Albert Einstein Thoughts: আলবার্ট আইনস্টাইনের মহানুভবতা

Albert Einstein Thoughts
Albert Einstein Thoughts

Albert Einstein Thoughts: এক ছোটো মেয়ে পাটিগণিতের হোমওয়ার্কের কিছু অঙ্ক নিয়ে মুশকিলে পরেছে। কিছুতেই সব অঙ্কের সমাধান করতে পারছে না। সে শুনেছিল তার বাড়ির কাছে এক বিখ্যাত ব্যক্তি থাকেন, যিনি গণিতে খুব ভালো এবং লোক হিসাবেও দারুণ। মেয়েটি হোমওয়ার্ক নিয়ে সোজা তাঁর কাছে গেল। হোমওয়ার্ক যাতে সহজে শেষ করতে পারে সে ব্যাপারে মেয়েটি তাঁর সাহায্য চাইল। বুড়ো ভদ্রলোক ধৈর্য ধরে খুব যত্ন করে সব কিছু ভালোভাবে বুঝিয়ে দিলেন। মেয়েটির হোমওয়ার্ক শেষ করতে কোনো অসুবিধে হল না। খুব খুশি হয়ে সে বাড়ি ফিরে এল। বাড়ি ফিরে সে কীভাবে অঙ্কগুলির সমাধান করতে পেরেছে, তা তার মাকে বলল। এও বলল যে, তার স্কুলের মাস্টারমশায় যেভাবে বুঝিয়েছিলেন, তার চেয়ে অনেক সহজে বুড়ো ভদ্রলোক সব কিছু সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। ফলে অঙ্কগুলি করে ফেলতে তার কোনো অসুবিধে হয়নি।

Whatsapp গ্রুপে যুক্ত হন
Telegram গ্রুপে যুক্ত হন

তখন মেয়েটির মা বুঝতে পারলেন যে এই ভদ্রলোক বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন ছাড়া অন্য কেউ নয়। মেয়ের কাছে সব শুনে তিনি সোজা চললেন আইনস্টাইনের কাছে ক্ষমা চাইতে। কারণ, তিনি ভাবলেন— তাঁর মেয়ে আইনস্টাইনকে বিরক্ত করে তাঁর মূল্যবান সময় অপচয় করেছে। আইনস্টাইন কিন্তু ভদ্রমহিলাকে স্বাগত জানিয়ে বললেন মার্জনা চাওয়ার কোনো দরকার নেই। তিনি এও বললেন, ‘আমার সঙ্গে আলোচনায় সে যতটা উপকৃত হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি আমি শিখেছি।’ এমনই ছিল আইনস্টাইনের উদারতা ও মহানুভবতা।

আলবার্ট আইনস্টাইন এর জীবনের কয়েকটি মজার ঘটনা

তিনি যে শুধু অনন্য সাধারণ বিজ্ঞানী ছিলেন, তা নয়; তাঁর ব্যক্তিমানসও নানা অসাধারণ মানবিক গুণের সমাহারে সম্পৃক্ত ছিল। তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন কাহিনি এ কথাকে সহজে প্রমাণ করবে। এখানে সে রকম দু-একটি ঘটনার কথা বলা যাক।

