Surface Tension and Viscosity: আজকের প্রতিবেদনে নবম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান বিষয় থেকে “পৃষ্ঠটান এবং সান্দ্রতা” অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর খুব সহজ ভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের পৃষ্ঠটান এবং সান্দ্রতা বিষয়গুলি বুঝতে যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেদিকে নজর রেখে প্রশ্ন এবং উত্তরগুলি আলোচনা করা হয়েছে।
পৃষ্ঠটান কাকে বলে, পৃষ্ঠটানের একক এবং মাত্রীয় সংকেত, পৃষ্ঠটান কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভরশীল, সংকট তাপমাত্রা, জলের ফোঁটার গোলাকার হওয়ার কারণ, দাড়ি কাটা ব্লেডের জলে ভাষা, সমুদ্রে তেল ফেললে সমুদ্র শান্ত হয়ে যায় কেন? কর্পূর জলের উপর নাড়াচাড়া করে কেন? সান্দ্রতা, সান্দ্র বল, অশান্ত প্রবাহ প্রান্তীয় বেগ, বৃষ্টির ফোঁটার সমবেগে পতিত হওয়ার কারণ ইত্যাদি বিষয়গুলি খুব সহজ এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করা হয়েছে আজকের প্রতিবেদনে।
এক ঝলকে:
পৃষ্ঠটান (Surface Tension) কাকে বলে?
উত্তরঃ তরলের মুক্ত পৃষ্ঠে একটি রেখা কল্পনা করলে, ওই রেখার সঙ্গে লম্বভাবে পৃষ্ঠতলের স্পর্শক বরাবর যে বল ক্রিয়া করে তাকে পৃষ্ঠটান বলে।
পৃষ্ঠটানের একক ও মাত্রীয় সংকেত লেখো।
উত্তরঃ C.G.S পদ্ধতিতে পৃষ্ঠটানের একক হল (C.G.S unit of surface tension) ডাইন/সেন্টিমিটার
S.I পদ্ধতিতে পৃষ্ঠটানের একক হল (S.I unit of surface tension) নিউটন/ মিটার
পৃষ্ঠটানের মাত্রীয় সংকেত হল: [MT-1]
পৃষ্ঠটান কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভরশীল?
উত্তরঃ পৃষ্ঠটানের উপর প্রভাব সৃষ্টিকারী বিষয়গুলি হলো:
[i] দূষণ : তরলপৃষ্ঠে কোনো অপদ্রব্য ভাসতে থাকলে ওই তরলের পৃষ্ঠটান হ্রাস পায়। যেমন, জলের উপর তেল বা চর্বিজাতীয় পদার্থ ফেলে তারা জলের পৃষ্ঠের উপর ভাসতে থাকে। এতে জলের পৃষ্ঠটান হ্রাস পায়।
[ii] দ্রবীভূত পদার্থের উপস্থিতি : তরলে অজৈব পদার্থ দ্রবীভূত থাকলে ওই তরলের পৃষ্ঠটান বৃদ্ধি পায়। কিন্তু জৈব পদার্থ দ্রবীভূত থাকলে, পৃষ্ঠটান হ্রাস পায়।
[iii] তরলের তাপমাত্রা : উষ্ণতা বাড়লে সাধারণত তরলের পৃষ্ঠটান কমে। উষ্ণতা বাড়লে তরলের অণুগুলির মধ্যে গড় দূরত্ব বাড়ে এবং এর সংসক্তি বল কমে। এর ফলেই পৃষ্ঠটান কমে।
[iv] তরল-সংলগ্ন মাধ্যমের প্রকৃতি: তরলের উপরিস্থ মাধ্যমের প্রকৃতির উপর তরলের পৃষ্ঠটান নির্ভর করে। এই মাধ্যম পরিবর্তিত হলে পৃষ্ঠটানও পরিবর্তিত হয়।
[v] তড়িতাহিতকরণ : তরল পৃষ্ঠ তড়িগ্রস্ত হলে তার পৃষ্ঠটানের মান হ্রাস পায়।
সংকট তাপমাত্রা কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বিশেষ তাপমাত্রায় তরলের পৃষ্ঠটান প্রায় থাকে না । সেই তাপমাত্রাকে ওই তরলের সংকট তাপমাত্রা বলা হয়।
জলের ফোঁটা গোলাকার হয় কেন?
