গণিতভীতি দূর করার উপায়: Reasons and Remedies for Maths Phobia নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ TET পরীক্ষার গাইড

Our WhatsApp Group Join Now

গণিত অনেকের কাছেই ভয়ের কারণ। কিন্তু এই ভীতি বা Reasons and Remedies for Maths Phobia কোনো জন্মগত দুর্বলতা নয়, বরং এটি শিক্ষণ পদ্ধতি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার ফল। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী কেন গণিতে দুর্বলতা অনুভব করে, তার কারণগুলি সুদূরপ্রসারী এবং সমাধানের পথও রয়েছে সুস্পষ্ট। এই পোস্টে আমরা গণিতে অহেতুক পারদর্শিতার অভাবের মূল কারণগুলি বিশ্লেষণ করব—যেমন, প্রচলিত সংস্কার, মনস্তাত্ত্বিক ভয়, ত্রুটিপূর্ণ পাঠক্রম, ও শিক্ষক-শিক্ষণের ঘাটতি—এবং এর ফলপ্রসূ প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষকতার (TET) পরীক্ষার্থীদের জন্য তৈরি এই গাইডটি গণিত পেডাগজির একটি অপরিহার্য অংশ, যা আপনাকে শ্রেণিকক্ষে গণিত শিক্ষণকে সার্থক করে তুলতে সাহায্য করবে।

Reasons and Remedies for Maths Phobia
Reasons and Remedies for Maths Phobia

এক নজরেঃ

গণিতে অহেতুক পারদর্শিতার অভাবের কারণ ও তার প্রতিকার: TET পরীক্ষার অপরিহার্য গাইড

অধ্যায় ১: গণিতে অসাফল্যের মূল কারণসমূহ

অধিকাংশ লোকই মনে করেন, গণিত স্বভাবতই কঠিন এবং এর মধ্যে আকর্ষণীয় কিছু নেই। অভিজ্ঞতা ও সহজ প্রত্যক্ষের দ্বারা এর বিষয়বস্তু জানা যায় না; বরং উন্নত বুদ্ধি, বিমূর্ত ধারণা ও উচ্চতর মানসিক কার্যের দ্বারাই গণিত চর্চা সম্ভব। তা ছাড়া বিষয়ের ব্যাপকতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সঠিক ও নির্ভরযোগ্য চিন্তনের পক্ষে সাহায্যকারী হওয়ায় গণিতকে আবশ্যিকভাবে শিক্ষা করার একটা সামাজিক তাগিদ ক্রমশ প্রবলতর হচ্ছে। কিন্তু এই প্রগতির তুলনায় বিষয়বস্তু, পরিবেশ ও উপকরণ বা পদ্ধতির কোনো পরিবর্তন বিশেষ হয়নি। উদ্দেশ্য ও তার রূপায়ণের মধ্যে একটা বিরাট ব্যবধানই গণিতে অসাফল্যের অন্যতম প্রধান কারণ।

১.১. মনস্তাত্ত্বিক কারণ ও প্রচলিত সংস্কার (Maths Phobia)

  • অহেতুক ভয়ের সঞ্চার: এরূপ প্রচলিত সংস্কারের বশে সাধারণের মধ্যে গণিত সম্বন্ধে অহেতুক ভয়ের সৃষ্টি হয়। গণিতের নাম শুনলে অনেকেই পিছিয়ে যায় বা নিজেকে গুটিয়ে নিতে চায়।
  • অহংবোধে আঘাত: পূর্বে হয়তো কোনো শিশু বেশ আগ্রহ নিয়ে চেষ্টা করেও সমাধান করতে পারেনি। এই অনিচ্ছাকৃত ক্ষমতার জন্য (যার জন্য সে দায়ী নয়) সে লাঞ্ছনা বা অপমান ভোগ করলে তার অহংবোধে আঘাত লাগে এবং সে গণিতকেই এর জন্য দায়ী করে ফেলে।
  • অনুরাগের পরিবর্তে বিতৃষ্ণা: চেষ্টা জনিত সাফল্যের আনন্দ ও পুরস্কার না পেলে অনুরাগের পরিবর্তে বিতৃষ্ণাই জন্মায়।
  • সহজ পথ অবলম্বন: সংবেদনের সাহায্যে শুধু প্রত্যক্ষ করা এবং উত্তরে যান্ত্রিক বা অভ্যাসগতভাবে কিছু প্রয়োজনীয় আচরণ করা যত সহজ ও আয়াসলভ্য, বুদ্ধি প্রয়োগ করে ও চিন্তা করে মানসিক কাজের সাহায্যে সমস্যার সমাধান করা তত সহজ নয়। সহজতর উপায় অবলম্বন করা সাধারণ মানুষের একটি স্বাভাবিক বৃত্তি। এর বিরুদ্ধে জোর করে কাজ করাতে গেলে ভয় হওয়াই স্বাভাবিক। এই প্রাথমিক ভয়ের সূত্র বা কারণ অনুসন্ধান না করে যান্ত্রিক উপায়ে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করলে তা আরও বেড়ে যায়।

