WB Primary Bengali Essays for Class 3 : পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পরিষদের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাংলা রচনা: গরু, বাঘ, ময়ূর, প্রিয় ঋতু, গরমকাল ও শীতকাল। সহজ ও পরীক্ষার উপযোগী রচনা।

WB Primary Bengali Essays for Class 3
গরু
গোরু নিরীহ, উপকারী, গৃহপালিত প্রাণী। গোরুর চারটি পা, দুটি শিং, দুটি চোখ, দুটি কান ও একটি লেজ থাকে। গোরুর প্রধান খাদ্য ঘাস হলেও এরা খড়, বিচালি, চারাগাছ, ফলের বা সবজির খোসাও খায়। গোরুর দুধ সব বয়সের মানুষের জন্যই একটি সুষম পুষ্টিকর খাদ্য। গোরুর দুধ থেকে দই, ছানা, ঘি, ক্ষীর, মাখন ইত্যাদি তৈরি হয়। আবার ছানা থেকে নানারকম মিষ্টি তৈরি হয়। পুরুষ গোরুকে বলদ ও গোরুর বাচ্চাকে বাছুর বলা হয়। বলদ জমিতে লাঙল টেনে চাষিকে সাহায্য করে। গোরুর শিং থেকে চিরুনি, ছুরির বাঁট ইত্যাদি শৌখিন দ্রব্য, চামড়া থেকে ব্যাগ, জুতো ইত্যাদি এবং হাড় থেকে চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সার তৈরি হয়। এভাবে গোরু আমাদের নানারকম উপকার করে থাকে। হিন্দুধর্মে গোরুকে দেবীরূপে পুজো করা হয়।
বাঘ
ভারতের জাতীয় পশু বাঘ। বাঘ অরণ্যবাসী, হিংস্র, মাংসাশী প্রাণী। বাঘ বনবিড়াল প্রজাতির সবচেয়ে বড়ো প্রাণী। বাঘকে দেখতে অনেকটা বিড়ালের মতো, তবে বড়ো আকারের। তাই বিড়ালকে ‘বাঘের মাসি’ বলা হয়। বাঘ তার অনেকগুলি ধারালো দাঁত আর শক্তিশালী থাবার সাহায্যে বন্যপশু শিকার করে খেয়ে বেঁচে থাকে। বাঘ সাধারণত হলুদ রঙের ও সাদা রঙের হয়। বাংলার সুন্দরবনের বাঘের গায়ে হলুদ রঙের উপর কালো কালো ডোরা কাটা দাগ থাকে। এদের নাম রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। বাঘ ভয়ংকর প্রাণী হলেও বাঘের উপকারিতা অনেক। বাঘের ছাল আদিবাসী মানুষেরা পোশাক হিসেবে ব্যবহার করে। বাঘের নখ ও চামড়া দিয়ে বহু শৌখিন ও মূল্যবান জিনিস তৈরি হয়। অনেক মূল্যবান ওষুধ তৈরি হয় বাঘের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে। বাঘ বর্তমানে সংখ্যায় কমে যাওয়ায় এরা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বাঘের প্রজাতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তাই বাঘ শিকার বন্ধের আইন করা হয়েছে এবং বহু অভয়ারণ্য তৈরি করে বাঘেদের নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
ময়ূর
ভারতের জাতীয় পাখি ময়ূর। ময়ূর বনবাসী পাখি। এশিয়া মহাদেশে সাধারণত নীল ও সবুজ রঙের ময়ূর দেখতে পাওয়া যায়। ময়ূরের মাথায় ঝুঁটি, গলায় সবজেটে নীলের উপর সোনালি আভা, ঘননীল ও সবুজ রঙেরমিশেলে অপরূপ সুন্দর পেখম থাকে। ময়ূর অন্যতম সুন্দর পাখি। বর্ষাকালে ময়ূর যখন পেখম তুলে নাচে তখন দেখতে খুব সুন্দর লাগে। তবে স্ত্রী ময়ূর বা ময়ূরী এতটা সুন্দরী নয়, তাদের ঝুঁটি বা পেখম থাকে না। ময়ূরের ডাক কর্কশ হয়, একে কেকা বলে। ময়ূর তীক্ষ্ণ ঠোঁটের সাহায্যে সাপ, ব্যাং, গিরগিটি-সহ নানা কীটপতঙ্গ যেমন খায় তেমনি ঘাস, পাতা, ফুলের পাপড়িও খায়। ময়ূরের সুন্দর পাখনা থেকে বাহারি হাতপাখা, ঠাকুরের মুকুট তৈরি হয়। ময়ূরের পালক ঘরে রাখলে টিকটিকি আসে না। ময়ূরের পালকের সাদা লম্বা অংশ ছিপের ফাতনা হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।
তোমার প্রিয় ঋতু