উত্তরঃ কোন নির্দিষ্ট আয়তনের যেকোনো বস্তুর যেকোনো আকৃতি অপেক্ষা গোলোকাকৃতি পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল সর্বদা কম হয়।
আবার তরল পদার্থ পৃষ্ঠটানের জন্য সর্বদা তার মুক্ত পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল সবথেকে কম করতে চায়। যেহেতু জলের ফোঁটার সমগ্রতলই মুক্ত তল। তাই জলের ফোঁটার আকৃতি সর্বদা গোলাকার হয়।
দাড়ি কাটার ব্লেড জলে ভাসে কেন?
উত্তরঃ দাড়ি কাটার ব্লেডকে জলে ভাসালে, দাড়ি কাটার ব্লেডের সঙ্গে জলের স্পর্শ তলের পৃষ্ঠটানজনিত বলের লব্ধি, ব্লেডের ওজনের বিপরীত দিকে ক্রিয়া করে। যা ব্লেডের ওজনের থেকে বেশি হয়। ফলে ব্লেডটি জলে ভাসে।
জলের উপর কয়েক ফোঁটা তেল ফেললে তা জলের উপর ছড়িয়ে পড়ে কেন?
উত্তরঃ তেল অপেক্ষা জলের পৃষ্ঠটান বেশি তাই এই টানের ফলেই তেল জলের উপর ছড়িয়ে পড়ে। অন্যভাবে বলা যায় তেল ও জলের অনুগুলির মধ্যে ক্রিয়াশীল অসামঞ্জস্য বল তেলের অনুগুলির মধ্যে ক্রিয়াশীল সংসক্তি বল অপেক্ষা বেশি হয়। তাই তেল জলের উপর ছড়িয়ে পড়ে।
প্রাচীনকালে ঝড়ের সময় সমুদ্রের ঢেউ কে শান্ত করতে নাবিকরা সমুদ্রের উপর তেল ঢেলে দিত কেন?
উত্তরঃ তৈলাক্ত জল অপেক্ষা বিশুদ্ধ জলের পৃষ্ঠটান বেশি হয়। বাতাসের অভিমুখে তেল অগ্রসর হলে ঢেউয়ের সামনের দিকে পৃষ্ঠটান কম এবং পিছনের দিকে বিশুদ্ধ জলের পৃষ্ঠটান বেশি হয়। পিছনে দিকের এই পৃষ্ঠটান ঢেউ কে খুব বেশি উঁচু হতে বাধা দেয়। ফলে সমুদ্র ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে যায়।
এক টুকরো কর্পূরকে জলে ফেললে তা জলের উপর নড়াচড়া করে কেন?
উত্তরঃ কর্পূর জলে দ্রবীভূত হয়ে জলের পৃষ্ঠটান কে কমিয়ে দেয়। কর্পূরের অনিয়মিত আকারের জন্য এর বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন পরিমাণে দ্রবীভূত হয়। ফলে বিভিন্ন স্থানে পৃষ্ঠটানের হ্রাসও বিভিন্ন হয়। এর ফলে কর্পূরের টুকরোর উপর বিভিন্ন দিক থেকে অসমটান ক্রিয়া করে এবং টুকরোটি এলোমেলোভাবে নড়াচড়া করতে থাকে।
সান্দ্রতা কাকে বলে? (What is Viscosity)
উত্তরঃ যে নিজস্ব ধর্মের জন্য কোন তরল তার অভ্যন্তরস্ত বিভিন্ন স্তরগুলির আপেক্ষিক গতির বিরুদ্ধে বাধা সৃষ্টি করে তাকে ঐ কারনে সান্দ্রতা বলে।
সান্দ্র বল কাকে বলে?
কোন তরলের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে আপেক্ষিক গতি থাকলে যে অভ্যন্তরীণ বল ওই গতিকে বাধা দেয় তাকে সান্দ্র বল বলে।
সান্দ্র বল কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে?
