Chandrayaan 3 latest news: পথে পরপর দুই ক্রেটার! বাধা পেরিয়ে সুস্থ ‘প্রজ্ঞান’। ১০ সেন্টিমিটার একটি গর্ত পেরিয়ে গিয়ে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজ়েশনের (ISRO) বিজ্ঞানীদের নিশ্চিন্ত করল প্রজ্ঞান।
চলার পথে ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উঁচু কোনও পাথর পড়লে বেসামাল হয়ে ‘প্রজ্ঞান’ যাতে উল্টে না পড়ে, তার জন্য তাকে বিস্তর প্র্যাকটিস করানো হয়েছিল উৎক্ষেপণের আগে। একটা নয়, পরপর দুটো গাঁট অতিক্রম করে ‘প্রজ্ঞান’ আপাতত ‘সুস্থ’ আছে। শেষ পর্যন্ত ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজ়েশনের (ISRO) বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত।
Chandrayaan 3 Latest News, ‘প্রজ্ঞান’ এর পথ ঘুরিয়ে দিলো ইসরো
চলার পথে 2য় ক্রেটারের আয়তন বেশ বড়- ব্যাস প্রায় চার মিটার। ‘প্রজ্ঞান’ থেকে মাত্র তিন মিটার দূরের এই ক্রেটারকে দেখতে পেয়েই তার পথ ঘুরিয়ে দিয়েছে ইসরো। চাঁদের বুকে ‘প্রজ্ঞান’-এর চলার গতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ এক সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এমনই সংযত গতিতে যতটা সম্ভব নিখুঁত ডেটা সংগ্রহ করছে সে।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ২৩ অগস্ট ল্যান্ড করার পর তার হাতে সময় রয়েছে পৃথিবীর হিসেবে মাত্র ১৪ দিন। তবে তার চার দিন আগেই, অর্থাৎ ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ‘প্রজ্ঞান’ ও ল্যান্ডার ‘বিক্রম’কে দিয়ে সব কাজ শেষ করিয়ে ফেলতে চাইছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। কারণটা স্পষ্ট- চাঁদের উপর ‘বেলা গড়িয়ে আসার’ ঝুঁকি কোনও ভাবেই নিতে চাইছেন না ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানীরা।
‘বিক্রম’ এবং ‘প্রজ্ঞান’-এর নিয়ন্ত্রণ, সোলার প্যানেল
চাঁদে ল্যান্ডিংয়ের পর ‘বিক্রম’ এবং ‘প্রজ্ঞান’-এর নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের কার্যকারিতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ইসরোর এক বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, ল্যান্ডিংয়ের পর ‘বিক্রম’ ও ‘প্রজ্ঞান’-এর সক্রিয়তা পুরোপুরি সূর্যের উপর নির্ভরশীল। সূর্যের আলো থেকে শক্তি উৎপাদনের জন্য বিক্রমের শরীরের তিন দিকে সোলার প্যানেল বসানো রয়েছে। তবে ‘প্রজ্ঞান’-এ মাত্র একটি এমন প্যানেল রয়েছে। এ কারণেই তাকে নড়াচড়া করানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হচ্ছে।
ইসরোর বিজ্ঞানীদের সব সময়ে হিসেব কষতে হচ্ছে ‘প্রজ্ঞান’কে কোন দিকে ঘোরালে তার সোলার প্যানেল সবচেয়ে বেশি সূর্যালোক পেতে পারে। ইসরোর ওই বিজ্ঞানী বলছেন, ‘বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখেই এমন করতে হয়েছে। ইচ্ছা করলে প্রজ্ঞানের শরীরে নিউক্লিয়ার এনার্জি তৈরি করার মতো ব্যবস্থা করা যেত। কিন্তু তা হলে তার ওজন মাত্র ২৬ কেজি রাখা যেত না। রোভারের ওজন বাড়লে ল্যান্ডারের ওজনও বাড়ত। সে ক্ষেত্রে উৎক্ষেপণের খরচ অনেক বেড়ে যেত।’
উৎক্ষেপণের খরচ কমানোর চক্করেই ‘প্রজ্ঞান’কে যতটা সম্ভব হালকা রাখার পরিকল্পনা করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তাই তার শরীরে মাত্র দু’টি পে-লোড বা গবেষণার সামগ্রী বসানো হয়েছে। বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়ার আগেই দরকারি কাজগুলি যে কোনও ভাবে মিটিয়ে নিতে। যদিও তা সহজ নয়।
চন্দ্রযান-৩ অভিযানের প্রজেক্ট ডিরেক্টর পি ভিরামুথুভেল বলছেন, ‘প্রজ্ঞানের গতিবিধির অনেকটাই এখন বেঙ্গালুরু থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। প্রজ্ঞান প্রথমে তার সামনের অঞ্চল স্ক্যান করে পাওয়া তথ্য বিক্রমের মাধ্যমে আমাদের জানাচ্ছে। এরপর সে কী পদক্ষেপ নেবে সেটা আমরা নির্দেশ দিচ্ছি।’ ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, প্রতিবার ‘প্রজ্ঞান’-এর দেওয়া তথ্য ডাউনলোড করে সেই অনুযায়ী পাল্টা নির্দেশ পাঠাতে অন্তত পাঁচ ঘণ্টা লাগছে।
ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস সায়েন্সের (আইসিএসপি) পক্ষ থেকে মহাকাশ বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী বলছেন, ‘অ্যাপোলো মিশনে ওঁরা চাঁদের মাটিতে এক মিটার গভীর গর্ত খুঁড়ে ডেটা নিয়েছিলেন। চন্দ্রযানের ক্ষেত্রে মাত্র ৮ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত খোঁড়া হয়েছে। এত অল্প গভীরতায় তাপমাত্রার ওঠা-পড়া খুব স্বাভাবিক। তবে একই সঙ্গে এটা আশাপ্রদও বটে। যদি চন্দ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি অল্প গভীরতায় জল থাকে, তা হলে তাপমাত্রা আরও বাড়লে ওই জল বাষ্প আকারে বেরিয়ে আসতে পারে। সেটা তখন সহজেই ধরা পড়ে যাবে।’
২০ সেপ্টেম্বর নতুন করে সূর্যের আলো পেয়ে ‘প্রজ্ঞান’-এর ফের সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে?