বাংলার ঋতুচক্রে ছয়টি ঋতু চক্রাকারে আবর্তিত হয়-গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। এর মধ্যে আমার সবচেয়ে পছন্দ বসন্তকাল। শীতের শেষে আসে বসন্ত। শীতের শেষে বসন্ত এলে ন্যাড়া গাছে নতুন কচিপাতা গজায়। গাছে গাছে ফুল ভরে যায়। প্রকৃতি যেন শীতের কুয়াশার আমেজ কাটিয়ে নতুন সাজে সেজে ওঠে। আম গাছে মুকুল আসে। ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি ফুলের মধু খেতে আসে। ধীরগতিতে দখিনা বাতাস বয়। প্রকৃতি অপরূপ রূপ ধারণ করে বলে বসন্ত ঋতুকে ঋতুরাজ বলা হয়। গাছে গাছে কোকিল ডাকে। শিমুল, পলাশ ফুলের রং প্রকৃতিকে রাঙিয়ে দেয়। বসন্তকালেই আমার প্রিয় দোল উৎসব হয়। নানা রঙের আবির, পিচকারি নিয়ে রঙের খেলায় আশপাশের সবাই মেতে ওঠে। আকাশে-বাতাসে খুশির রং লাগে। বসন্তের এই সৌন্দর্য দেখার জন্য আমি সারাবছর অপেক্ষা করে থাকি।
গরমকাল
ঋতুচক্রের প্রথম ঋতু গ্রীষ্মকাল। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ এই দুই মাস নিয়ে হয় গ্রীষ্মকাল। এই সময় তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে। বৃষ্টির অভাবে মাটি শুকিয়ে যায়, প্রচন্ড জলের কষ্ট দেখা দেয়। গাছপালা জলের অভাবে শুকিয়ে যেতে থাকে। দুপুরের দিকে প্রচণ্ড গরম বাতাস ‘লু’ বয়। পথঘাট একেবারে জনশূন্য হয়ে যায়। এই সময় আম, জাম, কাঁঠাল ইত্যাদি মিষ্টি ও রসালো ফল পাওয়া যায়। গন্ধরাজ, বেল, জুঁই ইত্যাদি সুগন্ধি ফুলের গন্ধে চারদিক ম-ম করে। পটল, ঝিঙে, ঢ্যাঁড়শ প্রভৃতি ফসল প্রচুর পরিমাণে ফলে। এই তীব্র গরমের মধ্যেও মাঝে মাঝে বিকেলের দিকে আকাশ কালো করে কালবৈশাখী ঝড় আসে। দমকা হাওয়া ও বৃষ্টির ফোঁটায় রুক্ষ প্রকৃতি যেন নতুন প্রাণ ফিরে পায়। তপ্ত পৃথিবী কিছুক্ষণের জন্য শান্তি খুঁজে পায়।
শরৎ কাল
বাংলা ঋতুচক্রের তৃতীয় ঋতু শরৎকাল। ভাদ্র ও আশ্বিন এই দুই মাস নিয়ে হয় শরৎকাল। বর্ষার আকাশের কালো মেঘের ঘনঘটা দূর করে উজ্জ্বল নীল আকাশ নিয়ে হাজির হয় ঋতুর রানি শরৎ। এই সময় আকাশ পরিষ্কার থাকে, মাঝে মাঝে সাদা পেঁজা তুলোর মতো মেঘ দেখা যায়। মাঠে-ঘাটে কাশফুল ফোটে। শিউলি ফুলের গন্ধ জানান দেয় দেবী দুর্গার আগমন বার্তা। সরোবরে শালুক, পদ্ম ফুটে থাকে। সব মিলিয়ে শরৎকালে প্রকৃতি অপরূপ রূপ ধারণ করে। এই ঋতুতেই অনুষ্ঠিত হয় বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গাপুজো। নতুন জামা পরে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ভিড় করে ছেলে থেকে বুড়ো সকলেই। একদিকে প্রকৃতির রূপ, অন্যদিকে আনন্দ উৎসবের সমারোহ সবমিলিয়ে শরৎ সত্যিই ঋতুর রানির মর্যাদা লাভ করে।
শীতকাল
ছয় ঋতুর মধ্যে পঞ্চম ঋতু হল শীতকাল। সাধারণত পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস নিয়ে শীতকাল। কিন্তু হেমন্তের শেষ – দিক অর্থাৎ অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই হালকা হালকা ঠান্ডা পড়তে শুরু করে এবং প্রায় ফাল্গুন মাস অবধি এর রেশ থাকে। শীতকালের সকালে ও সন্ধ্যায় শিশির পড়ে। এই সময়ে দিন ছোটো ও রাত বড়ো হয়। শীতকালে শীতের হাত থেকে বাঁচতে আমরা সোয়েটার, চাদর, শাল, টুপি, মাফলার, লেপ, কম্বল ইত্যাদি ব্যবহার করি। শীতকালে ফুলকপি, গাজর, বীট, পালং শাক, কড়াইশুঁটি, কমলালেবু, কুল, নতুন আলু, শিম, বেগুন, মুলো, রাঙা আলু ইত্যাদি নানারকম সবজি ও ফল পাওয়া যায়। গম চাষের উপযুক্ত সময় শীতকাল। এই সময়ে নলেন গুড়, পাটালি, খেজুরের রস পাওয়া যায়। নবান্ন, পৌষ-পার্বণ, বড়োদিন, ইংরেজি নববর্ষ, বইমেলা, সরস্বতী পুজো ইত্যাদি উৎসব ও অনুষ্ঠান মিলিয়ে শীতকাল খুব আনন্দে কাটে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