  1. একবার বেলজিয়ামের রানি আইনস্টাইনকে তাঁর প্রাসাদে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আইনস্টাইন আমন্ত্রণ গ্রহণ করে ট্রেনে চাপলেন। তাঁকে নিয়ে যাবার জন্য রানি স্টেশনে নামী অফিসারদের পাঠালেন। আইনস্টাইন ভাবতে পারেননি, গাড়ি নিয়ে অফিসাররা তাঁর জন্য স্টেশনে অপেক্ষা করবেন। ট্রেন থেকে নেমে এক হাতে সুটকেশ এবং অন্য হাতে বেহালা নিয়ে পায়ে হেঁটে তিনি সোজা প্রাসাদের দিকে এগিয়ে চললেন। এ দিকে আইনস্টাইনকে স্টেশনে খুঁজে না পেয়ে অফিসাররা প্রাসাদে ফিরে এলেন। কিছুক্ষণ পরে ধূসর চুলের এক ভদ্রলোক পায়ে হেঁটে প্রাসাদে হাজির। তাঁকে দেখতে পেয়ে উষ্ণ স্বাগত জানিয়ে রানি জিজ্ঞেস করলেন, ‘Herr Doktor, আপনার জন্য পাঠানো গাড়ি আপনি কেন ব্যবহার করলেন না?’ মৃদু হেসে আইনস্টাইন উত্তর দিলেন, ‘মহাশয়া, পায়ে হেঁটে আসায় এক মনোরম যাত্রার অভিজ্ঞতা হল।’
  2. একবার আপেক্ষিকতার তত্ত্ব কী, তা বোঝাবার জন্য আইনস্টাইনকে বলা হলে তিনি বললেন, ‘যখন কোনো এক লোক খুব সুন্দর এক মেয়ের কাছে বসে, তখন মেয়েটির মিষ্টি সৌন্দর্যের এক ঘন্টার সান্নিধ্য তার কাছে এক মিনিট সময়ের মতো মনে হয়; কিন্তু তাকে যদি এক মিনিট ধরে খুব গরম আঁচের পাশে বসানো হয়, তখন সেই এক মিনিটকে তার কাছে এক ঘন্টা সময়ের মতো মনে হয়। এই হল আপেক্ষিকতা।’
  3. যখন 1919 সালের 29 মে তারিখের সূর্যগ্রহণের তোলা ছবিগুলি তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বকে (General Theory of Realtivity) সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করল, তখন তিনি ছবিগুলির প্রতি মিটি মিটি করে তাকিয়ে চাপা হাসি হেসে বললেন, ‘এখন আমার আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রমাণ হওয়ায় জার্মানি দাবি করবে আমি একজন জার্মান, আর ফ্রান্স ঘোষণা করবে আমি একজন বিশ্বের নাগরিক। কিন্তু যদি আমার তত্ত্ব ভুল বলে প্রমাণিত হত, তবে ফ্রান্স বলত আমি জার্মান আর জার্মান বলত আমি ইহুদি।’
  4. একবার প্রাগের এক জায়গায় বক্তৃতা দেবার পর বক্তৃতা শুনতে আসা বিশেষভাবে আমন্ত্রিত কিছু ব্যক্তির জন্য আইনস্টাইনকে বিশেষ কিছু বলার জন্য অনুরোধ করা হল। তখন তিনি উপস্থিত অল্পসংখ্যক শ্রোতাদের বললেন, ‘আমার মনে হয়— আমি যদি বক্তৃতার বদলে বেহালা বাজাই তাতে আপনার বেশি আনন্দ পাবেন।’ এই কটি কথা বলে আইনস্টাইন বেহালা বের করে ‘মোজার্ট সোনাটা’ (Mozart Sonatas) বাজালেন। তাতে সেই উঁচু মানের বোদ্ধা শ্রোতারা বেশ মুগ্ধ ও দারুণ তৃপ্ত হলেন।

মাত্র এই কয়েকটি ঘটনার মধ্য দিয়ে আমরা সংবেদনশীলতা, উদারতা, হাস্যপ্রিয়তা প্রভৃতি নানা মানবিক গুণের সমাহারে গড়ে ওঠা আইনস্টাইনের ব্যক্তিত্বের নানা দিক উপলব্ধি করতে পারলাম। তিনি যে অনন্য প্রতিভার অধিকারী ছিলেন তা তো সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন এবং নানা ভাবে তা সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিতও। 2004 সালে 10 জুন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ইউনেস্কো দ্বারা 2005 সালকে আন্তর্জাতিক পদার্থবিদ্যা বর্ষ হিসাবে ঘোষণাকে অনুমোদন করার মাধ্যমে তা আবার স্বীকৃত হল। উল্লেখ্য, 2005 সালকে আন্তর্জাতিক পদার্থবর্ষ বলে ঘোষণা করার কয়েকটি কারণের মধ্যে প্রধান কারণটি হল – 1905 সালের আইনস্টাইনের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলির শতবর্ষ উদযাপন।