১.২. শিক্ষাব্যবস্থা ও পরিবেশগত ত্রুটি

  • অসম্পূর্ণ উদ্দেশ্য: গণিতশিক্ষণের মূল্য ও উদ্দেশ্যগুলি সফল হলে সাধারণ শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি অনেকাংশে চরিতার্থ হতে পারে। এর ব্যাবহারিক ও সামাজিক মূল্য সম্বন্ধে কোনো দ্বিমত না থাকলেও বাস্তবে গণিতশিক্ষণের মূল্য উদ্দেশ্যগুলির বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
  • গাণিতিক পরিবেশের অভাব: প্লেটো ও অন্যান্য অনেকে শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি গাণিতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করলেও, বাস্তবে এরূপ পরিবেশ সৃষ্টি করা এখনও সম্ভব হয়নি।
  • পুস্তক ও পরীক্ষাকেন্দ্রিক নীতি: বর্তমান শিক্ষানীতি প্রধানত পুস্তক ও পরীক্ষাকেন্দ্রিক। কোনো রকমে তোতাপাখির মতো কিছু জ্ঞান আহরণ করে সেগুলি পরীক্ষার খাতায় উদ্গিরণ করাই যথেষ্ট মনে করা হয়। যুক্তিমূলক ও অন্যান্য মানসিক উৎকর্ষতাজনিত প্রচেষ্টার সুযোগ থাকলেও সেগুলি নিজস্বভাবে অর্জিত হবার সুযোগ নেই।

১.৩. ত্রুটিপূর্ণ পাঠক্রম ও পদ্ধতির ব্যবহার

  • দীর্ঘ ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ পাঠ্যসূচি: গণিতের পাঠ্যসূচি দীর্ঘ, পূর্বাপর সামঞ্জস্যরহিত, তথ্যবহুল ও মোটামুটিভাবে সংগতিবিহীন। ব্যাবহারিক প্রয়োগ ও কাজকর্মের (activity) সুযোগ কম থাকে।
  • তত্ত্বমূলক ও বাস্তববিচ্ছিন্ন পাঠক্রম: পাঠক্রমটি বহুলাংশেই তত্ত্বমূলক (theoretical) এবং শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের সঙ্গে এর বিশেষ যোগাযোগ নেই। অর্থাৎ এটি শিশুকেন্দ্রিক নয়, বরং তথ্যবহুল ও শিক্ষানীতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
  • যান্ত্রিক অভ্যাস: পাঠক্রমটি দীর্ঘ হওয়ায় বিশেষ বিশেষ বিষয়গুলির দিকে লক্ষ্য দেওয়া সম্ভব হয় না। অতি দ্রুত একটি ধারণা দিয়ে যান্ত্রিক উপায়ে কয়েকটি অভ্যাস ও প্রয়োগ কৌশল শিখিয়ে দেবার উদ্দেশ্যই প্রধান হয়ে দেখা যায়।
  • অনুবন্ধের অভাব: পাঠক্রমের বিভিন্ন বিষয়গুলির মধ্যে অনুবন্ধ নির্ণয় করে গণিতের বিষয়সূচি নির্ধারণ করা হয় না। শিক্ষা একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া; বিভিন্ন প্রত্যক্ষ ও অনুমানের মধ্যে সম্বন্ধ নির্ণয় করে এগিয়ে যাওয়া উচিত। গণিতশিক্ষণের জন্য এরূপ কোনো মনোবিজ্ঞানসম্মত ও জীবনকেন্দ্রিক পাঠক্রমের প্রয়োজন।
  • সংশ্লেষণী (Synthetic) ও আরোহ (Deductive) পদ্ধতির প্রাধান্য: সাধারণত পাঠ্যপুস্তকের সংশ্লেষণী ও আরোহ পদ্ধতিতে বিষয়বস্তুগুলি উপস্থাপিত হয়। বাস্তব পটভূমিকে অবলম্বন করে বা মানসিক কাজের ধারা অনুযায়ী বিশ্লেষণ করে বিষয়বস্তু সাজানো থাকে না। পাটিগণিত বিশেষ করে জ্যামিতিতে একেবারে ঠিক করে সাজানো (Ready-made) সংশ্লেষণী পদ্ধতিতে এবং বীজগণিতে প্রধানত অবরোহমূলক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