আমাদের চিরপরিচিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আসল নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মা ভগবতী দেবী। তিনি খুব গরীব পরিবারের সন্তান ছিলেন। ছোটোবেলায় পায়ে হেঁটে বাবার সঙ্গে কলকাতায় আসেন এবং কলকাতার স্কুলেই ভরতি হন। সংস্কৃত কলেজের সেরা ছাত্র ও অগাধ পান্ডিত্যের কারণে তিনি ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি পান। এরপর তিনি প্রথমে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে ও পরে সংস্কৃত কলেজে শিক্ষকতা করেন। তিনি শিশুকাল থেকেই মাতৃভক্ত ছিলেন। মায়ের মতোই তিনি দুঃখীদের দুঃখ দেখতে পারতেন না। তাই আর্ত, দরিদ্রদের সেবা করতে পিছপা হতেন না। সেইকারণে তিনি ‘দয়ার সাগর’ নামে পরিচিত হন। বাঙালির মেয়েদের বাল্যবিবাহ ও বাল্যবৈধব্য দেখে তিনি খুব দুঃখিত হন এবং ‘বিধবাবিবাহ আইন’ চালু করেন। মেয়েদের শিক্ষার কথা ভেবে তিনি বেথুন সাহেবের সাহায্যে কলকাতায় প্রথম মেয়েদের স্কুল স্থাপন করেন। বাংলা ভাষার সংস্কারেও তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল। তাঁর লেখা বিখ্যাত গ্রন্থগুলি হল ‘কথামালা’, ‘বোধোদয়’, ‘বর্ণপরিচয়’, ‘সীতার বনবাস’ ইত্যাদি। ১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই বাংলার এই বিখ্যাত মনীষীর মৃত্যু হয়।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু দেশপ্রেমিক হিসেবে ভারতবাসীর মনে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি ওড়িশা রাজ্যের কটকে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা জানকীনাথ বসু ও মা প্রভাবতী দেবী। তিনি ছোটোবেলা থেকেই পড়াশোনায় আগ্রহী ছিলেন। কটকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করে প্রথমে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ও পরে স্কটিশ চার্চ কলেজে ভরতি হন। স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকেই বিএ পাস করেন তিনি। ইংল্যান্ডে গিয়ে আইসিএস পরীক্ষায় পাস করেন, তখন ভারতবর্ষ ছিল পরাধীন। সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন প্রকৃত দেশপ্রেমিক। তাই ইংরেজ সরকারের অনেক টাকা মাইনের চাকরি না নিয়ে তিনি দেশের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতিও ছিলেন। দেশের কাজ করার জন্য তাঁকে অনেকবার জেলে যেতে হয় এবং শেষে গৃহবন্দি থাকেন। গৃহবন্দি থাকার সময়েই ১৯৪১ সালে তিনি ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে প্রথমে জার্মানি ও তারপর জাপানে চলে যান। ১৯৪৩ সালে সিঙ্গাপুরে রাসবিহারী বসুর তৈরি করা আজাদ হিন্দ ফৌজের দায়িত্ব নেন। তারাই তাঁকে ‘নেতাজি’ উপাধি দেয়। এই ফৌজ নিয়েই তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট এক বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যুর কথা জানা যায়। যদিও এ কথার সত্যতা এখনও প্রমাণিত হয়নি। স্বাধীন ভারতবাসী এই মহান দেশপ্রেমিককে কখনও ভুলবে না।