জল দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায়: Ways to control water pollution

Ways to control water pollution
Ways to control water pollution

আজকের প্রতিবেদনে আমরা জল দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায় (Ways to control water pollution) নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। জল দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায় গুলি সম্পর্কে জানতে গেলে, আমাদেরকে সবার আগে জানতে হবে, জল দূষণ ব্যাপারটা আসলে কি। আসলে জলের সঙ্গে কোন অবাঞ্ছিত পদার্থ মিশে যাওয়ার ফলে যদি জলের ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন হয়, এবং সেখান থেকে জলজ উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষের ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায় বা ক্ষতি হয়, তাহলে জলের এইরকম খারাপ অবস্থা কি জল দূষণ (water pollution) বলা হয়।

Whatsapp গ্রুপে যুক্ত হন
Telegram গ্রুপে যুক্ত হন

সাধারণত কি কি কারনে জল দূষিত হয় সেগুলি যদি আমরা বুঝতে পারি এবং সেই কারণগুলি কি আমরা যদি ঘটতে না দিই তাহলেই জল দূষিত হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। এখন জেনে নেওয়া যাক জল কি কি কারণে দূষিত হয় এবং জল দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায় গুলি সম্পর্কে।

এক ঝলকে:

জল দূষণের কারণগুলি এবং জল দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায়:

ঘর-গৃহস্থালির বর্জ্য এবং আবর্জনা কর্তৃক জল দূষণ:

রান্নাঘর, বাথরুম, হোটেল-রেস্তোরা থেকে নির্গত জল উচ্ছিষ্ট খাবার, মলমুত্র, ডিটারজেন্ট, সাবান প্রভৃতি আবর্জনা বা বর্জ্য পদার্থ জল দূষণ করে থাকে। এছাড়া মাটির উপর দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ঘর-গৃহস্থালির আবর্জনা থেকে তৈরি হওয়া বিষাক্ত রাসায়নিক, রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু জলাশয় কে দূষিত করে। এখান থেকে মাটির নিচের ভৌম জল এবং ছোট ছোট জলাধার গুলির জল দূষিত হয়। ফলে ওইসব জলে অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। জলে রং পরিবর্তন হয়ে যায়, দুর্গন্ধ তৈরি হয় এমনকি জলের সাধও বদলে যায়।

বায়ু দূষণ প্রজেক্ট pdf download: Air Pollution Project pdf

নিয়ন্ত্রণের উপায় (Ways to control water pollution) :

রান্নাঘর, বাথরুম, হোটেল রেস্তোরা থেকে নির্গত জলকে সরাসরি আমরা যদি জলাশয় বা নদীর জলে না ফেলে আমরা সেই জলকে নতুনভাবে শোধন করে তারপর জলাশয় গিয়ে ফেলি তাহলে এই সংক্রান্ত দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

জল দূষণে শিল্পজাত আবর্জনা বা বর্জ্য পদার্থ:

খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, নরম পানীয়, বস্ত্র, বয়ন ,চর্ম, রাসায়নিক উৎপাদন, সার উৎপাদন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, প্রভৃতির নানা জাতের শিল্প জলকে দূষণ করে থাকে। কল কারখানার ধরন অনুসারে শিল্পযাত আবর্জনা গুলির রাসায়নিক ও ভৌত চরিত্র বদলে যায়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তামা, শিসা, ক্রোমিয়াম ক্যাডমিয়াম প্রভৃতি ধাতু, এছাড়াও জৈব এবং অজৈব বিভিন্ন সালফার ঘটিত যৌগ, কল কারখানা থেকে নিঃসৃত হয়ে জলকে দূষিত করে তোলে।

এই সংক্রান্ত জল দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায় (Ways to control water pollution) :

বিভিন্ন শিল্প থেকে নিঃসৃত যে দূষিত রাসায়নিক পদার্থ সমৃদ্ধ জল, তা সরাসরি মাটিতে বা জলাশয়ে না ফেলে সেই জলকে নতুন ভাবে রিফাইন করে অর্থাৎ দূষিত পদার্থ গুলিকে তার থেকে আলাদা করে তারপরেই জলকে জলাশয়ে ফেলতে হবে।

জল দূষণে কৃষিজাত আবর্জনার ভূমিকা:

অতিরিক্ত সার, কীটনাশক, আগাছা নাশক ইত্যাদি বিভিন্ন পদার্থ থেকে উৎপন্ন নাইট্রেট, ফসফেট, পটাস প্রভৃতি রাসায়নিক পদার্থ জলকে দূষিত করে তোলে। বস্তুত খামার জাতীয় বর্জ্য থেকে নাইট্রেট, অ্যামোনিয়া, সালফেট, ক্লোরাইড ও সার থেকে ফসফেট, জৈব সার থেকে ব্যাকটেরিয়া, গবাদি পশু থেকে নাইট্রোজেন, মলমূত্র, কীটনাশক থেকে জৈব ক্লোরিন ইত্যাদি পাশাপাশি জলাশযয়ে চলে যায় এবং সেখানে জলাশয়কে দূষণ করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে।

এই জল দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায় (Ways to control water pollution) :

রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করতে হবে এবং বিভিন্ন রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার না করে জৈব কীটনাশক ব্যবহারের প্রতি চাষীদের কে আগ্রহী হতে হবে তাহলে আমরা এই জাতীয় জল দূষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি।

জল দূষণের ডিটারজেন্ট এর ভূমিকা:

এখন সাবানের বিকল্প হিসাবে detergent অত্যন্ত জনপ্রিয় ABS নামে একটি রাসায়নিক পদার্থ যা ডিটারজেন্ট এর অন্যতম উপাদান এই রাসায়নিক উপাদানটি জলকে অত্যন্ত দূষিত করে।