এর মাধ্যমে এই আবিষ্কারগুলি যে আধুনিক পদার্থবিদ্যার ভিত গড়ে তুলেছে এবং বিজ্ঞানে এক বিপ্লব সাধন করেছে তাকে স্মরণ করা, স্বীকার করা ও সশ্রদ্ধ সম্মান জানানো। সত্যি 1905 সালে প্রকাশিত আইনস্টাইনের যুগান্তকারী পাঁচটি গবেষণাপত্র দেশ (space), সময় (time) এবং পরমাণু (atom) সম্বন্ধে প্রচলিত ধারণাগুলিকে বৈপ্লবিকভাবে রূপান্তরিত করে। বাস্তবিকই, ‘Einstein’s insight helped to transform everyday life through laser, semiconductor, nuclear magnetic resonance and other application of quantum and atom and also helped change how we view the universe and our place in it.’

শৈশবকাল ও শিক্ষাজীবন – Albert Einstein Childhood and Education Life

কিন্তু আইনস্টাইনের বাল্যজীবন ও শিক্ষার্থীজীবনে এমন কোনো নিদর্শন চোখে পড়ে না, যাতে ভবিষ্যতে তাঁর অসাধারণ বিজ্ঞানী হবার কথা বোঝা যায়। বরং অন্য উদাহরণ পাওয়া গেছে। সংক্ষেপে ‘ই টি এইচ’ (ETH) নামে পরিচিত ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে ভর্তি হবার জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষায় তিনি কৃতকার্য হতে পারেন নি। এখন দেখা যাক জন্ম থেকে মহাপ্রয়াণ পর্যন্ত তাঁর জীবনের ঘটনাস্রোত কোন্ ধারায় কীভাবে প্রবাহিত হয়েছে।

আইনস্টাইনের পুরো নাম আলবার্ট আইনস্টাইন। আলবার্ট আইনস্টাইনের জন্ম 1879 খ্রিস্টাব্দের 14 মার্চ জার্মানির উইরট্রেমবার্গের উলম শহরে এক মধ্যবিত্ত ইহুদি পরিবারে। বাবার নাম হারমেন আইনস্টাইন, আর মার নাম পলিন কচ। তিন বছর বয়স পর্যন্ত আইনস্টাইন ঠিকমতো কথা বলতে না পারায় তাঁকে নিয়ে বাবা-মা খুব চিন্তিত ছিলেন। ছোটো বয়সে তিনি বাড়ি তৈরি করার খেলায় মেতে থাকতে চাইতেন। সৈন্য সাজা একদম পছন্দ করতেন না। ঐ বয়সেই যুদ্ধের বাজনা ও সৈন্যদের কুচকাওয়াজ তিনি ভীষণভাবে অপছন্দ করতেন।

1880 খ্রিস্টাব্দে আইনস্টাইন পরিবার উলম থেকে মিউনিখে চলে আসেন। মোটামুটিভাবে বলা যায়, 1886 খ্রিস্টাব্দে আলবার্টের বিদ্যালয়জীবন শুরু হয়। ছোটো বয়সে তিনি পড়াশুনা করতে একদম চাইতেন না। পরবর্তীকালে বলা তাঁর নিজের কথা থেকে জানা যায়— তাঁর জীবনে প্রথম আশ্চর্যজনক ঘটনা হল পাঁচ বছর বয়সে বাবার কাছ থেকে পকেট কম্পাস পাওয়া। কম্পাস পেয়ে আলবার্টের মুগ্ধ বিস্ময়ের শেষ নেই। তিনি ছয় বছর বয়স থেকে তেরো বছর পর্যন্ত বেহালা বাজানো শিখতে থাকেন। বাড়িতে তিনি ধর্মীয় পাঠের শিক্ষাও নেন।