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সমগ্র বিশ্ববাসী তথা ভারতবাসীর কাছে বাঙালির গর্ব বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে অর্থাৎ ১২৬৮ সালের ২৫ বৈশাখ কলকাতার বিখ্যাত জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ৪ বাবার নাম মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মায়ের নাম সারদা দেবী। তিনি মাত্র পাঁচ বছর বয়সে স্কুলে ভরতি হন। কিন্তু কোনোদিনই তিনি স্কুলে যেতে ভালোবাসতেন না। তাই বাড়িতেই গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করেন। বিশ্ববিখ্যাত এই কবি শিশুকাল থেকে সাহিত্যরচনার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই তিনি বিখ্যাত ছিলেন। তিনি সারাজীবনে অনেক কবিতা, গান, উপন্যাস, গল্প, নাটক, প্রবন্ধ লিখেছেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থগুলি হল ‘সহজ পাঠ’, ‘গীতাঞ্জলী’, ‘গোরা’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘গল্পগুচ্ছ’, ‘শিশু ভোলানাথ’, ‘লিপিকা’, ‘জীবনস্মৃতি’, ‘ছেলেবেলা’ ইত্যাদি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলী’ কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ ‘Song – offerings’-এর জন্য নোবেল পুরস্কার পান। ১৯৪১ সালের ৭আগস্ট অর্থাৎ ১৩৪৮ সালের ২২ শ্রাবণ তাঁর মৃত্যু হয়।
স্বামী বিবেকানন্দ
বাংলার অন্যতম মনীষী স্বামী বিবেকানন্দ শ্রীরামকৃষ্ণদেবের প্রধান শিষ্য ছিলেন। তিনি ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি কলকাতার সিমলা পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। দীক্ষাগ্রহণের আগে তাঁর নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত, আর ডাকনাম ছিল বিলে। তাঁর বাবার নাম বিশ্বনাথ দত্ত ও মায়ের নাম ভুবনেশ্বরী দেবী। ছোটোবেলায় বিবেকানন্দ খুব ডানপিটে, চঞ্চল প্রকৃতির ছিলেন। তিনি নিজের চোখে কিছু না দেখে বিশ্বাস করতেন না। তবে ডানপিটে হলেও তিনি পড়াশোনায় আগ্রহী ছিলেন। তিনি কলকাতার মেট্রোপলিটান স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করেন। তারপর কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষায় পাস করেন। এরপর কিছুদিন শিক্ষকতা করতেন। পরে তিনি দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সংস্পর্শে আসেন ও তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তিনি সারাভারত ঘুরে দেশবাসীর দুঃখ দূর করার চেষ্টা করেন। মুচি, মেথর, অস্পৃশ্য, চণ্ডাল সকলকেই তিনি নিজের ভাই বলে মনে করতেন। তাঁর মতে, মানুষের সেবা অর্থাৎ জীবসেবাই শিবসেবা বা ঈশ্বরসেবা। ১৮৯৩ সালে তিনি আমেরিকার শিকাগোয় এক বিশ্ববিখ্যাত বক্তৃতা দেন। বেলুড়ে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ’ বর্তমানে বেলুড়মঠ নামে পরিচিত। তিনি অনেক বিখ্যাত সাহিত্যও রচনা করেছেন। ‘বর্তমান ভারত’, ‘ভাববার কথা’, ‘পরিব্রাজক’, ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য’ ইত্যাদি তাঁর লেখা বিখ্যাত গ্রন্থ। ১৯০২ সালের ৪ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়।
স্বাধীনতা দিবস