১.৪. শিক্ষকের ভূমিকা ও শিক্ষণ পদ্ধতির অভাব

  • শিক্ষকের গতানুগতিকতা: একজন উপযুক্ত শিক্ষক অনেক ত্রুটি সংশোধন করতে পারলেও নানা কারণে তাঁরা উপযুক্ত পদ্ধতি ও মনোভাব বজায় রাখতে পারেন না। ফলে গণিতশিক্ষণ গতানুগতিক ও যান্ত্রিক হয়ে পড়ে। John Perry শিক্ষকের সম্বন্ধেই সমস্ত অপবাদ চাপিয়ে দিয়ে বলেছেন, “My way of study in the common way, the natural way, and that the school master destroy it and replace it by something that cenduces it to mere learning.”
  • নির্ভুলতার ওপর অতিরিক্ত জোর: অনেকে গণিতে নির্ভুলতার ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়ে থাকেন। কঠোর নিয়মানুবর্তিতার সঙ্গে আপস করতে চান না। এর ফলে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং শিক্ষার্থীগণও প্রকৃত গণিত থেকে দূরে সরে গিয়ে এটিকে একটি রহস্যময় দুর্বোধ্য ও কঠিন বিষয় মনে করে।
  • ব্যক্তিগত নজরদারির অভাব: ছাত্রদের প্রতি ব্যক্তিগত নজর দেওয়ার পরিবর্তে অনেকেই নিজেরা সমাধানগুলি বোর্ডে বিস্তৃতভাবে কপি করে দেওয়া প্রধান কাজ বলে মনে করেন। ফলে শিক্ষক একটু বিস্তৃত ভাব পাঠ্যপুস্তকে (Enlarged copy of text book) পরিণত হন।
  • একক ধারাবাহিক পদ্ধতি: শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাহিদা, আগ্রহ, পরিবেশ, বুদ্ধি ও দক্ষতার পার্থক্য থাকায় তারা এই একটি একক ধারাবাহিক পদ্ধতি সকলে সমভাবে গ্রহণ করতে পারে না। ফলে অনেকেই পিছিয়ে পড়ে।
  • অজ্ঞতা ও চিরাচরিত মনোভাব: নতুন ও অপেক্ষাকৃত পণ্ডিতম্মন্য শিক্ষকগণ উপযুক্ত পদ্ধতি অবলম্বন না করার জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে গতানুগতিক ও চিরাচরিত মনোভাব ক্রমশই বদ্ধমূল হয়ে ওঠে। তাঁরা মনে রাখেন না যে, গণিতের প্রধান বিষয় হচ্ছে দক্ষতা ও আগ্রহ সৃষ্টি করা

১.৫. শিক্ষার্থীর দুর্বলতা ও পারিপার্শ্বিক কারণ

  • শারীরিক ত্রুটি ও অক্ষমতা: শিক্ষার্থীর শারীরিক ত্রুটি ও অক্ষমতার জন্য বেশিক্ষণ কোনো বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। মনোযোগ, আগ্রহ ও দৃঢ় মনোভাব না থাকলে স্বাধীনভাবে গণিতের পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করা যায় না।
  • সহযোগিতার অভাব: শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতা ও সমবেত প্রচেষ্টার অভাবও অনেক সময় বুদ্ধি ও আগ্রহ বিকাশের অন্তরায় হয়ে ওঠে।
  • শ্রেণি শিক্ষণ ও গৃহগত পরিবেশ: বিদ্যালয়ের শ্রেণি শিক্ষণ ও গৃহগত উপযুক্ত পরিবেশের অভাবও পরোক্ষ কারণ। বহু ছাত্র একসঙ্গে পড়ায় ব্যক্তিগত মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে একবার পিছিয়ে পড়লেই গণিতের জগৎ থেকে তার প্রকৃত অপসারণ ঘটে।
  • উপকরণের অভাব: উপযুক্ত পাঠাগার ও পরীক্ষাগারের অভাব গণিতে উৎসাহ বৃদ্ধি না হওয়ার আরও একটি কারণ। উপকরণের অভাবের জন্য অনেক পদ্ধতি ও গাণিতিক কাজ সহজভাবে এবং দ্রুত নিষ্পন্ন করা সম্ভব হয় না। এর ফলে উচ্চতর গাণিতিক চিন্তায় বাধা ও অমনোযোগের সৃষ্টি হয়।