প্রতিকার (Ways to control water pollution) :

এই জাতীয় ডিটারজেন্টের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

জল দূষণের সমুদ্রে ভাসমান তেলের ভূমিকা:

খনিজ তেল এবং তেলের উপজাত দ্রব্য গুলি সমুদ্রের জলে বিভিন্ন কারণে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যেমন ডুবোজাহাজ, জাহাজে-জাহাজে সংঘর্ষ, ট্যাঙ্কার থেকে ছিদ্রপথে তেল পড়া বা জাহাজে আগুন লাগা ইত্যাদি দুর্ঘটনা থেকে মাঝে মাঝে সমুদ্রে তেল ছড়িয়ে পড়ে। এই জাতীয় ঘটনাগুলির ফলশ্রুতি হিসাবে সমুদ্রের জলে ভাসমান তেলের আস্তরণ তৈরি হয়। ফলে ওই এলাকার সমুদ্রের জলের অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় এবং সেখানকার জলজ জীবেরা চরম ক্ষতির শিকার হয়।

প্রতিকার (Ways to control water pollution) :

সমুদ্রের জলে যাতে কোনভাবে তেল ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে নজর রাখতে হবে। সমুদ্রের জাহাজ চলাচলের আইন আরো কঠোর করতে হবে। কোনভাবে কোন জাহাজের থেকে ছিদ্র পথে যাতে তেল না পড়ে সেদিকে নজর রাখতে হবে, সমুদ্রের মধ্যে কোনরকম যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতে হবে।

জল দূষণের তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভূমিকা:

তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে নির্গত গরম জল নদী, হ্রদ, খাল-বিল যেখানেই পড়ুক না কেন সেখানকার জলাশয় এর উষ্ণতাকে অত্যন্ত বৃদ্ধি করে। ফলে জলের ভৌত রাসায়নিক এবং জৈব পরিবর্তন ঘটে যায়।

প্রতিকার:

এই ধরনের তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে নির্গত গরম জলকে আগে শোধন করে তারপর ঠান্ডা করে তারপরে নদী, খাল-বিলেতে ফেলতে হবে।

জল দূষণের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উৎসগুলি থেকে জল দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায়:

যে যে জায়গা থেকে জল দূষিত হচ্ছে তাদের যখন সরাসরি চিহ্নিত করা যায় বা কিভাবে জল দূষিত হচ্ছে তা বোঝা যায় জল দূষণের সেই উৎস গুলিকে প্রত্যক্ষ উৎস বলা হয় যেমন কলকারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, নর্দমা ইত্যাদি।
জল দূষণের এইসব উৎস গুলিকে যন্ত্রপাতির সাহায্যে বা আইন করে খুব সহজেই এই ধরনের জল দূষণকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর এই ধরনের জল দূষণকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দরকার হলে আইন প্রণয়ন করতে হবে।
আবার কোন কোন জায়গা থেকে জল দূষিত হচ্ছে তাদের যখন সরাসরি চিহ্নিত করা যায় না বা কোন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেও তাদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে সেই উৎস গুলিকে অপ্রত্যক্ষ উৎস বলা হয়। যেমন চাষের জমি, বনভূমি, রাস্তাঘাটের নোংরা জল ইত্যাদি। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে কোন কারখানা থেকে বিষাক্ত জল বেরিয়ে জল কে দূষিত করছে তখন সহজেই বোঝা যায় ফলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সেই দূষণকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ।

কিন্তু কারো চাষের জমিতে ঠিকমত সার ব্যবহার করা হয়নি বলে জল দূষিত হচ্ছে কিনা তা বোঝা খুবই কঠিন এমনি বর্ষাকালে রাস্তাঘাট, ডাস্টবিন ধোয়া জল সব জায়গা থেকে গড়িয়ে নদীতে পুকুরে পড়ছে। সুতরাং ঠিক কোন জায়গা থেকে জল দূষিত হচ্ছে তা বোঝার সব মোটেই সহজ কাজ নয় তাই এদের অপ্রত্যক্ষ উৎস বলে। তাই এই ধরনের জল দূষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের সকল মানুষকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে এবং সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।

উপসংহার:

সবশেষে বলবো যে মানুষের জীবনে নিরন্তর সংগ্রামের এ সংগ্রাম কখনো কখনো শুভবুদ্ধির সঙ্গে অশুভবুদ্ধির। মানুষের সাধনা মানুষের মঙ্গল ইচ্ছা কখনো ব্যর্থ হয় না। একদিন না একদিন মানুষেরই জয় হয়। প্রতিকারের সন্ধান পাওয়া যায়। সমগ্র পৃথিবী জুড়ে যে তীব্র জল সংকটের ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে চলেছে, বা কিছু কিছু জায়গায় ইতিমধ্যে হয়েছে, জীবন যুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রামী মানুষ নিজস্ব সচেতনতা বৃদ্ধি করে সেই সংকটকে মোকাবেলা করে বেঁচে থাকবেই। সংকটমোচনের সদা সচেষ্ট মানুষ। এই উদ্দেশ্য যেন পরিস্থিতি থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে পারবে। অবশ্যই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও তারা পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখার চিরন্তন প্রয়াস চালিয়ে যাবে। এভাবেই মানুষের সভ্যতা এগিয়ে যাবে।

FAQs

জল দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায় কি ?

সাধারণত কি কি কারনে জল দূষিত হয় সেগুলি যদি আমরা বুঝতে পারি এবং সেই কারণগুলি কি আমরা যদি ঘটতে না দিই তাহলেই জল দূষিত হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে।

Leave a Comment