‘স্বাধীনতা’ শব্দটির অর্থ-স্ব-অধীনতা অর্থাৎ নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী বাঁচা। পৃথিবীর সকল মানুষ, প্রত্যেকটি জাতিই চায় নিজের মতো করে বাঁচতে। আমাদের দেশ ভারতবর্ষ প্রায় দুশো বছর ইংরেজদের কাছে পরাধীন থাকার পর ১৯৪৭সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা অর্জন করে। তাই প্রতিবছর ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। প্রতিবছর এই দিন দিল্লির লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ও জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। সেইসঙ্গে কুচকাওয়াজের আয়োজনও করা হয়। এই দিন সকালে বিদ্যালয়গুলিতে প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষিকা পতাকা তোলেন এবং দেশাত্মবোধক আবৃত্তি, নাচ, গান করতে হয় না, তাই দুর্গাপুজো আমার প্রিয় উৎসব। ষষ্ঠী থেকে নতুন নতুন জামা পরে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যাই। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঢাক বাজে, মাইকে পাড়ার পুজোর মন্ত্র শোনা যায়। পথঘাট আলোয় ঝলমল করে। ঠাকুর দেখতে গিয়ে রোজ রোজ নানারকম পছন্দসই খাবার খাই। সবমিলিয়ে দুর্গাপুজো আমার কাছে একরাশ খুশির আমেজ নিয়ে আসে। দশমীতে দেবীর বিসর্জন হয়ে গেলেই আবার অপেক্ষা করি পরের বছর পুজো আসার।
আমাদের জাতীয় পতাকা
কোনো দেশের স্বাধীনতার অন্যতম প্রতীক তার জাতীয় পতাকা। আমাদের দেশ ভারতবর্ষ প্রায় দুশো বছর ইংরেজ শাসকের অধীনে থাকার পর ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা লাভ করে। তখন থেকে ভারতের জাতীয় পতাকা হিসেবে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকাটি ব্যবহৃত হচ্ছে। এই পতাকাটি জাতীয় কংগ্রেসের ‘স্বরাজ’ পতাকার আদলে তৈরি। এটির আকৃতি ও নকশা তৈরি করেন অন্যতম স্বাধীনতা সংগ্রামী পিংগুলি ভেঙ্কাইয়া। এটি ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই গণপরিষদে স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা হিসেবে গৃহীত হয়। পতাকাটির প্রস্থ দৈর্ঘ্যের দেড়গুণ। চওড়াভাবে সমান তিনটি ভাগে তিনটি রং দিয়ে জাতীয় পতাকাটি তৈরি। রংগুলির প্রত্যেকটি নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতীক। সবচেয়ে উপরে থাকে গেরুয়া রং, যা সাহস ও ত্যাগের প্রতীক। মাঝখানে থাকে সাদা রং, এটি শান্তি, সততা ও বিশুদ্ধতার প্রতীক। নীচে থাকে সবুজ রং, যা বিশ্বাস, শৌর্য ও সজীবতার প্রতীক। পতাকার সাদা রঙের মাঝামাঝি ২৪টি স্পোক যুক্ত একটি নীল বর্ণের চাকা দেখা যায়। এর নাম অশোকচক্র। এটি ন্যায়, বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও প্রগতির প্রতীক। সুপ্রিমকোর্ট, হাইকোর্ট, লালকেল্লা, লোকসভা ইত্যাদি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন জাতীয় পতাকা তোলা হয়। তবে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী প্রমুখ ব্যক্তি মারা গেলে সেদিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। ভারতীয় নাগরিকরা ২৬ জানুয়ারি, ১৫ আগস্টের দিন সম্মানজনকভাবে জাতীয় পতাকা তুলতে পারেন। তবে জাতীয় পতাকাকে মাটিতে বা নর্দমায় ফেলে রাখা অকর্তব্য ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ভারতবাসী হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের উচিত আমাদের জাতীয় প্রতীক জাতীয় পতাকাকে সম্মান জানানো।