 কর্মজীবন – Albert Einstein Work Life

1888 খ্রিস্টাব্দে আলবার্ট ‘লুইপোল্ড জিমনাসিয়াম’ নামক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিন্তু জার্মানিতে তৎকালীন প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা রূঢ় ও পুঁথিসর্বস্ব হওয়ায় তা আলবার্টের কাছে একঘেয়ে এবং আতঙ্কসৃষ্টিকারী বলে মনে হত। ফলে এ বয়সে তাঁর প্রস্ফুটনের কোনো বিশেষত্ব চোখে পড়েনি। বরং প্রথাগত শিক্ষার প্রতি তাঁর অনাগ্রহ দেখা যায়। সেই সময় তাঁর কাকা জ্যাকব আইনস্টাইন আলবার্টের মধ্যে গণিতের প্রতি আগ্রহকে উদ্দীপ্ত করেন এবং মামা সিজার কচ বিজ্ঞানে তাঁর কৌতূহলকে জাগরূক করেন। বারো বছর বয়সের মধ্যে তিনি ‘বিশ্বরহস্য’ উন্মোচনে আত্মনিয়োগ করেন। এই সময় তিনি ‘হোলি জিওট্রে বুক’ নামক বই হাতে পেয়ে আশ্চর্যান্বিত ও চমৎকৃত হন।

1894 সালে আইনস্টাইনের পরিবার ইতালির মিলানে চলে গেলেও আলবার্ট মিউনিখে থেকে যান। পরের বছর ইতিহাস, ভূগোল এবং ভাষা বিষয়গুলিতে কম নম্বর পাবার জন্য ডিপ্লোমা ছাড়াই তাঁকে বিদ্যালয় ছাড়তে হয়। তিনি পরিবারের কাছে মিলানে চলে যান। জুরিখের ‘ই টি এইচ’-এ ভর্তি হবার জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষা দেন। কিন্তু কৃতকার্য হতে পারলেন না। প্রায় ছয় মাস ধরে এদিক-ওদিক ঘুরে আরাউতে এক সুইস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিদ্যালয়টি তাঁর কাছে উৎসাহজনক লেগেছিল। সেখান থেকে তিনি ডিপ্লোমা লাভ করেন। এই ডিপ্লোমা তাঁকে ‘ই টি এইচ’-এ ভর্তির জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত করল। তিনি 1896 সালে ‘ই টি এইচ’-এ ভর্তি হলেন। এখানেও তিনি প্রথাগত শিক্ষাপদ্ধতিতে কোনো উৎসাহ পেতেন না, যদিও তাঁর তখনকার শিক্ষকদের মধ্যে একজন হলেন বিশিষ্ট গণিতজ্ঞ হারম্যান মিনকোস্কি (1864-1990)। শিক্ষার জন্য আইনস্টাইন নিজস্ব পদ্ধতি অনুসরণ করতেন। তিনি গ্যালিলিও, নিউটন, কিরচ্চোফ, হার্জ, ম্যাক্সওয়েল প্রভৃতি বিজ্ঞানীর এবং আর্নস্ট ম্যাকে’র মতো দার্শনিকের আসল (original) লেখা গভীর মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করতেন।

যাই হোক, ‘ই টি এইচ’-এ ভর্তি হবার চার বছর পর 1900 সালে আইনস্টাইন সেখান থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এই সময় তিনি তাঁর প্রথম গবেষণাপত্র ‘এন্নালেন ডার পিজিক’ (Annalen der Physik) নামক বিখ্যাত জার্নালে পাঠান।

স্নাতক হবার পর আইনস্টাইন কাজের সন্ধান করতে থাকেন। কাজ পাবার জন্য জার্মান নাগরিকত্বের চেয়ে সুইস নাগরিকত্ব বেশি কার্যকর বিবেচিত হত বলে সুইস নাগরিকত্ব পাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি আগেই 1896 খ্রিস্টাব্দে জার্মান নাগরিকত্ব ছেড়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে কোনো দেশের নাগরিকত্ব ছাড়া কয়েক বছর কাটাতে হয়। 1901 সালে তিনি সুইস নাগরিকত্ব লাভ করেন। 1902 সালে আলবার্ট আইনস্টাইন বার্নে অবস্থিত সুইস পেটেন্ট অফিসে ‘তৃতীয় শ্রেণি কারিগরী কুশলী’ (Technical expert third class) হিসাবে নিযুক্ত হন। তবে স্নাতক হবার পর এ চাকরি পাবার আগে অস্থায়ীভাবে তিনি গণিতের শিক্ষক হিসাবে কিছুদিন কাজ করেন।

যদিও পেটেন্ট অফিসে প্রাথমিকভাবে অস্থায়ীপদে আইনস্টাইন নিযুক্ত হয়েছিলেন, পরে 1904 সালে তাঁকে স্থায়ী পদ দেওয়া হয়। 1906 সালে তাঁকে ‘দ্বিতীয় শ্রেণি কারিগরী কুশলী’ পদে উন্নীত করা হয়।