১৪ দিনের জন্য ‘প্রজ্ঞান’কে সক্রিয় রাখার ভাবনা থাকলেও, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি এলাকায় সূর্যের আলো সরে গেলে তাপমাত্রার দ্রুত অবনতির জন্য কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ বিজ্ঞানীরা। সেই কারণেই ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রজ্ঞানের সব কাজ গুটিয়ে আনার পরিকল্পনা। তবে ২০ সেপ্টেম্বর নতুন করে সূর্যের আলো পেয়ে ‘প্রজ্ঞান’-এর ফের সক্রিয় হয়ে ওঠার সম্ভাবনা একেবারে বাতিল করে দিচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা। ISRO – Indian Space Research Organisation -এর সৌজন্যে সংগৃহীত তথ্য ও ছবি।
চাঁদের দক্ষিণ মেরু পৃষ্ঠে তাপমাত্রা ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস?
চাঁদের দক্ষিণ মেরু পৃষ্ঠে তাপমাত্রার প্রথম রিপোর্ট দেখে দেখে তাজ্জব বনে গেলেন বিজ্ঞানীরা। পৃষ্ঠের কাছাকাছি তাপমাত্রা ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস! পৃষ্ঠের কাছাকাছি তাপমাত্রা ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হবে বলে আশা করা হয়নি। রবিবার চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরু পৃষ্ঠের তাপমাত্রার মাপজোক করে পাঠিয়েছে ইসরোতে। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃষ্ঠের কাছাকাছি ৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রত্যাশিত ছিল না। চন্দ্রযান-৩ যেখানে অবতরণ করেছে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে অনুমান করা হয়েছিল সেখানকার তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ৩০ ডিগ্রির সেন্টিগ্রেডের মধ্যে ঘোরাফেরা করবে।
ইসরোর বৈজ্ঞানিক বিএইচ দারুকেশা সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, “আমাদের আশা ছিল তাপমাত্রা ২০-ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ৩০-ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কাছাকাছি হতে পারে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তাপমাত্রা ৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এটি আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে আশ্চর্যজনকভাবে বেশি।”
পৃথিবীতে তাপমাত্রার এতটা ফারাক খুবই কম ক্ষেত্রেই হয়। চন্দ্রযান-৩-এর প্রথম আবিষ্কারই খুব আকর্ষণীয় ও আশ্চর্যজনক। ওই বিজ্ঞানীর কথায়, “যখন আমরা পৃথিবীর অভ্যন্তরে দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার গভীরে যাই, তখন তাপমাত্রার ফারাক হয় দুই থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানেই চাঁদের ক্ষেত্রে সেই ফারাক দাঁড়িয়েছে ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এই বিষয়টি যথষ্ট আকর্ষণীয়।” চন্দ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রার তারতম্য দক্ষিণ মেরুর চারপাশে- ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ইসরোর চন্দ্রযান ৩-এর সৌজন্যে এই প্রথমবার এই তথ্য বিজ্ঞানীদের কাছে এসেছে।
ইসরোর গ্রাফে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন গভীরতায় চন্দ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা পরীক্ষা করেছে ‘বিক্রম’ পেলোড। চার্ট থেকে বোঝা যাচ্ছে চাঁদের মাটিতে তাপমাত্রা প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। ২০ সেন্টিমিটার উচ্চতায় ৬০-ডিগ্রী পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় তাপমাত্রা। মাটির নীচে -৮০ সেন্টিমিটার গভীরতায় তাপমাত্রা মাইনাস ১০-ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে আসে।
চাঁদে বর্তমানে চন্দ্রদিন চলছে। তাই এই তাপমাত্রার পার্থক্য পরিমাপ করা সম্ভব হচ্ছে। তবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে তুলনামূলক কম সূর্যের আলো পড়ে। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ স্পেস ফিজ়িক্সের (আইআইএসপি) অধিকর্তা এবং মহাকাশবিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, “চাঁদের যে অঞ্চলে ‘বিক্রম’ অবতরণ করেছে, সেই ‘শিবশক্তি’ পয়েন্টকে ল্যান্ডিংয়ের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল প্রধানত জলের উপস্থিতি অনুসন্ধানের জন্য। ভূপৃষ্ঠের মাত্র আট সেন্টিমিটার নীচে মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হওয়ার মানে, চাঁদের পৃষ্ঠের অল্প নীচে তরল অবস্থায় জল পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। বিশুদ্ধ জল হলে সেটা ওই তাপমাত্রায় জমে যেত।
ইসরো ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, রোভার ‘প্রজ্ঞান’-এর আলফা পার্টিকল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার (এপিএক্সএস) এবং লেজার ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপ (লিবস) যন্ত্র দু’টির কাজই হল চাঁদের পৃষ্ঠের রাসায়নিক গঠন এবং চাঁদের মাটিতে ম্যাগনেশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, সিলিকন, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, টিটেনিয়াম এবং লোহার উপস্থিতি ও পরিমাণ সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধান করা।