আমার প্রিয় উৎসব-দুর্গাপুজো
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর এই সমস্ত পার্বণের মধ্যে আমার সবথেকে প্রিয় দুর্গাপুজো। শরৎকালে অনুষ্ঠিত দুর্গাপুজো বাঙালিদের সবথেকে বড়ো মিলন উৎসব। আশ্বিন মাসের অমাবস্যা তিথিতে মহালয়া অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা হয়। এর ঠিক ছয় দিন পর থেকে ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এবং দশমী এই পাঁচ দিন ধরে দেবী দশভূজার আরাধনা হয়। দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে স্কুল ছুটি থাকে, পড়াশোনাও করতে হয় না, তাই দুর্গাপুজো আমার প্রিয় উৎসব। ষষ্ঠী থেকে নতুন নতুন জামা পরে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যাই। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঢাক বাজে, মাইকে পাড়ার পুজোর মন্ত্র শোনা যায়। পথঘাট আলোয় ঝলমল করে। ঠাকুর দেখতে গিয়ে রোজ রোজ নানারকম পছন্দসই খাবার খাই। সবমিলিয়ে দুর্গাপুজো আমার কাছে একরাশ খুশির আমেজ নিয়ে আসে। দশমীতে দেবীর বিসর্জন হয়ে গেলেই আবার অপেক্ষা করি পরের বছর পুজো আসার।
সরস্বতী পুজো
দেবী সরস্বতী শিক্ষা ও সংস্কৃতির দেবী। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের (অমাবস্যার দিন থেকে পূর্ণিমার আগে পর্যন্ত ১৫ দিনকে শুক্লপক্ষ বলা হয়।) পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পুজো হয়। এই দিনটিকে বসন্তপঞ্চমীও বলা হয়। সেদিন পাড়ার ক্লাবে, বাড়িতে বাড়িতে, স্কুলে স্কুলে এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়। সরস্বতী পুজোয় আবশ্যিক উপকরণ হিসেবে দোয়াত-কলম, পলাশ ফুল, যবের শিষ, পঞ্চপল্লব (আম, অশ্বত্থ, বট, পাকুড় ও যজ্ঞডুমুর গাছের পাতা) লাগে। এদিন ছাত্রছাত্রীরা উপোস করে থেকে সকাল সকাল স্নান করে, নতুন জামা-শাড়ি পরে দেবীর সামনে অঞ্জলি দেয়। এটিই একমাত্র পুজো যা বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এদিন দুপুরবেলা বিদ্যালয়েই দেবী সরস্বতীর ভোগ খাওয়ানোর আয়োজন করা হয়। নতুন জামাকাপড় পরে বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে স্কুলে বসে খেতে খুব আনন্দ হয়। এদিন দেবী সরস্বতীর পায়ের কাছে বই, পেন, পেনসিল, খাতা রাখতে হয়। তাই পড়াশোনা থেকে ছুটি পাওয়া যায়। ফলে এই দিনটা খুব আনন্দে কাটে।
তোমার দেখা একটি মেলা-বইমেলা
মেলা কথার অর্থ মিলন। মেলা উপলক্ষ্যে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ একসঙ্গে মিলিত হয়। তাই মানুষে মানুষে মিলনের জন্য মেলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমাদের দেশে রথের মেলা, বইমেলা, পৌষমেলা, চরকের মেলা ইত্যাদি নানা ধরনের মেলা বসে। এইসব মেলার মধ্যে বাবা-মায়ের সঙ্গে আমি বইমেলাতে যাই। জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে করুণাময়ীর } সেন্ট্রাল পার্কে প্রতিবছর বইমেলা বসে। নানা দেশের কতশত নাম-না-জানা বই, তাদের বিচিত্র মলাট ও রং দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। শুধু কি বিদেশি বই! দেশীয় ও প্রাদেশিক বই, ছড়ার বই, শিশু ভোলানো বই, ছবির বই, রান্নার বই, কি বই নেই সেখানে? মেলা প্রাঙ্গণের চারিদিক থেকে নতুন বইয়ের একটা সুগন্ধ বেরোয়। এই গন্ধটা আমার ভীষণ ভালো লাগে। শুধু বই-ই নয়, বইয়ের পাশাপাশি অসংখ্য বইপ্রেমী মানুষও আসেন এই মেলায়, নেড়ে চেড়ে কিনে নেন মনের মতো বই। এ ছাড়া নানারকম খাবারের দোকান, গয়নার দোকান, এমনকি ছবির দোকানও বসে। সবমিলিয়ে বইমেলা আমার কাছে ভরপুর আনন্দের আমেজ নিয়ে আসে।