Exploring the Inspiring World of APJ Abdul Kalam : Rare Interviews, Books, and 7 Quotes

যখন তিনি বার্নের পেটেন্ট অফিসে কাজ করছেন, তখন তিনি অবসর সময়ের সদ্ব্যবহার করে তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যায় অসাধারণ কিছু প্রবন্ধ রচনা করেন। কিন্তু তখন তাঁর কাছে বিজ্ঞানের তেমন কোনো গ্রন্থ ছিল না বা তেমন কোনো সহকর্মী বা সহযোগীর সাহায্যে পাবার সুযোগ ছিল না যাতে তিনি সমৃদ্ধ হতে পারেন বা আনুকূল্য পেতে পারেন। তবে এই অফিসে তিনি বেশ খুশি ছিলেন। কারণ, অফিসের সারাদিনের কাজ দু-তিন ঘন্টায় শেষ করে বাকি সময় তিনি অন্য কাজে ব্যয়িত করতে পারতেন। গবেষণার কাজে আত্মনিয়োগ করার পর্যাপ্ত অবসর পেতেন।

বিখ্যাত গবেষণা পত্র সমূহ-Albert Einstein Thoughts

1905 সালের এপ্রিলে ‘A new determination of molecular dimension’ শীর্ষক গবেষণামূলক প্রবন্ধ ‘এন্নালেন ডার পিজিক’-এ প্রকাশিত হল। উল্লেখ্য, এই থিসিসের জন্য জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি প্রদান করে। এই বছরে এই বিখ্যাত জার্নালে তাঁর আরো চারটি অত্যন্ত সৃজনশীল, মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। মোট এই পাঁচটি গবেষণাপত্র শুধুমাত্র বৈপ্লবিক ছিল না, বিজ্ঞান জগতে সাড়া ফেলে দেয়। গবেষণাপত্রগুলি হল-

i) ‘On a heuristic viewpoint concerning the production and transformation of light’. আলোর কোয়াটাম তত্ত্ব নিয়ে লেখা এই প্রবন্ধটি 1905 সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত হয়।

ii) ‘On motion of small particles suspendended in liquid at rest required by molecular kinetic theory of heat’. ব্রাউনীয় গতির তত্ত্বগত ব্যাখ্যা প্রদানকারী প্রবন্ধটি 1905 সালের মে মাসে প্রকাশিত হয়।

iii) ‘On electrodynamics of moving bodies’. এই গবেষণাপত্রটি হল বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব (Special Theory of Relativity) নিয়ে আইনস্টাইনের লেখা প্রথম মুদ্রিত প্রবন্ধ যার মূল নিহিত ছিল 16 বছর বয়সে তাঁর লেখা এক প্রবন্ধের মধ্যে।

iv) ‘Does inertia of a body depend on its energy content’. গাণিতিক টীকা সহকারে লেখা এই প্রবন্ধটি বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্বের উপর লেখা। এতে ছিল ‘E = mc²” বিখ্যাত সূত্রটি। প্রবন্ধটি 1905 সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়।

1905 সালে আইনস্টাইনের এইসব যুগান্তকারী গবেষণাপত্রগুলির প্রকাশ কেবলমাত্র 1905 সালকে ‘Einstein’s miracle year’ হিসাবে আখ্যায়িত করার পথ প্রশস্ত করে নি, ইউরোপের বিখ্যাত পদার্থবিদদের মধ্যে একজন হিসাবে তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করে। ফলে পেটেন্ট অফিস ছেড়ে অধ্যাপনার কাজে ফেরার সুযোগ তাঁর সামনে এসে যায়।

সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ

1909 সালে আইনস্টাইন জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপকের পদ লাভ করেন। এটি হল তাঁর পদার্থবিদ্যা বিষয়ে প্রথম সর্বক্ষণের কাজ। এর আগে 1908 সালে জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি (Honoris Causa) প্রদান করে। পরবর্তীকালে বহু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে সাম্মানিক এই ডিগ্রি দেওয়া হয়। 1911 সালে তিনি প্রাগের কার্ল ফারদিনান্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণ অধ্যাপকের পদে যোগদান করেন।