১) তরলের প্রকৃতির উপর।
২) দুটি স্তরের স্পর্শ তলের ক্ষেত্রফলের উপর।
৩) প্রবাহের লম্ব দিকে দুরুত্বের সঙ্গে বেগ পরিবর্তনের হাড়ের ওপর।
সান্দ্রতাঙ্ক কাকে বলে? এর একক ও মাত্রীয় সংকেত লেখ।
নির্দিষ্ট উষ্ণতায় প্রবাহীর একক দূরত্বে অবস্থিত দুটি স্তরের মধ্যে একক আপেক্ষিক বেগ বজায় রাখতে প্রবাহীর প্রতি স্তরের প্রতি একক ক্ষেত্রফলে যে স্পর্শকীয় বলের প্রয়োজন হয় তাকে ওই উষ্ণতায় ওই প্রবাহীর সান্দ্রতাঙ্ক বলে। একে η (ইটা) দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
সান্দ্রতাঙ্কের একক: (C.G.S and S.I unit of viscosity)
C.G.S একক – ডাইন.সেকেন্ড.সেমি-² বা পয়েজ।
S.I একক (S.I unit of viscosity) – নিউটন.সেকেন্ড.মিটার-² বা ডেকাপয়েজ
সান্দ্রতাঙ্কের মাত্রীয় সংকেত [ML-¹T-¹]
ধারারেখ প্রবাহ কাকে বলে? বৈশিষ্ট্য লেখ।
কোন প্রবাহীর প্রবাহকালে প্রবাহীর যেকোনো নির্দিষ্ট বিন্দুতে প্রবাহীর কণার গতিবেগের মান এবং দিক সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত না হলে প্রবাহের প্রবাহকে শান্ত প্রবাহ বা ধারারেখ প্রবাহ বলে।
বৈশিষ্ট্য:-
১) ধারারেখ সরল বা বক্র রেখ হতে পারে।
২) ধারারেখ পরস্পরকে ছেদ করে না।
৩) প্রবাহনলে ধারারেখ গুলি ঘন সন্নিবেষ্ট হলে সেখানে প্রবাহীর বেগ বৃদ্ধি পায় ও রেখার ঘনত্ব কম হলে প্রবাহীর বেগ হ্রাস পায়।
৪) ধারারেখায় কোন বিন্দুতে অঙ্কিত স্পর্শক ওই বিন্দুতে প্রবাহীর কণার গতিকে দিক নির্দেশ করে।
অশান্ত প্রবাহ কাকে বলে?
যদি প্রবাহীর মধ্যে কোন নির্দিষ্ট বিন্দুতে বিভিন্ন সময়ে উপস্থিত প্রবাহীর কণাগুলির বেগ, মান ও দিক একই না থেকে সময়ের সঙ্গে এলোমেলো ভাবে পরিবর্তিত হয় তখন তাকে অশান্ত প্রবাহ বলে।
প্রান্তীয় বেগ কাকে বলে?
কোন সান্দ্র প্রবাহের মধ্য দিয়ে পতনশীল কোন বস্তু যে সর্বোচ্চ স্থির বেগ নিয়ে নিচে পড়তে থাকে তাকে বস্তুটির প্রান্তীয় বেগ বলে।
প্রান্তীয় বেগের বাস্তব উদাহরণ দাও।
প্রান্তীয় বেগের বাস্তব উদাহরণ:
১) মেঘ থেকে বৃষ্টি কণা সান্দ্র বায়ুর মধ্য দিয়ে প্রান্তীয় বেগে ভূপৃষ্ঠে পড়ে।
২) বিমান থেকে কোন ব্যক্তি প্যারাসুট নিয়ে নামার সময় সান্দ্র বায়ুর মধ্য দিয়ে প্রান্তীয় বেগে নামে।
বৃষ্টির ফোঁটা সমত্বরণে না পড়ে সমবেগে পতিত হয় কেন?
মেঘ থেকে একাধিক জলবিন্দু পরস্পর যুক্ত হয়ে একটি বড় জলবিন্দু গঠন করলে ওই জলবিন্দুর ওজন বৃদ্ধি পায়। তখন অভিকর্ষ বলের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের দিকে নামতে থাকে। অভিকর্ষ বলের প্রভাবে বৃষ্টির ফোঁটার বেগ যত বাড়ে স্টোকসের সূত্র অনুযায়ী গতির বিরুদ্ধে সান্দ্রতা জানিত বাধাও সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বেগের একটি নির্দিষ্ট মানে সান্দ্র বাধা ও প্লবতা বলের সমষ্টি, বৃষ্টির ফোঁটার ওজনের সমান হয়ে যায়। তখন বৃষ্টির ফোঁটার উপরে আর কোন বল ক্রিয়া করে না তাই বৃষ্টির ফোঁটার আর কোন ত্বরণ থাকে না। এই সময় বৃষ্টির ফোঁটা একটি সীমান্ত বেগ অর্জন করে এবং সমবেগে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়।
Can I get more examples of this ?