পরিবেশদূষণ ও তার প্রতিকার
পরিবেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলি হল জল, মাটি, বায়ু। এগুলি মানুষ ও অন্যান্য জীবের বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। কিন্তু নানা কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এই জল, মাটি, বায়ু ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদানগুলিতে দূষণকারী পদার্থ মিশে যখন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে, তখন পরিবেশের সেই অবস্থাকে পরিবেশদূষণ বলে। বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কলকারখানা, যানবাহন বেড়েছে। কলকারখানার ধোঁয়া, বাস, ট্যাক্সি, বাইক থেকে বেরোনো ধোঁয়া বায়ুতে মিশে বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে। ফলে মানুষের শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার চাষের উন্নতির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে নানা রাসায়নিক সার ও বিষাক্ত কীটনাশক। এই কীটনাশক ও সার মাটিতে মিশে মাটিকে দূষিত করছে, আবার তা বৃষ্টির জলে মিশে নদীতে পড়ায় জলদূষণ হচ্ছে। এ ছাড়াও কলকারখানা থেকে বেরোনো জল, পুকুরে সাবান দিয়ে জামাকাপড় কাচা, গবাদিপশুকে স্নান করানো ইত্যাদি নোংরা জলও জলদূষণের কারণ। যানবাহনের তীব্র হর্ন, মাইক, শব্দবাজির ব্যবহার শব্দকে দূষিত করছে। বহুদিন শব্দদূষণের মধ্যে থাকতে থাকতে মানুষের শোনার ক্ষমতা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। ক্রমশ জনসংখ্যাবৃদ্ধির ফলে কলকারখানা, বাসস্থানের প্রয়োজন বাড়ছে। ফলে বনভূমিকে নির্বিচারে ধ্বংস করা হচ্ছে। এতে পরিবেশে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে, পরিবেশদূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আশার কথা এটাই যে, মানুষ এখন পরিবেশদূষণ নিয়ে অনেকটা সচেতন হয়েছে। পরিবেশদূষণ কমাতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু শুধু সরকারের উপর নির্ভর করলেই চলবে না, সেইসঙ্গে আমাদের সকলকেই পরিবেশদূষণ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। তবেই আমরা একটি সুস্থ, সুন্দর পরিবেশ পাব।
গাছ আমাদের পরম বন্ধু
গাছ আমাদের অর্থাৎ সমগ্র জীবজগতের পরম বন্ধু। মাটির বুকে ফলের বীজ পড়ে গাছের জন্ম হয়। গাছ আছে বলেই পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব আছে। মানুষ-সহ অন্যান্য প্রাণীরা শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেন গ্রহণ করে কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে। আর গাছ সেই কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে বাতাসে অক্সিজেনকে পুনরায় ফিরিয়ে দেয়। গাছ অতি প্রাচীন কাল থেকে কেবল অক্সিজেন নয়, খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-অস্ত্র দিয়ে মানুষকে সাহায্য করে চলেছে। গাছে উৎপন্ন উপকারী ফল-ফুল-মূল-পাতা খাদ্য ও ওষুধ তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গাছের ছাল আদিম মানুষ এমনকি বর্তমানেও অনেক আদিবাসী মানুষের পোশাক। আদিম মানুষেরা গাছের ডালকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করত। গাছ তার ছায়ায় পথিককে বিশ্রাম দেয়। এ ছাড়াও গাছ খরা ও বন্যা প্রতিরোধ করে এবং বৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীতে মোট স্থলভাগের ৩৩ শতাংশ বনভূমি থাকা উচিত। কিন্তু মানুষ নিজের সুবিধার জন্য গাছ কেটে, বন কেটে নগর তৈরি করছে। ফলে গাছের অভাব ঘটছে, যা অদূর ভবিষ্যতে আমাদেরই সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। তাই আমাদের উচিত নির্বিচারে গাছ কেটে না ফেলে অনেক অনেক গাছ বসানো।
আধুনিক জীবনে বিজ্ঞানের অবদান
আধুনিক জীবনে বিজ্ঞানের ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত। শিল্পকলকারখানা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ঘরগৃহস্থালি সর্বত্রই আজ বিজ্ঞানের জয়জয়কার। বিজ্ঞানের উন্নতির ফলেই তৈরি হয়েছে শিল্পকলকারখানা। ফলে মানুষের রোজকার জীবনের প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি অনেক সহজ হয়েছে। বিজ্ঞানের উন্নতির ফলেই চাষেরও উন্নতি হয়েছে। চাষের জন্য লাঙলের বদলে এসেছে ট্রাক্টর, তৈরি হয়েছে নানারকম সার ও কীটনাশক। ফলে আগের থেকে অনেক বেশি পরিমাণে ফসল ফলানো সম্ভব হয়েছে। যাতায়াত ব্যবস্থাতেও আমূল পরিবর্তন এসেছে। আগে মানুষকে পায়ে হেঁটে বা গোরুর গাড়ি করে বা পালকি করে দূরবর্তী স্থানে যেতে হত। বিজ্ঞানের তৈরি ট্রেন, ট্রাম, বাস, মেট্রোরেল, উড়োজাহাজ, জাহাজ ইত্যাদি যানবাহনে চড়ে মানুষ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অনেকদূর পৌঁছে যাচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে সারা বিশ্ব হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। টিভি, রেডিয়ো, কম্পিউটার, মোবাইল ও ইনটারনেটের মাধ্যমে আমরা একমুহূর্তে জেনে নিতে পারছি বিশ্বের কোথায় কী ঘটছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতিতে নানা ওষুধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। ফলে কঠিন রোগকে মানুষ এখন সহজেই জয় করতে পারছে। মহাকাশবিজ্ঞানের উন্নতির ফলে মঙ্গলগ্রহ, মহাকাশ ও চাঁদে পাড়ি দিচ্ছে মানুষ। তাই বলা যায়, মানুষের প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞানের অবদান অস্বীকার করা যায় না।
নিরক্ষরতা দূরীকরণ
পশ্চিমবঙ্গ ও সমগ্র ভারত থেকে নিরক্ষরতা দূর করতে সরকার ও সাধারণ মানুষ মিলে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। “সর্বশিক্ষা অভিযান” ও “সাক্ষর ভারত মিশন”-এর মাধ্যমে শিশু ও বয়স্ক সবার জন্য বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্কুলে মিড-ডে মিল, বিনামূল্যে বই ও ইউনিফর্ম দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের আকর্ষণ করা হচ্ছে। গ্রামে গ্রামে শিক্ষাকেন্দ্র খোলা হয়েছে, যেখানে বয়স্করা পড়াশোনা শিখছেন। আমরা ছোটরাও চাইলে বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের অক্ষরজ্ঞান শেখাতে সাহায্য করতে পারি। শিক্ষাই পারে একটি দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে। আসুন, সবাই মিলে নিরক্ষরতা দূর করি!