১.৬. ত্রুটিপূর্ণ মূল্যায়ন ব্যবস্থা

  • ফলাফলের তারতম্য: অসাবধানতা, সামান্য ত্রুটির জন্য অনেক সময় ফলাফলের অনেক তারতম্য ঘটে। সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন না করার জন্যও ফল আশনুরূপ হয় না।
  • ত্রুটিমূলক পরীক্ষা: শুধু স্মৃতির জোরে বা যান্ত্রিক অভ্যাসের ফলে বর্তমান ত্রুটিমূলক পরীক্ষা ব্যবস্থায় অনেকেই বেশি নম্বর পেয়ে থাকে। মূল্যায়ন সংক্রান্ত যে-কোনো ত্রুটি সার্থক গণিতশিক্ষণের অন্তরায় হয়ে থাকে।
  • রোগনির্ণয় (Diagnosis) ও প্রতিকারের অভাব: বর্তমানে বিদ্যালয়গুলিতে বিফলতার কারণ ও মাত্রা নির্ণয় করার জন্য কোনো অভীক্ষা বা ব্যবস্থা নেই। পিছিয়ে পড়ার কারণ খুঁজে পাওয়া গেলেও উপযুক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করার কোনো সুযোগ রাখা হয় না। প্রতিষেধকমূলক অথবা নিবারণমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে কোনো সামাজিক আগ্রহ এখনও পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।

অধ্যায় ২: গণিতে পারদর্শিতা বৃদ্ধির প্রতিকার ও করণীয়

উপরোক্ত অসুবিধা ও বাধাগুলি দূর করতে পারলে গণিতশিক্ষণে সফলতা অর্জন অনেক সহজ হয়ে উঠবে।

২.১. শিক্ষার্থীর প্রতি মনোবিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ

  • আগ্রহ সৃষ্টি: বাস্তব অথচ আগ্রহোদ্দীপক ছোটো ছোটো সমস্যার সমাধানে ছাত্রদের অভ্যস্ত করতে হবে। প্রথম প্রচেষ্টা সফল ও সন্তোষজনক হলে গণিতে ক্রমশই অনুপ্রেরণা দেখা দেবে।
  • গুরুত্ব বোঝানো: গণিতের প্রয়োজনীয়তা, ব্যাপকতা ও গুরুত্ব সম্বন্ধে ছাত্রদের অবহিত করতে হবে।
  • সক্রিয় অংশগ্রহণ: শিক্ষার্থীরা যাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে সেরূপ বিষয় ও পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
  • আত্মবিশ্বাস জাগরণ: শিক্ষার্থীর নিজের ক্ষমতা ও সম্ভাবনার প্রতি আস্থা জাগিয়ে তুলতে হবে।
  • স্বাধীন চর্চা: স্বাধীনভাবে সহজ-সরল সমস্যার সৃষ্টি বা কল্পনা করতে শেখানো ও সেগুলি সমাধান করার অভ্যাস জাগিয়ে তোলা দরকার।
  • ত্রুটি সংশোধন: অসাবধানতাজনিত ও অনিচ্ছাকৃত ত্রুটিগুলি খুঁজে নেওয়ার ও সেগুলি সম্বন্ধে সঠিক মনোভাব গড়ে তোলার জন্য ধারাবাহিকভাবে দৈনন্দিন জীবনধারণ সংক্রান্ত সমস্যাগুলি স্বাধীনভাবে সমাধান করার সুযোগ দিতে হবে।
  • শারীরিক ত্রুটির প্রতি লক্ষ: ছাত্রদের শারীরিক ত্রুটির প্রতি লক্ষ রাখা দরকার।
  • সহযোগিতার নীতি: শ্রেণিকক্ষে সহযোগিতার নীতি জাগিয়ে রাখা দরকার।