General theory of relativity-Albert Einstein Thoughts

এই কাজের মধ্যে আইনস্টাইনের অধ্যাপনা ও গবেষণা সমান গতিতে এগিয়ে চলছিল। তাঁর নানা গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র প্রকাশ হতে থাকে। 1912 সালে তিনি মাধ্যাকর্ষণের উপর নূতনস্তরের গবেষণা শুরু করেন। এর নাম দিলেন সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব (General theory of relativity)। তিনি এই সালেই প্রাগ থেকে জুরিখে চলে আসেন ই টি এইচে অধ্যাপকের পদ পেয়ে।

1914 সালে আইনস্টাইন প্রুশিয়ান আকাদেমি অফ সায়েন্সে যোগ দিতে বার্লিনে চলে আসেন। ফলে তিনি পূর্ণ সময়ের জন্য গবেষণা করার সুযোগ পেলেন; যদিও তাঁকে মাঝে মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিতে হত। কারণ, এই সময়ে তিনি বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদও কার্যকর রেখেছিলেন।

1914 সালের 28 জুলাই শুরু হল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধ আইনস্টাইনের শুধু অপছন্দের বিষয় নয়, যুদ্ধকে তিনি ঘৃণা করেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ায় তিনি ভীষণ মানসিক অশান্তি অনুভব করতে থাকেন। জার্মান আগ্রাসন তাঁর তীব্র সমালোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়াল।

এক দশকের চিন্তা এবং নানা ভাবনাকে সফল করার প্রয়াস নিয়ে তিনি অবশেষে 1914 সালে সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বের পূর্ণরূপ প্রদান করেন। দেশ ও সময় সম্বন্ধে পুরানো ধ্যান-ধারণাকে পাল্টিয়ে নূতন ধারণার কথা বললেন তিনি। এ সম্বন্ধে তাঁর গবেষণাপত্র (‘The foundation of general theory of relativity’) ‘এন্নালেন ডার পিজিক’-এ 1916 সালে প্রকাশিত হল।

আইনস্টাইন এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও গবেষণা-Albert Einstein Thoughts

এই সময়ে আইনস্টাইন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তির দিকে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন, অন্যদিকে সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বের প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ণ সূর্যগ্রহণের জন্য প্রতীক্ষা করছেন। যুদ্ধের বিপক্ষে এবং শান্তির পক্ষে তাঁর আচরণ ও মনোভাব চিরকালই সোচ্চার ও সক্রিয় ছিল। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটছিল এ সময়েও। উল্লেখ্য, আইনস্টাইনের যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের (pacifism) পিছনে বিখ্যাত শান্তিবাদী ফরাসী লেখক ও চিন্তাবিদ রোমা রোলার আদর্শ ও প্রভাব কাজ করেছে। যুদ্ধ চলার সময়ে সুইজারল্যান্ডে আইনস্টাইনের সাথে রোমা রোলার দেখা হয়। সেই সময়কার আইনস্টাইনের মধ্য তিরিশের চেহারার সুন্দর বর্ণনা রোমা রোলার ডায়েরি থেকে পাওয়া যায় : ‘Einstein was still a young man, not very tall, with a wide and long face, and a great mane of crispy, frizzled and black hair, sprinkled with gray rising high from a lofty brow. His nose was fleshy and prominent, his mouth was small, his cheeks plumb, his chin rounded. He wears a small cropped moustache.’

যখন 1919 সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের দ্বারা গৃহীত পূর্ণ সূর্যগ্রহণের চিত্র আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বকে যথার্থ বলে প্রতিষ্ঠিত করল এবং আলোর বক্রতা সম্বন্ধে তাঁর ভবিষ্যৎবাণীকে দশমিক বিন্দুর নির্ভুলতায় সত্য হিসাবে নির্দেশ করল, তখন সমস্ত সংবাদমাধ্যম তাঁকে সম্মান জানাল। জয়ধ্বনিতে তাঁর নাম চারিদিকে মুখরিত হতে থাকল। সকলের কাছে আইনস্টাইন হয়ে উঠলেন পরম প্রিয়। জনপ্রিয়তার সীমা ছাড়িয়ে গেল; তিনি প্রতিষ্ঠিত হলেন ‘A symbol of science and of thought at its highest.’

কোনো সম্মান বা স্বীকৃতির প্রতি আইনস্টাইনের কখনো কোনো আকাঙ্খা বা আসক্তি না থাকলেও নানা প্রান্ত থেকে তাঁর কাছে বিভিন্ন সম্মান ও স্বীকৃতি আসতে থাকে। 1921 সালে তিনি যখন প্রথমবারের মতো আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেন, তখন তাঁকে বার্নাড মেডেল (Bernad medal) দেওয়া হয়। সেখানে আপেক্ষিকতার উপর কয়েকটি আমন্ত্রিত বক্তৃতা দেবার সম্মানও লাভ করেন। 1921 সালের পদার্থবিদ্যার উপর নোবেল প্রাইজ তাঁকে প্রদান করা হয়।

নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি

উল্লেখ্য, আইনস্টাইনকে তাঁর আপেক্ষিকতার তত্ত্বের জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়নি; তাঁকে 1905 সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত আলোক-তড়িৎ সম্বন্ধীয় প্রভাব (on photoeletric effect) সম্পর্কিত গবেষণাপত্রের এবং তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যার (theoretic physics) জন্য নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়া অন্যান্য সম্মান ও স্বীকৃতির মধ্যে যেগুলির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় সেগুলি হল – রয়েল সোসাইটির কোপলে মেডেল (1925) এবং রয়েল এস্ট্রনমিক্যাল সোসাইটির স্বর্ণপদক (1926)। নানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রির কথা তো আগেই বলা হয়েছে। –

1921 সালের পর আইনস্টাইনকে ব্যাপকভাবে নানা জায়গায় ভ্রমণ করতে হয় এবং আমন্ত্রিত বক্তৃতা দিতে হয়। প্রশংসা, সম্মান ও স্বীকৃতির বর্ষণে তিনি প্লাবিত হচ্ছিলেন। 1922 এবং 1923 সালেও অনেক আন্তর্জাতিক ভ্রমণ তাঁকে করতে হয়। তরঙ্গের সঙ্গে বস্তুর সহযোগ সংক্রান্ত তাঁর আবিষ্কারের পর 1924 সালেও নানা জায়গা যেতে হয়। কিন্তু এভাবে বেশি ঘোরাফেরা এবং অতিরিক্ত পরিশ্রমের মাশুল তাঁকে দিতে হল। 1928 সালে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে সারা বছর ধরে হাল্কা কাজ করে এবং বিশ্রাম নিয়ে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থতা ফিরে পান।

1929 সালে তিনি Unifield field theory ঘোষণা করেন। কিন্তু পরীক্ষার সঙ্গে গাণিতিক তুলনা করতে সক্ষম হচ্ছিলেন না। এ ব্যাপারে কার্যকর তত্ত্বের জন্য তাঁর সংগ্রাম শুরু হল মাত্র।

যাই হোক, 1930 সালের মধ্যে তিনি আরো কিছু আন্তর্জাতিক ভ্রমণ করেন। 1932 সালে তিনি তৃতীয়বারের জন্য আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেন। 1933 সালে হিটলার যখন জার্মানির চ্যান্সেলার হন, তখন আইনস্টাইন জার্মানি ত্যাগ করেন। তিনি অক্সফোর্ড, গ্লাসগো, ব্রাসেলস প্রভৃতি নানা জায়গা পরিদর্শন করে বক্তৃতা দেন। সেপ্টেম্বরে তিনি চিরকালের মতো ইউরোপ মহাদেশ ত্যাগ করে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। তিনি নিউ জার্সির প্রিন্সটনে ‘ইন্সটিটিউট অফ এডভান্সড় স্টাডি’তে যোগ দেন। 1940 সালে তিনি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও সুইস নাগরিকত্ব অক্ষুণ্ন রাখেন।

আইনস্টাইন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও শান্তি-Albert Einstein Thoughts

