়গুলি, যেমন supreme court tet exemption for teachers with less than 5 years service left, তাদের সাহায্য করবে। দ্বিতীয়ত, মাইনরিটি প্রতিষ্ঠানগুলির উপর RTE Act এর প্রয়োগ নিয়ে নতুন বিতর্ক উঠবে। যদি লার্জার বেঞ্চ প্রমাতি জাজমেন্ট উল্টে দেয়, তাহলে মাইনরিটি স্কুলগুলিকে ২৫% দুর্বল অংশের শিশুদের ভর্তি করতে হবে, যা তাদের অধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, দেখা যাবে। কোর্ট আরও প্রশ্ন তুলেছে যে RTE Act এর সেকশন ১২(১)(সি) কে রিড ডাউন করে মাইনরিটি স্কুলে শুধুমাত্র সেই কমিউনিটির দুর্বল শিশুদের জন্য প্রয়োগ করা যায় কি না। এটি আর্টিকল ২৯(২)-এর প্রভাবও বিবেচনা করতে বলেছে।
মিডিয়া কভারেজ এবং বিশ্লেষণ
বিভিন্ন খবরের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে এই রায় লাইভল, ল ট্রেন্ড, বার অ্যান্ড বেঞ্চ সহ অনেক মিডিয়ায় আলোচিত হয়েছে। লাইভল রিপোর্ট করেছে যে কোর্ট প্রমাতি জাজমেন্ট নিয়ে “সিরিয়াস ডাউটস” প্রকাশ করেছে এবং এটিকে সিজেআই-এর কাছে রেফার করেছে। ল ট্রেন্ড বলেছে যে TET কে প্রমোশনের জন্যও ম্যান্ডেটরি করা হয়েছে এবং মাইনরিটি ইস্যু লার্জার বেঞ্চে যাবে। এছাড়া, নিউজ অ্যারিনা ইন্ডিয়া এবং দ্য উইক সহ অন্যান্য সোর্সগুলি একই তথ্য প্রকাশ করেছে। এই রায়টি ২০২৫ সালের শিক্ষা সংস্কারের একটি মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা শিক্ষকদের পেশাদারিত্ব বাড়াবে। কিন্তু এটি কিছু শিক্ষকদের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় যেখানে TET প্রস্তুতির সুযোগ কম। সরকারকে এখন এই রায় অনুসারে নিয়মাবলী সংশোধন করতে হবে এবং শিক্ষকদের সাহায্যের জন্য প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম চালু করতে হবে।
শিক্ষকদের জন্য প্রস্তুতির পরামর্শ
যদি আপনি একজন শিক্ষক হন বা শিক্ষক হতে চান, তাহলে এই রায়ের পর TET প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। প্রথমে NCTE-এর গাইডলাইনস পড়ুন এবং পূর্ববর্তী প্রশ্নপত্রগুলি প্র্যাকটিস করুন। অনলাইন কোর্স বা কোচিং সেন্টারে যোগ দিন। বিশেষ করে, Supreme court tet exemption for teachers with less than 5 years service left এর মতো ছাড়ের নিয়মগুলি ভালো করে বুঝে নিন যাতে আপনার ক্যারিয়ার প্ল্যানিং সঠিক হয়। শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার: শিক্ষার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার পথে
এই রায়টি দেখিয়েছে যে সুপ্রিম কোর্ট শিক্ষার অধিকারকে কতটা গুরুত্ব দেয়। আর্টিকল ২১এ-র অধীনে শিশুদের শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার, এবং TET এটি নিশ্চিত করার একটি হাতিয়ার। মাইনরিটি অধিকার এবং শিক্ষার মানের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা দরকার, এবং লার্জার বেঞ্চের সিদ্ধান্ত এটি নির্ধারণ করবে। সামগ্রিকভাবে, এই রায় ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং শিক্ষকদের পেশাকে আরও সম্মানজনক করে তুলবে। আমরা আশা করি যে এটি শিশুদের ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করবে।
আমার ব্যক্তিগত মতামত:-
এ বিষয়টি সামাজিক সংহতি, সমতা এবং শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে—তাই TET বাধ্যতামূলক করা উচিত বলে মনে করি, সংখ্যালঘু স্কুলেও, তবে সংবিধানের সংখ্যালঘু অধিকারের সীমারেখা যথাযথভাবে মানাও জরুরি।