২.২. পাঠক্রম ও শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার

  • ছাত্রকেন্দ্রিক পাঠক্রম: পাঠক্রম শুধু জীবনকেন্দ্রিক বা বিষয়কেন্দ্রিক হলেই যথেষ্ট হবে না। পাঠক্রমটিকে ছাত্রকেন্দ্রিক, কর্মকেন্দ্রিক ও মনোবিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গড়ে তুলতে হবে।
  • বিষয়ের প্রতি অনুরাগ: বিভিন্ন বিষয়গুলির উপরে অনুরাগ গড়ে তুলতে হবে।
  • সামগ্রিক পাঠক্রম: গণিতের বিষয়বস্তুকে কয়েকটি পরস্পর নিরপেক্ষ বিষয় না করে পারস্পরিক সম্বন্ধ বজায় রেখে একটি সামগ্রিক পাঠক্রম রচনা করার চেষ্টা করতে হবে।
  • মানসিক প্রগতির সঙ্গে সঙ্গতি: গণিতের পাঠক্রমকে মানসিক প্রগতির সঙ্গে সমভাবে গড়ে তুলতে হবে।
  • সঠিক পদ্ধতি: গণিতের বিষয়বস্তু, নীতি ও প্রণালীগুলি যাতে সার্থক ও নির্ভুলভাবে বুঝতে পারে, তার জন্য মনোবিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
  • শিক্ষকের ভূমিকা: শিক্ষককে সহানুভূতিশীল ও ধৈর্যশীল হতে হবে, এটি গণিতশিক্ষকের একটি অতি আবশ্যিক যোগ্যতার দিকনির্দেশ করে।
  • শিক্ষার্থীর আবিষ্কার: ছাত্ররা যাতে নিজেরা সমস্যাগুলিকে বিশ্লেষণ করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের আবিষ্কারের ভূমিকায় কাজে লাগাতে হবে। প্রয়োজনবোধে পদ্ধতি পরিবর্তন করে সার্থক যে-কোনো পদ্ধতি বেছে নেওয়ার অভ্যাস ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
  • ব্যক্তিগত মনোযোগ: যতদূর সম্ভব ব্যক্তিগত নজর দিতে হবে। অনগ্রসর ছাত্রদের প্রতি বিশেষ লক্ষ রাখা দরকার। শ্রেণিকক্ষের বাইরেও তাদের সঙ্গে শিক্ষকের সংযোগ থাকা দরকার।
  • অনগ্রসর ছাত্রদের বিশেষ ব্যবস্থা: অনগ্রসর ছাত্রদের প্রোমোশন না দেওয়াই ভালো, আর দিলেও যাতে প্রথমে অনগ্রসরতার কারণগুলি দূর হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তার সম্বন্ধে বিশেষ ব্যক্তিগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২.৩. উপকরণ ও পাঠ্যপুস্তকের সঠিক ব্যবহার

  • উপকরণের ব্যবহার: যতদূর সম্ভব মডেল, স্কেল, খুঁটিনাটি যন্ত্র ও অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করার অভ্যাস সৃষ্টি করতে হবে।
  • পাঠ্যপুস্তক ও সাহায্যকারী পুস্তক: পাঠ্যপুস্তক ও অন্যান্য সাহায্যকারী পুস্তক ব্যবহার করার অভ্যাসও থাকা দরকার। শুধু নামতা ও সূত্র মুখস্থ রাখলে গণিতে দক্ষতা অর্জন করা যায় না।
  • সঠিক পাঠ্যপুস্তক নির্বাচন: পাঠ্যপুস্তক নির্বাচনের সময় যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। পাঠ্যপুস্তক যাতে দ্বিতীয় শিক্ষকের কাজ করতে পারে তার জন্য ব্যবস্থা থাকা দরকার। পাঠ্যপুস্তক প্রস্তুতিতে ও নির্বাচনে শিক্ষক-প্রতিনিধিগণের সক্রিয় ভূমিকা থাকা উচিত।
  • স্কুল পাঠাগার: স্কুল পাঠাগারের মধ্যে খ্যাতনামা গণিতজ্ঞগণের জীবনী ও আবিষ্কারমূলক অনেক পুস্তক ও জার্নাল রাখা উচিত।

২.৪. মূল্যায়ন ব্যবস্থার সংস্কার

  • পরীক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার: পরীক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। পরীক্ষায় সফলতাই যাতে একমাত্র উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য না হয় তার জন্য উপযুক্ত সামাজিক নীতি ও লক্ষ্য স্থির করতে হবে। সেগুলি যাতে সঠিক পরীক্ষার সাহায্যে মূল্যায়িত হয় এবং সকল শিক্ষার্থী যাতে তার সফলতার মূল্য পায় তার জন্য উপযুক্ত নীতি স্থির করতে হবে। অর্থাৎ গণিতের পাঠক্রম ও শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠন করতে হবে।

উপরোক্ত এই সমস্ত ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করতে পারলে গণিতশিক্ষণ সার্থক ও সার্বজনীন হয়ে উঠবে।

Leave a Comment