আইনস্টাইন চিরদিন যুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিলেন। তিনি 1939 সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এফ ডি রুজভেল্টকে এক ঐতিহাসিক চিঠি লেখেন। জার্মানি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারে এ সম্ভাবনার কথা বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি শান্তির পক্ষে জনমত গড়ে তোলার ব্যাপারে সক্রিয় ছিলেন। 1955 সালে 11 এপ্রিল শেষ চিঠি স্বাক্ষর করেন। ব্রার্ট্রান্ড রাসেলকে লেখা এই চিঠিতে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণের উদ্দেশ্যে সব দেশের প্রতি আহ্বান জানাতে একটি ইস্তাহারে তাঁর স্বাক্ষরের বিষয়ে সম্মতি জানান। বিশেষত উল্লেখ্য যে আইনস্টাইনের উদ্ভাবিত ফর্মুলা দিয়েই পারমাণবিক বোমা তৈরি করা হয়েছিল এবং জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকি শহরে তা নিক্ষেপ করার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।

আলবার্ট আইনস্টাইনের মহাপ্রয়াণ

সময় এগিয়ে চলে। আইনস্টাইনের বয়স বাড়ে কিন্তু কাজ থামে না। তিনি 1949 সালে অসুস্থ হয়ে পড়েন। যদিও হাসপাতালে অবস্থান তাঁকে সুস্থতা এনে দেয়, তবুও তিনি যেন শেষযাত্রার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। এর প্রমাণ পাওয়া যায় 1950 সালে উইল তৈরির মাধ্যমে। 1952 সালে যখন ইসরাইলের প্রথম প্রেসিডেন্টের মৃত্যু হয়, তখন তাঁকে প্রেসিডেন্ট হবার প্রস্তাব দেওয়া হলে তিনি রাজনীতি থেকে দূরে থাকার জন্য তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি প্রকৃতিকে আরো বেশি করে বোঝার চেষ্টায় সত্যিকারের একীভূত ক্ষেত্র তত্ত্বের অনুসন্ধানে তাঁর দিনগুলিকে ভরিয়ে রাখছিলেন। অবশেষে 1955 সালের 18 এপ্রিল প্রিন্সটনে তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটে।

আইনস্টাইন, সত্যেন্দ্রনাথ বসু গান্ধীজী এবং রবীন্দ্রনাথ

আইনস্টাইনের সঙ্গে কিন্তু ভারতের এক নিবিড় যোগাযোগ ছিল। ভারত এবং গান্ধীজি সম্বন্ধে তাঁর অপরিসীম শ্রদ্ধা ছিল। 1924 সালে বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর দ্বারা প্লাঙ্কের বিকিরণ সূত্রের নূতনভাবে উপস্থাপনাকে আইনস্টাইন বিজ্ঞানে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে আখ্যা দেন। পরে সৃষ্টি হল ‘বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান’ এবং ‘বোস-আইনস্টাইন ঘনীভবন’। 1930 সালে বার্লিনে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর এক ঐতিহাসিক সাক্ষাৎকার ঘটে। দুই মহামনীষীর তখনকার কথোপকথন এক মহামূল্যবান সম্পদ হিসাবে আজ বিবেচিত।

albert einstein and rabindranath tagore
Albert Einstein and Rabindranath Tagore

1949 সালে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে মিলিত হওয়া এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। বলা যায় ভারত আত্মার সঙ্গে আইনস্টাইনের এক আত্মিক যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল।

আইনস্টাইনের জীবনের নানা দিক, নানা অধ্যায়, নানা ধারণা, নানা চিন্তা, নানা যোগাযোগ প্রভৃতি গভীরভাবে অধ্যয়ন ও আলোচনা করে আমরা সবশেষে অকপটে স্বীকার করতে পারি –তিনি কেবল অসাধারণ বিজ্ঞানী ছিলেন না, তিনি ছিলেন শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, স্বাধীনতা, সামাজিক মূল্য, শান্তি, ধর্ম, ঈশ্বর ও বিজ্ঞান বিষয়ে দারুণ উদার, মহৎ ও সুউচ্চ মনের অধিকারী সংস্কারমুক্ত সত্যিকারের বিশ্বনাগরিক, যাঁর প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমরা নিজেদের ধন্য মনে করি।

Leave a Comment